পার্বত্য চট্টগ্রামে শিক্ষার প্রসার আর নিয়মতান্ত্রিক রাজনীতিতে সমীর দত্ত চাকমার ভূমিকা
 
                 
পারভেজ হায়দার
পার্বত্য চট্টগ্রামে শিক্ষার প্রসারে গুটিকয়েক যেকজন ব্যক্তির নাম ইতিহাসে স্মরনীয় হয়ে থাকবে তার মধ্যে খাগড়াছড়ির সমীর দত্ত চাকমা অন্যতম। দীর্ঘদিন ধরে পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রচলিত সামন্ত শ্রেণির প্রভাবে সাধারণ জনগণের শিক্ষার প্রসার ব্যাপকভাবে বাধাগ্রস্ত হচ্ছিলো। এই সামন্ত শ্রেণি নিজেদের সন্তানদের ঢাকা, চট্টগ্রাম, কলকাতা, লন্ডন ইত্যাদি জায়গায় পাঠিয়ে উচ্চ শিক্ষা নিশ্চিত করেছিলো, কিন্তু সাধারণ জনগণের শিক্ষার প্রসারে তারা ছিলো উদাসিন। তারপরেও অনেক সাধারণ জনগণই নিজ উদ্যোগে ঢাকা-চট্টগ্রাম গিয়ে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হয়েছে। বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পার্বত্য চট্টগ্রামের মানুষের শিক্ষার প্রসারে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। এই এলাকায় অনগ্রসর জাতিগোষ্ঠীর জন্য বিশেষ কোটা ও উচ্চ শিক্ষার পথ সুগম করেন। সেই ধারাবাহিকতায় পার্বত্য চট্টগ্রামে বিভিন্ন সময়ে বেশ কিছু উদ্যোগী পাহাড়ী ও বাঙ্গালী ব্যক্তিবর্গ সাধারণ মানুষের শিক্ষার প্রসারে গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা রেখেছেন। মহালছড়ির রোকেয়া পদকপ্রাপ্ত শোভা রাণী ত্রিপুরা, খাগড়াছড়ির বিষকৃর্তী ত্রিপুরা, প্রীতি কুমার চাকমা, বাবুছড়ার সোনা মিয়া, খাগড়াছড়ি জেলা পরিষদ সদস্য খগেশ্বর ত্রিপুরা, গুইমারার নগেন্দ্র নারায়ন ত্রিপুরা প্রফেসর ড. সুধীন কুমার চাকমা, বান্দরবানের মেং রুং ম্রো অন্যতম। পানছড়ির সমীর দত্ত চাকমা ১৯৯২ সালে পানছড়িতে নিজ উদ্যোগে এবং প্রশাসনের কতিপয় ব্যক্তিবর্গের সহায়তায় একটি কলেজ নির্মান করেন। বর্তমানে তিনি ঐ কলেজের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ হিসেবে কর্মরত আছেন। ঐ কলেজে স্নাতক শ্রেণি পর্যন্ত অধ্যয়নের ব্যবস্থা থাকলেও ভবিষ্যতে তিনি স্নাতকোত্তর, মাষ্টার্স পর্যন্ত ডিগ্রী অর্জনের ব্যবস্থা করছেন। সমীর দত্ত চাকমা পানছড়ি কলেজে অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি খাগড়াছড়ি জেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি হিসাবেও কর্তব্য পালন করছেন। তিনি ছাত্র জীবন থেকেই আওয়ামীলীগের রাজনীতির সাথে জড়িত একজন কর্মচঞ্চল ও নিবেদিতপ্রান ব্যক্তিত্ব। সাউথইস্ট জার্নালের সাথে খোলামেলা আলাপচারিতায় পার্বত্য চট্টগ্রামের শিক্ষা ব্যবস্থার বিভিন্ন বিষয়াদি ছাড়াও ইতিহাসের পরিক্রমায় রাজনৈতিক ও সামাজিক অবস্থা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন। সমীর দত্ত চাকমার সাথে আলাপচারিতার কিছু অংশ নিচে তুলে ধরা হলো:
 সাউথইস্ট জার্নাল- আপনার রাজনৈতিক ক্যারিয়ার কিভাবে এবং কখন থেকে শুরু হলো?
সাউথইস্ট জার্নাল- আপনার রাজনৈতিক ক্যারিয়ার কিভাবে এবং কখন থেকে শুরু হলো?
