রাঙ্গামাটির যে লেকের পানি রং বদলায় ক্ষণে ক্ষণে
নিউজ ডেস্ক
প্রকৃতি ও পাহাড় দর্শনে দেশের পর্যটকরা ঘুরতে যান রাঙ্গামাটিতে। ঝুলন্ত ব্রিজ থেকে শুরু করে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠিদের জীবনযাপন কিংবা ছোট-বড় পাহাড়, ঝরনা, হ্রদসহ বনাঞ্চল দেখতে সবাই ভিড় করেন সেখানে।
রাঙ্গামাটির মাটির রং লাল কিংবা লালচে। তাই একে লাল মাটির অঞ্চল বলা হয়। রাঙ্গামাটির দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে একটি হলো এই রাইংখ্যং পুকুর বা হ্রদ। মাটি থেকে এটি ২ হাজার ৪৭০ ফুট উঁচুতে অবস্থিত।
হ্রদটি ভারতের মিজোরাম রাজ্যের সীমান্তঘেঁষা। চারদিক সবুজ অরণ্য ঘেঁষে পাহাড় চূড়ার উপর প্রাকৃতিক হ্রদের এমন দৃষ্টিনন্দন রূপ যে কোনো সৌন্দর্য্যপিপাসুকে মুগ্ধ করবে।
স্থানীয়রা হ্রদটির নাম রাইচং বলে উচ্চারণ করেন। রাইংখ্যং মূলত একটি গভীর প্রাকৃতিক হ্রদ। এটি রাঙামাটি জেলার বিলাইছড়ি উপজেলাধীন ফারুয়া ইউনিয়নের অন্তর্গত বড়থলি ওয়ার্ডে অবস্থিত।
এই হ্রদের পাড়ে বহু বছর ধরে ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীর বসবাস। রাঙ্গামাটিতে অবস্থিত হলেও ভৌগলিক অবস্থানের কারণে এই হ্রদে যেতে হয় বান্দরবানের মধ্যে দিয়ে। এই হ্রদ রাঙ্গামাটি জেলার শেষপ্রান্তে অবস্থিত।
তাই রাঙ্গামাটি দিয়ে পৌঁছাতে হলে জলপথ পাড়ি দিতে হবে। তাই পর্যটকরা বান্দরবান দিয়েই যান সেখানে। তবে যেভাবেই যান না কেন সঙ্গে অবশ্যই একজন গাইড রাখবেন।
এই হ্রদের পূর্ব ও পশ্চিম তীরে দুটি গ্রাম আছে। যেগুলো পুকুরপাড়া নামে পরিচিত। এসব গ্রামের মানুষেরা ত্রিপুরা গোত্রের। তারা খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বী।
হ্রদের পশ্চিম তীরের গ্রামবাসীদেরকে পাহাড় বেয়ে ওঠা-নামা করে এই হ্রদে পৌঁছাতে হয়। তবে পূর্বপ্রান্তের গ্রামবাসীরা সহজেই হ্রদে পৌঁছাতে পারেন।
এই হ্রদ নিয়ে নানা কল্পকাহিনিও প্রচলিত আছে। তবে ভূ-তত্ত্ববিদরা জানান, প্রায় ২০০০ বছর আগে আগ্নেয়গিরির সৃষ্ট লাভামুখ হলো এই হ্রদ।
এর পানি এতোটাই স্বচ্ছ যে সূর্যের আলো, আবহাওয়া ও মেঘের কারণে এটি একেক সময় ভিন্ন ভিন্ন রূপ ধারণ করে। স্থানীয়দের তথ্য অনুসারে, এই হ্রদের পানি আকস্মিকভাবে লাল রংও ধারণ করে।
হ্রদটির প্রাকৃতিক সৌন্দর্য যে কাউকে মুহূর্তেই আকর্ষিত করবে। উঁচু পাহাড়ের মাঝে বিস্ময়কর এই হ্রদ সবারই কৌতূহল বাড়ায়।
এই হ্রদে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ চাষ করেন পাহাড়িরা। এর মধ্যে তেলাপিয়া মাছ সবচেয়ে বেশি ধরা পড়ে। হ্রদের পূর্ব প্রান্তে এর পানি থেকে সৃষ্ট একটি ছোট ঝিরি আছে।
সম্ভবত হ্রদের পানির স্তর নিয়ন্ত্রণে রাখতে ঝিরিটি সৃষ্টি হয়। বর্ষাকালে হ্রদ থেকে প্রচুর পানি এই ঝিরি দিয়ে নিচে পড়ে।
রাইংখ্যং হ্রদে কীভাবে যাবেন?
দেশের যে কোনো স্থান থেকে প্রথমে পৌঁছাতে হবে চট্টগ্রামে। সেখান থেকে ৩-৪ ঘণ্টার মধ্যে বিলাইছড়ি যেতে পারবেন।
চট্টগ্রাম থেকে বিলাইছড়ি যেতে বহদ্দারহাট বাস টার্মিনাল থেকে প্রথমত কাপ্তাই জেটিঘাটে যেতে হবে। সেখান থেকে ইঞ্চিনবোটে যেতে পারবেন বিলাইছড়ি।
আর বিলাইছড়ি থেকে বড়থলি যেতে প্রায় ৭ দিন সময় লাগে। তাই বেশিরভাগ পর্যটকরাই বান্দরবন জেলার রুমা উপজেলা দিয়ে এখানে আসা-যাওয়া করে। বান্দরবানের রুমা হয়ে বগা হ্রদ।
সেখান থেকে হেঁটে আনন্দপাড়া অথবা মুরংপাড়ায় রাত কাটিয়ে পরদিন দুপুরের মধ্যেই যাওয়া যাবে পুকুরপাড়ায়।
আবার রাঙ্গামাটির বিলাইছড়ির ফারুয়া হয়েও যাওয়া যায়। তবে সেখানে এখানে কোনো আবাসিক হোটেল ও খাওয়া-দাওয়ার সু-ব্যবস্থা নেই।