বঙ্গবন্ধুর দর্শন: বাংলাদেশ ও বাংলাদেশের জনগন - Southeast Asia Journal

বঙ্গবন্ধুর দর্শন: বাংলাদেশ ও বাংলাদেশের জনগন

“এখান থেকে শেয়ার করতে পারেন”

Loading

খগেশ্বর ত্রিপুরা

পৃথিবীতে জন্মমৃত্যুর খেলা নিরন্তর। কত মানষ জন্মগ্রহণ করে আর কত মানুষ মৃত্যু হয় তার কোন হিসাব নেই। কিন্তু কিছু মানুষ তার কীর্তিকলাপের কারণে তাঁর উচ্চতর মহান ও মহৎ অবদানের জন্য অমর হয়ে থাকে। যেমনি বাংলাদেশের স্বাধীনতার স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান অমর, অক্ষয়, মৃত্যঞ্জয়ী। এই পৃথিবীর আলোবাতাস যতদিন থাকবে ততদিন থাকবে বঙ্গবন্ধুর নাম, বঙ্গবন্ধুর আদর্শ। বঙ্গবন্ধুর আদর্শ যতদিন থাকবে ততদিন থাকবে বাংলাদেশ, এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ। তাই বঙ্গবন্ধু মানেই বাংলাদেশ এবং বাংলাদেশ মানেই বঙ্গবন্ধু। আলো এবং ছায়া যেমনি তেমনি বাংলাদেশ ও বঙ্গবন্ধু নিবিরভাবে সম্পর্ক। অধিকার এবং কর্তব্য যেরূপ আঙ্গাঙ্গিকভাবে জড়িত তেমনি বঙ্গবন্ধু এবং বাংলাদেশ আঙ্গাঙ্গিকভাবে জড়িত এবং একে অপরের অবিচ্ছেদ্য অংশ। তাই তো বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের স্বাধীনতার আগে পূর্বপাকিস্তান তথা বাংলাদেশের মানুষের কথা ভাবতেন, এদেশের মানুষকে পাকিস্তানের শাসক গোষ্ঠীর হাত হতে কিভাবে মুক্ত করা যায়, এখনকার মানুষ পাকিস্তানীদের হাত হতে শোষন মুক্ত করে কিভাবে বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠা করে উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ কায়েম করে স্বপ্নের সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠা করা যায়। এই চিন্তার ফলশ্রু হিসাবে স্বাধীনতা যুদ্ধ অনুষ্ঠিত হয় এবং যুদ্ধে তিনি নেতৃত্ব দেন। বঙ্গবন্ধুর রাজনীতির বিছক্ষনতা, যুক্তি, বুদ্ধি, সততা এবং জনপ্রিয়তার কারণে অতি অল্প সময়ের মধ্যে বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভ করে লাল সবুজের পতাকা অর্জনের মাধ্যমে বিশ্বের মানচিত্রে একটি স্বাধীন সর্বভৌম রাষ্ট্র হিসাবে অভ্যুদয় ঘটে যার জন্যে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সৃষ্টি হয়।