সমীর দত্ত চাকমা- আমি ১৯৮০-৮২তে যখন কলেজে ছিলাম, তখন এরশাদ সাহেবের আমল ছিলো, গোপনে গোপনে তখন ছাত্রলীগ করতাম। সামরিক শাসনামল থাকায় তখন প্রকাশ্যে রাজনীতি করতে পারতাম না। আমি ছাত্রলীগ করা অবস্থায় যখন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হলাম তখন আমি সোহরাওয়ার্দী হলে থাকতাম। তখন সেই হলে আমি ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলাম। তারপর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বেরিয়ে এসে ২০০০ সালে জেলা আওয়ামীলীগের প্রচার সম্পাদক হিসেবে দায়িত্বপ্রাপ্ত হয়েছিলাম। বর্তমানে আমি সহ-সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছি।
সাউথইস্ট জার্নাল- পার্বত্য চট্টগ্রামের শিক্ষার প্রসারে আপনার গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা রয়েছে। সেই সম্পর্কে কিছু বলুন।
সমীর দত্ত চাকমা- পানছড়ি কলেজটি আমার নিজের হাতে গড়া। কলেজটি আমি ১৯৯২ সালে প্রতিষ্ঠা করি, এরপর থেকেই ঐ কলেজের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্বে আছি। আমি দেখলাম যে, তৎকালীন সময়ে আমরা যারা পানছড়ি বা আশে-পাশে বসবাস করতাম তখন সবাই খুবই গরীব। খাগড়াছড়ি বা রাঙ্গামাটি অথবা চট্টগ্রাম গিয়ে উচ্চশিক্ষা গ্রহন করা সবার সম্ভব হতো না। তখন আমি শিক্ষিতের হার বাড়ানোর জন্য, শিক্ষার প্রসারের জন্য কলেজটি প্রতিষ্ঠা করার উদ্যাগ গ্রহণ করেছিলাম।
সাউথইস্ট জার্নাল- কলেজটি কি আপনার নিজের জমিতেই প্রতিষ্টা করেছিলেন?
সমীর দত্ত চাকমা- না, সেটি দুই/তিন জনের জমিতে করা হয়েছে। কিছু খাস জমি ছিলো আর কিছু স্থানীয়রা দান করেছিলো।
সাউথইস্ট জার্নাল- পার্বত্য চট্টগ্রামে সামন্ত শ্রেনীর ব্যক্তিবর্গ সাধারণ জনগনের শিক্ষার জন্য খুব একটা কাজ করেন নি বলে অভিযোগ রয়েছে। এমনকি ১৯৬৬ সালে রাঙামাটি কলেজ প্রতিষ্ঠার সময় চাকমা সার্কেল চীফ বিরোধীতা করেছিলেন এবং সম্প্রতি রাঙামাটি মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠার সময়ও সন্তু লারমা বিরোধীতা করেছিলেন। এ বিষয় নিয়ে আপনার সার্বিক মূল্যায়ন কি?
সমীর দত্ত চাকমা- আসলে যে চাকমা রাজার কথা বলছিলেন, তখনতো সামন্তবাদীরা চাইছিলো, সাধারণ জনগণ যাতে শিক্ষিত না হয়, সাধারণ জনগন শিক্ষিত হলেতো তাদের ক্ষতি, তাই রাজা চাইছিলো না রাঙামাটিতে কলেজ হোক। আর সন্তু লারমার মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠার বিরোধীতাটা রাজনৈতিক কারণ হতে পারে। দুইটা ভিন্ন কারণ। আর রাজাদের সাধারণ জনগনের প্রতি শিক্ষা বৈষম্য দূর করতেই আমি কলেজ প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেই। এমনকি পার্বত্য চট্টগ্রামে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শিক্ষা খাতে আমাদের যেসব সুযোগ সুবিধা দিচ্ছেন, রাঙামাটিতে তিনি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছেন, যেটা বর্তমানে বেশ সুনামের সাথেই চলছে। মেডিকেল কলেজ থেকে অনেক ডাক্তার বের হবে, যা পার্বত্য চট্টগ্রামের জন্য বড় অর্জন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অনন্য নজির।
সাউথইস্ট জার্নাল- আপনি জেলা পর্যায়ের বাইরে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় পর্যায়ে ভূমিকা রাখতে আগ্রহী হয়েছিলেন কি?
সমীর দত্ত চাকমা- আমাদের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের স্যার, যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাসিম, সাংগঠনিক সম্পাদকসহ সবার সাথেই আমার ভালো যোগাযোগ ও সম্পর্ক আছে। এমনকি আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সাথে আমার সুসম্পর্ক আছে, উনি আমাকে by name এ চেনেন এবং আমরা যে এখনে কাজ করছি এটাও জানেন।
সাউথইস্ট জার্নাল- ১৯৯৭ সালে পার্বত্য চুক্তির প্রক্রিয়ার সাথে কি আপনি সম্পৃক্ত ছিলেন?
