জান্তার আমলে রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান কঠিন - Southeast Asia Journal

জান্তার আমলে রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান কঠিন

“এখান থেকে শেয়ার করতে পারেন”

Loading

নিউজ ডেস্ক

মিয়ানমারে সেনা অভ্যুত্থানের দুই বছর পেরিয়ে গেলেও দেশটির সেনাবাহিনীর সঙ্গে বিরোধীদের সংঘাত থামেনি। দেশটিকে ঘিরে যুক্তরাষ্ট্র, চীন ও ভারতের ভূরাজনৈতিক প্রতিযোগিতায় যুক্ত হয়েছে নতুন মাত্রা। এর ওপর বাংলাদেশের সঙ্গে মিয়ানমার সীমান্তে সাম্প্রতিক সময়ের অস্থিরতা পুরো অঞ্চলে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির ঝুঁকি তৈরি করেছে। এ পটভূমিতে একদিকে বাংলাদেশের নিরাপত্তা ও পররাষ্ট্রনীতির জন্য চ্যালেঞ্জ তৈরি হয়েছে, অন্যদিকে মিয়ানমারের জান্তা সরকারের আমলে রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান কঠিন হয়ে পড়েছে।

গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীতে আয়োজিত এক সেমিনারে বিশেষজ্ঞরা এমন অভিমত তুলে ধরেন।

সেমিনারে এনইউজি (ন্যাশনাল ইউনিটি গভর্নমেন্ট) নামে পরিচিত মিয়ানমারের ছায়া সরকারের স্বাস্থ্য ও শিক্ষামন্ত্রী জ ওয়াই সুয়ে বলেন, ‘রোহিঙ্গারা আমাদেরই জনগণ। তাদের ওপর যে নৃশংসতা হয়েছে, আমরা তার বিচার নিশ্চিত করব।’ তিনি আরও বলেন, দেশে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হলে সব সমস্যার সমাধান হবে। মিয়ানমারের অর্ধেক অংশ, যার অধিকাংশই গ্রামীণ জনপদ, তা এখন এনইউজির দখলে।

নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির সাউথ এশিয়ান ইনস্টিটিউট অব পলিসি অ্যান্ড গভর্ন্যান্সের (এসআইপিজি) সেন্টার ফর পিস স্টাডিজ (সিপিএস) ‘মিয়ানমারে শান্তি পুনঃপ্রতিষ্ঠা: সামরিক শাসনের দুই বছর পর’ শীর্ষক এই সেমিনারের আয়োজন করে।

নিরাপত্তা বিশ্লেষক ও এসআইপিজির জ্যেষ্ঠ ফেলো ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘মিয়ানমারের বর্তমান পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে বান্দরবান সীমান্তে যে বৈরিতা আমরা পর্যবেক্ষণ করছি, তাতে পুরো অঞ্চল ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। আরসাকে (আরাকান স্যালভেশন আর্মি) আমি মিয়ানমারের জান্তার এজেন্ট মনে করি। আরএসও (আরাকান সলিডারিটি অর্গানাইজেশন) ১৯৮২ সালে তৈরি হলেও মাঝখানে তারা সক্রিয় ছিল না। ফলে সাম্প্রতিক এই সংঘাতের কারণে পুরো অঞ্চলের নিরাপত্তার জন্য ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। আর আন্তর্জাতিকভাবে যুক্তরাষ্ট্র, চীন ও ভারতের ভূরাজনৈতিক প্রতিযোগিতা আমাদের নিরাপত্তা ও পররাষ্ট্রনীতির জন্য চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে।’

এ অঞ্চলকে ঘিরে ভূরাজনৈতিক প্রতিযোগিতা অতীতেও ছিল উল্লেখ করে সাবেক পররাষ্ট্রসচিব ও এসআইপিজির অধ্যাপক মো. শহীদুল হক বলেন, এখন চীন ও ভারতের প্রতিযোগিতায় তা নতুন মাত্রা যোগ করেছে। দুই পক্ষই মিয়ানমারে নিজেদের প্রভাব বিস্তারের চেষ্টায় ব্যস্ত। রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের সময় বাংলাদেশ মানবিকতা ও মানবাধিকার সুরক্ষাকে অগ্রাধিকার দিয়েছিল। বাংলাদেশ যে ভূরাজনীতিটা জানত না, তা কিন্তু নয়। শহীদুল মনে করেন, রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশ ব্যাপকতর ভূরাজনৈতিক খেলার অংশ হয়ে থাকতে পারে।

এনইউজি মন্ত্রিসভার সদস্য জ ওয়াই সুয়ে বলেন, ‘এই সময়ে আমাদের অর্জন হচ্ছে, বেআইনিভাবে দেশের ওপর চেপে বসা সরকারের বিরুদ্ধে জনগণের প্রতিরোধ এক দিনের জন্যও থামেনি। প্রশাসনের ৩ লাখ ৮০ হাজার সদস্য জান্তা সরকারের পক্ষ ত্যাগ করেছেন। ২ লাখ ২০ হাজার সেনাসদস্য জান্তার পক্ষ ত্যাগ করেছেন। মিয়ানমারের ইতিহাসে এমন ঐক্য আগে দেখা যায়নি।’

জ ওয়াই সুয়ে বলেন, মিয়ানমারে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের পর কেন্দ্রীয় সরকার ব্যবস্থা চালু করতে আগ্রহী এনইউজি। রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারের নাগরিক অভিহিত করে তাদের অধিকার রক্ষার আশ্বাস দেন তিনি।

এ সময় সাবেক পররাষ্ট্রসচিব শহীদুল হক বলেন, ‘মিয়ানমারের সাবেক স্টেট কাউন্সেলর অং সান সু চি রোহিঙ্গা নিপীড়নের দায়ে অভিযুক্ত সেনাবাহিনীর পক্ষে নির্লজ্জভাবে সাফাই গাইতেন। ইতিহাসে প্রমাণিত হয়েছে, সংখ্যালঘুদের দাবার ঘুঁটি বানানোর পরিণতি শুভ হয় না। আমাদের প্রত্যাশা থাকবে, এনইউজি মিয়ানমারের বেসামরিক সরকার প্রতিষ্ঠার পর রোহিঙ্গাদের অধিকার ও নাগরিকত্বের বিষয় ভুলে যাবে না।’

সেমিনারে আরও বক্তৃতা করেন অস্ট্রেলিয়াপ্রবাসী রোহিঙ্গা নেতা লি মিন্ট ও মালয়েশিয়ার সুলতান জয়নাল আবেদিন ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক মাহবুবুল হক।
সিপিএসের সদস্য ইশরাত জাকিয়া সুলতানার সঞ্চালনায় সেমিনারে স্বাগত বক্তব্য দেন সিপিএসের সমন্বয়কারী আবদুল ওয়াহাব।