আগরতলায় নামসর্বস্ব সংগঠনের সভা: পার্বত্য ইস্যু আন্তর্জাতিকীকরণে প্রস্তাব

আগরতলায় নামসর্বস্ব সংগঠনের সভা: পার্বত্য ইস্যু আন্তর্জাতিকীকরণে প্রস্তাব

আগরতলায় নামসর্বস্ব সংগঠনের সভা: পার্বত্য ইস্যু আন্তর্জাতিকীকরণে প্রস্তাব
“এখান থেকে শেয়ার করতে পারেন”

Loading

নিউজ ডেস্ক

বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রাম ইস্যুকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রচার এবং ঢাকাকে রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক চাপে ফেলতে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের রাজধানী আগরতলায় এক আলোচনাসভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। তবে সভার আয়োজক হিসেবে যে সংগঠনের নাম তুলে ধরা হয়েছে—‘ক্যাম্পেইন ফর হিউম্যানিটি প্রোটেকশন (সিএইচপি)’—তার কোনো অস্তিত্বই অনলাইন অনুসন্ধানে খুঁজে পাওয়া যায়নি। নামসর্বস্ব এই সংগঠনের মাধ্যমে আলোচনাসভার আয়োজনকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন ও সন্দেহ দেখা দিয়েছে।

মঙ্গলবার (২ ডিসেম্বর) আগরতলা প্রেসক্লাবে ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি আলোকে বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের মানবাধিকার পরিস্থিতি’ শীর্ষক এই সভা অনুষ্ঠিত হয়। আয়োজক হিসেবে সিএইচপির নাম প্রচার করা হলেও সংগঠনটির ওয়েবসাইট, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বা অনলাইন রেকর্ড কোথাও কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। এতে সংগঠনের প্রকৃত উদ্দেশ্য ও পেছনের শক্তি নিয়ে নানা জল্পনা তৈরি হয়েছে। স্থানীয় মহল ও পর্যবেক্ষকদের কেউ কেউ মনে করছেন—এ উদ্যোগের সঙ্গে সন্তু লারমার নেতৃত্বাধীন জেএসএসের সূত্র থাকতে পারে।

সভায় বক্তারা বাংলাদেশের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তোলার পাশাপাশি ভারতীয় গণমাধ্যমে পার্বত্য চট্টগ্রাম ইস্যু আরও জোরালোভাবে তুলে ধরার আহ্বান জানান। নর্থ-ইস্ট লাইভ নিউজ চ্যানেলের সহকারী সম্পাদক পিনাকী দাস বলেন, “পাশের বাড়িতে আগুন লাগলে চুপ করে থাকার কোনো কারণ নেই।” তিনি পার্বত্য অঞ্চলে কথিত মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে ভারতীয় জনগণের সহায়তা কামনা করেন।

গবেষক পরিচয়দানকারী ড. শ্যামল বিকাশ চাকমা দাবি করেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের পরিস্থিতি শুধু স্থানীয় ইস্যু নয়, বরং ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের নিরাপত্তার সঙ্গেও সম্পৃক্ত। অন্যদিকে ইন্টারন্যাশনাল চাকমা ফাউন্ডেশনের সভাপতি প্রগতি চাকমা সেনা অভিযান, রেগুলেশন অমান্য, অস্থায়ী সেনাক্যাম্প প্রত্যাহার এবং বাঙালি সেটেলারদের সরিয়ে নেওয়ার দাবি তোলেন।

সিএইচপির সভাপতি হিসেবে পরিচয়দানকারী নিরঞ্জন চাকমা ‘১৭ আগস্ট ১৯৪৭’-কে ‘চাকমা কালো দিবস’ হিসেবে উল্লেখ করে চুক্তির পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নের দাবি জানান। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক প্রিয়লাল চাকমা সেনা অভিযান, ভূমি বেদখল, বিচারবহির্ভূত হত্যার অভিযোগ তুলে সাম্প্রতিক অন্তর্বর্তী সরকারের সময় বিভিন্ন স্থানে কথিত হামলার ঘটনাও উল্লেখ করেন।

সভা শেষে প্রিয়লাল চাকমা তিন দফা প্রস্তাব উপস্থাপন করেন—
১. বাংলাদেশ সরকারকে রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক চাপ সৃষ্টি করে চুক্তি বাস্তবায়ন ও মানবাধিকার লঙ্ঘন বন্ধের দাবি।
২. ভারতীয় গণমাধ্যমে পার্বত্য ইস্যু আরও প্রাধান্য দিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে জনমত গঠন।
৩. জুম্ম জনগণের আন্দোলনকে শক্তিশালী করতে সহায়তা।

পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক গবেষক ও বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক মইনুল ইসলাম বলেন, ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলো বরাবরই পার্বত্য চট্টগ্রাম নিয়ে আগ্রহী। পাহাড়ে অস্থিতিশীলতা বজায় রেখে তারা নিজেদের ভূরাজনৈতিক প্রভাব ধরে রাখতে চায়। তিনি আরও বলেন, জেএসএসের সঙ্গে ভারতের বর্তমান সম্পর্ক তেমন উষ্ণ নয়, তবে ইউপিডিএফের সঙ্গে তাদের সদ্ভাব রয়েছে। নিজেরা প্রাসঙ্গিক থাকতে এই ধরনের অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়ে থাকতে পারে।

প্রসঙ্গত, পার্বত্য চট্টগ্রাম ইস্যুকে কেন্দ্র করে সীমান্তের ওপারে এমন নামসর্বস্ব সংগঠনের সক্রিয়তা বাংলাদেশে নতুন উদ্বেগ তৈরি করেছে।

  • অন্যান্য খবর জানতে এখানে ক্লিক করুন।
  • ফেসবুকে আমাদের ফলো দিয়ে সর্বশেষ সংবাদের সাথে থাকুন।
  • ইউটিউবেও আছি আমরা। সাবস্ক্রাইব করে ঘুরে আসুন ডিজিটাল  কন্টেন্টের দুনিয়ায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

You may have missed