সমীর দত্ত চাকমা- হ্যাঁ, আমি পার্বত্য চুক্তির সাথে আমি সরাসরি সম্পৃক্ত ছিলাম। চুক্তির আগে দুদুকছড়ায় বৈঠকগুলোতে আমি ভলান্টিয়ার হিসেবে কাজ করতাম সরকারের পক্ষে। একজন সমন্বয়ক হিসেবে।
সাউথইস্ট জার্নাল- উল্লেখযোগ্য কয়েকটি বৈঠকের কথা কি মনে আছে?
সমীর দত্ত চাকমা- হ্যাঁ, আমাদের শন্তিবাহিনীর ভাইয়েরা যখন দুদুকছড়ায় আসতেন বৈঠকে তখনও আমি ওখানে থাকতাম, বর্তমান আওয়ামীলীগ সরকারের পক্ষে। হেলিকপ্টারে করে সন্তু লারমা বৈঠকে আসতো আর আমরা আওয়ামীলীগের পক্ষে তাকে বরণ করতাম।
সাউথইস্ট জার্নাল- আওয়ামীলীগ নেতা জনাব ওবায়দুল কাদের অনেকবার চুক্তির বিষয়ে সন্তু লারমার সাথে বৈঠক করতে এসেছিলেন, এ্যাডভোকেট শক্তিমান চাকমার সাথে উনার তখনকার একটা ছবিও আমি দেখেছি। শক্তিমান চাকমাও কি বৈঠকগুলোতে গিয়েছিলেন, আপনার কতটুকু জানা আছে এবিষয়ে?
সমীর দত্ত চাকমা- আমার জানা আছে, কাদের ভাই যখন প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে ভিতরে ভিতরে শান্তিবাহিনীর সাথে বৈঠকে চলে আসতেন তখনকার কথা আমার জানা আছে। শান্তিচুক্তির ক্ষেত্রে কাদের ভাইয়ের অবদান কিন্তু অনস্বীকার্য। আর চুক্তি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর অবদান পার্বত্যবাসী কখনো ভুলতে পারবে না।
সাউথইস্ট জার্নাল- স্বাধীনতার পরপরই পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে এমএন লারমা, মং প্রু সাইনসহ বেশ কয়েকজন পাহাড়ী নেতা বঙ্গবন্ধুর সাথে দেখা করে স্বায়ত্বশাসন দাবি করলো। এটা কতটুকু যৌক্তিক ছিলো?
সমীর দত্ত চাকমা- সদ্য স্বাধীনতা প্রাপ্ত দেশ, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু ছিলেন এর কর্ণধার। সেসময় এমএন লারমাদের একটু ভাবা বা ধৈর্য ধরা উচিত ছিলো, একটা সদ্য স্বাধীন দেশে এতদ্রুত একজনের নিকট থেকে একটা জিনিস চাওয়া সেটা কিন্তু হয়না, তিনি আরেকটু সময় নিতে পারতেন এ বিষয়ে। তবে স্বায়ত্বশাসনের দাবিটা যৌক্তিক ছিলো কি না জানি না, পাকিস্তান আমলে তারা এ দাবি করেন নি। জাতির জনক একটু সহজ-সরল ও উদার থাকায় সহজে দাবি পূরণ হবে মনে করে এমএন লারমা স্বায়ত্বশাসন দাবি করেছিলেন সম্ভবত।
সাউথইস্ট জার্নাল- শান্তিবাহিনীর যখন পথচলা শুরু হলো তখন তাদের জনসমর্থন কেমন ছিলো?
সমীর দত্ত চাকমা- সমর্থন ছিলো, তবে পার্বত্য চট্টগ্রামে শিক্ষিতের হার না থাকায় মানুষ বুঝতো না কেন এটি সৃষ্টি হলো, কেন সমর্থন করছে মানুষ।
সাউথইস্ট জার্নাল- শান্তিবাহিনীর অস্ত্রগুলো কোথা থেকে আসলো? অনেকে বলেছেন রাজাকারদের ফেলে যাওয়া অস্ত্রগুলোই শান্তিবাহিনী ব্যবহার করেছে, এটা কতটুকু সত্য?
