খাগড়াছড়ির রামগড়ে থামছে না পাহাড় ও ফসলি জমির মাটি কাটার মহোৎসব
নিউজ ডেস্ক
পৃথিবীর পেরেক বলা হয় পাহাড়কে। প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষায় পাহাড়ের গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে। অথচ এক শ্রেণির মাটি খেকো অর্থের লোভে খাগড়াছড়ির রামগড়ে নির্বিচারে একের পর এক পাহাড় কেটে সাবাড় করে দিচ্ছে। এক্সকাভেটর কিংবা শাবল-কোদাল দিয়ে দিনরাত চলছে তাদের এই প্রকৃতি বিধ্বংসী কর্মকাণ্ড। পাহাড় থেকে কাটা মাটি ড্রামট্রাক ও ট্রাক্টরযোগে সরবরাহ করা হচ্ছে বিভিন্ন স্থানে। আওয়ামী লীগের নাম ভাঙিয়ে পাহাড় কেটে মাটির ব্যবসা পরিচালনা করছে স্থানীয় একাধিক সিন্ডিকেট। প্রশাসনের নাকের ডগায় এই অবৈধ পাহাড় কাটা ও মাটির ব্যবসা চললেও ‘রহস্যজনক’ কারণে নীরব রয়েছে আইন প্রয়োগকারীরা।
রামগড় পৌর এলাকার ফেণীরকুলে বিস্তীর্ণ এলাকার ধানি জমির মাটি কেটে সরবরাহ করা হচ্ছে উপজেলার ৮-৯টি ইট ভাটায়। একাধিক সিন্ডিকেট এই অবৈধ মাটির ব্যবসা পরিচালনা করে। সিন্ডিকেটগুলো নিয়ন্ত্রণ করেন ক্ষমতাসীন দলের প্রভাবশালী এক জনপ্রতিনিধি। মূলত এ জনপ্রতিনিধিই আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা তথা প্রশাসনকে ম্যানেজ করে অবৈধ মাটির ব্যবসার সুযোগ করে দেন। আর এর বিনিময়ে তার পকেটে ঢুকছে লাখ লাখ টাকা। অবৈধ মাটি বেপারীরা পাহাড় কাটার কাজে ব্যবহার করছে ৮-৯টি এক্সকাভেটর। আর বিভিন্ন স্থানে মাটি সরবরাহের জন্য রয়েছে ৫০-৬০টি ড্রামট্রাক। মাটিবাহী এসব ভারী যানবাহনের বেপরোয়া চলাচলে পৌরসভা ও ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় গ্রামীণ রাস্তাঘাট ভেঙেচুরে গেছে। পাহাড়খেকো ও মাটি বেপারীদের বেপরোয়া কর্মকাণ্ডে সাধারণ মানুষের মধ্যে চাপা ক্ষোভ ও অসন্তোষ থাকলেও প্রভাবশালীদের ভয়ে কেউ প্রতিবাদ করার সাহস পায় না।
সোনাইআগা এলাকার নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক স্কুলশিক্ষক বলেন, ‘প্রশাসন যেখানে নীরব, সেখানে সাধারণ মানুষ এসবের প্রতিবাদ করে কি মার খাবে?’ রামগড় পৌরসভার মেয়র ও পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. রফিকুল আলম কামাল বলেন, পাহাড়ের গুরুত্ব সম্পর্কে পবিত্র কোরআনেও উল্লেখ করা হয়েছে। সরকারিভাবেও পাহাড় কাটা নিষিদ্ধ। পৃথিবীর ভারসাম্য রক্ষাকারী এ পাহাড় রক্ষায় আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার কঠোর ভূমিকা দরকার।’ রামগড় পৌর এলাকা ও আশপাশের বিভিন্ন স্থানে ছোট, বড়, মাঝারি আকারের অসংখ্য পাহাড় কাটা হচ্ছে। ব্যক্তি মালিকানাধীন সবুজ বনজঙ্গলে আবৃত পাহাড়গুলোর অধিকাংশই কাটা হয় এক্সকাভেটর দিয়ে। কোন কোন স্থানে কাটা হয় শাবল ও কোদাল দিয়ে। পাহাড় বা টিলার মালিকরা আবাসন কিংবা সমতল জমি তৈরি করতে পাহাড় কাটার অনুমতি দেন মাটি বেপারীদের। আবার কোথাও কোথাও মালিককে ভয়ভীতি দেখিয়ে জোরপূর্বক পাহাড় কেটে মাটি নিয়ে আসে তারা।
দলের নাম ভাঙিয়ে পাহাড় কাটার বিষয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও ইউপি চেয়ারম্যান কাজী নুরুল আলম বলেন, ‘যারা এ বেআইনি কাজে নিয়োজিত আছে তারা নিজ দায়িত্বে এসব করছে। দল কাউকে এসব কাজে সমর্থন বা সহযোগিতা দেয় না এবং দেবেও না।’ বিগত কয়েক বছরে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ছোট-বড়-মাঝারি আকারের শতাধিক পাহাড় টিলা কেটে সাবাড় করা হয়েছে। বৈদ্যটিলা, সম্প্র‚পাড়া, খাগড়াবিল প্রভৃতি এলাকায় পাহাড় কাটতে গিয়ে মাটিচাপায় কয়েক জনের প্রাণহানির ঘটনাও ঘটেছে। বর্তমানে চিনছড়িপাড়া, শ্মশানটিলা, নজিরটিলা, বাগানটিলা, বলিটিলা, বৈদ্যটিলা, কালাডেলা, সোনাইআগা, বলিপাড়া, বথপাড়া, খাগড়াবিল, নাকাপা ও পাতাছড়ার বিভিন্ন স্থানে পাহাড় কাটা হচ্ছে। নির্বিচারে পাহাড় টিলা কাটার কারণে বনাঞ্চলও ধ্বংস হচ্ছে। এতে পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে। এছাড়া বর্ষায় পাহাড়গুলোতে ব্যাপক ধসের আশঙ্কা রয়েছে।
রামগড় উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) উম্মে হাবিবা মজুমদার বলেন, ‘যখনই পাহাড় কাটার খবর পাই, তখনই অভিযানে যাই। ইতিমধ্যে দুই ব্যক্তিকে ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।’