শ্রমবাজারে স্থানীয়দের চেয়ে এগিয়ে রোহিঙ্গারা – পরিকল্পনামন্ত্রী
![]()
নিউজ ডেস্ক:
শ্রমবাজারে, বিশেষ করে দেশের পার্বত্য জেলা কক্সবাজারে স্থানীয় অধিবাসীদের চেয়ে মিয়ানমার থেকে আগত রোহিঙ্গারা এগিয়ে রয়েছে । তবে, ব্যাপকভাবে তাদের কাজের অনুমতি দেয়া হলে স্থানীয় শ্রমবাজারে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে এক গবেষণায় প্রকাশ করা হয়েছে। গবেষণায় বলা হয়েছে, রোহিঙ্গাদের হাতে টাকা নেই।
তাই তারা নগদ টাকার জন্য স্থানীয় ভাবে কাজ করে। রোহিঙ্গাদের ৫৭ দশমিক ৮৬ শতাংশই যেখানে শ্রমবাজারে যুক্ত, সেখানে স্থানীয়দের এই হার ৫১ দশমিক ৫৬ শতাংশ। আর পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান বলেন, ১২ লাখ রোহিঙ্গা এদেশে আশ্রয় নেয়ায় বাজেটের উপর বড় ধরণের চাপ সৃষ্টি হচ্ছে। কিন্তু সেটি আমরা মেনে নিয়েছি। তারা এখানে যে কয়েকদিন আছে, আমরা চাই তারা ভাল থাকুক।
রাজধানীর একটি হোটেলে বৃহস্পতিবার ‘মিয়ানমার নাগরিকদের জোরপূর্বক বাংলাদেশে স্থানান্তরিতকরণ’ শীর্ষক দিনব্যাপী এক কর্মশালায় বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান (বিআইডিএস) এবং ইন্টারন্যাশনাল ফুড পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (ইফ্রি) যৌথ গবেষণায় এসব তথ্য উঠে এসেছে।
বিআইডিএস’র মহাপরিচালক ড. কেএএস মুর্শিদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান। বিশেষ অতিথি ছিলেন ঢাকায় নিযুক্ত জাতিসংঘ বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচীর কান্ট্রি রিপ্রেজেন্টেটিভ সিচার্ড রাগান। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ইফ্রির গবেষক ড. পাওয়েল দোরোস, বিআইডিএস’র গবেষক ড. বিনায়ক সেন ও ড. মোহাম্মদ ইউনুস।
বিআইডিএসের গবেষক ড. মোহাম্মদ ইউনুস প্রতিবেদন তুলে ধরে জানান, অনেক রোহিঙ্গার হাতে নগদ টাকা নেই। তাই, নগদ টাকার জন্য স্থানীয়ভাবে কাজ করে তারা। স্থানীয় বাসিন্দারা গত বছরে যেখানে ১৩৮ দিন কাজ করেছে সেখানে রোহিঙ্গারা কাজ করেছে ৫৮ দিন। ৩১ শতাংশ রোহিঙ্গা কোনো না কোনো কাজ করছে, যেখানে ৫৪ শতাংশ স্থানীয় বাসিন্দারা কাজ করছেন। স্থানীয় পুরুষরা যেখানে ৬২ শতাংশ কোনো না কোনো কাজ করে, সেখানে রোহিঙ্গা পুরুষদের ৪৩ শতাংশ কোনো না কোনো কাজে যুক্ত। রোহিঙ্গারা মূলত: কৃষি ও সেবা খাতে কাজ করছে। শ্রমবাজারে অন্তর্ভুক্তির হারে স্থানীয়দের চাইতে রোহিঙ্গারা এগিয়ে আছে। রোহিঙ্গাদের ৫৭ দশমিক ৮৬ শতাংশই শ্রমবাজারে যুক্ত আছেন। স্থানীয়দের মধ্যে এর হার ৫১ দশমিক ৫৬ শতাংশ।
পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান বলেন, গবেষণায় উঠে এসেছে রোহিঙ্গাদের জন্য যে সহায়তা আসছে সেগুলো চুরি হচ্ছে না। বরং সুন্দর ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে বন্টন করা হচ্ছে। তবে, শিশুদের পুষ্টির অবস্থা খুব বেশি ভাল নয়। এটা কারও কাম্যও নয়। আমরা গভীরভাবে বিষয়টি দেখবো। তিনি বলেন, রোহিঙ্গাদের বিষয়টি মানবিক, তাদের জীবন ধারণের সহযোগিতার পাশাপাশি নিজ ভূমিতে নিরাপদে ফেরত দিতে মিয়ানমার সরকারের সাথে আলোচনা করে যাচ্ছি। এ নিয়ে প্রতিবেশী , দেশগুলোসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সাথেও আলোচনা হয়েছে। বাংলাদেশ সরকারের নীতি অনুযায়ী, প্রতিবেশীদের আমরা আলোচনার পথ বেছে নিই, বিবাদ পছন্দ করি না।
গবেষণায় বলা হয়েছে, রোহিঙ্গারা সার্বিকভাবে বাংলাদেশে ভাল রয়েছে। তবে, শিশুদের পুষ্টির দিকে গুরুত্ব দিতে হবে। তাছাড়া তাদের সরবরাহকৃত খাদ্যের বহুমুখীকরণ প্রয়োজন। বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা ও দেশের দেয়া সাহায্য বিতরণ ব্যবস্থা অত্যন্ত সুশৃঙ্খল। আশ্র নেয়া রোহিঙ্গাদের ১৫ থেকে ৪৯ বছর বয়সী নারীদের ১২ শতাংশ অপুষ্টির শিকার। গর্ভবতীদের মধ্যে অপুষ্টির হার ২৩ শতাংশ। তারা কম ওজনের শিশু জন্মদানের ঝুঁকিতে রয়েছেন।
কেএএস মুরশিদ বলেন, আমাদের সম্পদের সীমাবদ্ধতা আছে। তারপরও রোহিঙ্গাদের জন্য সর্বোচ্চ সহায়তা দিচ্ছে সরকার। গবেষণার উদ্দেশ্য সম্পর্কে তিনি বলেন, এই গবেষণার মাধ্যমে আমরা রোহিঙ্গাদের আর্থ-সামাজিক অবস্থা সম্পর্কে জানার চেষ্টা করেছি। রোহিঙ্গাদের ক্যালরি গ্রহণের অবস্থা অতটা খারাপ নয়। দারিদ্র্যের অবস্থাও অতটা খারাপ নয়। তবে, তাদের ব্যাপকভাবে কাজ করার সুযোগ দিলে কক্সবাজার যেহেতু ছোট্ট একটি জায়গা সেহেতু স্থানীয় শ্রমবাজারে ক্ষতিকর প্রভাব পড়বে।