নাইক্ষ্যংছড়ি-রামু থেকে জীবনের ঝুকি নিয়ে এক গ্রামেরই ১৯ জন পাচার - Southeast Asia Journal

নাইক্ষ্যংছড়ি-রামু থেকে জীবনের ঝুকি নিয়ে এক গ্রামেরই ১৯ জন পাচার

“এখান থেকে শেয়ার করতে পারেন”

Loading

নিউজ ডেস্ক

সীমান্তবর্তী এলাকা বান্দবানে জেলার নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা ও রামু উপজেলার দুর্গম জনপদ থেকে ফাঁদে ফেলে মানবপাচার করছে দালাল চক্র। দু’উপজেলার পাহাড়ি ও অনগ্রসর গ্রামগুলোতে হানা দিচ্ছে এসব পাচারকারী চক্র। আর এ অপতৎপরতায় অনেক গ্রাম এখন পুরুষ শূন্য হয়ে পড়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে স্থানীয়দের মাঝে।

সম্প্রতি নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে সাগরপথে মানব পাচার বেড়েছে। তার এলাকায় এ পর্যন্ত কতজন পাচার হয়েছে তার কাছে সঠিক তথ্য না থাকলেও পাচারকারীদের কাছ থেকে তার এলাকার ২ জন পালিয়ে আসার তথ্য আছে। তাদের একজন পাইনছড়ি গ্রামের ছৈয়দ হোসেনের ছেলে কালাইয়া (২০)। সে অনেক তদবিরে পর ৭০ হাজার টাকা দিয়ে টেকনাফ সাগর থেকে বাড়ি ফিরে এসেছে। তিনি আরো জানান, মানবপাচার ও অপহরণ বিষয়ে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা গত সপ্তাহে হওয়া উপজেলা আইন-শৃংখলা কমিটির সভায় উদ্বেগও প্রকাশ করছেন অনেকে। নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার দোছড়ি ইউনিয়নের তারগু মৌজা হেডম্যান মংনু মার্মা একথা বলেন।

রামুর গর্জনিয়া ইউনিয়নের মরিচ্যা চরের বাসিন্দা ফরিদুল আলম, বদি আলম ও জাফর আলম বলেন, তাদের ৩ সন্তানসহ গ্রামের ১১ যুবক ও কিশোরকে মানবপাচারকারী চক্র ফাঁদে ফেলে গত ২৮ দিন আগে নিয়ে যায় । যাদের সহায়তা করে স্থানীয় কয়েকজন দালাল। যারা তাদের সন্তানকে রোহিঙ্গা দালালদের এবং টেকনাফের দালালদের মাধ্যমে টেকনাফ নিয়ে যায়। পরে বোটে করে সাগর পথে মালয়েশিয়া। এভাবে সাগর পথে যাওয়ার সময় মিয়ানমারের জলদস্যুদের খপ্পরে পড়ে তারা । যে বোটে ৭২ জন মানুষ ছিলো। এখন তাদের হদিস মিলছে না ২ দিন। এর আগেও ১১ জন পাচার করে দালাল চক্র। অর্থাৎ ১ গ্রাম থেকেই ১৯ জন যুবক পাচার হয়।

ঘুমধুমের একাধিক সূত্র জানান, গত ১৪ আগস্ট মানবপাচারকারীদের খপ্পরে পড়ে ২৬ জন লোক মিয়ানমার নৌবাহিনীর হাতে আটক হন। তাদের মধ্যে ২ জন ঘুমধুমের কচুবুনিয়ায়।

নাইক্ষ্যংছড়ি সদর ইউনিয়নের আদর্শগ্রামের বাসিন্দা গোলাম কিবরিয়া বলেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্পের অনেক রোহিঙ্গা তাদের গ্রামে আসে স্বজনদের কাছে। তারা মানবপাচারকারী। গত ৪ আগস্ট এ ধরনের ১ দল রোহিঙ্গা এখানে এসে কয়েকদিন অবস্থান করে ফিরে গিয়ে কৌশলে যুবকদের নিয়ে যাচ্ছে। এ ধরনের ২ জনকে নিয়ে যায় তারা। যাদের নাম হলো মোবারক জিয়া ও নেজামুদ্দিন। তাদের ২ জনের জন্যে তাদের পিতা-মাতা খুবই দুচিন্তায়।

এভাবে মিয়ানমার সীমান্তের এ ২ উপজেলার দুর্গম ও পাহাড়ি জনপদে হানা দিচ্ছে সাগর পথের মানব পাচারকারীরা। যারা স্থানীয় কিছু দালালকে ব্যবহার করে এ অপতৎপরতা চালাচ্ছে।

সুশীল সমাজের একাধিক প্রতিনিধি জানান, নাইক্ষ্যংছড়ি ও রামু উপজেলা ভৌগলিকভাবে একই গন্ডিতে। উভয় উপজেলার মানুষ দু’ এলাকায় বিচরণ করে নির্বিগ্নে। আর এ দু’ উপজেলায় পাহাড়ি ভূমি বেশি। যেখানে রোহিঙ্গাদের কিছু আত্মীয়-স্বজন রয়েছে। মূলত তারাই সাগরপথে মানবপাচারের হোতা।

মানবপাচার বিষয়ে জানতে চাইলে ককসবাজার জেলার রামু থানার অফিসার ইনচার্জ আনোয়ারুল হোসাইন বলেন, আসলে মানব পাচার খুবই গর্হিত কাজ। অবৈধ পথে বিদেশ যাওয়া মানে জীবন নিয়ে খেলা করা। আর রামু থানা এলাকায় এ ধরনের কাজ করার প্রমাণ পেলে তার ছাড় নেই।

বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা নির্বাহী অফিসার রোমেন শর্মা বলেন, মানব পাচার বা অবৈধ পথে বিদেশ গমন সরকারিভাবে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। তিনি সর্ব মহলকে এ অবৈধ পন্থা অবলম্বনকারীদেকে বিষয়ে সজাগ থাকার পরামর্শ দেন।