সোনার বাংলা গড়ায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অবদান

সোনার বাংলা গড়ায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অবদান

খাগড়াছড়ির সোনার বাংলা গড়ায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অবদানদীঘিনালায় বানভাসী মানুষকে চিকিৎসাসেবা ও মানবিক সহায়তা দিল সেনাবাহিনী
“এখান থেকে শেয়ার করতে পারেন”

Loading

জাহিদুল ইসলাম জাহিদ

‘সমরে আমরা শান্তিতে আমরা, সর্বত্র আমরা, দেশের তরে’ এই মূলমন্ত্র হৃদয়ে ধারণ করে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব অক্ষুণ্ন রাখার পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন সেবামূলক ও উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডে প্রত্যক্ষভাবে অংশগ্রহণ করছে। সময়ের পরিক্রমায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনী আজ দক্ষ, অভিজ্ঞ, সুশিক্ষিত, সুশৃঙ্খল, সুসংগঠিত ও আদর্শ একটি বাহিনীতে পরিণত হয়েছে। জাতির পরম আস্থা ও ভালোবাসার প্রতীক, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে গড়ে ওঠার সঙ্গে দেশ গঠনেও রেখে যাচ্ছে নিরবচ্ছিন্ন ভূমিকা। জাতীয় পর্যায়ে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পসমূহের নকশা প্রণয়ন থেকে শুরু করে কার্যসম্পাদনের প্রতিটি পর্যায়ে দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনীর সদস্যরা সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার, পেশাদারিত্ব, সততা, নিষ্ঠা ও আন্তরিকতার পরিচয় দিয়ে যাচ্ছেন।

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ সমসাময়িক রাজনৈতিক ও সামরিক ইতিহাসে বিংশ শতাব্দীর একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। একটি প্রশিক্ষিত বাহিনীর বিরুদ্ধে মাত্র নয় মাসের যুদ্ধে জয়লাভ করা একটি বিরল ইতিহাস। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানি সশস্ত্র বাহিনী ‘অপারেশন সার্চলাইট’ শুরুর মধ্য দিয়ে পূর্ব পাকিস্তানের বেসামরিক জনগণের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। পাকিস্তানি বাহিনী এবং এর সহযোগী আধাসামরিক বাহিনী বাংলার হাজার হাজার সামরিক ও বেসামরিক মানুষদের হত্যা করে। মার্চ মাসেই ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের বাঙালি সৈন্যরা বিদ্রোহ করে এবং বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়। পরবর্তী সময়ে ইস্ট পাকিস্তান রাইফেলস (ইপিআর) সৈন্যরাও সশস্ত্র প্রতিরোধে অংশ নেয়। সামরিক বাহিনীর পাশাপাশি বেসামরিক জনগণ মিলে গড়ে তোলে মুক্তিবাহিনী। ১২ জুলাই ১৯৭১ থেকে সমগ্র বাংলাদেশকে ১১টি সেক্টরে বিভক্ত করে যুদ্ধ পরিচালনা করা হয়। এর আগ পর্যন্ত অঞ্চলভিত্তিক সামরিক নেতৃত্বের মাধ্যমেই যুদ্ধ চলতে থাকে। ১১টি সেক্টরের সামরিক কমান্ডারদের আওতায় অন্য গেরিলা বাহিনীগুলো জুলাই ১৯৭১ থেকে আরও তীব্র বেগে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে গেরিলা যুদ্ধ পরিচালনা করতে থাকে। ১৯৭১ সালে ২৫ মার্চ পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীর দ্বারা গণহত্যা শুরু হওয়ার পরপরই পূর্ব পাকিস্তানে অবস্থানরত পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বাঙালি সদস্যরা বিদ্রোহ করেন। তারা দেশপ্রেমিক যুবকদের সঙ্গে স্থানীয় প্রতিরোধ বাহিনী গড়ে তোলেন এবং প্রায় এক-তৃতীয়াংশ বাঙালি অফিসার ও সৈনিক প্রতিরোধ আন্দোলনে নিহত হন। ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট (ইবিআর)-এর ছয়টি ব্যাটালিয়নের প্রায় ৫ হাজার নিয়মিত সৈন্য ও ইস্ট পাকিস্তান রাইফেলস (ইপিআর)-এর ১৬ হাজার সৈন্য ছিল। সেনাবাহিনী প্রায় সব জেলা শহর ও গ্রামাঞ্চলে, বাঙালি সেনা সদস্য, ইপিআর, পুলিশ ও আনসার এর সহায়তায় অবিলম্বে রণশক্তির নিউক্লিয়াস এবং মুক্তিযুদ্ধের অগ্রগামী ‘মুক্তিবাহিনী’ গঠন করে। পশ্চিম পাকিস্তানকে প্রতিহত করার জন্য স্বতঃস্ফূর্তভাবে দলে দলে বিভক্ত হয়ে সেনাবাহিনী তাদের নিজস্ব উপায়ে স্বাধীনতা যুদ্ধের সূচনা করে ও অবিলম্বে তাদের নিজ নিজ এলাকায় নিজস্ব ক্যাম্প খুলে মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দেয়। যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে আরও ৩টি ব্রিগেড গঠন করা হয়। এরই মধ্যে ১, ৩ এবং ৮ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট নিয়ে ১৯৭১ সালের ৭ জুলাই ময়মনসিংহের বিপরীতে তুরা পাহাড়ের পাদদেশে সংগঠিত হয়েছিল জেড-ফোর্স। আগরতলায় ১৯৭১ সালের ৩০ আগস্ট কে-ফোর্স গঠন করা হয় যার সদর দপ্তর মেলাঘরে স্থাপন করা হয়। এস-ফোর্স সংগঠিত হয়েছিল ২৪ সেপ্টেম্বর ১৯৭১-এ হেজামারা, সেক্টর ৪-এর সদর দপ্তরে।

বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ অবদান হলো পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তি বাস্তবায়ন। ১৯৯৬ সালে শান্তি আলোচনা ও ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর পার্বত্য শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরিত হওয়ার মধ্য দিয়ে দুই দশক ধরে চলা সংঘাতের অবসান ঘটে। শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরিত হওয়ার পর এ অঞ্চলে থাকা অধিকাংশ সেনা ক্যাম্প সরিয়ে নেওয়া হয়। তবে তিন পার্বত্য জেলায় তিনটি সেনানিবাসে সেনা সদস্যগণ স্থায়ীভাবে অবস্থানরত আছেন। বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ এবং অবকাঠামো নির্মাণে সেনাবাহিনী এ অঞ্চলে মূল ভূমিকা পালন করছে। ১৯৯৭ সালে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির স্বাক্ষরিত শান্তি চুক্তির পর পাহাড়ে স্থায়ী শান্তি ফিরেছে। দেশের অখণ্ডতা রক্ষায় বদ্ধপরিকর সেনাবাহিনী পার্বত্য চট্টগ্রামের বিচ্ছিন্নতাবাদী তৎপরতাকে রুখে দিয়েছে। শান্তি চুক্তির মাধ্যমে পার্বত্য চট্টগ্রামে স্থিতিশীলতা আসায়, সেনাবাহিনী এলাকাটির অবকাঠামোগত উন্নয়নে মনোনিবেশ করে। তারা সেখানে স্কুল, হাসপাতাল, সড়ক এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় স্থাপনা নির্মাণ করে। সেনাবাহিনীর এই প্রচেষ্টার ফলে পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণ একটি উন্নত জীবনযাত্রার দিকে এগিয়ে যেতে সক্ষম হয়।

