রোহিঙ্গা ঢলের ছয় বছর আজঃ ১৮৬ হত্যাকাণ্ড, ৩০২০ মামলায় আসামি ৬৮৩৭

নিউজ ডেস্ক
রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়ার ছয় বছর পূর্ণ হলো আজ শুক্রবার (২৫ আগস্ট)। কূটনৈতিক জটিলতায় আটকে আছে প্রত্যাবাসন। যদিও আন্তর্জাতিক চাপের মুখে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে ২০১৭ সালের শেষ দিকে বাংলাদেশের সঙ্গে চুক্তি করেছিল মিয়ানমার সরকার। কিন্তু সেই প্রত্যাবাসন আজো শুরু হয়নি। এতে দীর্ঘ হচ্ছে রোহিঙ্গা সংকট। এরই মধ্যে উখিয়া ও টেকনাফের ৩৩টি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে দিন দিন বাড়ছে অস্থিরতা। সেইসঙ্গে বাড়ছে হত্যাকাণ্ড ও অন্যান্য অপরাধ। গত ছয় বছরে ক্যাম্পে ১৮৬টি হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। এর মধ্যে গত ২৫ আগস্ট থেকে চলতি বছরের ২৪ আগস্ট পর্যন্ত ৮৫টি হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। এর আগের পাঁচ বছরে ১০১টি হত্যাকাণ্ড ঘটেছিল। এসব হত্যাকাণ্ডের পেছনে রয়েছে চাঁদাবাজি, অপহরণ, অস্ত্র ও মাদক ব্যবসা এবং আধিপত্য বিস্তার। এ নিয়ে আরসা-আরএসওর প্রকাশ্যে গোলাগুলির ঘটনা ঘটছে।
ক্যাম্পের বাসিন্দারা বলছেন, মাদক ব্যবসা, চাঁদাবাজি, অপহরণ, চোরাচালান ও আধিপত্য বিস্তারের জেরে অধিকাংশ হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। আবার অপহরণ করে চাঁদা না পাওয়ায় কিছু হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীরা। ইতোমধ্যে ক্যাম্পে খুনোখুনিতে আরসা-আরএসও জড়িত থাকার বিষয়টি প্রকাশ্যে এসেছে।
আরসা-আরএসও ক্যাম্পে অস্ত্রের মহড়া দেয়
ক্যাম্পের একাধিক মাঝির সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রতিদিন সন্ধ্যার পর আরসা এবং আরএসও সন্ত্রাসীরা ক্যাম্পে ঢুকে অস্ত্রের মহড়া দেয়। প্রায় দিনই রোহিঙ্গাদের ঘরে ঢুকে নারী-পুরুষদের অত্যাচার-নির্যাতন করে লুটপাট চালায়। এমন পরিস্থিতিতে নির্ঘুম রাত কাটছে তাদের। তবে এপিবিএন ক্যাম্পে অভিযান চালালে বিভিন্ন আস্তানা ও পাহাড়-জঙ্গলে অবস্থান নেয় সন্ত্রাসীরা। অভিযান শেষ হলে রাতে কাঁটাতারের বেড়া কেটে ক্যাম্পে ঢুকে অপকর্ম শুরু করে তারা। সর্বশেষ গত মঙ্গলবার (২২ আগস্ট) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে উখিয়ার রাজাপালং ইউনিয়নের কুতুপালং-৮ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পে মোহাম্মদ ইউনুস (১৮) নামের এক রোহিঙ্গা যুবককে গুলি করে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা।
ক্যাম্পের বাসিন্দা মোহাম্মদ আমিন বলেন, ‘ইউনুস মাদ্রাসার ছাত্র ছিল। তার সঙ্গে কারও দ্বন্দ্ব ছিল না। সে আরসা সদস্যদের তথ্য সরবরাহ করছে বলে সন্দেহ করেছিল তারা। সে জন্য আরসার সদস্যরা গুলি করে হত্যা করেছে। ক্যাম্পে একের পর এক হত্যার ঘটনায় আমরা আতঙ্কের মধ্যে রয়েছি।’
১৮৬টি হত্যাকাণ্ড