স্বাধীনতা অর্জনের পর বঙ্গবন্ধু এদেশকে কিভাবে সোনার বাংলায় রূপান্তর করা যায় স্বপ্ন দেখেন। তিনি তাঁর স্বপ্নকে বাস্তবায়নের জন্য পরিকল্পনা করে কাজ করতে থাকেন তাঁর এই বিচক্ষন কর্মতৎপরতার কারণে যুদ্ধ বিধস্থ দেশকে অতি অল্প সময়ে বাংলাদেশকে স্বল্পোন্নতা দেশে পরিণত করেন। কিন্তু বিধিবাম দেশী বিদেশী কিছু ষড়যন্ত্রকারীরা স্বাধীনতা বিরোধী চক্র নৃশংসভাবে বঙ্গবন্ধকে স্বপরিবারে হত্যা করে। ষড়যন্ত্রকারী চেয়েছিল বঙ্গন্ধুকে হত্যা করে পাকিস্তানের পরাজয়ের গ্লানির প্রতিশোধ নিতে। এদেশের উন্নয়নের অগ্রযাত্রাকে বন্ধ করতে গণতন্ত্রের অগ্রযাত্রাকে গলাটিপে হত্যা করতে এবং সদ্য প্রতিষ্ঠিত স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রকে অচল করে দিতে। কিন্তু যড়যন্ত্রকারীরা জানেনা যে, যেকোন ব্যক্তিকে হত্যা করতে পারলেও তার আদর্শকে হত্য করতে পারে না। যেমন দার্শনিককে হত্যা করতে পারলেও তাঁর দর্শনকে হত্যা করতে পারে না। তেমনি সাহিত্যকের মৃত্যু হলেও তার সৃষ্ট সুসাহিত্যের মৃত্যু হয় না। কবির মৃত্যু হলেও তার সুকবিতার মুত্যু নেই। বৈজ্ঞানিকের মৃত্যু হলেও বিজ্ঞানের মৃত্যু নেই। এই জন্য দার্শনিক সক্রেটিসকে বিনাদোষে তৎকালীন এথেন্স -এ ‘হেমলক’ নামক বিষপান করিয়ে হত্যা করলেও সক্রেটিসের দর্শনের মৃত্যু হয়নি। ঠিক তাই বঙ্গবন্ধুকে হত্য করতে পারলেও তাঁর দর্শনের মৃত্যু নেই। যে দর্শন বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম। বাংলাদেশের মানুষকে ভালবাসা। বাংলাদেশের মানুষের সার্বিক কল্যাণ, মঙ্গল ও অগ্রগতির জন্যে এদেশকে ক্ষুধা দারিদ্র মুক্ত সোনার বাংলায় রূপান্তর করার জন্য চিন্তা চেতনা ও আদর্শ বিদ্যমান রয়েছে, লুকায়িত আছে। দর্শনের উৎপত্তি যেমন জগৎ ও জীবনকে নিয়ে এবং জীবন ও জগৎকে নিয়ে দর্শনের আবর্তিত। জীবনকে বাদ দিয়ে যেমনি দর্শন হয় না, তেমনি জগৎ ব্যতীত জীবনের কল্পনাতীত। জীবনের কল্যাণ ব্যতীত কোন কিছুকে কল্যাণজনক কাজ বলে ধরে নেয়া যায় না। কারণ মানুষ যা কিছু করে মানুষের কল্যানের জন্যেই করে থাকে। অনুরূপ বঙ্গবন্ধুর দর্শন বাংলাদেশ এবং বাংলাদেশের মানুষকে নিয়ে আবর্তিত। বাংলাদেশ এবং বাংলাদেশের মানুষকে বাদ দিয়ে বঙ্গবন্ধুর দর্শন যেমনি হয় না, তেমনি বঙ্গবন্ধুকে বাদ দিয়ে বঙ্গবন্ধুর দর্শন যেমনি হয় না। তেমনি বঙ্গবন্ধুকে বাদ দিয়ে বাংলাদেশ নামক ভূখন্ডের অভ্যুদয়, ব্যাপ্তি উন্নতি, সমৃদ্ধি কল্পনাতীত। তাই বাংলাদেশকে যেমনি বঙ্গবন্ধুর আদর্শও চেতনার মাধ্যমে তাঁর নেতৃত্বে স্বাধীন করেছেন তেমনিভাবে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও চেতনা তথা বঙ্গবন্ধুর দর্শনকে বুকে ধারণ করে কাজ করার মাধ্যমে এগিয়ে নিতে হবে উন্নত সমৃদ্ধ করতে হবে। সত্য সুন্দর ও জ্ঞানকে কেন্দ্র করে পৃথিবী যেমন সামনের দিকে এগিয়ে এসেছে তেমনি বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে নিয়ে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে হবে। রোমান দার্শনিক বিথিরাস(৪৭০-৫২৬) কে এক ভিত্তিহীন অভিযোগে মৃত্যুদন্ড দেয়া হলে মৃত্যুদন্ড কার্যকরের আগে তিনি দর্শনের সান্তনা নাম (the Consolation of Philosophy) একটি গ্রন্থ রচনা করেন, যে গ্রন্থের মূল বক্তব্য ছিল জ্ঞান, সত্য, সুন্দর এবং কল্যাণ ও সুনীতির চর্চা। তিনি লিখেছেন মহৎ ও কল্যাণকর মানবোচিত জীবন যাপনের প্রয়াসই হচ্ছে দর্শন। আর যারা বা যিনি বিভিন্ন প্রতিকূলতার মুখে ও লক্ষ্যের অভিমুখে যাওয়া অব্যহিত রাখেন, কোন প্রলোভন ও প্ররোচনায় সেই পথ পরিহার করে না তারাই বা তিনি হচ্ছেন প্রকৃত দার্শনিক। তাই দার্শনিকের প্রেক্ষাপটের আলোকে বিচার বিশ্লেষণ করলে নিসন্দেহে বঙ্গবন্ধু একজন শ্রেষ্ঠ দার্শনিক। কারণ বঙ্গবন্ধু এদশের নিপিড়িত নির্যাতিত মানুষকে মুক্ত করতে যে আন্দোলন সংগ্রাম করেছেন সেই আন্দোলন সংগ্রামে সত্য, সুন্দর, জ্ঞান এবং সুনীতি বিদ্যমান রয়েছে। যেখানে অন্তর্নিহিত রয়েছে কর্ম ও জ্ঞান সম্পক এবং একে অপরের পরিপূরক। এই ২টির সমন্বয় সাধনের মাধ্যমে তিনি এদেশকে মুক্ত করেছেন। লোভ, মোহ. জেল-জুলুম কোনটাই বঙ্গবন্ধুকে তার লক্ষ উদ্দেশ্যও হতে প্রভাবিত করতে পারেনি। পাকিস্তান সরকার কর্তৃক সংগ্রামের সময় তাঁকে অনেকবার মন্ত্রিত্ব পদ দিয়ে আন্দোলনকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার জন্য যেমনি চেয়েছিল তেমনি তাঁকে অনেকবার জেল-জুলুম সহ্য করতে হয়েছে, কিন্তু তবু জনগনের কল্যানের জন্য তার কক্ষপথ হতে তাকে তিল পরিমাণ কক্ষচ্যুত করতে পারেনি। তিনি স্বয়ং ও অনেকবার ভাষন দেয়ার সময় বলেছিণের “আমি মন্ত্রিত্ব চায় না, এ দেশের মানুষকে মুক্ত করতে চায়, ইনশাআল্লাহ। দর্শনের