খাগড়াছড়িতে নানা আয়োজনে বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস পালিত
 
নিউজ ডেস্ক
বর্ণাঢ্য আয়োজনের মধ্য দিয়ে পার্বত্য জেলা খাগড়াছড়িতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু মেখ মুজিবুর রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস পালিত হয়েছে। রবিবার সকালে খাগড়াছড়ি জেলা আওয়ামীলীগের সিনিয়র সহ-সভাপতির রণ বিক্রম ত্রিপুরার নেতৃত্বে দলীয় কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন করেন। পরে একটি বর্ণাঢ্য র্যালী শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে টাউনহলস্থ বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পমাল্য অর্পণ শেষে এক মিনিট নীরবতা পালনের মধ্য দিয়ে দিবসটি উদযাপন করে খাগড়াছড়ি জেলা আওয়ামীলীগ।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম সংরক্ষিত আসনের এমপি বাসন্তী চাকমা, খাগড়াছড়ি জেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি কল্যাণ মিত্র বড়ুয়া,খাগড়াছড়ি জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মংসুইপ্রু চৌধুরী অপু, জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক নির্মলেন্দু চৌধুরী, সাংগঠনিক সম্পাদক দিদারুল আলম দিদার,পার্থ ত্রিপুরা জুয়েল, জেলা আওয়ামীলীগ নেতা চন্দন কুমার দে, জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল হোসেন, জেলা ছাত্রলীগের আহবায়ক উবিক মোহন ত্রিপুরা প্রমখ। এতে খাগড়াছড়ি জেলা পরিষদ সদস্য ও আওয়ামীলীগ নেতা মংক্যচিং চৌধুরী, এ্যাড. আশুতোষ চাকমা,এমএ জব্বার,মেমং মারমা, নিলোৎপল খীসাসহ অঙ্গ ও সহযোগি সংগঠনের নেতাকর্মীরা অংশ নেয়।
এদিকে, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে খাগড়াছড়িতে গরীব, অসহায় ও শীতার্ত মানুষের মাঝে শীতবস্ত্র, বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা ও খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করেছে সেনাবাহিনীর খাগড়াছড়ি রিজিয়ন। সকালে বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে খাগড়াছড়ি রিজিয়নের আওতাধীন সকল জোনের ন্যায় খাগড়াছড়ি সদর জোনের উদ্যোগে প্যারাছড়া এলাকায় শীতবস্ত্র ও কম্বল বিতরণ এবং মেডিকেল ক্যাম্পেইনের আয়োজন করা হয়।

শীতবস্ত্র বিতরণ ও মেডিক্যাল ক্যাম্পেইনের সময় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন খাগড়াছড়ি রিজিয়ন কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ আলী রেজা। এসময় উপস্থিত ছিলেন খাগড়াছড়ি সদর জোন অধিনায়ক লেঃ কর্ণেল জাহিদুল ইসলাম, খাগড়াছড়ি রিজিয়নের স্টাফ অফিসার মেজর মো: সালাউদ্দিন, সদর জোনের এ্যাডজুটেন্ট ক্যাপ্টেন শাফিন, পেরাছড়া ইউপি চেয়ারম্যান তপন বিকাশ ত্রিপুরা, পেরাছড়া হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক বিম্বিসার খীসা এবং স্থানীয় ইউপি সদস্য কান্তি চাকমা উপস্থিত ছিলেন।
বিতরণ স্থল ও মেডিকেল ক্যাম্পেইন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, করোনা প্রটোকল মেনে অত্যন্ত সুশৃঙ্খলভাবে এলাকার মোট ১৪০ জন দরিদ্র ও দুস্থ মানুষের মাঝে এইসব শীতবস্ত্র ও কম্বল তুলে দেয়া হয়। এছাড়া প্রায় ২৫০ জন সাধারণ মানুষকে চিকিৎসা সহায়তা দেওয়া হয়।