জেলা পুলিশ ও এপিবিএনের তথ্যমতে, ৩৩টি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে গত ছয় বছরে ১৮৬টি হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। নিহতদের মধ্যে রয়েছেন কমিউনিটি নেতা, স্বেচ্ছাসেবক ও সাধারণ রোহিঙ্গা। এর মধ্যে চলতি বছরের আট মাসে (২৪ আগস্ট পর্যন্ত) একাধিক সংঘর্ষ ও গোলাগুলিতে ৪৬ জন নিহত হয়েছেন, এর আগের চার মাসে ৩৯ জন নিহত হন। এর মধ্যে ১৮ জন রোহিঙ্গা মাঝি, ১২ জন আরসার সদস্য, একজন স্বেচ্ছাসেবক ও অন্যরা সাধারণ রোহিঙ্গা।
১১টি রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী গোষ্ঠী সক্রিয়
চলতি বছরের ১৫ ফেব্রুয়ারি প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চাঁদাবাজি, ইয়াবা ব্যবসা, মানব পাচার, অপহরণ, আধিপত্য বিস্তার ও হাটবাজার নিয়ন্ত্রণে রাখতে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের অভ্যন্তরে অন্তত ১১টি রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী গোষ্ঠী সক্রিয় আছে। এর মধ্যে অন্যতম আরসা-আরএসও। এসব গোষ্ঠীর মাধ্যমে হামলা ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটছে। অপহরণ ও ধর্ষণসহ নানা অপরাধে জড়িত রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর সদস্যরা। মাঝেমধ্যে অভিযান চালিয়েও অপরাধ নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না।
আরসা-আরএসওর দ্বন্দ্ব চরমে
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ক্যাম্পের একাধিক মাঝি জানিয়েছেন, ক্যাম্পে আরসা-আরএসওর মধ্যে বর্তমানে বিভেদ চরমে। উদ্দেশ্য নিয়ে মতবিরোধ দেখা দেওয়ায় আরসার প্রধান আতাউল্লাহ আবু আম্মার জুনুনির গ্রুপ থেকে সরে আসার চেষ্টা করছে অন্য একটি অংশ। এই অংশকে নিজেদের দলে ভেড়াতে চাইছে আরএসও। এতেই দেখা দিয়েছে বিপত্তি। এ ছাড়া রয়েছে ক্যাম্পের ত্রাস নবী হোসেন গ্রুপ। আবার ক্যাম্পের অনেক সাধারণ রোহিঙ্গাও আরসা সন্ত্রাসী দলের ওপর অতিষ্ঠ হয়ে গোপনে আরএসওকে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। এদের যুক্তি আরএসও ক্যাম্পে শান্তি বজায় রাখতে চায়। বাস্তবে দুটি গ্রুপই সন্ত্রাসী কার্যক্রমে জড়িত।
রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোর ৬০ সদস্যকে খুঁজছে পুলিশ
আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন) বলছে, রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোর সদস্যদের একটি তালিকা করেছে পুলিশ। সেখানে ৬০ জনের নাম উঠে এসেছে। তাদের ধরতে বিশেষ অভিযান চালানো হবে। তালিকায় থাকা সন্ত্রাসীরা হলো মাস্টার মুন্না, নবী হোসেন, মৌলভী তৈয়ুব, কালা পুতু, আবু কালাম ওরফে জাবু জাকু, মো. ইসলাম, মাস্টার মো. আয়ুব, মহিব উল্লাহ, কাইনুস, করিম উল্লাহ, রুবেল, রুয়াইয়া ওরফে রবি, জামাল হোসেন, মো. দেলোয়ার, মো. হামিদ, করিম উল্লাহ, মো. ওসমান, মোস্তাক আহমেদ, মো. ইসলাম, মো. জামাল হোসেন, শাহ নেওয়াজ, জয়নাল হোসেন, আবদুল আমিন