উপপাদ্য বিষয় যেমন মস্তিস্কে ধারনা করা তেমনি বঙ্গবন্ধুও এদেশের মানুষের সমস্যা তাঁর মস্তিস্কে ধারণ করেন। এই সমস্যাকে তিনি মহৎকর্ম হিসাবে ধারণ করেছেন বলেই তাঁর নেতৃত্বে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে বাংলার জনগণ ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। দার্শনিক সক্রেটিস বলেছিলেন কর্ম ও জ্ঞান পারস্পরিক সম্পর্কযুক্ত। এই ২টি মধ্যে যখনি সমন্বয় ঘটে তখন কোন উদ্দেশ্য সফল হয়। বঙ্গবন্ধুর এই মহৎকর্ম বাস্তবায়নের জন্য রয়েছে মহৎ জ্ঞান, যার জন্য মহৎ জ্ঞান ও মহৎকর্মের সমন্বয়ের মাধ্যমে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের মাধ্যমে মাত্র ৯ (নয়) মাসের বাংলাদেশকে স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হয়। শুধু তা নয়, স্বাধীনতার পর অতি অল্প সময়ের মধ্যে মিত্রবাহিনী ভারতীয় সেনাবাহিনীকে ফেরৎ পাঠিয়ে বঙ্গবন্ধু বিশ্ববাসীকে চমক দেখিয়েছেন। স্বাধীনতা যুদ্ধে নেতৃত্ব দান কালে এবং স্বাধীনতা অর্জনের পর তার দুরদৃষ্টি রাজনৈতিক বিচক্ষনতা, বুদ্ধিমত্তা, জনগনের প্রতি অগাধ ভালবাসা এবং প্রতিটি কর্মে সততা ও যুক্তিকতার জন্যে বঙ্গবন্ধু বিশ্বের রাষ্ট্রনায়ক সহ বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গও জনগনের নজর কেড়ে নিতে সক্ষম হয়েছেন। তাই সমকালীন বিশ্বে এবং বর্তমান বিশ্বে অনেক নেতা। নেতৃত্ব, সাংবাদিক তাঁর সম্পর্কে অনেক প্রশংসা সহ ইতিবাচক মন্তব্য করেছেন। যেমন কিউবার বিদ্রোহী নেতা ফিডেল কাষ্ট্রো ১৯৭৩ সালে আলজিরির্য়াস জোট নিরপেক্ষ সম্মেলনে বঙ্গবন্ধুর সাথে স্বাক্ষাতের পর বলেছিলেন “আমি হিমালয় দেখিনি, কিন্তু আমি শেখমুজিবকে দেখেছি। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বঙ্গবন্ধুর স্মৃতি যাদুঘর পরিদর্শনকালে ৬ জুন ২০১৫ সালে বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করে বলেন “শেখ মুজিবুর রহমান একজন বড় মানবতাবাদী নেতা ও তিনি সব মানুষের সমতা ও সুযোগের পক্ষে ছিলেন।” বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে চির অটুট বন্ধনে বঙ্গবন্ধুর যে লক্ষ ছিল তা উপলব্ধি করার প্রতিশ্রুতি দেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী। ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি ২০১৮ সালে ১৫ জানুয়ারী বঙ্গবন্ধু যাদুঘর পরিদর্শনকালে বলেন “আই স্যালুট দ্য গ্রেড লিডার অব অলটাইমস।” ২০১৯ সালে ভারতের সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং মন্তব্য করেন” বঙ্গবন্ধু শুধু বাংলাদেশের নয়, বিশ্বের মুক্তিযুদ্ধা হিসাবে তাঁকে সমরণ করা হবে।” ভূটানের প্রধানমন্ত্রী লোটেশেরিং ২০১৯ সালের ১২ এপ্রিল তারিখে বঙ্গবন্ধু যাদুঘর পরিদর্শন কালে লিখেন “প্রিয় শেখ মুজিব, মানুষ বলে তুমি মৃত, কিন্তু আমি অনুভব করি তুমি আজও আমাদের চারপাশে। আমি খুশীর সংগে জানাতে চাই যে তোমার স্বপ্ন আজ তোমার মেয়ে শেখ হাসিনার দ্বারা পূরণ হয়েছে।” তুমি কোটি কোটি মানুষের হৃদয় জয় করেছে। তুমি কেবল বঙ্গবন্ধু নও, ভূটানেরও বন্ধু।” ভূটানের রাজমাতা জিংমে সিংমে ওয়াংচুকের তৃতীয় স্ত্রী ২০১৬ সালে ১৪ ফেব্রুয়ারী বঙ্গবন্ধু যাদুঘর পরিদর্শনের সময় লিখেন “বঙ্গবন্ধু একজন মহান ও দূরদর্শী নেতা হিসাবে তাঁকে শ্রদ্ধা জানাচ্ছি।” শ্রীলংকার প্রেসিডেন্ট মাইথ্রি পালা সিরিসেনা ২০১৭সালে ১৩ জুলাই বঙ্গবন্ধুর যাদুঘর পরিদর্শনকালে লিখেন “বঙ্গবন্ধু এ অঞ্চলের একজন মহান নেতা, তাঁর ত্যাগ বাঙ্গালী জাতিকে উজ্জীবিত করে যাবে। এই অঞ্চলের শান্তি ও সমৃদ্ধি অর্জনে বঙ্গবন্ধুর লক্ষ্য পূরনের অংশীদার হতে পেরে শ্রীলংকা গর্বিত।” শ্রীলংকার আরো একজন পেসিডেন্ট কুমারা তুঙ্গা যাদুঘর পরিদর্শেও সময় লিখেন এমন একজন মহৎ মানুষকে বুলেট বিদ্ধ করে হত্যা করা হলেও তাঁর অর্জনের স্মৃতি এদেশে বেঁচে থাকবে। তাঁর অনুসারী কন্যা যেন বঙ্গবন্ধুর উপর উচ্চতায় বাংলাদেশকে নিয়ে যেতে সক্ষম হন।” শ্রীলংকার জাতীয় সংসদের স্বীকার করো জয় সুরিয়া ২০১৬ সালে ৪ জুন লিখেছেন” পরবর্তী প্রজন্ম চিরদিন বঙ্গবন্ধুকে স্মরন করবে।” ২০১৭সালে ১৯ ডিসেম্বর তুরস্কের প্রধানমন্ত্রী যাদুঘর পরিদর্শনকালে লিখেছেন “বিংশ শতাব্দীর অন্যতম নেতা ছিলেন বঙ্গবন্ধু। এই কারণে মৃত্যুর ৪০ বছরের বেশি সময়ের পরও তাঁকে মানুষ শ্রদ্ধা ও স্মরণ করে। ২০১৮ সালে ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট জোকো উইদোদো মন্তব্য বই এ লিখেছেন “বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মানব জাতির জন্য অনুপ্রেরণার বাতিঘর।” সৌদি আরবের যোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের প্ররিকল্পনা ও