পার্বত্য এলাকায় অসহায় জনগণের পাশে সেনাবাহিনী
![]()
নিউজ ডেস্কঃ

পার্বত্য চট্টগ্রামের ইতিহাসে সার্বিক নিরাপত্তা বজায় রাখার পাশাপাশি সাধারণ জনগনের জন্য সেনাবাহিনী নিঃস্বার্থভাবে সব সময় পাশে দাঁড়িয়েছে। যদিও সেনাবাহিনীর সহায়তার তালিকাটি বিশাল বড়, তথাপি সাম্প্রতিক সময়ে সেনাবাহিনীর তৎপরতায় নিশ্চিত মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে এসে নতুন করে বেঁচে থাকার স্বপ্ন দেখছে কয়েকজন। বর্তমান সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ, বিএসপি, বিজিবিএম, পিবিজিএম, বিজিবিএমএস, পিএসসি, জি এর বলিষ্ঠ নেতৃত্বে সেনাবাহিনীর আধুনিকায়ন ও পেশাদারিত্ব বৃদ্ধির পাশাপাশি দূর্গম এলাকার সাধারণ জনগন বিশেষ ভাবে উপকৃত হচ্ছে। সেনাবাহিনীর বর্তমান নেতৃত্ব জনগনের দুঃসময়ে পাশে গিয়ে দাঁড়াবার ক্ষেত্রে অনেক সময় নিজেদের জন্য ঝুঁকিপূর্ন পদক্ষেপ নিতেও পিছপা হয়নি।
ভাল্লুকে কামড়ানো পণ বিকাশ ত্রিপুরার পাশে সেনাবাহিনীঃ

রাঙ্গামাটির দুর্গম এলাকায় ভাল্লুকের কামড়ে আহত কিশোর পণ বিকাশ ত্রিপুরাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রাম সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে প্রেরণ করেছে সেনাবাহিনী।
জানা যায়, বাঘাইছড়ির সাজেক ইউনিয়নের দুর্গম এলাকা নিওথাংনাং বেটলিং এলাকার হতদরিদ্র পিতা অলিন্দ্র ত্রিপুরার পুত্র পন বিকাশ ত্রিপুরাকে (১৬) গত ১০ মে ২০১৯ তারিখ দুপুরে একটি বন্য ভাল্লুক কামড় দিয়ে মারাত্মকভাবে জখম করে।
ঘটনার পর প্রায় দুই ঘন্টা পায়ে হেটে পন বিকাশ ত্রিপুরাকে পরিবারের সদস্যরা বিজিবির বেটলিং বিওপি এলাকায় এনে চিকিৎসা করায়, কিন্তু ক্ষত বেশী হওয়ায় বিজিবির সদস্যরা উন্নত চিকিৎসার জন্য সেনাবাহিনীর খাগড়াছড়ি রিজিয়নকে জানায়। ক্ষতস্থানের সংক্রমণের আশঙ্কায় এবং প্রয়োজনীয় উন্নত চিকিৎসার জন্য ১২ মে রোববার বিকালে খাগড়াছড়ি রিজিয়নের তত্ত্বাবধানে হেলিকপ্টার যোগে পন বিকাশ ত্রিপুরাকে চট্টগ্রাম সিএমএইচ প্রেরণ করা হয়।
সেনাবাহিনীর তৎপরতায় সন্তানসহ বাঁচলেন প্রসূতিঃ
চার দিন ধরে প্রসব বেদনায় মৃত্যু যন্ত্রণায় ছটফট করছিলেন রাঙ্গামাটির জুরাছড়ির বগাখালীর দুর্গম পাহাড়ী পল্লীর ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর জিতনি তংচঙ্গ্যা (২৩) নামের প্রসূতি এক নারী। খবর পেয়ে তাকে হেলিকপ্টারে করে চট্টগ্রাম সেনানিবাসের সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) ভর্তি করা হয় ২৯ এপ্রিল সোমবার। অবশেষে সেই প্রসূতি মা জিতনি তংচঙ্গ্যার কোলজুড়ে আসে ফুটফুটে এক কন্যা সন্তান। জিতনি তংচঙ্গ্যা রাঙ্গামাটির জুরাছড়ি উপজেলার দুর্গম পল্লী বগাখালী গ্রামের ঈশ্বরচন্দ্র তনচঙ্গ্যার স্ত্রী।

