রাঙ্গামাটির বরকলে নতুন সোয়াম্প ফরেস্ট’র সন্ধান, জীব বৈচিত্রের ভান্ডার বলছেন গবেষকরা - Southeast Asia Journal

রাঙ্গামাটির বরকলে নতুন সোয়াম্প ফরেস্ট’র সন্ধান, জীব বৈচিত্রের ভান্ডার বলছেন গবেষকরা

“এখান থেকে শেয়ার করতে পারেন”

Loading

নিউজ ডেস্ক

রাঙ্গামাটি জেলা সদর থেকে কর্ণফুলী নদী ধরে ১০৭ কিলোমিটার পাড়ি দিলে লুসাই পাহাড়। মিজোরামের লুসাই পাহাড় থেকে নেমে আসা জল, কর্ণফুলিতে গড়িয়ে পড়ছে ছোট হরিনার সন্নিকটে। আর এই পাহাড়ের গা ঘেষেই গড়ে উঠেছে বিশাল আয়তনের সোয়াম ফরেস্ট বা জলার বন। এর আগে এখানে বলতে গেলে বাইরের কারোই পা পড়ে নি! সম্প্রতি নদী ও জীবন প্রকল্পের একদল গবেষক বনটির সন্ধান পান। ২০১৪ সালের জুলাই মাসে প্রথম এই এডভেঞ্চারের সাথে একদল অভিযাত্রীর পরিচয় ঘটে।

ছোট হরিনা ও ভূষনছড়ার মাঝামাঝি বিশাল আয়তনের জল থেকে ভেসে উঠছে কুয়াশার চাদর। বৈঠার তালে এগিয়ে চলে নৌকা। দেখা মেলে রাঙ্গামাটির অনাবিস্কৃত সেই সোয়াম্প ফরেস্ট, যা সহজ বাংলায় জলার বন। ১০ থেকে ১৫ ফুট পানির নীচ থেকে মাথা জাগিয়ে আছে পানি সহনীয় নল খাগড়া, হিজল, বরুণ আর শতমূলী জাতীয় গাছ। কিছুদিন আগেও যার সন্ধান জানত না কেউ। আছে চড়ুই পাখি। তবে শহুরে চড়ুই নয়, বিরল প্রজাতির পাহাড়ী এই চড়ুইয়ের নাম ইউরেশিয়ান স্পেরো বা গেছো চড়ুই।

রাঙ্গামাটির বরকল উপজেলার এই জল অরণ্যকে রীতিমতো গুপ্তধনের সাথে তুলনা করছেন গবেষকরা। এখন গবেষনার মাধ্যমে এই বনের বিস্তারিত জানার অপেক্ষা। প্রাকৃতিক ভাবে গড়ে উঠা এই বন নিয়ে গবেষকরা বলছেন এটি একটি জীব বৈচিত্রের ভান্ডার। অন্যদিকে নদী ও জীবনের যে সমস্ত গবেষকরা এই বনে গবেষনা করছেন, তারা তুলে নিয়ে আসছেন নতুন নতুন তথ্য-উপাত্ত। আর এটি যেন প্রাকৃতিক ভাবেই সংরক্ষিত।

নদী ও জীবনের সন্ধানী দলের প্রধান পরামর্শক ড. আনিসুজ্জামান খান বরৈন, বড় হরিণা এবং ছোট হরিণার যে জায়গা আছে, এটি আসলে ফ্রেস ওয়াটার সোয়াম্প বা জলার বন। “আমরা এখানে দেখতে পেলাম অনেক জলজ উদ্ভিদ। জলজ প্রাণী বা আশে-পাশে যে উদ্ভিদগুলো আছে তার মধ্যে প্রাণীবাজ, নলখাগড়া, পানির নীচের অনেকগুলো দলদাম রয়েছে এখানে। বাংলাদেশে এ ধরণের যে মিঠাপানির সোয়াম্পগুলো আছে আমরা সাধারণত জানি টাঙ্গোয়ার হাওড়, হাকালুকি হাওড়, রাতারগুল, কিন্তু পার্বত্য চট্টগ্রামের হাই এলিভেশনে যে আমাদের উচু-নিচু পাহাড়, ছোট হরিণা কিন্তু তেমনি একটা জায়গা, আমি মনে করি এখানে যে জীববৈচিত্র আছে তা নিয়ে গবেষণার অনেক সুযোগ আছে আমাদের।”

সোয়াম্প ফরেস্ট যেতে কর্ণফুলীর কোল ঘেঁষে দাঁড়িয়ে থাকা পাহাড়, দলছুট পাহাড়ি ছোট্ট বাড়ি, নীল জলরাশির উপরে রোদের ঝিকমিক, উড়ে বেড়ানো পাখির ঝাঁক দেখে যেকোন পর্যটক মুগ্ধ হবেন, এই কথা নিশ্চিত বলা যায়। হরিণাছড়া সোয়াম্প ফরেস্টের প্রকৃতি অন্য আর দশটা সোয়াম্প ফরেস্টের মতোই। নীরব সোয়াম্পের কুয়াশামাখা পরিবেশের মাঝে বৈঠা-নৌকায় ভেসে বেড়ানো একটা রোমাঞ্চকর অনুভূতি। শেষ বিকেলের মায়াবী আলোয় পাহাড়ের কোলে ছোট ছোট জুমঘর, তুলোটে মেঘের ছায়ায় ঢেকে থাকা গ্রাম, শান্ত জলপথ, সন্ধ্যার সোনালী উজ্জ্বল আকাশ আপনাকে মনে করিয়ে দিবে যে, আপনি এই প্রকৃতির সন্তান! দুপাশে পাহাড়ের দেয়াল তৈরী করে ছুটে চলা চঞ্চল কর্ণফুলির বুকে পুরনো লঞ্চ কিংবা ট্রলারে বসে নিজেকে কখনো প্রাচীন সময়ের অভিযাত্রী মনে হবে। কিংবা, নিজেকে মনে হতে পারে আরাকান রাজকণ্যার হারানো নাকফুলের খোঁজে অভিযানে আসা কোন রাজপুত্র।

প্রসঙ্গত, পানিসহিষ্ণু বড় গাছপালা একটা বনের রূপ নিলে তবেই তাকে বলে সোয়াম্প ফরেস্ট বা জলার বন। উপকূলীয় এলাকার বাইরে অন্যান্য জায়গার সোয়াম্প ফরেস্টগুলো সব সময় জলে প্লাবিত থাকে না। কেবল বর্ষায় এই বনের গাছগুলো আংশিক জলে ডুবে থাকে।