উন্নয়ন বিষয়ক উপমন্ত্রী খালেদ আল ওতাইবি ২০১৭ সালে আগষ্ট মাসে বাংলাদেশে এসে লিখেছেন যে, “ জাতির পিতা ছিলেন একজন দুর্দান্ত অনুপ্রোনিত মানুষ, যিনি তাঁর জনগণের সংগ্রামের প্রতীক। তাঁর পরিবারের দেখলাম এবং তাঁদের জীবন যাপনের পদ্দতি আমাকে এই ধারনা দিল যে, তাঁরা সাধারণ জীবন যাপন করতেন। বঙ্গবন্ধু যাদুঘরের সহকারী কিউরেটর কর্মী আফরিন জাহান জানান “প্রায় সবাই একই প্রশ্ন করেন কেন এমন অরক্ষিত স্থানে সাধারণ বাড়িতে একজন প্রধানমন্ত্রী বাস করেন?” যাদুঘরের ভিআইপির খাতায় একমাত্র বাংলায় লিখেন মহামান্য রাষ্ট্রপতি মো: আব্দুল হামিদ। ২০১৬ সালে ১৯ আগষ্ট যাদুঘর পরিদর্শনকালে তিনি লিখেছেন “মুক্তি সংগ্রামে যেমন বাড়িটি বাঙ্গালীর দিকে নির্দেশনার উৎস ছিল, তেমনি বঙ্গবন্ধুর স্মৃতি যাদুঘর ও নতুন প্রজন্মের কাছে অনুপ্রেরনার উৎস হিসাবে কাজ করবে।” (তথ্যসূত্র- ১৫ আগষ্ট ২০১৯ সংখ্যা প্রমাণ আছে, কিন্তু নেতাদেরকে বঙ্গবন্ধু- শরিফুজ্জামান ঢাকা) তাছাড়াও আরও অনেক বিশ^নেতা এবং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন নেতা ও সাংবাদিক বৃন্দ বন্ধু সম্পর্কে অর্থবহ মন্তব্য লিখেছেন। যেমন পশ্চিম জার্মানীর পত্রিকা লিখেছেন “শেখ মুজিব চতুর্দশ লুইয়ের মাতা এতজনপ্রিয় ছিল যে, তিনিও দাবী করতে পারেন “আমিই রাষ্ট্র” শেখ মুজিব নিহত খবরে আমি মর্মাহত। তিনি একজন মহান নেতা ছিলেন। তার অন্যান্য সাধারণ সাহসিকতা এশিয়া ও আফ্রিকার জনগণের জন্য প্রেরনা দায়ক ছিল। ফিলিস্তিনির সাবেক প্রেসিডেন্ট ইয়াসির আরাফাত বলেন “আপসহীন সংগ্রামী নেতৃত্ব আর কুসুম কোমল হৃদয় ছিল বঙ্গবন্ধুর চরিত্রের বৈশিষ্ট্য । ভারতের সাবেক প্রেসিডেন্ট আবুল কালাম আজাদ বলেছিলেন “বঙ্গবন্ধু ছিলেন ঐশ^রিক আগুন এবং তিনি নিজেই সেই আগুন ডানাযুক্ত করতে পেরেছিলেন।” ইরাকের সাবেক প্রেসিডেন্ট বলেছিলেন “বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলেন সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রামের প্রথম শহীদ, তাই তিনি অমর।” ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অংশ গ্রহণকারী সাবেক পাকিস্তানী (বেলুচিন্তান) অফিসার মেজর জেনারেল তোজাম্মেল হোসেন মালিক তার স্মৃতি কথায় লিখেছেন “বস্তুত মুজিব দেশদ্রোহী ছিলেন না। নিজ জনগণের জন্য তিনি ছিলেন একজন মহান দেশ প্রেমিক। “পাকিস্তানের আর এক সেনা কর্মকর্তা মেজর সিদ্দিক মালিক ৭ই মার্চের বঙ্গবন্ধুর ভাষন সম্পর্কে তার অস্ত্রসমপূন দলিলে লিখেছেন “রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধুর ভাষনের পর ঘরমুখী মানুষের ঢল নামে। তাদের দেখে মনে হয় তারা যেন আশাব্যঞ্জক কথা শুনে কোন মসজিদ বা গির্জা হতে বেড়িয়ে আসছেন।” বঙ্গবন্ধুকে যখন পাকিস্তান কর্তৃক রাষ্ট্রবিদ্রোহের অভিযোগ আনা হয় তখন জাতি সংঘের মহাসচিব উথাই পাকিস্তানকে হুঁশিয়ারী দিয়ে বলেছিলেন “শেখ মুজিবকে ফাঁসি অথবা দীর্ঘদিন কারা বন্দি করে রাখা হলে পাকিস্তান যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন হারাবে।” ১১জন মার্কিন সিনেটর তখন এক বিবৃতিতে আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, “পাকিস্তান সরকার শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি মহানুভূতিশীল হবে।” বৃটিশ হাউস অব লর্ডসের সদস্য সা¤্রাজ্যবাদ বিরোধী শীর্ষস্থানীয় যুদ্ধা ফেনার ব্রকওয়ে বলেছেন সংগ্রামের ইতিহাসে লেনিন্ড রোজানিস বার্ক, গান্ধী, নকুনা, লুমুমবা, কাষ্ট্রো ও আন্দোলেন সময়ে মুজিবের নাম ও উচ্চারিত হবে। তিনি আরও বলেন তাকে হত্যা করা মানব হত্যার চেয়ে অনেক বড় অপরাধ। সেনেগালের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট আবু ফিতব বলেন “বঙ্গবন্ধুর অন্যতম মহান ও শ্রদ্ধাভাজন নেতা।” নোবেল বিজয়ী উইলি বন্টি বলেছিলেন “মুজিব হত্যার পর বাঙ্গালীদের আর বিশ্বাস করা যায় না। যারা এ বড় মাপের নেতা মুজিবকে হত্যা করেছে তারা যেকোন জগন্য কাজ করতে পারে।” বৃটিশ এমপি জেসসনামন্ড বলেছিলেন “বঙ্গবন্ধুকে হত্য করে শুধু মাত্র বাংলাদেশ এটিম হয়নি। বিশ্ব হারিয়েছে একজন মহান সন্তানকে।” বৃটিশ দৈনিক দ্যা গাউয়ানের মতে শেখ মুজিবুর ছিলেন একজন বিসমায়কর ব্যক্তিত্ব। দি ক্রাসিয়াম টাইম বলেছেন মুজিব না থাকলে বাংলাদেশ কখনই জন্ম নিত না। ডেইলি টেলিগ্রাফ পত্রিকা বলেছেন ”বাংলাদেশের লক্ষ লক্ষ লোক শেখ মুজিবের জগন্য হত্যাকারীকে অপূরনীয় মানুষ হিসেবে বিবেচনা করবে। কিন্তু উনি বলেন “বঙ্গবন্ধু হচ্ছে পয়েন্ট অব পরিটিক্স। মরহুম জননেতা মাওলানা ভাসানী বলেছিলেন “টুঙ্গি পাড়ায় শেখ মুজিবের কবর একদিন সামাধিস্থান রূপান্তর হবে এবং বাঙ্গালাদের তীর্থ স্থানে রূপ লাভ করবে।”