জেলার দীঘিনালায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ও স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে শীতবস্ত্র ও ত্রাণ বিতরণ করা করেছে সেনাবাহিনী। সকালে উপজেলার মধ্য বানছড়া গ্রামে ত্রাণ ও শীতবস্ত্র বিতরণ কর্মসূচির উদ্বোধন করেন দীঘিনালা জোনের জোনাল স্টাফ অফিসার মেজর মোহাম্মদ সাকিব হোসেন। এসময় উপস্থিত ছিলেন দীঘিনালা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান প্রজ্ঞান জ্যোতি চাকমা।
দীঘিনালা জোনের জোনাল স্টাফ অফিসার মেজর মোহাম্মদ সাকিব হোসেন জানান, ‘২৪ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি ও এরিয়া কমান্ডার মহোদয়ের নির্দেশনায় খাগড়াছড়ি রিজিয়ন (২০৩ পদাতিক ব্রিগেড) এর সহযোগিতায় দীঘিনালা জোন (৩২ ইস্ট বেঙ্গল) এর সার্বিক ব্যবস্থাপনায় মুজিববর্ষে বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষ্যে দীঘিনালা উপজেলাধীন ৪নং দীঘিনালা ইউনিয়ন পরিষদের, মধ্য বানছড়া নামক গ্রামে গরীব ও অসহায় জনসাধারণ প্রায় দুইশত পরিবারের মাঝে শীতবস্ত্র (কম্বল) ও ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করা হয়। এছাড়াও ক্যাডেট কলেজের সমন্বয়ক দলের কিছু কম্বলও সেনাবাহিনীর মাধ্যমে বিতরণ করা হয়।’

এছাড়া, জেলার মহালছড়ি উপজেলায় মহালছড়ি জোন কতৃক শীতার্ত পরিবারের মাঝে শীত বস্ত্র বিতরণ করা হয়েছে। মুজিববর্ষে বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস এবং শান্তি, সম্প্রীতি ও উন্নয়নের ধারা বজায় রাখার লক্ষে কর্মহীন ও দরিদ্র মানুষের সাহাযার্থে এগিয়ে এসেছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। এরই ধারাবাহিকতায় মহালছড়ি জোনের আওতাধীন দূর্গম পাহাড়ি মগপাড়া এলাকায় বসবাসরত একশত দুস্থ পরিবারের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ করেছে মহালছড়ি জোন। দূর্গম পাহাড়ী অঞ্চলে শীতবস্ত্র বিতরণ কষ্টসাধ্য ও কঠিন কাজটি অত্যন্ত সুন্দরভাবে সম্পন্ন করেছে মহালছড়ি জোনের সেনাসদস্যরা।
অন্যদিকে, জেলার লক্ষ্মীছড়িতে একই দিন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে বিনামূল্যে ৩ শতাধিক রোগীকে চিকিৎসা সেবা প্রদান ও ঔষুধ বিতরণ করে সেনাবাহিনীর লক্ষ্মীছড়ি জোন। সেনাবাহিনীর গুইমারা রিজিয়নের আওতাধীন লক্ষ্মীছড়ি জোনের তত্ত্বাবধানে মেডিক্যাল অফিসার ক্যাপ্টেন মো: নাহিদ হাসানসহ অভিজ্ঞ বেসামরিক চিকিৎসকগন প্রত্যন্ত এলাকার হত-দরিদ্র ও অসহায় রোগীদের মাঝে বিনামূল্যে এ চিকিৎসা সেবা প্রদান করেন। এসময় উপজেলা পরিষদ মাঠে এর উদ্বোধন করেন লক্ষ্মীছড়ি জোন অধিনায়ক লে: কর্ণেল মো: জাহাংগীর আলম। পরে তিনি চিকিৎসা ক্যাম্প ঘুরে দেখেন এবং রোগীদের খোজ খবর নেন।