সমীর দত্ত চাকমা- আমি যতটুকু জানি, পাকিস্তান আমলে হেডম্যান-কার্বারী বা প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তিদের কাছে অস্ত্র থাকতো, শান্তিবাহিনীরা তাদের অস্ত্রগুলো সংগ্রহ করেছিলো। এছাড়া যুদ্ধ শেষ হওয়ার পরে রাজাকার-আলবদরদের অস্ত্র গুলোও ব্যবহার করেছে।
সাউথইস্ট জার্নাল- আপনিতো ব্যক্তিগত ভাবে চাকমা সম্প্রদায়ের মানুষ, আপনার কাছে কি মনে হয়, চাকমা সম্প্রদায়ের মধ্যে রাজাকারের সংখ্যা বেশী কেন?
সমীর দত্ত চাকমা- যেহেতু চাকমা রাজা ত্রিদিব রায় পাকিস্তানের পক্ষে ছিলো, তাছাড়া তিনি প্রভাব বিস্তার করেছিলেন, সাধারণ চাকমাদের পাকিস্তানের পক্ষে থাকার জন্য বলেছিলেন, তাই চাকমারা রাজাকারের দিকে চলে গিয়েছিলো।
সাউথইস্ট জার্নাল- শান্তিবাহিনীর কার্যক্রম কি গোছালো বা আদর্শভিত্তিক ছিলো?
সমীর দত্ত চাকমা- আসলে ভুল তথ্যের ভিত্তিতে অনেক জ্ঞানী, শিক্ষিত লোকদের কিন্তু শান্তিবাহিনীরা মেরে ফেলেছিলো, এটা তাদের ভুল সিদ্ধান্ত ছিলো। ধরেন আমি একজন চেয়ারম্যান হিসেবে সরকার ও সরকারী বাহিনীর সাথেতো আমার সম্পর্ক রাখতে হবে। ইউএনও-পুলিশ-আর্মির সাথে সম্পর্ক রাখতে হবে। এর অর্থ এই নয় যে আমি শান্তিবাহিনী বা পাহাড়ীদের বিরুদ্ধে কিছু করছি। এসব কাজে ভুল বুঝে অনেক মুরুব্বি, মেম্বার, চেয়ারম্যান, হেডম্যান-কার্বারীকে মেরে ফেলেছে শান্তিবাহিনীর সদস্যরা। আর এতে করে তারা জনগন থেকে দূরে সরে গেছে।
সাউথইস্ট জার্নাল- সন্তু লারমা যখন ৪ বছর জেল খেটে বেরিয়ে আসেন, তখন এমএন লারমা তাকে জনসংহতি সমিতির দায়িত্ব দিয়েছিলেন। এটা কি যৌক্তিক ছিলো?
সমীর দত্ত চাকমা- আমি যতটুকু শুনেছি, একমাত্র সন্তু লারমার কারণেই প্রীতি ও লারমা গ্রুপ তৈরি হয়েছে। কারণ প্রীতিতো অনেক আগে থেকেই সংগঠনের শক্তিশালী অবস্থানে ছিলো। যখন সন্তু লারমা জেল থেকে বেরিয়ে আসলো, তাকে ফিল্ড কমান্ডারের দায়িত্ব দেওয়া হলো তখনই এই বিভাজনটা তৈরী হলো। প্রীতি কুমার ছাত্র ইউনিয়ন করতেন, পরবর্তীতে উনি কমলছড়ি হাই স্কুল প্রতিষ্ঠা করেছেন, শিক্ষকতা করেছেন। উনিও জনগনের জন্য কাজ করেছেন, বিনা বেতনে শিক্ষকতা করতেন।
সাউথইস্ট জার্নাল- কোন অবস্থার প্রেক্ষিতে শান্তিবাহিনী পার্বত্য চুক্তি করেছিলো?
সমীর দত্ত চাকমা- মানুষতো ধরেন নির্যাতনের শিকার হতে হতে দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছিলো, তখন আর সহ্য করতে পারছিলো না। ভারতে প্রায় এক লক্ষ শরণার্থী ছিলো। তারাও বেশী দিন সেখানে টিকতে পারছিলোনা। শান্তি বাহিনীর সদস্যদেরও দীর্ঘ দুই দশক ধরে বনে জঙ্গলে এভাবে সংগ্রাম করা সম্ভব হচ্ছিলোনা, যার কারনে তারা শান্তিচুক্তির দিকে ধাবিত হয়। তারা মনে করতো শান্তিচুক্তি করলে তারা দেশে ফিরবে, নিরাপদে বসবাস করবে। শান্তিবাহিনীও দেখলো চুক্তি না করলে তারা টিকবে না, তাই চুক্তিতে বাধ্য হলো।

সাউথইস্ট জার্নাল- ভারতে যারা শরণার্থী শিবিরে ছিলেন, তারা কি কি অসুবিধার মধ্যে ছিলেন?
