ত্রানের জন্য চুক্তিভিত্তিক বিয়ের খেলা চলছে রোহিঙ্গা শিবিরে
![]()
ডেস্ক রিপোর্ট:
একে তো ধর্মের দোহাই দিয়ে আগে থেকেই একাধিক বিয়ে সিদ্ধ, তার সাথে যোগ হয়েছে ত্রান নেবার প্রতিযোগীতা। ত্রানে সমতার অজুহাতে স্বামীকে তালাক দিয়ে চুুক্তিভিত্তিক মাত্র কয়েকদিনের জন্য নতুন করে বিয়ে করছেন রোহিঙ্গা নারীরা। পরে অবশ্য হিল্লে বিয়ের মাধ্যমে অনেকে ফিরছেন আবার সাবেক স্বামীর ঘরে। তবে বিয়ে বা তালাক নিবন্ধনের ব্যবস্থা না থাকায় রোহিঙ্গা পরিবারের দাম্পত্য বিবাদ মেটানো কঠিন হচ্ছে প্রশাসনের পক্ষে।
জানা গেছে, রোহিঙ্গারা মিয়ানমারে থাকাকালীন সময়েও ধর্মীয় অজুহাতে একাধিক বিয়ে করতো। জাতিগত সহিংসতার পর কক্সবাজারের ক্যাম্পে আশ্রয় নেওয়ার পর এ প্রবণতা আরও বেড়েছে। রোহিঙ্গা মাঝিরা একাধিক বিয়ে করছেন। মূলত বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই এর শিকার হচ্ছেন বিধবা নারী ও শিশুরা। এরপর পারিবারিক ঝামেলা হলে নিজেদের মধ্যে সমাধানের চেষ্টা করেন তারা। তবে তা না হলে সমাধানের জন্য বসেন সালিশে, তা ও সমঝোতা না হলে বিচারের ভার পড়ে ক্যাম্পে নিযুক্ত ‘শরণার্থী প্রত্যাবাসন কমিশনারের (আরআরআসি) ম্যাজিস্ট্রেটের ওপর। তারা মূলত উভয়পক্ষকে কাউন্সেলিংয়ের মাধ্যমেই মীংমাসার উদ্যোগ নিয়ে থাকেন। তবে রোহিঙ্গাদের বিয়ে-তালাকে নিবন্ধন বা প্রমাণপত্র না থাকায় ফৌজদারি অপরাধে অভিযোগের সুযোগ কম।
সম্প্রতি, উখিয়ার পালংখালী চাকমারকুল ২৩ নম্বর ক্যাম্প ইনচার্জ কার্যালয়ে (সিইসি) একটি অভিযোগ জমা দেন এক গৃহবধূ সাকারা বেগম (২০)। তার অভিযোগ, দুই বছর আগে মিয়ানমারের কৃষক জোবাইরের সঙ্গে তার বিয়ে হয়। গত বছরের আগস্টে তারা বাংলাদেশে আসেন। এর পর হঠাৎ করে স্বামী তাদের চার মাসের সন্তানকে অস্বীকার করে লম্বাশিয়া ক্যাম্পে গিয়ে বিয়ে করেন। এ অবস্থায় স্বামীর বিচার ও ক্ষতিপূরণ দাবি করেন সাকারা।
ক্যাম্প ইনচার্জ (উপসচিব) মো. মাহবুবুর রহমান ভূঁইয়া বলেন, রোহিঙ্গাদের মধ্যে পারিবারিক কলহের একাধিক অভিযোগ আসছে। আমরা কীভাবে তাদের সম্পর্ক স্বাভাবিক করা যায় সে বিষয় লক্ষ্য রেখে দুপক্ষকে কাউন্সেলিং করাচ্ছি।রোহিঙ্গা ক্যাম্প ঘুরে জানা যায়, একাধিক বিয়ের কারণে দুই স্ত্রী ও সন্তানদের মধ্যে ঝগড়া-বিবাদ হচ্ছে। হচ্ছে তালাক। আবার হিল্লা বিয়ে করছেন। এ ক্ষেত্রে ক্যাম্পে গড়ে ওঠা মসজিদগুলোর ইমামরা ভূমিকা রাখছেন।
কুতুপালং ১ নম্বর ক্যাম্প, সি/টু ব্লকের মসজিদে মুহাজিরিনের ইমাম ফজল করিম বলেন, ওই ক্যাম্পে ১১টি মসজিদ রয়েছে। দুজন করে রোহিঙ্গাকে সাক্ষী রেখে মসজিদে মাসে ৩-৪টি বিয়ে হয়। একইভাবে তালাকের ঘটনাও ঘটছে। নারীরা তালাকের ক্ষেত্রে এগিয়ে। তার ভাষ্য, তালাকের পর রোহিঙ্গা ক্যাম্পে হিল্লা বিয়ে হচ্ছে।
সম্প্রতি ক্যাম্পে চার সন্তানের জননী এক নারী আগের স্বামীর ঘরে ফিরে যেতে চাইলে হিল্লাপন্থা বেছে নেন। এ ক্ষেত্রে জোর করে এক যুবকের সঙ্গে তার বিয়ে দেওয়া হয়। তিন দিন সংসার করার পর ওই ছেলেকে তালাক দেওয়া হয়। তার মতে, এটি ইসলামেই বলা আছে।
জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থার (ইউএনএইচসিআর) তথ্যমতে, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে শরণার্থীদের ৫২ শতাংশ নারী। তাদের মধ্যে ১৬ শতাংশ নারী, যারা ইতোমধ্যে মা বা বিবাহিত হয়ে এখন বিধবা বা স্বামী পরিত্যক্তা। এর পেছনে মিয়ানমার সরকারের হত্যাকাণ্ড অন্যতম কারণ। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বহুগামিতার ক্ষেত্রে ১৬ শতাংশ নারীকে কোনো না কোনোভাবে বিয়েতে বাধ্য করা হচ্ছে।