ওরফে কালু ডাকাত, দিদার আহমেদ ওরফে নাইগ্যা, মো. এমরান হোসেন, জাফর আলম ওরফে ভুলু ডাকাত, খোকন, ইব্রাহীম, মো. নুর, মো. রফিক, আব্দুর রজব, রিদুয়ান, শালবাগান ওসমান গণি ওরফে আয়াছ, নুর হোসেন ওরফে মুনিয়া, ছোট সৈয়দ নুর, জিয়াবুর রহমান ওরফে জাবু, সলিম, ইলিয়াছ, আবুল হাফেজ, কালাইচ্ছা, মো. আয়াজ, আব্দুল আমিন, মো. তৈয়ুব, মো. আলম ওরফে নালা, মো. কামাল হোসেন, মো. সাদ্দাম, মোবারক হোসেন, মো. সাইফুল, ইয়াসিন, মো-আলম, হারুন ডাকাত, মো. সাদেক, আবদুর রহমান, মো. ইসমাইল, মো. ইসহাক, মো. হারুন ও ইমাম হোসেনসহ ৬০ জন।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও রোহিঙ্গা নেতারা বলছেন, রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে নবী হোসেন গ্রুপ, মুন্না গ্রুপ, ডাকাত আবদুল হাকিম গ্রুপ, ডাকাত মো. সালেহ গ্রুপ, ইসলামিক মাহাস গ্রুপ ও আল-ইয়াকিন গ্রুপ অন্যতম। এর পাশাপাশি ‘আরসা’ পরিচয় দিয়ে আরও কয়েকটি গ্রুপ ক্যাম্পে সক্রিয় আছে। আধিপত্য বিস্তার, মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ, অপহরণ ও চাঁদাবাজি ঘটনায় এসব গ্রুপের সদস্যরা জড়িত।
অপহরণের ঘটনা ৩৫৯টি
পাহাড়ি সন্ত্রাসী ও আরসার সঙ্গে মিলে ক্যাম্পের অনেক রোহিঙ্গা জড়িয়ে পড়েছে অপহরণ কর্মকাণ্ডে। গত ছয় বছরে ক্যাম্পগুলোতে ঘটেছে পাঁচ শতাধিক অপহরণের ঘটনা। টেকনাফ ও উখিয়ায় অপহরণ এখন নিত্যদিনের ঘটনা। অপহরণের ঘটনায় জড়িত অন্তত পাঁচ-ছয় গোষ্ঠী। তবে পুলিশের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, অপহরণের ঘটনা ৩৫৯টি। কারণ অপহরণের ঘটনার অধিকাংশ অভিযোগ পুলিশের কাছে আসে না। অভিযোগ দিলে অপহৃত ব্যক্তিকে হত্যা করা হয়। এজন্য মুক্তিপণে মুক্তি মেলে বলে জানান ভুক্তভোগীরা।
পুলিশের ভাষ্য
ক্যাম্পে দিন দিন অপরাধ বাড়ছে উল্লেখ করে ১৪-আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) পুলিশ সুপার মো. সাইফুজ্জামান বলেন, ‘আধিপত্য বিস্তার, মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ, অপহরণ ও চাঁদাবাজির ঘটনায় একাধিক গ্রুপের সদস্যরা জড়িত। এসব নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে বাড়ছে অপরাধ ও হত্যাকাণ্ড।’
অপরাধীদের তালিকা করে তাদের ধরতে অভিযান শুরু করেছি জানিয়ে সাইফুজ্জামান বলেন, ‘হত্যাকাণ্ডগুলোর ঘটনায় করা মামলায় এ পর্যন্ত ৯০ জনকে গ্রেফতার করেছি আমরা। বাকিদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত আছে। সন্ত্রাসীদের অপরাধ ঠেকাতে রাত-দিন কাজ করে যাচ্ছি। তবে ক্যাম্প আমাদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। যারাই অপরাধে জড়াবে, তাদের আইনের আওতায় আনা হবে।’
