পাহাড়ে ড্রাগন চাষীদের জন্য প্রতিবন্ধকতা হয়ে দাঁড়িয়েছে করোনা - Southeast Asia Journal

পাহাড়ে ড্রাগন চাষীদের জন্য প্রতিবন্ধকতা হয়ে দাঁড়িয়েছে করোনা

“এখান থেকে শেয়ার করতে পারেন”

Loading

নিউজ ডেস্ক

ড্রাগন, পার্বত্য চট্টগ্রামে নতুন করে অর্থকরী ফসলের তালিকায় স্থান করে নিলেও চলমান করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে মুখ থুবড়ে পড়েছে এর বাজারজাতকরণ থেকে শুরু করে বিপনন ভ্যবস্থা। বান্দরবান পার্বত্য জেলার চিম্বুক পাহাড়ের বসন্ত ম্রোপাড়ার বাগানি তোয়ো ম্রো গত ১৫ জুলাই বুধবার এভাবে তাঁর বাগানের ড্রাগন ফল বিক্রির সমস্যার কথা বলছিলেন। অবশ্য শুধু তোয়ো ম্রো একা নন, লকডাউনের কারণে আশানুরূপ দাম না পেয়ে ড্রাগন বাগানিরা সবাই কম–বেশি হতাশ। তোয়ো ম্রো আদর্শ বাগানি হিসেবে ২০১৮ প্রথম আলো কৃষি পুরস্কার পান। তিনি বলেন, ‘ভালো দাম পাওয়া গেলে ড্রাগন ফলে সত্যিকারের ড্রাগন হতে পারতাম। কিন্তু করোনা ড্রাগন হতে দিচ্ছে না। লকডাউনের কারণে ব্যবসায়ীরা আসতে পারছেন না। এ জন্য কিছু কম দামে হলেও স্থানীয় ব্যবসায়ী ও বন্ধুদের সহযোগিতায় বিক্রি করতে হচ্ছে।’

সদর উপজেলায় বান্দরবান-চিম্বুক সড়ক থেকে এক কিলোমিটার ভেতরে বসন্ত ম্রোপাড়া। পাড়ার পাশে তোয়ো ম্রোর বিশাল ড্রাগন ফলের বাগান। প্রায় ২ একর জমিতে ২ হাজার ২০০ ড্রাগনের খুঁটিতে সব কটিতে কম–বেশি ফল ধরেছে। বাগানটি দেখতে সবুজের ভাঁজে ভাঁজে লাল রঙের ক্যাক্টাসের কাঁটাবন মনে হয়।

বাগানে কাজ করতে করতে তোয়ো ম্রো বলছিলেন, ভোরে ফলের গাড়ি নিয়ে বান্দরবান বাজারে গিয়েছিলেন। আবার বাগানে ফিরে ড্রাগন ছিঁড়ছেন। আগামীকাল (গতকাল) সকালে আবার ৫০০ কেজি ড্রাগন চট্টগ্রামের এক প্রতিষ্ঠানে পাঠাতে হবে। এ জন্য বসে থাকার সুযোগ নেই। দাম কম হলেও বিক্রি না করে উপায় নেই।

তোয়ো ম্রো জানান, গত বছর প্রতি কেজি ড্রাগন ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এবারে বড়গুলো ২০০-২৫০ টাকা এবং ছোটগুলো ১০০-১৫০ টাকায়ও ক্রেতা পাওয়া যাচ্ছে না। জুলাইয়ের দ্বিতীয় দফার ফলনে ১৪-১৫ টন ড্রাগন ভালো দামে বিক্রি করতে পারলে ৩০-৩৫ লাখ টাকা পাওয়া যেত। কিন্তু বর্তমান বাজার থাকলে ১০-১২ লাখ টাকা পাওয়াও কঠিন হবে বলে তাঁর ধারণা।

তোয়ো ম্রোর স্ত্রী পিঠে থুরুং (ঝুড়ি) ঝুলিয়ে ড্রাগন ফল তুলতে তুলতে বললেন, প্রতিদিন ১৪-১৫ মণ ফল ছিঁড়তে হয়। রাতে ফল মেপে রাখা, ভোররাতে গাড়িতে তুলে দেওয়া, সকালে আবার ফল ছেঁড়া—অনেক কষ্টের কাজ।

পাশাপাশি থানচি উপজেলায়ও ড্রাগনের ভালো ফলন হয়েছে। এখানকার বাগানি খামলাই ম্রো বলেন, দাম ভালো না হওয়ায় উৎপাদন খরচও পাওয়া যাচ্ছে না। দূরে হওয়ায় ব্যবসায়ীরা যান না। লকডাউন শেষে দাম পাওয়ার আশায় রয়েছেন তিনি।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপপরিচালক কে এম নাজমুল হক বলেন, তোয়ো ম্রো জেলায় ড্রাগন চাষের পথিকৃৎ। তবে এখন প্রতিবছর চাষ বাড়ছে। ২ বছর আগেও ৪০-৪৫ একর জমিতে চাষ হতো। বর্তমানে বান্দরবান সদর উপজেলা ছাড়াও নাইক্ষ্যংছড়ি, থানচি ও লামা উপজেলায় সোয়া ১০০ একর জমিতে প্রায় ৫৮০ টন ড্রাগন উৎপাদিত হয়ে থাকে। তিনি বলেন, বাজারে ড্রাগনের চাহিদা থাকলেও করোনা পরিস্থিতিতে ভোক্তাদের কাছে পৌঁছানো যাচ্ছে না। এ জন্য বাগানিরা দাম পাচ্ছেন না। তিনি বলেন, তোয়ো ম্রোর যোগাযোগ ভালো থাকায় বিক্রি করতে পারছেন। অনেকে বিক্রিও করতে পারেননি। তবে লকডাউন প্রত্যাহার হলে দাম পাওয়া যাবে।