এক বছরে ১৮৯১ এইচআইভি রোগী শনাক্ত, সংক্রমণ বাড়ছে রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে
![]()
নিউজ ডেস্ক
বাংলাদেশে ২০২৪ সালের নভেম্বর থেকে ২০২৫ সালের অক্টোবর পর্যন্ত এক বছরে দেশে নতুন করে ১ হাজার ৮৯১ জন এইচআইভি রোগী শনাক্ত হয়েছেন; যা সাম্প্রতিক বছরগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড় বার্ষিক বৃদ্ধি। এই পরিমাণ নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মধ্যে। এই এইচআইভি সংক্রমণ সাধারণ জনগোষ্ঠীর পাশাপাশি বাস্তুচ্যুত হয়ে বাংলাদেশে আসা রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতেও বাড়ছে।
সোমবার (১ ডিসেম্বর) বিশ্ব এইডস দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য প্রকাশ করেন ন্যাশনাল এইডস/এসটিডি কন্ট্রোল প্রোগ্রামের (এনএএসপি) পরিচালক ডা. মো. খায়রুজ্জামান।
নতুন রোগী ও মৃত্যুর তথ্য
ন্যাশনাল এইডস/এসটিডি কন্ট্রোল প্রোগ্রামের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালের অক্টোবর পর্যন্ত এক বছরে নতুন করে ১ হাজার ৮৯১ জন এইচআইভি রোগী শনাক্ত হয়েছেন, আর এইডস-সম্পর্কিত মৃত্যু হয়েছে ২৫৪ জনের। এতে ১৯৮৯ সাল থেকে এখন পর্যন্ত মোট এইডসজনিত রোগে মৃত্যু বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৬৬৬ জনে।
২০২৫ সালে বাংলাদেশে এইচআইভি নিয়ে বেঁচে আছেন আনুমানিক ১৭ হাজার ৪৮০ জন। এই প্রাদুর্ভাব সাধারণ জনগোষ্ঠীর মধ্যে এখনও ০.০১ শতাংশের নিচে। তবুও সংক্রমণের হার বিশেষ জনগোষ্ঠীর মধ্যে তুলনামূলকভাবে অনেক বেশি। এর মধ্যে রয়েছেন- যারা ইনজেকশনের মাধ্যমে নেশা করেন (পিডব্লিউআইডি) এবং যারা পুরুষ হয়ে পুরুষের সঙ্গে যৌন সম্পর্ক করেন (এমএসএম)।
বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, দেশে সামগ্রিকভাবে এইচআইভি সংক্রমণের হার কম থাকলেও এসব গোষ্ঠীর মধ্যে ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি রয়েছে। সময়মতো করা গেলে এইচআইভি সাধারণ মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়তে পারে।
রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মধ্যে সংক্রমণ বেড়েছে
এই বছরের নতুন আক্রান্ত এইচআইভি রোগীদের মধ্যে ২১৭ জন রোহিঙ্গা। স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা বলছেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অতিরিক্ত ভিড়, সীমিত স্বাস্থ্যসেবা এবং দুর্বল এইচআইভি প্রতিরোধ কর্মসূচির কারণে এই সংক্রমণ বাড়ছে।
কক্সবাজারে কাজ করা সংস্থাগুলো জানাচ্ছে, বিদেশি অর্থায়ন কমে যাওয়ায় এইচআইভি টেস্টিং কভারেজ কমে গেছে এবং অনেক সংক্রমণ অজানা রয়ে যাওয়ার আশঙ্কা বাড়ছে।
যুবসমাজ ও ভৌগোলিক বিস্তার
ন্যাশনাল এইডস/এসটিডি কন্ট্রোল প্রোগ্রামের তথ্য অনুযায়ী, নতুন রোগীর সংখ্যা সবচেয়ে ২৫ থেকে ৪৯ বছর বয়সীদের মধ্যে বেশি হলেও, ২০ থেকে ২৪ বছর বয়সীদের মধ্যে তা উল্লেখযোগ্য হারে বাড়তে দেখা যাচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী, সদ্য কর্মজীবনে যোগ দেওয়া তরুণ এবং শহরমুখী যুবকদের মধ্যে এই ঝুঁকি বাড়ছে। কারণ তাদের অনেকের স্বচ্ছ তথ্য, সুলভ পরীক্ষা ও গোপনীয় সেবার সুযোগ নেই।
বিশেষজ্ঞদের মতে, দেশে যুববান্ধব টেস্টিং সেন্টার ও সচেতনতা কর্মসূচির অভাব রয়েছে। ফলে বহু তরুণ কেবল উপসর্গ দেখা দেওয়ার পরই শনাক্ত হন। এইচআইভি এখন শুধু বড় শহরেই সীমাবদ্ধ নেই, অন্যান্য জেলাতেও পাওয়া যাচ্ছে। যদিও দেশের মাত্র ২৩টি জেলায় এইচআইভি টেস্টিং সুবিধা আছে।
ন্যাশনাল এইডস/এসটিডি কন্ট্রোল প্রোগ্রাম জানিয়েছে, বাংলাদেশের অনেক সরকারি হাসপাতালে এইচআইভি চিকিৎসার সীমাবদ্ধতা রয়েছে। এছাড়াও কমিউনিটি সংগঠনের দুর্বল সমন্বয়, সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতার অভাব এবং এইচআইভি আক্রান্তদের নিয়ে সামাজিক কলঙ্ক বড় বাধা হয়ে আছে। এই বাধাগুলো প্রতিরোধ ব্যাহত করছে এবং চিকিৎসা শুরুর সময় দেরি করাচ্ছে, বিশেষ করে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে।
তারা সতর্ক করে বলেছে, জেলা-উপজেলা পর্যায়ের সেবা বাড়ানো না গেলে এবং কমিউনিটির সম্পৃক্ততা বাড়ানো না গেলে সংক্রমণ ও মৃত্যু বৃদ্ধির ঝুঁকি থেকে যাবে।
- অন্যান্য খবর জানতে এখানে ক্লিক করুন।
- ফেসবুকে আমাদের ফলো দিয়ে সর্বশেষ সংবাদের সাথে থাকুন।
- ইউটিউবেও আছি আমরা। সাবস্ক্রাইব করে ঘুরে আসুন ডিজিটাল কন্টেন্টের দুনিয়ায়।