স্ক্রিনিংয়ের আওতায় শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নির্মাণাধীন থার্ড টার্মিনাল প্রকল্প এলাকা - Southeast Asia Journal

স্ক্রিনিংয়ের আওতায় শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নির্মাণাধীন থার্ড টার্মিনাল প্রকল্প এলাকা

“এখান থেকে শেয়ার করতে পারেন”

Loading

নিউজ ডেস্ক

হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নির্মাণাধীন থার্ড টার্মিনাল থেকে স্বল্প সময়ের ব্যবধানে তিনটি বোমা উদ্ধার করা হয়েছে। জেনারেল পারপাস (জিপি) মডেলের এসব বোমার প্রতিটিই ছিল ২৫০ কেজি ওজনের। উদ্ধারের পর নিষ্ক্রিয় করা হয় বোমাগুলো। নির্মাণাধীন প্রকল্প এলাকায় একের পর এক বোমা উদ্ধার হওয়ায় দুর্ঘটনার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে সংশ্লিষ্টদের মধ্যে। এ অবস্থায় পাইলিং ও বেজমেন্ট নির্মাণকাজে অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনা এড়াতে প্রকল্প এলাকাটি স্ক্রিনিংয়ের আওতায় এনেছে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)। এ স্ক্রিনিংয়ের কাজ করছে বিমান বাহিনীর প্রশিক্ষিত বোম্ব ডিসপোজাল দল।

হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্পের পরিচালক (পিডি) একেএম মাকসুদুল ইসলাম এ প্রসঙ্গে বণিক বার্তাকে বলেন, নির্মাণাধীন থার্ড টার্মিনাল থেকে বোমা পাওয়ার বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে। প্রতিটি বোমার অস্তিত্ব পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই সংশ্লিষ্ট এলাকা ঘিরে রেখে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর প্রশিক্ষিত বোম্ব ডিসপোজাল দল বোমাগুলো উদ্ধার করেছে। ওই সময় সাময়িকভাবে সে এলাকায় কাজ বন্ধ রাখা হলেও পুরো প্রকল্পে এর প্রভাব পড়েনি। বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর প্রশিক্ষিত বোম্ব ডিসপোজাল দল আধুনিক যন্ত্রপাতিসহ পুরো এলাকাটি স্ক্রিনিং করছে। এক্ষেত্রে নিরাপত্তার বিষয়টিকে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে, যাতে প্রকল্পের কাজ করতে গিয়ে অনাকাঙ্ক্ষিত কোনো দুর্ঘটনা এড়ানো যায়।

বিমানবন্দরের নির্মাণাধীন থার্ড টার্মিনাল প্রকল্প এলাকা কনস্ট্রাকশন-৫ থেকে প্রথম বোমাটি পাওয়া যায় ৯ ডিসেম্বর। ওইদিন পাইলিংয়ের সময় শ্রমিকরা মাটির প্রায় তিন মিটার গভীরে সিলিন্ডারের মতো বোমাটির সন্ধান পান। ২৫০ কেজি ওজনের ওই বোমা উদ্ধারের পর বিমান বাহিনীর প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের (ফায়ারিং রেঞ্জ) ক্যাম্পাসে নিষ্ক্রিয় করা হয়। এরপর ১৪ ডিসেম্বর সকাল ৮টার দিকে পাইলিংয়ের সময় দ্বিতীয় বোমাটি উদ্ধারের কথা জানায় বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ। খবর পেয়ে বিমান বাহিনীর বোম্ব ডিসপোজাল দল ঘটনাস্থলে গিয়ে সেটি নিষ্ক্রিয় করে। ওইদিনই বিকালে টাঙ্গাইলের মধুপুর বনের টেলকি বিমান বাহিনীর ফায়ারিং প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে বোমাটি নিয়ে যাওয়া হয়। পরদিন সকালে এটির বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। আর সর্বশেষ ১৯ ডিসেম্বর সকাল ১০টা ৫০ মিনিটে তৃতীয় বোমার সন্ধান পাওয়া যায়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, উদ্ধার হওয়া ২৫০ কেজি ওজনের বোমাগুলো তাজা ছিল। অসতর্কতায় সেগুলোর বিস্ফোরণ ঘটার ঝুঁকিও ছিল। অতীতে যুদ্ধের সময় এ ধরনের বোমা বড় বড় স্থাপনা ধ্বংসের কাজে ব্যবহার হতো। এ পর্যন্ত উদ্ধার হওয়া তিনটি বোমায়ই মরচে পড়ায় উৎপাদনকারী দেশ ও তারিখ বোঝা যায়নি। অন্যদিকে নির্মাণাধীন প্রকল্পের যে এলাকায় বোমাগুলো পাওয়া গেছে সেখানে একসময় বিশাল জলাশয় ছিল। বিশেষজ্ঞরা ধারণা করছেন, বোমাগুলো ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় নিক্ষেপ করা হয়েছিল।

প্রসঙ্গত, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত বছরের ২৮ ডিসেম্বর শাহজালালের তৃতীয় টার্মিনালের নির্মাণকাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। প্রায় ৩০ লাখ বর্গফুট জায়গায় এ টার্মিনাল নির্মাণ হলে বছরে দুই কোটি (২০ মিলিয়ন) যাত্রীকে শাহজালাল বিমানবন্দর থেকে সেবা দেয়া যাবে। প্রকল্প ব্যয়ের মধ্যে ১৬ হাজার কোটি টাকা অর্থায়ন করবে জাপানি উন্নয়ন সংস্থা (জাইকা) ও বাকি ৫ হাজার কোটি টাকা দেবে বাংলাদেশ সরকার। জাপানের মিতসুবিশি করপোরেশন, ফুজিতা করপোরেশন ও স্যামসাং মিলে গঠিত এভিয়েশন ঢাকা কনসোর্টিয়াম (এডিসি) বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণকাজের দায়িত্বে রয়েছে। প্রকল্পটি তদারক করছেন নিপ্পন জাপান ও বেবিচকের প্রকৌশলীরা। থার্ড টার্মিনালের নকশায় রাখা হয়েছে ২৪টি বোর্ডিং ব্রিজ। এর মধ্যে ১২টি প্রথম ধাপে নির্মাণ সম্পন্ন করা হবে। বাকিগুলো পরে প্রয়োজন অনুযায়ী নির্মাণ করা হবে। বোর্ডিং ব্রিজের সঙ্গে থাকবে ১৩টি চেকইন বেল্ট। পর্যাপ্তসংখ্যক এক্সেলেটর, সাবস্টেশন ও লিফট সংযুক্ত রাখা হবে। থাকবে রাডার, কন্ট্রোল টাওয়ার, অপারেশন ভবন, বহুতল কারপার্ক। তিনতলাবিশিষ্ট এ টার্মিনাল ভবনের স্থাপত্যরীতিতে আনা হয়েছে অনন্য নান্দনিকতা। টার্মিনাল ভবনের বহির্বিভাগে থাকবে চোখ ধাঁধানো নকশা।