পুলিশ সুপার মো. সাইফুজ্জামান আরও বলেন, ‘ছয় বছরে ক্যাম্পে অভিযানে ৪০০টি আগ্নেয়াস্ত্র এবং ৫০০ দেশীয় অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনায় ৩৩২ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। একই সময়ে ৩৯ লাখের বেশি ইয়াবা ও ৪০ কেজি আইসসহ এক হাজার ৬৯৭ জন রোহিঙ্গাকে গ্রেফতার করা হয়। এ ছাড়া ৩৫৯ রোহিঙ্গা অপহরণের ঘটনায় ৭০টি মামলায় ৯৪ জনকে গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।’
গত ছয় বছরে ছয় হাজার ৮৩৭ জন রোহিঙ্গাকে আসামি করে মামলা হয়েছে তিন হাজার ২০টি। গড়ে বছরে মামলার সংখ্যা প্রায় ৫০০। এমন প্রেক্ষাপটেই রোহিঙ্গাদের ক্যাম্প থেকে পালানো বা বের হওয়া ঠেকাতে কঠোর ব্যবস্থা নিচ্ছে। সব পয়েন্টে চেকপোস্ট স্থাপন, ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা ও অনুপ্রবেশ ঠেকানোসহ ১২ সিদ্ধান্ত নিয়েছে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দল।
কক্সবাজার জেলা পুলিশের পরিসংখ্যান বলছে, ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট থেকে ২০২৩ সালের ২১ আগস্ট পর্যন্ত রোহিঙ্গা ক্যাম্পে নানা অপরাধে মামলা হয়েছে ৩ হাজার ২০টি। আর এসব মামলায় আসামি ছয় হাজার ৮৩৭ জন। এসব মামলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি দুই হাজার ৫৭টি মামলা মাদক আইনের। আসামি দুই হাজার ৯৭৯ জন। এছাড়া ২৩৮টি অস্ত্র মামলায় আসামির ৫৫২ জন, ১৩১টি হত্যা মামলায় আসামি ৯৯১ জন।
ধর্ষণ ও ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগে ৯৪টি মামলায় আসামি ১৪৪, ডাকাতির অভিযোগে ৬২ মামলায় আসামি ৫০৫ জন। রয়েছে অপহরণের মামলাও। ৪৪ মামলায় আসামি ২২২ জন। ৪২টি ফরেনার্স এ্যাক্ট মামলায় আসামির সংখ্যা ১০৪ জন, ৩৭টি মানবপাচার মামলায় আসামির সংখ্যা ১৮৯ জন ও ২৪৩টি অন্যান্য মামলায় আসামির সংখ্যা ৯৪১ জন।
অন্যদিকে গত ছয় বছরে রোহিঙ্গাদের দ্বারা পুলিশ আক্রান্ত হওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। এরকম ঘটনায় সাতটি মামলায় আসামি করা হয়েছে ৭৭ জন রোহিঙ্গাকে।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, রোহিঙ্গারা হত্যা, অপহরণ, ধর্ষণ, মাদক বিক্রি, চাঁদাবাজি, মানবপাচার ও আধিপত্য বিস্তারসহ ১৪ ধরনের অপরাধে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত। অল্প জায়গায় বহু মানুষের বসবাসের কারণে রোহিঙ্গারা মাদকসহ নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। তবে দেশের প্রচলিত আইন রক্ষায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কঠোর অবস্থানে রয়েছে।
আতঙ্কে কক্সবাজারের স্থানীয় বাসিন্দারা
কক্সবাজারের স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, রোহিঙ্গারা দিন দিন বেপরোয়া হয়ে উঠছে। যতই দিন যাচ্ছে, ততই তারা ভয়ঙ্কর রূপে দেখা দিচ্ছে। রোহিঙ্গারা আসার পর থেকে মাদক, চোরাচালান, অপহরণ, চাঁদাবাজি যেমন বেড়েছে, তেমনই বেড়েছে অস্ত্রের ব্যবহার। এতে আমাদের জীবনের নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়েছে।