জাতিসংঘ শান্তি মিশনে বাংলাদেশের রয়েছে গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস। ১৯৮৮ সালে ইউএন ইরান-ইরাক মিলিটারি অবজারভেশন গ্রুপ (টঘওগঙএ) মিশনে মাত্র ১৫ জন সেনা পর্যবেক্ষক প্রেরণের মাধ্যমে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশের যাত্রা শুরু হয়েছিল। পরবর্তী কয়েক বছর বাংলাদেশের শান্তিরক্ষী বাহিনী বেশ সুনাম ও কৃতিত্বের সঙ্গে কাজ করে গেছে। ১৯৯৩-৯৪ সালে সবচেয়ে আলোচিত রুয়ান্ডা, সোমালিয়া ও বসনিয়া; এই তিনটি শান্তি মিশনে দক্ষতার পরিচয় দিয়ে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী আলোচনার কেন্দ্রে আসে। বাংলাদেশের মতো একটি উন্নয়নশীল দরিদ্র দেশের সেনাবাহিনীর দক্ষতা এবং সামরিক জ্ঞানে রুয়ান্ডায় বেলজিয়ান ও সোমালিয়ায় আমেরিকান ও বসনিয়ায় ফ্রান্স সেনাবাহিনীর সঙ্গে টিকে থাকতে সক্ষম হয়। ফলে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশের অবস্থান সুদৃঢ় হতে থাকে। ১৯৯৪ সালে আফ্রিকার রুয়ান্ডায় গণহত্যার সময় বাংলাদেশ সেনাবাহিনী তা নিয়ন্ত্রণে অভূতপূর্ব ভূমিকা পালন করে। ১৯৯৫ সালে ইউরোপের একমাত্র শান্তি মিশন বসনিয়ায় ফ্রান্স ব্যাটালিয়ন প্রত্যাহার করলে বাংলাদেশি সেনারা সেখানে কাজ শুরু করে। ৩৪টি দেশের সেনাবাহিনীর সঙ্গে তখন বাংলাদেশের শান্তিরক্ষীরা নিজেদের যোগ্যতা প্রমাণ করেছিলেন। জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী মিশনে বাংলাদেশি সেনা কর্মকর্তাদের মধ্যে ৭ জন ফোর্স কমান্ডার ও ৯ জন ডেপুটি ফোর্স কমান্ডার সাফল্যের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেন। আড়াই যুগেরও বেশি সময় ধরে বিশ্বের ৪০টি দেশের ৫৬টি মিশনে শান্তি রক্ষায় অসামান্য অবদান রেখে বাংলাদেশি শান্তীরক্ষীরা বিশ্বব্যাপী দেশের গৌরব ও মর্যাদা বৃদ্ধি করেছেন। একই সঙ্গে বাংলাদেশের অর্থনীতিতেও উল্লেখযোগ্য অবদান রাখছেন।

দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের মাধ্যমে সমগ্র বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে সেনাবাহিনীর ভূমিকা সত্যিই প্রশংসনীয়। এর সবচেয়ে বড় উদাহরণ হচ্ছে বহুল প্রতীক্ষিত পদ্মা বহুমুখী সেতু। পদ্মা সেতু নির্মাণ চলাকালীন নদী শাসন ও নিরাপত্তা প্রদানের পাশাপাশি সেনাবাহিনী জাজিরা ও মাওয়া এপ্রোচ রোড নির্মাণ এবং ব্রিজ অ্যান্ড ফ্যাসিলিটিজ সার্ভিস এরিয়ার কনস্ট্রাকশন সুপারভিশন কনসালটেন্ট হিসেবে কাজ করে। দেশের এই আইকনিক মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নে সরাসরি অংশগ্রহণের মাধ্যমে সেনাবাহিনী দেশবাসী তথা বাংলাদেশ সরকারের ভূয়সী প্রশংসা অর্জন করে।

জাতীয় পরিচয়পত্রের তথা ভোটার আইডি কার্ড, মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট (এমআরপি) এবং মেশিন রিডেবল ভিসা (এমআরভি) তৈরির ব্যাপারে গৃহীত প্রকল্প বাস্তবায়নের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব সেনাবাহিনী অত্যন্ত সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে পালন করছে। বাংলাদেশে ২০০৮ সাল থেকে বায়োমেট্রিক শনাক্তকরণের প্রক্রিয়া শুরু হয়। বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন ইউএনডিপি-এর নেতৃত্বে দাতাদের অর্থায়নে পরিচালিত একটি প্রকল্প প্রিপারেশন অফ ইলেক্টোরাল রোল উইথ ফটোগ্রাফ (পিইআরপি) নামের প্রকল্পের মাধ্যমে কাগজে স্তরিত জাতীয় পরিচয়পত্র চালু করে। প্রকল্পটি ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ছবিসহ ভোটার তালিকা তৈরির কাজ করে থাকে। ভোটার হওয়ার যোগ্য ৮১.৩ মিলিয়ন বাংলাদেশি নাগরিকের জন্য একটি জনসংখ্যাগত এবং বায়োমেট্রিক ডেটাবেস তৈরি করা হয়। ১৮ বছর বা তার অধিক বয়সী সব বাংলাদেশিকে পরিচয়পত্র দেওয়া হয় এবং একটি কেন্দ্রীয় বায়োমেট্রিক ডাটাবেসে অন্তর্ভুক্ত করা হয়, যা বাংলাদেশের নির্বাচনী পদ্ধতির তত্ত্বাবধানে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন ব্যবহার করে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সহায়তায় ২০১০ সালের ১ এপ্রিল মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট এবং মেশিন রিডেবল ভিসার কার্যক্রম শুরু হয়। ২০১০ থেকে ২০১১ সালের এপ্রিল মাস পর্যন্ত ১ বছরে সাড়ে ৩ লাখ মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট প্রদান করা হয়।