সমীর দত্ত চাকমা- ছেলে-মেয়ের লেখাপড়া ছিলোনা, শিক্ষা সমস্যা, বাসস্থান, আর্থিক সমস্যা; যার কারনে তারা আর সেখানে অবস্থান করতে চাইছিলো না।
সাউথইস্ট জার্নাল- যারা শরণার্থীদের নেতৃত্বে ছিলো তারা কি শান্তিবাহিনীকে কোন চাপ দিয়েছিলো?
সমীর দত্ত চাকমা- হ্যাঁ, তারা শান্তিবাহিনীকে চাপ দিয়েছিলো দেশে ফেরত যাবার জন্য। তাদের কথা ছিলো, এটা আমাদের দেশ না, আমাদের দেশ বাংলাদেশ, যেভাবেই হোক আমাদের নিজ দেশে ফেরত যেতে হবে।
সাউথইস্ট জার্নাল- তার মানে পার্বত্যচুক্তির সময় শান্তিবাহিনীর অবস্থা খুব একটা ভালো ছিলো না?
সমীর দত্ত চাকমা- না, সেসময় শান্তিবাহিনী একটি চাপে ছিলো। যদি শান্তিবাহিনী আর কয়েকটা বছর অবস্থান করতো, তাহলে সশস্ত্র অস্ত্রধারীরা শান্তিবাহিনী থেকে পালিয়ে আসতো; স্বাভাবিক জীবনে চলে আসতো, তাদের মধ্যে নিজস্ব একটা চাপও ছিলো।
সাউথইস্ট জার্নাল- এরশাদ সরকারে সময়ে স্থানীয় সরকার পরিষদ (বর্তমানে পার্বত্য জেলা পরিষদ) গঠন করা হয়েছে, এটাতো ১৯০০ সালের রেগুলেশনের সাথে সাংঘর্ষিক। কিন্তু এটি কেন গঠন করা হলো?
সমীর দত্ত চাকমা- এটা হয়তো এরশাদ সাহেবের শান্তি স্থাপনের একটা প্রক্রিয়া ছিলো। যারা শান্তিবাহিনীর লোকজন ছিলো তাদের কিন্তু এটা চাওয়া ছিলোনা, এটা এরশাদ সাহেবের নিজের কনসেপ্ট ছিলো হয়তো।
সাউথইস্ট জার্নাল- আপনার কলেজ নিয়ে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কি?
সমীর দত্ত চাকমা- আমারতো ইতিমধ্যে কলেজে দুই/তিনটা বিষয়ে অনার্স হয়েছে। আমি চাইছিলাম যে সামনে আরো ২-১ বছর যদি আমি কলেজে থাকতে পারি, তাহলে যেকোন বিষয়ের উপর মাষ্টার্স ডিগ্রী চালু করতে।
সাউথইস্ট জার্নাল- এ কলেজের জন্য আপনি কি এ পর্যন্ত কারো সহযোগীতা পেয়েছেন? বর্তমানে কারো সহায়তা পান?
সমীর দত্ত চাকমা- হ্যাঁ, কলেজটি প্রতিষ্ঠার সময় ৩৪ বেঙ্গলের অধিনায়ক ছিলেন কর্ণেল শামস চৌধুরী, তার সহায়তায় আমি কলেজটি প্রতিষ্টা করেছি। বর্তমানেও খাগগাছড়ির স্থানীয় প্রশাসন ও রিজিয়ন সহায়তা করছে।
পার্বত্য চট্টগ্রামে শিক্ষার প্রসার বৃদ্ধিতে সমীর দত্ত চাকমার মতো অন্যান্য স্বপ্নবিলাশী কর্মদীপ্ত মানুষদের ভূমিকা চিরস্মরনীয়। পার্বত্য চট্টগ্রামের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর মানোন্নয়নে বঙ্গবন্ধু যেমন উদ্যোগী ছিলেন, সেই পরিক্রমায় তার অনুসারী কর্মীদের হাত ধরেই এগিয়ে যাচ্ছে উন্নয়নের রুপধারা। স্বার্থান্বেষী মহলের চক্রান্তে সৃষ্ট সন্ত্রাস এই উদ্যোমী মানুষদের কর্মস্পৃহাকে বাধাগ্রস্থ করতে পারে নি। সমীর দত্ত চাকমাদের পথ চলা বন্ধুর হলেও সরকারের সহযোগীতায় তারা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়ার ক্ষেত্রে কার্যকর ভূমিকা রাখবে, এই আশাবাদ সকলের।
