পাহাড়ে বন্ধ হচ্ছেনা রক্তপাত - Southeast Asia Journal

পাহাড়ে বন্ধ হচ্ছেনা রক্তপাত

“এখান থেকে শেয়ার করতে পারেন”

Loading

আবু বকর ছিদ্দিক

নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। উদ্ধার করা হচ্ছে অবৈধ অস্ত্র ও মাদক। তবু পার্বত্য চট্টগ্রামে থামছে না অবৈধ অস্ত্রের ঝনঝনানি। দিন দিন ভয়ংকর হয়ে উঠছে সন্ত্রাসী গ্রুপগুলো। আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর পাল্টাপাল্টি হামলায় খুনের ঘটনা ঘটছে। গুম, অপহরণ আর মুক্তিপণ আদায়ের মতো ঘটনা ঘটছে প্রায়ই। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রাম জেলার অন্তত সাত উপজেলায় বর্তমানে সক্রিয় রয়েছে চারটি সশস্ত্র গ্রুপ; যাদের হয়ে কাজ করে সহস্রাধিক সন্ত্রাসী।

সম্প্রতি একজন উপজেলা চেয়ারম্যানের কাছে চাঁদা দাবি করে একটি সন্ত্রাসী গ্রুপ। পরে ওই চেয়ারম্যান থানায় জিডিও করেছেন। বিষয়টি সরকারের উচ্চ মহলের নজরে এলে গত ১৩ জুন সিনিয়র সচিব জননিরাপত্তা বিভাগ, সচিব, পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট বিভাগকে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। এমন নির্দেশনার পরও গত ২১ জুন রাঙামাটি জেলার বিলাইছড়ি উপজেলার সীমান্তবর্তী দুর্গম বড়থলি ইউনিয়নে অজ্ঞাতনামা সন্ত্রাসীদের গুলিতে তিনজন নিহত হওয়ার ঘটনা ঘটে। ওই দিন সন্ধ্যায় ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের সাইজামপাড়ায় এ ঘটনা ঘটে। নিহত ব্যক্তিরা হলেন বিশ্ব চন্দ্র ত্রিপুরা, সুভাষ ত্রিপুরা ও ধনরা ত্রিপুরা। তাঁদের মধ্যে বিশ্ব চন্দ্র ও সুভাষ ত্রিপুরা সম্পর্কে বাবা-ছেলে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০২০ সাল থেকে পার্বত্য চট্টগ্রামের সন্ত্রাসীরা আধুনিক অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। সীমান্তবর্তী পটিয়া, চন্দনাইশ, লোহাগাড়া, সাতকানিয়া, রাউজান, রাঙ্গুনিয়া ও ফটিকছড়ি এলাকায় নানা পেশার লোকজনের কাছে দাবি করছে চাঁদা। চন্দনাইশ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুল জব্বার চৌধুরী বলেন, ‘চন্দনাইশ এলাকার প্রত্যন্ত এলাকায় উপজাতীয় সন্ত্রাসীদের চাঁদাবাজি, সন্ত্রাসী কার্যক্রম সম্প্রতি বেড়ে গেছে। তারা আমার কাছেও চাঁদা দাবি করেছিল। পরে চন্দনাইশ থানায় জিডি করি।’

বান্দরবান জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এ টি এম কাউসার হোসেন বলেন, ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে কিছু নির্দেশনা এসেছে। আগামী উন্নয়ন সভায় আলোচনা হবে। পুলিশ-র‍্যাবসহ বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে আলোচনা হবে। আশা করি, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসবে।’

তবে আনোয়ারা সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. হুমায়ুন কবির বলেন, পাহাড়ি সন্ত্রাসীদের সন্ত্রাসী কার্যক্রমের বিষয়ে তাঁর জানা নেই।

সরকারি দায়িত্বশীল এক সংস্থার সূত্রে জানা গেছে, পার্বত্য চট্টগ্রামে গত ২৫ বছরে আধিপত্য বিস্তার ও চাঁদাবাজিকে কেন্দ্র করে প্রায় ১২ হাজার মানুষের প্রাণ গেছে। এ সময় ২ হাজারের বেশি মানুষ অপহরণের শিকার হয়। তাঁদের মধ্যে বেশির ভাগই ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী পরিবারের সদস্য।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, পার্বত্য চট্টগ্রামের আঞ্চলিক সংগঠন জেএসএসের সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারের সম্পাদিত পার্বত্য চুক্তির প্রায় দুই দশক পেরিয়ে গেলেও অবৈধ অস্ত্রের ব্যবহার বন্ধ হয়নি। বর্তমানে বেশি সক্রিয় থাকা সংগঠনগুলোর মধ্যে রয়েছে পার্বত্য চুক্তিবিরোধী সংগঠন ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ), পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (এমএন লারমা) ও ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইপিডিএফ গণতান্ত্রিক)। এ ছাড়া পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (মূল সশস্ত্র) পার্বত্য চুক্তির আগে থেকেই সক্রিয় ছিল।

সন্ত্রাসীদের হামলা থেকে রেহাই পাচ্ছেন না সরকারি দলের নেতা-কর্মীরাও। গত ১২ বছরে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের জেলা-উপজেলা পর্যায়ের অন্তত ১৪ জন নেতা-কর্মী খুন হয়েছেন। তাঁদের বেশির ভাগ বান্দরবান ও রাঙামাটি জেলার বাসিন্দা ছিলেন।

উল্লেখ্য, ২০১৯ সালের ১৬ ও ১৭ নভেম্বর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল পার্বত্য চট্টগ্রাম সফর করেন। এ সময় তিনি পার্বত্য জেলার রাঙামাটিতে প্রশাসনের উচ্চপর্যায়ে বিশেষ আইনশৃঙ্খলাবিষয়ক সভা করেন। সর্বশেষ গত ২৫ মে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান আবারও রাঙামাটি সফর করেন। চুক্তির আলোকে প্রত্যাহারকৃত ক্যাম্পে আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন স্থাপন করার ঘোষণা দেন এবং তিনটি পার্বত্য জেলায় তিনটি ব্যাটালিয়ন স্থাপনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।