বন্যা, ঘূর্ণিঝড় এবং ভূমিকম্পের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগপ্রবণ হওয়ার কারণে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর দুর্যোগ মোকাবেলায় এবং ত্রাণ বিতরণে সক্রিয়ভাবে জড়িত থাকার দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। ১৯৭০ সালে বিধ্বংসী ভোলা ঘূর্ণিঝড়ের সময় সেনাবাহিনীকে ব্যাপক ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনা, ক্ষতিগ্রস্ত সম্প্রদায়ের জন্য খাদ্য, আশ্রয় এবং চিকিৎসা সহায়তা প্রদান করে। বাংলাদেশে ১৯৭৪ সালের দুর্ভিক্ষের সময় সেনাবাহিনী খাদ্য সরবরাহ, বিতরণ এবং প্রত্যন্ত ও ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় ত্রাণ বিতরণ নিশ্চিত করতে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। ১৯৯১ সালের ঘূর্ণিঝড় উপকূলীয় অঞ্চলে আঘাত হানে এবং বাংলাদেশ সেনাবাহিনী উদ্ধার অভিযান, চিকিৎসা সহায়তা প্রদান এবং ক্ষতিগ্রস্ত জনগোষ্ঠীকে ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করে। ১৯৯৮ সালে ভয়াবহ বন্যায় বাংলাদেশে লক্ষাধিক মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আটকে পড়া ব্যক্তিদের উদ্ধার, চিকিৎসা সেবা প্রদান, খাদ্য ও পানি বিতরণ এবং অবকাঠামো পুনর্নির্মাণে সহায়তার জন্য সেনাবাহিনী ভূমিকা রেখেছিল। ২০০৭ সালে ঘূর্ণিঝড় সিডর এবং ২০২০ সালে ঘূর্ণিঝড় আম্পানে উপকূলীয় অঞ্চলে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী অনুসন্ধান ও উদ্ধার অভিযান পরিচালনা, অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্র স্থাপন এবং ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য মানবিক সহায়তা প্রদানে সহায়ক ভূমিকা পালন করেছিল। এছাড়াও জুন ২০১৭ সালে পাহাড় ধসে পার্বত্য ৩ জেলার যোগাযোগব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলে সেনাবাহিনী কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে যোগাযোগ ব্যবস্থা পুনরুদ্ধার করে খাবার, পানি ও চিকিৎসা সেবা প্রদান করে জনগণের সেবায় নিজেদেরকে নিয়োজিত করে জাতীয় পরিমণ্ডলে ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করতে সক্ষম হয়। এছাড়াও বিভিন্ন সরকারি/আধা সরকারি/স্বায়ত্তশাসিত সংস্থাকে সহায়তা দেয় বাংলাদেশ সেনাবাহিনী।

