উপজেলা গঠনের ৫ম বর্ষে গুইমারা, এখনো গড়ে উঠেনি পর্যাপ্ত অবকাঠামো
 
                 
নিউজ ডেস্ক
২০১৪ সালে প্রধানমন্ত্রীর ঘোষনার মধ্য দিয়ে মাটিরাঙ্গা, মহালছড়ি ও রামগড়ের থেকে আলাদা হয়ে গঠিত গুইমারা উপজেলার ৫ম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী আজ। নানা আয়োজনে দিবসটি পালন করেছে উপজেলা প্রশাসন, উপজেলা আওয়ামীলীগসহ বিভিন্ন সংগঠন। এ উপলক্ষ্যে সকলের সমন্বয়ে ৩০ নভেম্বর শনিবার সকাল দশটায় জমকালো এক বিশাল আনন্দ র্যালী বের করা হয়। আনন্দ র্যালীটি গুইমারা মডেল হাই স্কুল মাঠ প্রাঁঙ্গন থেকে বের হয়ে উপজেলা পরিষদে এসে শেষ হয়। পরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তুষার আহমেদ এর সভাপতিত্বে উপজেলা হলরুমে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন খাগড়াছড়ি জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কংজরী চৌধুরী।
এসময় বিশেষ অতিথি হিসেবে সিন্দুকছড়ি জোন অধিনায়ক লে. কর্ণেল রুবায়েত মাহমুদ হাসিব, উপ-অধিনায়ক মেজর তৌহিদ সালাহ উদ্দিন, উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান ঝর্না ত্রিপুরা, গুইমারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বিদ্যুত কুমার বড়ুয়া, ইউপি চেয়ারম্যান মেমং মারমা, চাইথোয়াই চৌধুরীসহ স্থানীয় আওয়ামীলীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে গুইমারাকে উপজেলা হিসেবে ঘোষনা দেওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়ে কংজরী চৌধুরী বলেন, কাউকে পিছনে ফেলে নয়, সবাইকে সাথে নিয়েই উন্নয়নের ধারা অব্যহত রাখতে চায় সরকার। সকলকে সম্মিলিতভাবে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে তিনি গুইমারাকে যারা উপজেলা হিসেবে পাওয়ার জন্য নিরলস শ্রম দিয়ে গেছেন তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন এবং উপজেলা ভবন নির্মাণসহ উপজেলার সকল কার্যক্রম অতিশীঘ্রই চালু করা হবে বলে আশ্বাস প্রদান করেন।

আলোচনা সভায় শিক্ষার্থীদের মাঝে পুরস্কার বিতরনের কর্মসূচির মাধ্যমে ১ম অধিবেশন সমাপ্ত ঘোষণা করা হয়। দ্বিতীয় অধিবেশন বিকালে এক প্রীতি ফুটবল ম্যাচ ও মনোজ্ঞ সাংস্কুতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
এদিকে পার্বত্য জেলা খাগড়াছড়ির নবম উপজেলা হিসেবে প্রশাসনিক কার্যক্রম শুরুর পাঁচ বছরেও নিজস্ব ভবনে উঠতে পারেনি গুইমারা উপজেলা পরিষদ। গুইমারা ইউনিয়ন পরিষদ কমপ্লেক্স ভবনে স্বল্প পরিসরে চলছে গুইমারা উপজেলা পরিষদের প্রশাসনিক কার্যক্রম। গুইমারা ইউনিয়ন পরিষদ কমপ্লেক্স ভবনের দোতলার অংশে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ের কার্যক্রম চললেও অনেক বিভাগেরই কার্যক্রম ভাড়া বাড়ি থেকে পরিচালিত হচ্ছে। ফলে তাদের উপজেলা করার দাবি পূরণ হলেও কাঙ্খিত সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে নতুন উপজেলার এ বাসিন্দারা। সম্প্রতি খাগড়াছড়ি জেলা সদর থেকে প্রায় ৩৫ কিলোমিটার দূরের গুইমারা উপজেলা পরিষদ ঘুরে দেখা যায়, উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতরের কার্যক্রম চলছে গুইমারা ইউনিয়ন পরিষদ সচিবের কক্ষে। পাশের আরেকটি কক্ষে চলে উপজেলা মৎস্য বিভাগের কার্যক্রম। ইউনিয়ন পরিষদ কমপ্লেক্সের অপরাপর কক্ষে উপজেলা নির্বাচন অফিস, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগ ও উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয়ের বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।
