বান্দরবানে সেনাবাহিনী-জেএসএস (সন্তু) গোলাগুলি, সেনাসদস্যসহ নিহত ৪ - Southeast Asia Journal

বান্দরবানে সেনাবাহিনী-জেএসএস (সন্তু) গোলাগুলি, সেনাসদস্যসহ নিহত ৪

“এখান থেকে শেয়ার করতে পারেন”

Loading

নিউজ ডেস্ক

পার্বত্য জেলা বান্দরবানে পাহাড়ের আঞ্চলিক সশস্ত্র সন্ত্রাসী সংগঠন সন্তু লারমার নেতৃত্বাধীন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি- জেএসএস এর সাথে গোলাগুলিতে সেনাবাহিনী এক সিনিয়র ওয়ারেন্ট অফিসার ও জেএসএস এর তিন সন্ত্রাসী নিহত হয়েছেন বলে খবর পাওয়া গেছে। এছাড়া এ ঘটনায় এক সেনা সদস্য গুলিবিদ্ধ হয়েছেন, তাকে হেলিকপ্টার যোগে চট্টগ্রাম সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়েছে।

২রা ফেব্রুয়ারি দিবাগত রাত পোনে ১২টার দিকে বান্দরবান পার্বত্য জেলার রুমা উপজেলার রুমা সেনা জোন আওতাধীন রাইখিয়াং লেকস্থ পাখাওয়াই পাড়ায় এ ঘটনা ঘটে।

সূত্র মতে, সন্তু লারমার নেতৃত্বাধীন জেএসএস এর ৬-৭জন সন্ত্রাসী ভারী অস্ত্রসহ রুমা সেনা জোন আওতাধীন রাইখিয়াং লেক সেনা ক্যাম্পের আওতাধীন পাখাওয়াই পাড়া ও বথোই পাড়া এলাকায় চাঁদাবাজির লক্ষ্যে অবস্থান করছে এমন সংবাদের ভিত্তিতে জোন সদরের নির্দেশক্রমে একটি অপারেশনের পরিকল্পনা করে রাইখিয়াং লেক সেনা ক্যাম্প কমান্ডার সিনিয়র ওয়ারেন্ট অফিসার মোঃ হাবিবুর রহমান এর নেতৃত্বে একটি সেনা টহল দল সেখানে অভিযানে যায়।

রাত আনুমানিক ১০টা ৪৫ মিনিটের দিকে সেনা টহল দলটি ঘটনাস্থলে পৌঁছালে নিকটস্থ একটি জুম ঘর থেকে সন্ত্রাসীরা তাদের উপর অতর্কিত গুলিবর্ষন করে। জবাবে সেনা সদস্যরাও পাল্টা গুলি শুরু করলে জেএসএস এর তিন সন্ত্রাসী নিহত ও বাকি সন্ত্রাসীরা পলায়ন কালে এলোপাতাড়ি গুলি করলে মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়ে টহল কমান্ডার সিনিয়র ওয়ারেন্ট অফিসার হাবিবুর রহমান ঘটনাস্থলেই শাহাদাত বরণ করেন এবং সৈনিক ফিরোজ নামে এক জন সেনাসদস্য ডান পায়ে গুলিবিদ্ধ হন।

এরপর জরুরী ভিত্তিতে রুমা জোন অধিনায়ক লেঃ কর্ণেল হাসান শাহরিয়ার ইকবাল এর নেতৃত্বে আরো একটি সেনাদল ঘটনাস্থলে যাত্রা করে এবং আনুমানিক রাত সোয়া ১টায় ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। এছাড়াও নিকটস্থ বড়থলিপাড়া সেনা ক্যাম্প থেকে অপর একটি সেনা টহল দল ঘটনাস্থলে পৌঁছায়।

পরে জোন অধিনায়কের নেতৃত্বে সেনাবাহিনী উক্ত এলাকায় তল্লাশি কার্যক্রম পরিচালনা করে।

এসময় ঘটনাস্থল থেকে রাইখিয়াং লেক সেনা ক্যাম্প কমান্ডার মোঃ হাবিবুর রহমানের গুলিবিদ্ধ লাশ ও তিনজন জেএসএস সন্ত্রাসীর লাশ উদ্ধার করে। এছাড়া মোঃ ফিরোজ হোসেন নামের গুলিবিদ্ধ সৈনিককে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে এবং তাকে তাৎক্ষনিক হেলিকপ্টার যোগে চট্টগ্রাম সিএমএইচে প্রেরণ করে।

এছাড়া, ঘটনাস্থল থেকে জেএসএস সন্ত্রাসীদের ব্যবহৃত ১টি এসএমজি, ২৭৫ রাউন্ড ক্ষুদ্রাস্ত্রের এ্যামোনেশন, এমএমজির ৩টি ম্যাগাজিন, ২টি এ্যামোনেশন পোচ, ৪ জোড়া ইউনিফর্ম, আদায়কৃত চাঁদার নগদ ৫২ হাজার ৯শত টাকা, দৈশীয় তৈরী ৩টি গাদা বন্দুক, গাদা বন্দুকের ৫ রাউন্ড এ্যামোনেশন, ১টি জঙ্গল কাটার, ১টি স্মাটফোনসহ ৫টি মোবাইল ফোন ও বেশকিছু চাঁদা আদায়ের রশিদসহ গুরুত্বপূর্ন নথিপত্র উদ্ধার করে সেনাবাহিনীর সদস্যরা।

ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন বান্দরবানের পুলিশ সুপার জেরিন আখতার। লাশ উদ্ধার করে নিয়ে আসার জন্য পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়েছে, তারা ফিরে আসলে বিস্তারিত পরবর্তীতে জানা যাবে।

উল্লেখ্য, পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তিচুক্তির অনুচ্ছেদ ‘ঘ’ এর ধারা অনুযায়ী সকল অস্ত্র ও গোলাবারুদ জমা দেওয়ার মাধ্যমে তৎকালীন শান্তিবাহিনীর সকল সদস্যের আত্মসমর্পণের শর্ত থাকলেও সন্তু লারমার নেতৃত্বাধীন জেএসএস তা ভঙ্গ করে চুক্তি সম্পাদনের পরবর্তী সময় হতেই সশস্ত্র সন্ত্রাসী লালন করে আসছে। যদিও প্রায়শ সন্তু লারমা ও তার দল সরকারের বিরুদ্ধে শান্তি চুক্তির শর্ত ভঙ্গ ও বাস্তবায়ন না করার অভিযোগ করে থাকে। বর্তমানে পার্বত্য চট্টগ্রামে তৎপর চারটি আঞ্চলিক দল হত্যা, গুম ,চাঁদাবাজি ইত্যাদি দুষ্কৃতিমূলক কর্মকান্ড পরিচালনার মাধ্যমে পাহাড়ের নিরীহ সাধারণ মানুষের জনজীবনকে অতিষ্ঠ করে তুলেছে। পাশাপাশি সশস্ত্র আন্দোলনের মাধ্যমে পার্বত্য চট্টগ্রামকে বাংলাদেশ হতে বিচ্ছিন্ন করে স্বাধীন জুম্মল্যান্ড সৃষ্টি পায়তারা করছে, যা নিঃসন্দেহে দেশদ্রোহিতার শামিল বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।