কক্সবাজারের মাদকের ছড়াছড়ি কারাগারে গেলেও মাদক কারবার ছাড়তে নারাজ তারা!
![]()
নিউজ ডেস্ক
কক্সবাজারের টেকনাফের নাম শুনলেই অনেকে আঁতকে ওঠেন। শুরু হয়ে যায় আলোচনা সমালোচনা। ভিন্ন এলাকার মানুষের চোখে টেকনাফ যেন মাদকের স্বর্গরাজ্য। প্রকৃতপক্ষে কিছু মাদক কারবাীরদের কারণেই আজ টেকনাফের সুনাম বিলুপ্তি হচ্ছে। এই মাদক কারবারিদের কারণে সরকার এখন চট্টগ্রাম-কক্সবাজারকে মাদক প্রবণ এলাকা ঘোষণা করতে যাচ্ছে।
এখন মাদক কারবার গোপনে নয়, ভাই,বোন, আত্মীয়স্বজন পরিবারের সবাই মিলে সিন্ডিকেট করে চালিয়ে যাচ্ছে। পিতা-পুত্র, চাচা-ভাতিজা ও ভাই-বোন সিন্ডিকেটে করে চালাচ্ছে মাদক কারবার। মাদক কারবারিবা মনে করছেন কষ্ট করে ব্যবসা করেই জীবাহ নির্বাহ করেন। এতে দোষের কি আছে! যেন সঠিক পথেই আয় করছেন তারা।
ফলে মাদক ব্যবসা তাদের কাছে কোনো অবৈধ কাজ নয়! এমনকি কেউ কারাগারে, কেউ থাকে বাহিরে, তবুও থামছে না তাদের মাদক কারবার। কারাগারে গেলেও ইয়াবার কারবার ছাড়তে নারাজ তারা। জেলে গেলে বেশিদিন যেন তাদের কষ্ট পেতে না হয়, এজন্যই গড়ে তুলেছেন পরিবারিক মাদক সিন্ডিকেট। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে মাদকসহ কেউ গ্রেপ্তার হলেই পারিবারিক সিন্ডিকেটের লোকজনই তাদের দ্রুত জামিনে বের করে নেয়। জামিনে ফিরে ফের মাদক ব্যবসা জমজমাটভাবে চালিয়ে যায় তারা।
জানা যায়, টেকনাফ সদর ইউপির নাজির পাড়া এলাকার বাসিন্দা খুরশিদ আলম ও তার ভাতিজা সাইফুল ইসলাম গড়ে তুলেছেন পরিবারতান্ত্রিক ইয়াবা সিন্ডিকেট। যে সিন্ডিকেটে ৮/১০ জন মাদক ব্যবসায়ী রয়েছে। সিন্ডিকেটের সকলেই নিকটাত্মীয়। পুরো এলাকাজুড়ে তাদের মাদক কারবার বিস্তৃত ! এলাকায় খুরশিদরা “ইয়াবা পরিবার” হিসেবে এখন বেশ পরিচিতি লাভ করেছে।
খুরশিদ আলম টেকনাফ সদর ইউপির নাজির পাড়ার মৃত আব্দুল জলিলের পুত্র। তার বিরুদ্ধে মাদকসহ একাধিক মামলা রয়েছে। ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ সালের টেকনাফ থানার মাদক মামলার এফআইআর নং-৩৬/১০৭,১৫ সেপ্টেম্বর ২০১১সালের টেকনাফ থানার এফআইআর নং-২৭ জিআর নং ৩৮৪/১১। এছাড়া আরও একাধিক মাদক মামলা রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এত এত মামলা থাকার পরেও ইয়াবার কারবার ছাড়ছে না খুরশিদ। তার বড় ভাইয়ের নাম জাফর আলম,বয়স ৬৯ বছর। তার বিরুদ্ধেও মাদকসহ আধা ডজনের উপরে মামলা রয়েছে। জাফর বুড়ো বয়সে মাদক কারবার চালিয়ে যাচ্ছে। জাফর কয়েকবার ইয়াবাসহ প্রশাসনের হাতে আটক হওয়ার পর থেকে এখন তার স্ত্রী ও ছেলে মেয়েদের দিয়ে ইয়াবা পাচার করে যাচ্ছে। জাফরের এক মেয়ের নাম রিনা আক্তার। সেও ইয়াবাসহ কয়েকবার আটক হয়েছে। মেয়ের বিরুদ্ধে কয়েকটি মাদকের মামলা রয়েছে।
জাফর আলমের এক ছেলের নাম সাইফুল ইসালাম। সেও মাদকসহ একাধিক মামলার আসামি। কোনোভাবেই আইনের আওতায় আসছে না জাফরের ছেলে সাইফুল। মূলত জাফরের ছেলে সাইফুল ইসলাম ও তার চাচা খুলশিদ আলম মিলে সিন্ডিকেট করে তাদের পুরো পরিবারকে ইয়াবা কারবারে জড়িয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। তবে খুরশিদ আলম প্রশাসনের হাতে ইয়াবাসহ আটক হলেও ইয়াবার মুল যোগানদাতা জাফরের ছেলে সাইফুল ইসলাম এখনো ধরাছোঁয়ার বাহিরে রয়েছে।