মিশরের প্রেসিডেন্ট আনোয়ার সাফাত আক্ষেপ করে বলেন “তোমরা আমারই দোয়া ট্যাং দিয়ে আমার বন্ধু মুজিবের হত্য করেছে। তাই আমি নিজেই নিজেকে অভিশাপ দিচ্ছি।” (তথ্যসূত্রে – BCS Interatisnd Affairs, ১৫ আগষ্ট ২০১৯)। ভারতের পররাষ্ট্র সচিব হর্ষবর্ধন শ্রীংলা ২মার্চ সোমবার “বাংলাদেশ ভারত একটি প্রতিশ্রুতিবাদ ভবিষ্যৎ” শীর্ষক আলোচনা সেমিনারে বলেন- “বঙ্গবন্ধু একজন বিশ্বনন্দিত নেতা এবং উপমহাদেশের মুক্তির প্রতীক।

উল্লেখিত রাষ্ট্রপ্রধান কুটনৈতিক সাংবাদিক সংবাদপত্র ছাড়াও আরও অনেক বিখ্যাত ব্যক্তিও রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে ইতিবাচক মন্তব্য করেছেন, যা এখানে উল্লেখ করা হয়নি। তাই আমাদের বুঝার কোন বাকী নেই (বঙ্গবন্ধু একজন বিখ্যাত ব্যক্তি, একজন জনপ্রিয় ব্যক্তি একজন সৎ ও আদর্শবান ব্যক্তি-যাঁর মধ্যে দর্শন লুকিয়ে আছে এবং তিনি একজন দার্শনিক। পূর্বেই বলেছি যে, আদর্শ ও চেতনার মৃত্যু নেই, যে চেতনা ও আদর্শের মধ্যে মানব কল্যান অন্তর্নিহিত আছে। বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও চেতনার মধ্যে বাংলাদেশের মানুষের কল্যাণ ও অগ্রগতির বিষয়টি সম্পর্কিত। বঙ্গবন্ধু এদেশের মানুষকে নিয়ে স্বপ্ন দেখেন সোনার বাংলায় রূপান্তর করার জন্য। বঙ্গবন্ধুর আদর্শ কোনদিন মৃত্যু হবে না এবং এই আদর্শকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ, বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবি, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের লোকজন এবং বাংলাদেশের রাষ্ট্রযন্ত্রকে কাজ করতে হবে। এই আদর্শকে যতবেশী সচল ও কার্যকরী করতে পারবেন ততবেশী এদেশের মানুষ, সমাজ ও জাতি উন্নত সমৃদ্ধ হবে, এ দেশের সমাজ ও সভ্যতা অগ্রগতি হবে। তখন ক্ষুধা দরিদ্রমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠা হয়ে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলায় রূপান্তর হবে। বঙ্গবন্ধুর উত্তরসুরী তারই সুযোগ্য কন্যা গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের এই সোনার বাংলা কায়েম করার জন্য ১৯৪১ সালকে লক্ষ্য নির্ধারণ করে ঐকান্তিক প্রচেষ্ঠার মাধ্যমে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। তিনি কোন কোন সময় কঠিন ও কঠোর হয়ে কাজ করেন এবং কঠিন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। এই কঠিন সিদ্ধান্তের অংশ হিসাবে জননেত্রী শেখ হাসিনা ঘোষণা করেন যে, বঙ্গবন্ধুর দর্শন তথা বঙ্গবন্ধুর সম্পর্ক ও চেতনাকে সঠিকভাবে প্রয়োগ করতে হবে। বঙ্গবন্ধু এদেশকে সোনার বাংলায় রূপান্তর করার জন্য বেশী গুরুত্ব দিয়েছেন শিক্ষা ব্যবস্থা, সম্প্রদায়িক সম্প্রীতি, দুর্নীতি মুক্ত বাংলাদেশ, মাদক মুক্ত বাংলাদেশ, সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজ মুক্ত বাংলাদেশ গড়ার এবং শোষণ ও বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়ার জন্য। তাছাড়া রাজনৈতিক দুবৃত্তায়ন বন্ধ করতে হবে। রাজনৈতিক নেতা ও প্রশাসনিক কর্মকর্তার মধ্যে সমন্বয় সাধন করে কাজ করতে হবে। গ্রামকে শহরে পরিণত করার মধ্যে সংযোগ সড়ক নির্মাণ করতে হবে। গ্রামের মানুষের স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করতে হবে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দুর্নীতিকে বাংলাদেশের মানুষের চরম শত্রু বলে দুর্নীতি দমনের পক্ষে অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়েছেন। তিনি মনে করেন দুর্নীতি থাকলে দেশের উন্নয়ন হবে না, দুর্নীতিবাজরা মানুষ খেকোর ন্যায় দেশের সম্পদ ও রাষ্ট্রের সম্পদকে রক্ত চুষতে থাকবে। ফলে একজন রক্তবিহীন মানুষ যেভাবে দুর্বল হয়ে পড়ে ঠিক তেমনি দুর্নীতিবাজরা দেশের সম্পদ লুণ্ঠন করার ফলে দেশকে দুর্বল করে ফেলবে। এজন্য বঙ্গবন্ধু এই বাস্তবতা উপলব্দি করে ১৯৭৫ইং সনে ২৫ জানুয়ারি তারিখে জাতীয় সংসদে দীর্ঘ বক্তৃতায় দুর্নীতি সম্পর্কে বলেন।