জানা গেছে, বগাখালীর দুগর্ম পাহাড়ী গ্রাম শহর থেকে নৌপথে সাত দিনের রাস্তা। সেই গ্রামে চার দিন ধরে মৃত্যুর প্রহর গুণছিলেন ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর প্রসূতি নারী জিতনি তংচঙ্গ্যা।
সিএমএইচ-এ ওই মায়ের সাথে থাকা স্বজনরা জানান, চার দিন ধরে নিজ ঘরে প্রসব বেদনায় ছটফট করছিলেন জিতনি তংচঙ্গ্যা। পরিবারের পক্ষ থেকে স্থানীয়ভাবে ডাকা হয়েছিল ধাত্রী ও ওঝাকে। কিন্তু চার দিন ধরে ধাত্রী তার প্রসব করাতে ব্যর্থ হন। কাছাকাছি কোনো হাসপাতাল না থাকায় কোথাও নেওয়া আর সম্ভব হচ্ছিল না। এক পর্যায়ে তাকে বাঁচানো সম্ভব না- বলেই ধরে নিয়েছিলেন স্বামী ও স্বজনরা। বাঁচানোর শেষ চেষ্টা হিসেবে মঙ্গলবার সকালে তাকে বগাখালীর বিজিবির সীমান্ত চৌকিতে নিয়ে যান পরিবারের সদস্যরা। খবরটি চলে যায় সেনাবাহিনীর ২৪ পদাতিক ডিভিশনের জিওসির কাছে। আর খবর পেয়েই এ প্রসূতি মাকে হেলিকপ্টারে করে চট্টগ্রামে নিয়ে আসার নির্দেশ দেন।
এদিন দুপুর ২টার দিকে হেলিকপ্টার সেনানিবাসে অবতরণের পর দ্রুত অ্যাম্বুলেন্সে জিতনিকে হাসপাতালে নেয়া হয়। শুরু হয় পুরোপুরি চিকিৎসা সেবা। শারীরিকভাবে সঙ্কটাপন্ন জিতনি আস্তে আস্তে সুস্থ হয়ে উঠেন। এর পর মঙ্গলবার সকাল ৭টায় জন্ম নেয় তার এক কন্যা সন্তান।
এর আগে বাংলাদেশ, ভারত ও মিয়ানমার- এই তিন দেশের সীমান্তবর্তী গ্রাম রাঙামাটি জেলার জুরাছড়ি উপজেলার বগাখালীতে হাসপাতালের অভাবে মরতে বসেছিলেন ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর এক প্রসূতি নারী। সেইসময় তার পরিবারের সদস্যরা শরণাপন্ন হন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি)।
এই সীমান্তরক্ষী বাহিনীর আহ্বানে সাড়া দিয়ে সেনাবাহিনী ও বিমানবাহিনীর সদস্যরা হেলিকপ্টারে করে ওই প্রসূতি নারীকে চট্টগ্রামে এনে তার প্রাণ রক্ষা করেন। তবে বাঁচানো সম্ভব হয়নি তার গর্ভের সন্তানটিকে।
৩০ ডিসেম্বর রোববার দেশজুড়ে যখন ভোটের ডামাডোল চলছিল, তখন বগাখালী গ্রামের দয়াময় চাকমার স্ত্রী সোনাপতি চাকমা প্রসব বেদনায় কাতরাচ্ছিলেন।
জুরাছড়ি উপজেলার দুমদুম্যা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শান্তিরাজ চাকমা জানান, দয়াময়ের পরিবারের পক্ষ থেকে স্থানীয়ভাবে ডাকা হয়েছিল ধাত্রীকে। কিন্তু ধাত্রী প্রসব করাতে ব্যর্থ হন। মারা যায় গর্ভের সন্তানটি। সোনপতির জীবন নিয়েও শঙ্কা দেখা দেয়। যে কোন মুহূর্তে সোনাপতির মৃত্যু হবে, এই আশঙ্কাতেই কেটে যায় রাতটি।

সোমবার সকালে দয়াময়ের পরিবারের সদস্যরা বিজিবি’র স্থানীয় সীমান্ত চৌকিতে গিয়ে বিষয়টি খুলে বলেন। তখন বিজিবি’র পক্ষ থেকে সেনাবাহিনীর সহায়তা চাওয়া হয়।
সোমবার (৩১ ডিসেম্বর) ভোরে চট্টগ্রামে বিমানবাহিনীর জহুরুল হক ঘাঁটি থেকে বিমানবাহিনীর একটি হেলিকপ্টার পৌঁছে জুরাছড়ির বগাখালী গ্রামে। হেলিকপ্টারে করে সোনাপতিকে এতে দুপুরে ভর্তি করা হয় চট্টগ্রাম সেনানিবাসের ভেতরে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে। সেখানে দীর্ঘসময় ধরে অস্ত্রোপচারের পর বিপদমুক্ত হয়েছেন সোনাপতি চাকমা।
সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালের সামনে কথা হয় ইউপির চেয়ারম্যান শান্তিরাজ চাকমার সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘সোনাপতি আমার এলাকার মেয়ে। আমাদের এলাকায় ভাল কোনো হাসপাতাল না থাকায় তার গর্ভের সন্তানটিকে বাঁচাতে পারিনি। তবে সেনাবাহিনীর কারণে সোনাপতির জীবন রক্ষা পেয়েছে। আমরা যদি সেনাবাহিনীকে আগে জানাতাম, তাহলে দুজনকেই বাঁচানো যেত।