রাঙ্গামাটিতে কে হচ্ছেন পরবর্তী জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান? - Southeast Asia Journal

রাঙ্গামাটিতে কে হচ্ছেন পরবর্তী জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান?

“এখান থেকে শেয়ার করতে পারেন”

Loading

 

নিউজ ডেস্কঃ

১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর সম্পাদিত পার্বত্য শান্তি চুক্তির বিশেষায়িত শর্তে গঠিত ৩টি জেলা পরিষদ, পার্বত্য চট্টগ্রামে শক্তিশালী ও শীর্ষ স্থানীয় সরকারী প্রতিষ্ঠান। জেলা পরিষদ আইনে জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে এ তিনটি পরিষদ গঠন করতে কথা বলা হলেও নিজেদের দলীয় লোক দিয়ে পরিচালনা করে আসছে ক্ষমতাসীনরা। সরকার পরিবর্তনের পরপরই পুনর্গঠন করা হয়ে থাকে রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদ।

সংশ্লিষ্ট তথ্যসূত্র মতে, বান্দরবানে বর্তমান চেয়ারম্যান ক্য শৈ হ্লা এবং খাগড়াছড়িতে কংজুরি চৌধুরীকে চেয়ারম্যান রেখে ওই দুটি পরিষদ পুনর্গঠনের চিন্তাভাবনা চলছে। আর সদস্য পদে কিছুটা রদবদলসহ চেয়ারম্যান পদে পরিবর্তন এনে রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ পুনর্গঠন করতে যাচ্ছে সরকার। এতে চেয়ারম্যান কে হচ্ছেন- তা নিয়ে শুরু হয়েছে নানা জল্পনা-কল্পনা। এ পরিষদে সম্ভাব্য চেয়ারম্যান হিসেবে সাবেক চেয়ারম্যান নিখিল কুমার চাকমার নাম শোনা যাচ্ছে। পাশাপাশি বর্তমান জেলা পরিষদ সদস্য অংসুই প্রু চৌধুরীর নামও সম্ভাব্য চেয়ারম্যান তালিকায় রয়েছে বলে জানায় সূত্রটি। তবে নিখিল কুমার চাকমা শীর্ষে থাকতে পারে বলে ধারণা সূত্রটির।

একাধিক সূত্র মতে, এর আগে দায়িত্বে থাকালে সরকার মনোনীত চেয়ারম্যান হলেও নির্বাচিত জনপ্রতিনিধির মতো কাজ করেছিলেন নিখিল কুমার চাকমা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জেলা আওয়ামী লীগের অনেক নেতাকর্মী বলছেন, এর আগে নিখিল কুমার চাকমা দায়িত্বে থাকাকালে দলীয় নেতাকর্মীদের পাশাপাশি এলাকার জনগণ উপযুক্ত সেবা ও সুযোগ-সুবিধা পেয়েছিলেন। বাস্তবায়িত হয়েছিল এলাকার ব্যাপক উন্নয়ন কর্মকান্ড। ফলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ দলের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল ছিল। তাই সরকার আবারও নিখিল কুমার চাকমাকে রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে মনোনয়ন দেবে বলে আশাবাদী দলীয় নেতাকর্মীসহ জেলাবাসী। ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় গেলে ২০০৯ সালে তাকে রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মনোনয়ন দেয় তৎকালীন সরকার।

এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে নিখিল কুমার চাকমা বলেন, এর আগে আমি পাঁচ বছর দায়িত্ব পালন করেছিলাম। জনগণ ও দল আমার কর্মকান্ড দেখেছে। তাতে তৃণমূলের জনগণসহ দলীয় নেতাকর্মীদের যদি আমার প্রতি তাদের সমর্থন ব্যক্ত ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনাসহ দলের নীতি নির্ধারকরা যদি আমাকে আবার মনোনয়ন দেন, আমি আন্তরিকভাবে কাজ করতে প্রস্তুত। আমি দল ও সরকারের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করতে আমাদের সভাপতি সংসদ সদস্য দীপংকর তালুকদারের নির্দেশনায় সব সময় জনগণ ও তৃণমূলের দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে কাজ করতে চাই। চেয়ারম্যান পদ ছাড়াও বর্তমান সদস্য মুছা মাতব্বর, মনোয়ারা আক্তার জাহান, মো. জানে আলম এবং লংগদু উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বাবু বড়ুয়াসহ অনেকে সদস্য পদে মনোনয়নে পেতে লবিং-তদবিরে রয়েছেন বলে জানা গেছে। এ ছাড়া চান মুনি তঞ্চঙ্গ্যার মৃত্যুতে এবং সবির কুমার চাকমার পদত্যাগের কারণে বর্তমানে রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের দুটি সদস্য পদ শূন্য।

জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান জেলা পরিষদ সদস্য মো. মুছা মাতব্বর বলেন, বর্তমান পরিষদের মেয়াদ আরও প্রায় এক বছর বাকি রয়েছে। মেয়াদ শেষ না হলে সরকার এ পরিষদ পুনর্গঠন করবে বলে আমার মনে হয় না। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যদি চান, আমরা আবারও দায়িত্বে আসতে চাই।

এদিকে দলীয় লোক মনোনয়ন দিয়ে আবারও নির্বাচন ছাড়াই সরকার পরিষদ তিনটি পুনর্গঠন করতে যাচ্ছে সরকার। যদিও নির্বাচন অনুষ্ঠানের সুপারিশ করেছে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় কমিটি। দেশের ৬৪ জেলার মধ্যে এরই মধ্যে ৬১টিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলেও রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান জেলা পরিষদে নির্বাচন দেয়া হয়নি। দফায় দফায় দলীয় লোক দিয়ে পরিষদ তিনটি পুনর্গঠন করে আসছে ক্ষমতাসীনরা। আইন অনুযায়ী ছয় মাসের জন্য অন্তর্বর্তী পরিষদ পুনর্গঠন করে পরবর্তীতে আবার ছয় অন্তর অন্তর মেয়াদ বাড়ানো হয়ে থাকে পরিষদ তিনটির। এর আগে সর্বশেষ পরিষদ তিনটি পুনর্গঠন করা হয় ২০১৫ সালের ২৫ মার্চ। ২০১৪ সালের অক্টোবরে আইন সংশোধন করে একজন চেয়ারম্যানসহ ৫ থেকে ১৫ সদস্যে উন্নীত করে পরিষদ তিনটির কলেবর বাড়ায় সরকার।

১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর স্বাক্ষরিত পার্বত্য শান্তিচুক্তির শর্তে প্রবর্তিত বিশেষায়িত এ তিনটি পরিষদের আইনে বলা আছে, পার্বত্য জেলার স্থায়ী বাসিন্দাদের নিয়ে প্রণীত পৃথক ভোটার তালিকায় রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এতে জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত হবেন ১ জন চেয়ারম্যান এবং ৩৩ জন সদস্য। প্রত্যেক পরিষদে প্রত্যক্ষ ভোটে উপজাতিদের মধ্য হতে ১ জন চেয়ারম্যান ও ২০ জন সদস্য, অ-উপজাতি ১০ জন এবং সংরক্ষিত তিনটি মহিলা আসনে ২ জন উপজাতি ও ১ জন অ-উপজাতি সদস্য নির্বাচিত হবেন। নির্বাচিত পরিষদের মেয়াদ হবে পাঁচ বছর। কিন্তু নির্বাচন ছাড়াই অন্তর্বর্তী পরিষদ গঠন করে এ পরিষদ তিনটি পরিচালনা করে আসছে সরকার।