অভিযোগ রয়েছে, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের মাদকের তালিকাভূক্ত ও আত্মসমর্ণকারী মাদক মামলায় সাজাপ্রাপ্ত আসামি টেকনাফের শীর্ষ মাদক কারবারি মৌলভীপাড়ার একরামের ইয়াবার চালান রক্ষাণাবেক্ষণের মূল গারিগর জাফর আলমের পুত্র সাইফুল। সেই সুবাদে একরামই তাকে আশ্রয় দিয়ে যাচ্ছে এবং এখনো পর্যন্ত অর্ধডজন মামলার বোঝা কাঁদে নিয়েও গ্রেপ্তার এড়িয়ে চলছে সাইফুল। একরামের ভয়ে এই মাদক কারবারি সাইফুলকে কেউ প্রশাসনের হাতে ধরিয়ে দিতে পারছেনা বলে জানা গেছে। সাইফুলের আশ্রয়দাতা একরামের বিরুদ্ধেও মাদকসহ ডজনের উপরে মামলা রয়েছে। সেও গ্রেপ্তার হয়না। প্রশাসনের অভিযান একটু জোরদার হলে মিয়ানমারে চলে যায় একরাম। সেখান থেকে টেকনাফ সীমান্তে পাঠায় মাদকের চালান। মিয়ানমার থেকে একরামের পাঠানো ইয়াবার চালান টেকনাফ সীমান্ত থেকে সাইফুলরাই খালাস করে বিভিন্ন জায়গায় পাচার করে দেয়।
এভাবেই “ইয়াবাডন” একরামের হাতধরে সাইফুল ও খুরশিদরা এখনো মাদক ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে বলে জানা গেছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় কয়েকজন ব্যক্তি জানান,খুরশিদ ও জাফর পরিবারের এক সময় নুন আনতে পান্তা পুরায় অবস্থা ছিল,এখন ইয়াবার বদৌলতে আঙ্গুলফুলে গলাগাছ বনে গেছে। খুরশিদের রয়েছে তিন স্ত্রী। তারমধ্যে এক স্ত্রী মারা গেছে। এক স্ত্রীকে সাবরাংয়ে কোটি টাকার জমি কিনে বাড়ি করে দিয়েছে। আরেক স্ত্রী গোদারবিলে থাকে বলে জানা গেছে। খুরশিদ ও ছৈয়দ আলমের রয়েছে নামে বেনামে কোটি কোটি টাকার সম্পদ। জাফর, খুরশিদ, ছৈয়দ আলম ও নুরুল আলম এরা সবাই আপন ভাই। তবে নুরুল আলম কিছুদিন আগে প্রশাসনের হাতে আটক হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, ছৈয়দ আলম রাতে জুয়া খেলেও লাখ লাখ টাকা খরচ করে। তবে তারা এক সময় মাটি কাটার কামলা ছিল। এলাকায় মানুষের বাড়ি বাড়ি মাটি কেটে সংসার চালাতো।
এদিকে জাফরের পুত্র ছৈয়দ নুর প্রকাশ ভুলু বর্তমানে ইয়াবাসহ প্রশাসনের হাতে আটক হয়ে কারাগারে রয়েছে এবং আরেক পুত্র সাইফুল বাহিরে ইয়াবার টাকায় রামরাজত্ব চালাচ্ছে। অভিযোগ পাওয়া গেছে, জাফরের ছেলে সাইফুল সাবরাং স্কুলের পাশে মাদক বেচা কোটি টাকায় জমি ক্রয় করে বহুতল বাড়ি তৈরি করছে। বর্তমানে সেই বাড়ির একতলা সম্পূর্ণ হয়েছে। বাকি কাজও চলমান রয়েছে। পুরো পরিবার মাদকের গোডাউন খুলে বসলেও তাদের নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না বলে জানা স্থানীয়রা। মাদকের টাকার গরমে সাধারণ মানুষের উপর প্রতিনিয়ত নির্যাতন চালায় বলেও অভিযোগ স্থানীয়দের । তবে তারা প্রভাবশালী হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে এলাকায় সাধারণ মানুষ প্রকাশ্যে মুখ খোলার সাহস করছে না।
জানতে চাইলে খুরশিদ আলম বলেন,সে আগে ইয়াবা ব্যবসা করতো, এখন আর করে না।
তার ভাতিজা জাফরের ছেলে সাইফুল ইসলাম মাদকের অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন,তাকে ষড়যন্ত্র করে মামলা দিয়েছে, সে মাদকের সাথে জড়িত নয়। তার বাবা ও বোনের মাদকসহ আটকের কথা জানতে চাইলে বলেন,সে পরিবার থেকে আলাদা থাকে,পরিবারের বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি। ছৈয়দ আলমের মোবাইল নাম্বারে কল দিলেও রিসিভ না করায় বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।
টেকনাফ মডেল থানার (ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা) ওসি আব্দুল হালিমের সরকারি মোবাইল নাম্বারে যোগাযোগ করা হলে বলেন,মাদকের বিরুদ্ধে সরকার ও পুলিশ বিভাগের সকলেই জিরো ট্রলারেন্সে। এর সাথে সম্পৃক্ত বা ছাড় দেয়ার সুযোগ নেই। এর সাথে সম্পৃক্ত হলে হাতেনাতে পেলে অবশ্যই মামলার আওতায় আসবে।