চিকিৎসাসেবার মান উন্নয়নের লক্ষ্যে সিএমএইচ ঢাকা সম্প্রসারণ ও আধুনিকীকরণের ফলে সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যসহ দেশের বেসামরিক ব্যক্তিবর্গের আধুনিক চিকিৎসা সেবা প্রদান সম্ভব হচ্ছে। চিকিৎসাক্ষেত্র প্রসারিত করার লক্ষ্যে ১৯৯৯ সালে আর্মড ফোর্সেস মেডিক্যাল কলেজ (এএফএমসি) স্থাপন করে। এই ধারাবাহিকতায় ২০১৪ সালে পাঁচটি সেনানিবাসে মেডিক্যাল কলেজ (বগুড়া, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, যশোর ও রংপুর) প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। এছাড়াও বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনী তথা সার্বিকভাবে সমগ্র বাংলাদেশে সেবিকাদের ঘাটতির বিষয় বিবেচনা করে পাঁচটি আর্মি নার্সিং কলেজ (বগুড়া, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, যশোর ও রংপুর) প্রতিষ্ঠা করার প্রশাসনিক অনুমোদনপ্রাপ্ত হয়েছে। ইতোমধ্যে দুটি আর্মি নার্সিং কলেজের শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয়েছে। ২০২০ সালে কোভিড-১৯ মহামারি চলাকালীন, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী সক্রিয়ভাবে কোয়ারেন্টাইন সুবিধা স্থাপন, চিকিৎসাসামগ্রী বিতরণ এবং সারাদেশে স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করে।

  • অন্যান্য খবর জানতে এখানে ক্লিক করুন।
  • ফেসবুকে আমাদের ফলো দিয়ে সর্বশেষ সংবাদের সাথে থাকুন।
  • ইউটিউবেও আছি আমরা। সাবস্ক্রাইব করে ঘুরে আসুন ডিজিটাল কন্টেন্টের দুনিয়ায়।

বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তির এই যুগে বাংলাদেশকে উন্নত বিশ্বের পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে সরকারের নির্দেশনায় ১৯৯৮ সালে মিলিটারি ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি (এমআইএসটি) প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। অগ্রসরমান বিশ্বের সঙ্গে তাল মেলাতে উচ্চশিক্ষা, গবেষণা এবং আধুনিক জ্ঞান চর্চায় ২০১৩ সালে মিরপুর সেনানিবাসে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস (বিইউপি)। এছাড়াও কারিগরি বিজ্ঞান চর্চার ক্ষেত্র ও ব্যবসায় প্রশাসন বিষয়ে শিক্ষা প্রসারের লক্ষে কুমিল্লা, সৈয়দপুর ও কাদিরাবাদ সেনানিবাসে তিনটি আর্মি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (ইঅটঝঞ) এবং সাভার ও সিলেট সেনানিবাসে আর্মি ইন্সটিটিউট অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (অওইঅ) নামে দুটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছে। বর্তমানে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী পরিচালিত ১২টি ক্যাডেট কলেজ, ৪৪টি ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল ও কলেজ এবং ১৯টি ইংলিশ মিডিয়াম/ভার্সনসহ স্কুল ও কলেজ এবং সেনাবাহিনী সংশ্লিষ্ট অন্যান্য স্কুল-কলেজসমূহ শিক্ষা বিস্তারসহ গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা উন্নত পরিবেশে মানসম্পন্ন শিক্ষা পাচ্ছে। সেনা পরিবার কল্যাণ সমিতির পৃষ্ঠপোষকতায় প্রতিবন্ধী শিশুদের জন্য দেশের বিভিন্ন সেনানিবাসে প্রয়াস স্কুল প্রতিষ্ঠা একটি ব্যতিক্রমী উদ্যোগ। এ সেবামূলক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সেনাবাহিনী ইতোমধ্যে দেশে এবং বিদেশে যথেষ্ট সুনাম অর্জন করেছে।

মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর জন্ম। দেশমাতৃকার বিরুদ্ধে যে কোনো অপচেষ্টা নস্যাৎ করে উত্তরোত্তর উন্নতিকল্পে এগিয়ে যাওয়ার দৃঢ় শপথে অঙ্গীকারবদ্ধ বাংলাদেশ সেনাবাহিনী সদা প্রস্তুত। উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় দুর্বার গতিতে ধাবমান মেগা উন্নয়ন প্রকল্পসমূহে সততা, নিষ্ঠা ও পেশাদারত্বের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছে সেনাবাহিনী। এর মাধ্যমে ইতোমধ্যেই সবার আস্থা ও নির্ভরতার প্রতীক হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী।

মেজর জাহিদুল ইসলাম জাহিদ, পিএসসি
উপ-অধিনায়ক, ২১ এয়ার ডিফেন্স রেজিমেন্ট আর্টিলারি, চট্টগ্রাম সেনানিবাস