আরাকান আর্মিকে সন্ত্রাসী তালিকা থেকে বাদ দিল মিয়ানমার

“এখান থেকে শেয়ার করতে পারেন”

Loading

নিউজ ডেস্ক

সমঝোতার পর রাখাইনের বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মিকে (এএ) ‘সন্ত্রাসী তালিকা’ থেকে বাদ দিয়েছে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী।

দেশটির সেনাবাহিনী এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরাকান আর্মিকে সন্ত্রাসী সংগঠনের তালিকা থেকে বাদ দিয়েছে। এর কারণ হিসেবে সেনাপরিচালিত বার্মিজ প্রশাসন জানিয়েছে, আরাকান আর্মি সেদেশের সশস্ত্রবাহিনী এবং সরকারের উপর হামলা বন্ধ করে দেওয়ায় তাদেরকে সন্ত্রাসী গোষ্টির তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে।

অথচ, বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদে জানা যায়, মিয়ানমার সেনাবাহিনী আরাকান আর্মির সাথে যুদ্ধ করেই সবচেয়ে বেশী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিগত ৭ দশকেরও বেশী সময় ধরে সশস্ত্র বিদ্রোহ করে আসছে সংগঠনটি। গত ২ বছর ধরে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর সাথে তাদের দ্বন্দ্ব চূড়ান্ত রুপ ধারণ করে, এর প্রেক্ষিতে ক্ষমতাচ্যুত সূচি সরকার আরাকান আর্মিকে সন্ত্রাসী গোষ্টির তালিকায় তুলে। এসময় পুরো রাখাইন অঞ্চলকে নিয়ন্ত্রণের লক্ষে সেদেশের সরকারের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত হয় আরাকান আর্মির সদস্যরা।

এছাড়াও আরকান আর্মিকে দমনের নামে লক্ষ লক্ষ রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে বাস্তুচ্যুত করে মিয়ানমার সেনাবাহিনী। আরকান আর্মিকে দমনের লক্ষ্যে যুদ্ধবিমান, এট্যাক হেলি, কামান, নৌবাহিনীর যুদ্ধ জাহাজ সবকিছুরই ব্যবহার করেছে মিয়ানমার সেনাবাহিনী। এতে উভয়পক্ষের হাজার হাজার সৈন্য নিহত হয়েছে। তবে সেনাবাহিনী মিয়ানমারের ক্ষমতা দখলের পরপরই বদলে যায় দৃশ্যপট। সেনাবাহিনী ক্ষমতায় আসার পর আরাকার আর্মি সেনাসদস্যদের লক্ষ্য করে সবধরণের হামলা বন্ধ রেখেছে, যেখানে মাস দুয়েক আগেও দুপক্ষের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছিল।

এদিকে, গত ১ ফেব্রুয়ারি সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে নির্বাচিত নেত্রী অং সান সু চিকে ক্ষমতাচ্যুত করার পর সৃষ্ট বিক্ষোভ সামাল দিতে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীকে প্রায় প্রতিদিনই সংগ্রাম করতে হচ্ছে, এর মধ্যেই এ বড় সিদ্ধান্ত নিল দেশটির সামরিক জান্তা। আরাকান আর্মি গত নভেম্বরে সাময়িক অস্ত্রবিরতি করার বিষয়ে সম্মত হয়েছিল। সন্ত্রাসী তালিকা থেকে বাদ পড়া নিয়ে মন্তব্যের জন্য অনুরোধ করা হলেও গোষ্ঠীটি সাড়া দেয়নি বলে জানিয়েছে রয়টার্স।

সূত্র মতে, আরাকানিদের বেশির ভাগই থেরবাদী বৌদ্ধ। এটাই মিয়ানমারের মূল ধর্ম। উপকূলীয় রাখাইন প্রদেশ অতীতে স্বাধীন আরাকান রাজ্য ছিল। ১৮ শতকে বার্মিজদের আগ্রাসনে অঞ্চলটির সার্বভৌমত্ব হারায়।

২০১৮ সালের জানুয়ারিতে রাজ্যের সার্বভৌমত্ব হারানোর সেই বার্ষিকী পালন করে স্থানীয়রা। সেই আন্দোলনে পুলিশ গুলি চালালে হতাহতের ঘটনা ঘটে। আন্দোলনের পরই রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে প্রদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় রাজনৈতিক দল আরাকান ন্যাশনাল পার্টির প্রধানসহ দুজন অধিকারকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়। তাদের বিরুদ্ধে এখনো বিচার চলছে। অনেক নৃগোষ্ঠী রাখাইন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ২০১৫ সালের নির্বাচনে এএনপির প্রার্থী সবচেয়ে বেশি ভোট পেলেও ২০১৬ সালে সু চি নেতৃত্বধীন এনএলডি সরকার তাদের নিজস্ব মুখ্যমন্ত্রীকে সেখানে নিয়োগ দেয়।

উল্লেখ্য, আরাকান আর্মি উপমহাদেশের সবচেয়ে শক্তিশালী বিদ্রোহী গোষ্টি। একটি আধুনিক সামরিক বাহিনীর ন্যায় তারাও অত্যাধুনিক সমরাস্ত্রে সজ্জিত। মিয়ানমারে তাদের রয়েছে নিজস্ব সদর দপ্তর, যেখানে প্রকাশ্যেই নবীন সৈনিক নিয়োগ ও প্রশিক্ষণের মত সামরিক কার্যাবলী সম্পাদিত হয়। রয়েছে নিজেদের সামরিক পোশাকও। তারা ২০১৫ সালে মিয়ানমার সীমান্ত টপকে বাংলাদেশের উপর আক্রমণ করে বসে। প্রাথমিকভাবে বিজিবির একটি টহল দল তাদের সাথে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। সাংগু নদী সংলগ্ন বড়মদকে তারা অবস্থান নিয়ে হামলা শুরু করে, পরবর্তীতে সেনাবাহিনী ও বিজিবি তাদের বিতাড়িত করতে যৌথ অভিযান শুরু করে। একপর্যায়ে বিমানবাহিনীর একটি যুদ্ধবিমানও এতে অংশ নেয়। তীব্র গোলাগুলির পর আরকান আর্মির সদস্যরা বাংলাদেশ সীমান্ত ছেড়ে মিয়ানমার সীমান্তে পালিয়ে যায়।