“আজকের করাপশনের কথা বলতে হয়, এ বাংলার মাটি থেকে করাপশন উৎখাত করতে হবে। করাপশন আমার বাংলার কৃষকেরা করেনা। করাপশন আমার বাংলার মজদুর করেনা। করাপশন করি আমরা শিক্ষিত সমাজ। যারা আজকে ওদরে টাকা দিয়ে লেখা পড়া করেছি। আজ যেখানে যাবেন করাপশন দেখবেন আমাদের রাস্তা খুঁড়তে যান, খাদ্য কিনতে যান করাপশন। বিদেশে গেলে টাকার উপর কমিশন। তারা কারা? আমরা যে, ৫% শিক্ষিত সমাজ আমরা হলাম দুনিয়ার সবচেয়ে করাপ্ট পিপল। আর আমরা ই করি বক্তৃতা আমরাই লিখি খবরের কাগজ, আমরাই বড়াই করি। এ যুদ্ধে মানুষ যে রক্ত দিয়েছে, স্বাধীনতা এনেছে তাদের রক্ত বিদেশ থেকে খাবার আনবো সইে খাবার চুরি করে খাবে। টাকা আনবো তা বিদেশে চালান দিবে। বাংলার মাটি থেকে এরেদ উৎখাত করার হবে।”

