কলকাতায় সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষ, আহত উচ্চপদস্থ পুলিশ কর্মকর্তা - Southeast Asia Journal

কলকাতায় সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষ, আহত উচ্চপদস্থ পুলিশ কর্মকর্তা

“এখান থেকে শেয়ার করতে পারেন”

Loading

নিউজ ডেস্ক

ভারতের কলকাতার দক্ষিণ-পশ্চিম অংশে মমিনপুর অঞ্চলে গত শনিবার রাত থেকে সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষের খবর পাওয়া গেছে। স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, শনিবার রাতে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়, যখন মুসলমান সম্প্রদায়ের কিছু সবুজ পতাকা খুলে মাটিতে ফেলে দেওয়া হয়। এই পতাকা লাগানো হয়েছিল অক্টোবরের ৮ ও ৯ তারিখে পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) উপলক্ষে। এলাকায় গত সোমবার রাতে বেশ কিছুক্ষণ বোমাবাজি হয় এবং বোমার আঘাতে কলকাতা পুলিশের ডেপুটি কমিশনার সৌম্য রায় আহতও হন। পুলিশ বেশ কিছু ব্যক্তিকে আটক করেছে বলে জানা গেছে।

মমিনপুরের যে রাস্তা ও সংলগ্ন গলিতে এই উত্তেজনার সৃষ্টি হয়, সেখানে মূলত মুসলমান ও দলিত সম্প্রদায়ের মানুষ বাস করেন। স্থানীয় বাসিন্দারা অঞ্চলটিকে ‘ডোমপাড়া’ বলে চিহ্নিত করেন। যে সবুজ পতাকা খুলে ছিঁড়ে ফেলা হয়, তাতে আরবি ভাষায় মহানবী (সা.)–এর নাম লেখা ছিল বলে স্থানীয় মানুষের দাবি। এই ঘটনা স্থানীয় একবালপুর থানায় বাসিন্দারা জানান।

শনিবার রাতে পতাকা খুলে ফেলা নিয়ে উত্তেজনার পর গতকাল রোববার পুলিশ অঞ্চলটি ঘিরে ফেলে এলাকায় টহল দিতে থাকে। সারা দিন অবস্থা মোটামুটি শান্তিপূর্ণ ছিল। গতকাল সন্ধ্যায় ওই অঞ্চলে গিয়ে প্রথম আলোর এই প্রতিবেদক দেখেন, প্রায় প্রতিটি বাড়ির সামনে পুলিশ মোতায়ন করা হয়েছে। তাদের অধিকাংশের হাতেই রয়েছে লাঠি, কয়েকজনের হাতে আগ্নেয়াস্ত্র। সংঘর্ষ মোকাবিলায় আত্মরক্ষার্থে জ্যাকেট পরিহিত বিশেষ বাহিনীকেও সেখানে দেখা যায়। পরিস্থিতি থমথমে থাকলেও গতকাল সন্ধ্যা সাতটা নাগাদ ওই অঞ্চলে কোনো সংঘর্ষ হতে দেখা যায়নি।

তবে রাত বেড়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বেশ কিছুক্ষণ বোমাবাজি হয়। তারপর অন্তত একটি বাড়িতে আগুন লাগানো হয়। অঞ্চলে আরও পুলিশ পাঠানো হয় এবং পরিস্থিতি এখনো যথেষ্ট উত্তেজনাপূর্ণ। তবে আজ সোমবার সকালে সংঘর্ষের খবর পাওয়া যায়নি। ওই অঞ্চলে কিছু ছোট যানবাহন, যেমন সাইকেল বা বাইক চলতে দেওয়া হচ্ছে বলে স্থানীয় পুলিশ জানিয়েছে।

ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) নেতারা অভিযোগ করেছেন, কলকাতায় সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার ব্যর্থ হচ্ছে।

এই ঘটনা স্থানীয় মানুষকে যথেষ্ট অবাক করেছে। কারণ, দুর্গাপূজার সময় ওই অঞ্চলে হিন্দু ও মুসলমান সম্প্রদায় একসঙ্গে অনেকগুলো পূজার আয়োজন করে। দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে সম্প্রীতির উদাহরণ হিসেবে এই ঘটনা নিয়ে একাধিক পত্রপত্রিকা প্রতিবেদনও প্রকাশ করে। তারপর মাত্র সাত দিনের মধ্যে কীভাবে এই অঞ্চলে সংঘর্ষ হলো, তা খতিয়ে দেখার প্রয়োজন রয়েছে বলে জানিয়েছেন কলকাতা পুলিশের একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা।

ওই অঞ্চলে খুব ছোটখাটো উত্তেজনার ঘটনা ঘটলেও বড় ধরনের বোমাবাজি বা আগুন লাগানোর মতো ঘটনা সাম্প্রতিক কালে ঘটেনি। ১৯৯৬ সালে বড় ধরনের দাঙ্গায় কিছু মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিলেন। তারপর হঠাৎই কেন লক্ষ্মীপূজা ও পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.)–এর রাতে এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটল, তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। কলকাতার মধ্যেই এই ধরনের ঘটনা, বিশেষত যেখানে পুলিশের একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা বোমায় আহত হলেন, তা উদ্বিগ্ন করেছে প্রশাসনকেও।