এ ছাড়াও অফিসের ব্যবস্থা না থাকায় একটি বাড়ি একটি খামার, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস এবং উপজেলা আনসার ও ভিডিপি কর্মকর্তা ভাড়া বাড়িতেই কার্যক্রম চালাচ্ছে। তবে নিজস্ব সুরম্য ভবন থেকে কার্যক্রম পরিচালনার মাধ্যমে জনসেবা নিশ্চিত করেছে গুইমারা উপজেলায় প্রাণি সম্পদ বিভাগ। কোনোভাবে উপজেলা পরিষদের কার্যক্রম চললেও গুইমারা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যানদের জন্য এখানে কোনো অফিসের ব্যবস্থা নেই। ফলে কর্মকর্তা বিহীন কার্যক্রম চালিয়ে থাকেন উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যানগণ।
অন্যদিকে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগ ও উপজেলা কৃষি বিভাগের কার্যক্রম এখনও নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে মাটিরাঙ্গা, রামগড় ও মহালছড়ি উপজেলা থেকেই। ফলে প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগ ও কৃষি বিভাগের কাজে গুইমারা উপজেলার জনগণকে এখনও ছুটতে হয় পাশের তিন উপজেলায়। এছাড়াও অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ‘গুইমারা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স’গড়ে উঠেনি এখনও। ফলে চিকিৎসা সেবা প্রাপ্তিতে এখানকার অধিবাসীদের প্রতিনিয়ত দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে। ফলে স্বাস্থ্যসেবার জন্য গুইমারার জনগণকে পাশের কোনো উপজেলা বা ঢাকা কিংবা চট্টগ্রামে ছুটতে হয়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে গুইমারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তুষার আহমেদ বলেন, প্রশাসনিক অবকাঠামো গড়ে না ওঠার কারণে ইউনিয়ন পরিষদ কমপ্লেক্স ভবনেই প্রশাসনিক কার্যক্রম চালাতে হচ্ছে। ভবনের অভাবে বেশ কয়েকটি অফিসের কার্যক্রম শুরু করা যাচ্ছে না। প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগ ও কৃষি বিভাগ এখনও পূর্বের ন্যায় পরিচালিত হচ্ছে। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে অবহিত করা হয়েছে। ভূমি অধিগ্রহণও শেষ পর্যায়ে, সকল প্রক্রিয়া শেষে ভবনের কাজ শুরু হবে বলেও আশা প্রকাশ করেন তিনি।
প্রসঙ্গত, ২০১৪ সালের ২রা জুন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সরকারের প্রশাসনিক পুনর্বিন্যাস সম্পর্কিত জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির (নিকার) ১০৯ তম সভায় খাগড়াছড়ির রামগড় উপজেলার হাফছড়ি, মহালছড়ির সিন্দুকছড়ি ও মাটিরাঙ্গার গুইমারা ইউনিয়নকে নিয়ে ‘গুইমারা উপজেলা’ ঘোষণা করা হয়। এরপর ৪ঠা সেপ্টেম্বর গেজেট প্রকাশ হওয়ার পর একই বছরের ৩০ নভেম্বর গুইমারা ইউনিয়ন পরিষদ কমপ্লেক্স ভবনে গুইমারা উপজেলা পরিষদের প্রশাসনিক কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন খাগড়াছড়ির সাংসদ কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা।
