কেরালার আদানি বন্দর প্রকল্প ঘিরে সহিংস বিক্ষোভ
![]()
নিউজ ডেস্ক
ভারতের কেরালায় একটি বন্দর প্রকল্পের বিরুদ্ধে কয়েক মাস ধরে চলা বিক্ষোভ সহিংসতায় রূপ নিয়েছে। গত রোববার রাতে একটি পুলিশ স্টেশনে জনতা হামলা চালায়। এতে ৩৬ পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন।
কেরালায় ওই বন্দর তৈরিতে কাজ করছে এশিয়ার শীর্ষ ধনী গৌতম আদানির কোম্পানি আদানি পোর্টস ও এসইজেড লিমিটেড।
এই বন্দর নির্মাণের বিরুদ্ধে বিক্ষোভকারীদের অধিকাংশই স্থানীয় জেলে। তাঁদের অভিযোগ, ৯০ কোটি মার্কিন ডলারের এই প্রকল্পে উপকূল ধ্বংস হচ্ছে এবং তাদের জীবিকার সংস্থান নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। তবে আদানির প্রতিষ্ঠান এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
আদানি বন্দরের বিরুদ্ধে স্থানীয় জেলেদের এই বিক্ষোভ ১০০ দিনের বেশি অতিক্রম করেছে। এতদিন পর্যন্ত এই বিক্ষোভ ছিল শান্তিপূর্ণ। বিক্ষোভকারীদের অভিযোগ, বন্দর নির্মাণের ফলে তাদের ঘরবাড়ি ধ্বংস হয়ে গেছে। তাদের অস্থায়ী আশ্রয়ে জীবনযাপন করতে হচ্ছে।
আদানির কোম্পানি অবশ্য বলেছে, তাদের প্রকল্পটি পরিবেশ আইন মেনে চলছে । উপকূলের ক্ষতি হচ্ছে মূলত জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে।
গত সপ্তাহে কেরালা হাইকোর্ট বলেন, বিক্ষোভকারীদের অবশ্যই প্রকল্পের জায়গায় অবাধে যাতায়াতের সুযোগ করে দিতে হবে। আদালতের আদেশ মানতে হবে। গত সপ্তাহে বিক্ষোভকারীরা নির্মাণাধীন এলাকায় কোম্পানির গাড়ি যাতায়াতে বাধা দেন। এতে পুলিশ কয়েকজনকে আটক করে। গত রোববার রাতে শত শত বিক্ষোভকারী পুলিশ স্টেশনে হামলা চালান। এতে পুলিশের সঙ্গে তাদের সংঘর্ষ বাঁধে।
পুলিশের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেন, অন্য একটি মামলায় পুলিশের হাতে আটক কয়েকজন ব্যক্তিতে ছাড়িয়ে নিতে সন্ধ্যায় জনতা পুলিশ স্টেশনের সামনে জড়ো হন। তাঁরা তাদের মুক্তি দাবি করেন। ওই এলাকায় ৯০০ পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।
পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে কয়েকজন বিক্ষোভকারী আহত হয়েছেন। পুলিশের কয়েকটি গাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এই সহিংসতার জন্য তিন হাজার ব্যক্তির বিরুদ্ধে অভিযোগ এনেছে পুলিশ।
বিক্ষোভের অন্যতম আহ্বায়ক ইউজিন এইচ পেরেইরা পুলিশের বিরুদ্ধে উসকানির অভিযোগ আনেন। তিনি বলেন, জনতা কোনো ধরনের সহিংসতা ছাড়াই ওই এলাকা ছেড়ে যেতে প্রস্তুত ছিলেন। তিনি বলেন, এই ঘটনার জন্য রাজ্য সরকার দায়ী। তাঁরা লোকজনকে জোরপূর্বক জায়গা খালি করানোর জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে।
তবে রাজ্য সরকারের একজন মন্ত্রী এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি বিক্ষোভকারীদের দাবি মেনে নেওয়া সত্ত্বেও প্রকল্প থামিয়ে দেওয়ার অভিযোগ তোলেন।
ওই মন্ত্রী বলেন, ‘বন্দর প্রকল্পের কাজ শেষ পর্যায়ে। বিক্ষোভকারীরা তা পুরোপুরি বন্ধ চায়। এতে তাদের কোনো সুবিধা হবে না।’
এদিকে সহিংসতার পর আদানি গ্রুপ হাইকোর্টে যায়। আদালত গতকাল একটি প্রতিবেদন দাখিল করতে বলেছেন। নাম প্রকাশ না করে আদানি গ্রুপের এক কর্মকর্তা বলেন, বিক্ষোভে কাজ বন্ধ থাকায় তাদের কোম্পানি ইতিমধ্যে ৮০ কোটি রুপি ক্ষতির মুখে পড়েছে। ১০৪ দিন ধরে বিক্ষোভ চলছে।
ভারতের বৃহত্তম বন্দর অপারেটর আদানি পোর্টস ২০১৫ সালে কেরালার রাজধানী তিরুবনন্তপুরমের ভিঝিনজামে বন্দর নির্মাণের জন্য চুক্তি করে। ২০১৯ সালে এর নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ২০১৭ সালের ঘূর্ণিঝড়ের পর এই নির্মাণকাজে দেরি হয়। ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে এটি চালু হওয়ার কথা রয়েছে।
বর্তমানে সেখানকার বিরোধী দল কংগ্রেস চুক্তির সময় ক্ষমতায় ছিল। তাদের অভিযোগ বর্তমান সরকার, সেখানকার অধিবাসীদের পুনর্বাসনের বিষয়টি অবহেলা করছে। কিন্তু চুক্তিতে সে বিষয়টি উল্লেখ ছিল।