দুর্নীতি ছাড়াও বঙ্গবন্ধু মাদককে নির্মুল করার পক্ষে সর্বপ্রথম আইন করে মাদককে নিষিদ্ধ করেছেন। পাকিস্তান হামাদুর রহমান কমিশন মুক্তিযদ্ধের ক্ষয়ক্ষতি সম্পর্কে আলোচনার পক্ষে গোলটেবিল বৈঠকের আহবান জানালে বঙ্গবন্ধু সম্মতি প্রকাশ করেন, কিন্তু বৈঠকে পাকিস্তানের প্রডিডেন্ট জেনারেল ইয়াহিয়া খাঁন উক্ত বৈঠকে উপস্থিত থাকলেও আলোচনার টেবিল মদ নিয়া আনা যাবে না বলে শর্তারোপ করেন। উল্লেখ্য যে, জেনারেল ইয়াহিয়া খান মদ ব্যতিত একমূহুর্ত থাকতে পারে না। কি কারণে বঙ্গবন্ধু মাদক ও মাদকের বিরুদ্ধে অবস্থান নেন তা পর্যালোচনা করলে মাদক সম্পর্কে ক্ষতিকর দিক গুলো হলো-

১) সুস্থ মস্তিষ্কের বিকৃত ঘটায়।
২) হিতাহিত জ্ঞান ও স্মৃতি শক্তি লোপ করে।
৩) কিডনি বিলঙ্গ করে।
৪) হজম শক্তি বিনষ্ট করে
৫) চেহরা বিকৃতি করে।
৬) স্নায়ুতন্ত্রেকে দুর্বল করে।
৭) শারীরিক ক্ষমতা লোপ পায়।
৮) মস্তিকের সেল ধ্বংস করে।
৯) লিভার সিরোসিস রোগের সৃষ্টি হয়।
১০) ক্রোধ, হিংসা ও অশ্লীলতা কর্মকান্ডে আগ্রহ জন্মায়
১১) ধর্ম ও আদর্শের প্রতি উদাসীনতা সৃষ্টি করে।

এই সকল কারনে বঙ্গবন্ধু মাদক দ্রব্য ব্যবহার নিষিদ্দ করেছিলেন। অপরদিকে সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, বৈষম্য, সম্প্রদায়িকতা এক একটি ভয়াবহ ক্রিয়াকলাপ মানব সভ্যতা বিকাশের ক্ষেত্রে চরম প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। এই সকল বিষয় রোধ করার জন্য তিনি অত্যাধিক গুরুত্ব দিয়েছেন।