সর্বশেষ ১৯ আগস্ট টেকনাফের হ্নীলা ইউনিয়নের রংগীখালীর দুর্গম পাহাড়ে অস্ত্র তৈরির কারখানায় অভিযান চালিয়ে ছয় জনকে গ্রেফতার করেছিল র্যাব-১৫। এ সময় কারখানা থেকে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধার করা হয়। বিভিন্ন সময়ে চলা এমন অভিযানে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে স্থানীয়দের।
আতঙ্কের জনপদ উখিয়া-টেকনাফ
রোহিঙ্গাদের কারণে পুরো জেলার মানুষ নিরাপত্তা হুমকিতে আছে বলে জানালেন কক্সবাজার নাগরিক অধিকার আন্দোলনের সদস্য সচিব এইচএম নজরুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘আমরা রোহিঙ্গামুক্ত কক্সবাজার চাই। প্রকাশ্যে হত্যাকাণ্ড ঘটায় রোহিঙ্গারা। স্থানীয়দের বিরুদ্ধে ব্যবহার করছে অস্ত্র। বলতে গেলে এখানে পুলিশও অসহায়। যতই দিন যাচ্ছে রোহিঙ্গারা বেপরোয়া হয়ে উঠছে। তারা স্থানীয় লোকজনের ওপর চড়াও হচ্ছে। ক্যাম্পে অপরাধের পরিমাণ আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন না হলে একদিন স্থানীয়দের জেলা ছেড়ে পালিয়ে যেতে হবে।’
একই আতঙ্কের কথা জানালেন হ্নীলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রাশেদ মাহমুদ আলী। তিনি বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের কারণে উখিয়া-টেকনাফের মানুষ চরম আতঙ্কে। ১২ লাখ রোহিঙ্গার মধ্যে স্থানীয়রা এখন সংখ্যালঘু। রোহিঙ্গারা নানা অপরাধ করলেও পুলিশে দেওয়া যায় না। এতগুলো ক্যাম্পে তাদের নিয়ন্ত্রণ করা এত অল্প সংখ্যক পুলিশের পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না। রাত নামলেই এক আতঙ্কের জনপদ উখিয়া-টেকনাফ।’
বালুখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্পের নেতা নুর হোসাইন বলেন, ‘বাংলাদেশে দুঃখে-কষ্টে ছয়টি বছর পার হয়ে গেলো। আমাদের কোনও কূলকিনারা হয়নি। ক্যাম্পে রোহিঙ্গা ও স্থানীয় বাসিন্দারা নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছেন। এখন ক্যাম্পে খুনোখুনিতে আরসা-আরএসও প্রকাশ্যে জড়াচ্ছে। ফলে বাড়ছে হত্যাকাণ্ড। আমরা দেশে ফিরতে চাই।’
রোহিঙ্গাদের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ার বিষয়ে কক্সবাজারের পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট ফরিদুল আলম বলেন, বাংলাদেশের বিদ্যমান আইন ব্যবস্থায় এমন কোনো অপরাধ নেই যা রোহিঙ্গারা করছেন না। স্থানীয়দের টার্গেট কিলার হিসেবেও রোহিঙ্গাদের ব্যবহার করা হচ্ছে। এ পরিস্থিতি সবার জন্য উদ্বেগজনক।
২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট রাখাইনে হত্যা, ধর্ষণ, নির্যাতন, লুটপাটের শিকার হয়েছে রোহিঙ্গা নাগরিকরা বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নিতে শুরু করেন। কয়েক মাসের ব্যবধানে বাংলাদেশে চলে আসেন ১০ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা। কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের ৩৪টি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ঠাঁই হয়েছে তাদের।