কক্সবাজারে বিশ্বের বৃহত্তম জলবায়ু উদ্বাস্তু পুনর্বাসন প্রকল্পের উদ্বোধন
 
নিউজ ডেস্ক
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বৃহস্পতিবার (২৩ জুলাই) বলেছেন, সরকার সারাদেশের ভূমিহীন ও গৃহহীন মানুষকে পুনর্বাসনের পাশাপাশি বন্যা ও নদীর তীর ভাঙনে যারা ঘরবাড়ি হারিয়েছে তাদের আবাসন ব্যবস্থা করবে। তিনি বলেন, ‘এবার একটু বন্যার প্রকোপটা বেশি দেখা যাচ্ছে। আগস্ট ও সেপ্টেম্বরে আরও বন্যা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে আমরা একে মোকাবিলায় প্রস্তুতি নিয়েছি। বন্যা বা নদীভাঙনে যারা ঘরবাড়ি হারিয়েছেন তাদের জন্য আমরা আবাসন এবং জমির ব্যবস্থা করব।’
গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে কক্সবাজারের খুরুশকুলে জলবায়ু উদ্বাস্তুদের জন্য বিশেষ আশ্রয়ণ প্রকল্পে ফ্ল্যাট বরাদ্দ অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘জাতির পিতার জন্মশতবর্ষে আমাদের লক্ষ্য বাংলাদেশে একটি মানুষও গৃহহারা থাকবে না। যেভাবে হোক সরকার প্রত্যেক মানুষের জন্য ঘরের ব্যবস্থা করে দেবে।’

কক্সবাজার প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, ‘কক্সবাজারকে উন্নত পর্যটন নগরী হিসেবে গড়ে তোলা হবে। বিশ্বের মানুষ যাতে এর সৌন্দর্য্য উপভোগ করতে পারেন সে লক্ষ্যে কাজ করছে সরকার।’
কক্সবাজারের উপকণ্ঠে খুরুশকুলে বিশ্বের বৃহত্তম জলবায়ু উদ্বাস্তু পুনর্বাসন প্রকল্পের প্রথম পর্যায়ে ২০টি পাঁচতলা ভবন নির্মিত হয়েছে। এর মাধ্যমে কক্সবাজার সৈকত থেকে মাত্র তিন কিলোমিটার দূরে বাকখালী নদীর তীরে প্রথম পর্যায়ে নির্মিত ৩২টি ফ্ল্যাটের আধুনিক সরঞ্জাম সমৃদ্ধ ২০টি পাঁচতলা ভবনে ৬০০ পরিবার নতুন ফ্ল্যাট পেল। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে কিছু সুবিধাভোগীকে ৪৫৬ বর্গফুট ফ্ল্যাটের চাবি হস্তান্তর করা হয়। সব ভবনে সোলার প্যানেল, নিরাপদ পানি, বিদ্যুৎ, স্যানিটেশন, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, ড্রেনেজ ও সিলিন্ডার গ্যাস ব্যবস্থা রয়েছে।
আশ্রয়ণ প্রকল্প-২ এর অংশ হিসেবে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে ২৫৩ দশমিক ৫৯ একর জমির ওপর নির্মিত খুরুশকুল আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় ১৩৯টি পাঁচতলা ভবনে মোট ৪ হাজার ৪০৯টি জলবায়ু উদ্বাস্তু পরিবার পুনর্বাসিত হবে।
১৯৯৭ সালে আশ্রয়ণ (প্রোভাইডিং হোম) প্রকল্প চালু হয়। সে হিসেবে খুরুশকুল প্রকল্পটি দেশের বৃহত্তম পুনর্বাসন প্রকল্প যেখানে চারটি অঞ্চল থাকবে- আবাসন, পর্যটন ব্যবস্থা, শুটকি পল্লী বা ‘শুটকি মহল’ এবং সবুজ বনায়ন। এর সুবিধাভোগীরা অধিকাংশই ১৯৯১ এর বিধ্বংসী ঘূর্ণিঝড়ের শিকার। পরে তারা কক্সবাজার বিমানবন্দরের পাশের এলাকায় সরকারি খাস জমিতে আশ্রয় নেয়। নতুন ভবনের নিচ তলগুলো ফাঁকা রাখা হয়েছে যাতে বন্যার পানি ও জলোচ্ছ্বাসে কোনো ক্ষতি না হয়। নলকূপ ও বৃষ্টির পানি সংগ্রহের ব্যবস্থাও রয়েছে।
কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন জানান, প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকার ভিত্তিক আশ্রয়ন-২ প্রকল্পের আওতায় এই প্রকল্পে নির্মিত ২০টি অত্যাধুনিক ভবনের নামকরণ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেই। জেলা প্রশাসক বলেন, ‘কক্সবাজারের প্রতি প্রধানমন্ত্রীর দুর্বলতা অন্য রকম। এটিও এর একটি প্রমাণ। প্রধানমন্ত্রী নিজে ভবনের নামগুলো রেখেছেন।’ ভবনের নামগুলো হচ্ছে- ১) সাম্পান, ২) কোরাল, ৩) রজনীগন্ধা, ৪) গন্ধরাজ, ৫) হাসনাহেনা, ৬) কামিনী, ৭) গুলমোহর, ৮) গোলাপ, ৯) সোনালী, ১০) নীলাম্বরী, ১১) ঝিনুক, ১২) কেওড়া, ১৩) মুক্তা, ১৪) প্রবাল, ১৫) সোপান, ১৬) মনখালী, ১৭) শনখালী, ১৮) দোলনচাঁপা, ১৯) ইনানী ও ২০) বাঁকখালী।
গণভবন প্রান্তে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আহমদ কায়কাউস, সেনা প্রধান আজিজ আহমেদ, প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়াসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। কক্সবাজার প্রান্তে ছিলেন স্থানীয় সংসদ সদস্য, চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার এবিএম আজাদ, কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেনসহ মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তারা।