মানব স্বত্ত্বার আমি বা আত্মসত্তার উপজীব্য বিষয় যেমন চেতনা, জ্ঞান ও স্মৃতি তেমনি বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক দর্শন হচ্ছে বাংলাদেশও বাংলাদেশের জনগন। আমি কে বাদ দিয়ে কোন কিছুকে যেমন সনাক্ত করা সম্ভব নং এমনকি নিজের পক্ষেও অস্তিত্বশীল থাকা সম্ভব নয়। তেমনি বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক দর্শন ও বাংলাদেশ এবং বাংলাদেশের জনগন ব্যতীত সম্ভব নয়। আত্নস্বত্ত্বাকে কেন্দ্র করে পৃথিবীতে মানুষের ব্যাপ্তী প্রকাশ পায় বিকশিত হয়, বিস্তৃত লাভ করে যা পরবর্তীতে পরিবার, সমাজ, দেশ জাতির মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। আত্মসত্ত্বার এই বিস্তৃত চেতনা অনেক সময় সুফলের পরিবর্তে কুফল ও বয়ে আনতে পারে। যেমন কোন মদ্যপ ব্যক্তির আত্মসত্ত্বার কুফল তার প্রতি বেশী কিংবা তার সহকর্মীদের মধ্যে বিস্তার লাভ করতে পারে। তেমনি কোন দুর্নীতিবাজ ব্যক্তির সম্পর্কে দুর্নীতি ও কালো টাকার মালিক হওয়ার কামনা বাসনা তার অনুগত অনুচরদের মধ্যে প্রভাবিত হতে পারে। এই ভাবে খারাপ মানুষের আত্মসত্ত্বার যেমনি বিস্তৃত লাভ করে, তেমনি জ্ঞান, বিজ্ঞান, দর্শন ও সৃজনশীলতাও সমাজে বিস্তৃত লাভ করে। এই জন্য সমাজে জ্ঞানী গুনী, নৈতিক আদর্শবান মানুষের আত্মসত্ত্বার বিস্তৃত হলে দেশ, জাতি, সমাজ ও রাষ্ট্রের দ্রুত উন্নয়ন ও অগ্রগতি ত্বরান্বিত হয়। কারণ আত্মসত্ত্বার হচ্ছে কোন বস্তু কিংবা ঘটনা নয়। আত্মসত্ত্বা হলো মানুষের ব্যক্তিত্ব বিকাশের চিন্তা ভাবনার অনিবার্য পূর্বশর্ত। আত্মসসত্ত্বার কুফল ও সুফল থাকতে পারে বলে আমার বিশ্বাস প্রতিষ্ঠিত। কারণ দুনিয়াতে সবকিছুর ২দি বিপরীত দিকে রয়েছে। যেমন- ভাল-মন্দ, শত্রু-মিত্র, ইতিবাচক-নেতিবাচক আরও অনেক। তেমনি মানুষের আত্মসত্ত¡ারও ২টি অংশ থাকতে পারে বলে আমার বিশ্বাস। কেননা আত্মসত্ত¡ার শুধুমাত্র ১টি দিক থাকলে হয়তো সেটি ইতিবাচক দিক হলে মানুষের মধ্যে শুধুমাত্র ইতিবাচক প্রভাবে বিস্তৃত হবে। পক্ষান্তরে যদি শুধুমাত্র নেতিবাচক বা খারাপ দিক থাকলে মানুষের মধ্যে শুধুমাত্র খারাপই বিস্তৃত হতো। কিন্তু আমাদের সমাজে কি তাই হচ্ছে? উত্তরে আমি বলব না, মানুষের মধ্যে ভাল ও মন্দ ২ টোই বিদ্যমান। ২ টোই মানুষকে আলিঙ্গন করে নিজ নিজ আসনে অধিষ্ঠিত থেকে মানুষের মাঝে জায়গা করে নিতে চায়। তারমধ্যে ব্যক্তি, সমাজ দেশ ও জাতির মধ্যে যেটি বেশি আলিঙ্গন করে জায়গা করে নিতে পারে সেটিই প্রভাব বিস্তৃত হয়। বিকশিত হয়। ফলে মন্দ বা নেতিবাচক আত্মসত্ত্বার বেশী হলে মানুষ, সমাজ ও দেশ পিছনের দিকে ধাবিত হয় এবং মানবিক মূল্যবোধ বা ইতিবাচক আত্মসত্ত্বার বেশী হলে ব্যক্তি, সমাজ, দেশ ও জাতি সামনের দিকে এগিয়ে যায়, উন্নত সমৃদ্ধ হয়।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আত্মসত্ত্বা হচ্ছে মানবিক মূল্যবোধের আত্মসত্ত্বা, সৎ, ন্যায় ও জ্ঞানের আত্মসত্ত্বা। যেখানে এই আত্মসত্ত্বার প্রয়োগের মাধ্যমে এদেশের মানুষের কল্যান ও অগ্রগতির অন্তর্নিহিত রয়েছে। ইতিমধ্যে এই আত্মসত্মার প্রয়োগ কওে যেমনি স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হয়েছে তেমনি এই আত্মসত্ত্বার প্রয়োগ করে এদেশকে ক্ষুধা দারিদ্র মুক্ত স্বপ্নের সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠা করার সম্ভব হবে। একজন দার্শনিক যেমন জীবনকে নিয়ে আর্বতিত, তেমনি বঙ্গবন্ধুর আত্মসত্ত্বা বাংলাদেশকে নিয়ে আবর্তিত, দর্শন যেমন জীবনকে কল্যান ও মঙ্গলের জন্য সর্বদা নিয়োজিত থাকে তেমনি বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশের মানুষের জীবনের কল্যাণ ও মঙ্গলের জন্য আবর্তিত। তাই বঙ্গবন্ধু একজন দার্শনিক এবং বঙ্গবন্ধুর দর্শন হচ্ছে বাংলাদেশের জনগণ, যাদের নিয়ে তাঁর জীবন সংগ্রামে আবর্তিত। অতএব বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে গেলে, ক্ষুধা দারিদ্রমুক্ত উন্নত সমৃদ্দ বাংলাদেশ গড়ে সোনার বাংলা গড়তে হলে বঙ্গবন্ধুর আত্মসত্ত্বার নিসৃত আদর্শ ও চেতনাকে লালন করে কাজ করার কোন বিকল্প নেই। মুজিববর্ষে বঙ্গবন্ধুর এই আত্মসত্ত¡ার নিমৃত আদর্শ ও চেতনাকে ধারণ করে সোনার বাংলা গড়ার পক্ষে সকলের অঙ্গীকার হউক্ব এই প্রত্যাশা করছি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টা ও ত্যাগের মাধ্যমে একদিন বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলায় রূপান্তর হবে দৃঢ়ভাবে আস্থা ও বিশ্বাস পোষন করে মুক্তিবর্ষের সকলেই মুজিব আদর্শে উজ্জীবিত হউক কামনা করছি।

জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু, বাংলাদেশ চিরজীবি হউক। বঙ্গবন্ধুর আত্মত্তার জয় হউক।

লেখক- লতিবান ইউপির সাবেক (৩ বার) চেয়ারম্যান ও খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদ সদস্য।