অপরদিকে, মুক্তিযোদ্ধের চেতনাই হচ্ছে দেশ প্রেম, দেশ রক্ষা ও জনগনের সেবা করা মন্তব্য করে খাগড়াছড়ির গুইমারা রিজিয়ন কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ মোয়াজ্জেম হোসেন বলেছেন, ১৯৭২ সালের এই দিনে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু স্বদেশ প্রত্যাবতর্ন করেছেন, এই মহান দিনে অসহায় শীতার্তদের মাঝে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে শীত বস্ত্র বিতরণ করা হয়েছে। পাহাড়ে সম্প্রীতি বজায় রাখতে সেনাবাহিনীর এ উন্নয়ন কর্মকান্ড অব্যহত থাকবে।
সকালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে পাহাড়ে আইন-শৃংখলা রক্ষায় নিয়োজিত সেনাবাহিনীর ৩০ফিল্ড রেজিমেন্ট আর্টিলারী মাটিরাঙ্গা জোনের উদ্যােগে দুস্থ ও শীতার্তদের মাঝে কম্বল বিতরণ কালে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। পরে মাটিরাঙ্গা পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে ৪ শতাধিক শীতার্ত পরিবারের মাঝে কম্বল বিতরণ করেন রিজিয়ন কমান্ডার। এসময় অন্যান্যের মধ্যে মাটিরাঙ্গা জোন অধিনায়ক লেঃ কর্ণেল নওরোজ নিকোশিয়ার, নবাগত জোন অধিনায়ক মোহাম্মদ মোহসীন হাসান, রিজিয়নের স্টাফ অফিসার মেজর মঈনুল আলম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

এছাড়া, পার্বত্য চট্টগ্রামে সীমান্ত সুরক্ষা, মাদক চোরাচালান ও অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারের পাশাপাশি এ অঞ্চলের পিছিয়ে পড়া অসহায় পাহাড়ী-বাঙ্গালী জনগোষ্ঠীর আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে নিরাপত্তাবাহিনী কাজ করে যাচ্ছে মন্তব্য করে খাগড়াছড়ির রামগড়স্থ রামগড় জোন (৪৩ বর্ডার গার্ড ব্যাটলিয়ন) অধিনায়ক লে. কর্ণেল আনোয়ারুল মাজহার বলেছেন, অবৈধ অস্ত্রধারী, চাঁদাবাজ ও সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে সবাইকে সোচ্চার হতে হবে। সম্মিলিত উদ্যোগে পাহাড়কে সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজমুক্ত করতে সকলের সহায়তাও চেয়েছেন তিনি। রবিবার (১০ জানুয়ারী) সকাল সাড়ে ১০টায় রামগড় বিজিবি জোন সদরে জোন অধিনন্ত অঞ্চলের অসহায় ও শীতার্ত পরিবারের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণকালে এসব কথা বলেন তিনি।
জোন অধিনায়ক লে. কর্ণেল আনোয়ারুল মাজহার আরো বলেন, বিজিবি সবসময় পাহাড়ের অসহায় দরিদ্র জনগোষ্ঠীর আর্থ-সামাজিক ও জীবনমান উন্নয়নে সহায়তার হাত বাড়িয়েছে, যা আগামীতেও অব্যাহত থাকবে।
বিজিবি সূত্রে জানা গেছে, এদিন জোন অধিনায়কের নেতৃত্বে ব্যাটালিয়নের বিভিন্ন বিওপির আওতাধীন এলাকায় শীতার্ত মানুষের মাঝে বিতরণের জন্য ৬ শত ৯টি কম্বল এবং জোন সদরে ১৪৬ জনকে কম্বল, শীতের গরম পোশাক ও উপজাতীদের মাঝে নিজস্ব সংস্কৃতির পোশাক বিতরণ করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, দেশ স্বাধীন হওয়ার পর পাকিস্তানের বন্দীদশা থেকে মুক্তি পেয়ে ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশের মাটিতে প্রত্যাবর্তন করেন। এর আগে ৮ জানুয়ারি পাকিস্তাানের মিয়ানওয়ালি কারাগারে দীর্ঘ ৯ মাস কারাভোগের পর মুক্তি লাভ করেন তিনি। পরে তিনি পাকিস্তান থেকে লন্ডন যান। তারপর দিল্লী হয়ে ঢাকা ফেরেন বঙ্গবন্ধু।
