মণিপুরে ‘স্নাইপার’ হামলায় এবার পুলিশ কর্মকর্তা নিহত - Southeast Asia Journal

মণিপুরে ‘স্নাইপার’ হামলায় এবার পুলিশ কর্মকর্তা নিহত

“এখান থেকে শেয়ার করতে পারেন”

Loading

নিউজ ডেস্ক

উত্তর–পূর্ব ভারতের গোলোযোগপূর্ণ রাজ্য মণিপুরের কুকি সম্প্রদায়ের এক পুলিশ অফিসার মারা গেলেন ‘স্নাইপার’ বা দূরবর্তী অজ্ঞাত স্থান থেকে ছোড়া গুলিতে। মৃত সাব ইন্সপেক্টরের নাম ওনখোমাং হাওকিপ (৩৫)।

স্থানীয় এক পুলিশ অফিসারকে উদ্ধৃত করে, কলকাতার ‘দ্য টেলিগ্রাফ’ পত্রিকা জানিয়েছে যে ওই অফিসার বলেছেন, ‘কর্তব্যরত অবস্থায় হাওকিপের ওপরে গুলি চালানো হয়, তাঁর কপালে গুলি লাগে। এটি একটি স্নাইপার হামলা বলে মনে করা হচ্ছে। এ ঘটনায় মেইতেই জঙ্গিদের হাত আছে বলে আমরা সন্দেহ করছি।’

এক বিবৃতিতে পুলিশ প্রশাসন জানিয়েছে, চূড়াচাঁদপুরের সীমান্তবর্তী বিষ্ণুপুর জেলার মোরাং থানার অন্তর্গত চিংফেই গ্রামে হাওকিপ ‘দুর্বৃত্তদের গুলিতে শহীদ হয়েছেন।’
স্থানীয় জনজাতির নেতাদের ফোরাম (আইটিএলএফ) বলেছে, চূড়াচাঁদপুরের জেলা সদর তুইবংয়ের বাসিন্দা হাওকিপকে ‘মেইতেই জঙ্গিরা বুধবার বিকেলে গুলি করে হত্যা করেছে।’ কুকি সমাজের তরফে গোড়া থেকেই বলা হচ্ছে, নিরাপত্তা বাহিনীর কেউ কেউ, বিশেষত রাজ্য পুলিশের একটি অংশ, নির্দিষ্ট সম্প্রদায়ের হয়ে কাজ করছে।

চূড়াচাঁদপুর একটি কুকি-জো সংখ্যাগরিষ্ঠ জেলা। পার্শ্ববর্তী বিষ্ণুপুর একটি মেইতেই-অধ্যুষিত জেলা। এই দুই জেলার সীমানায় গত ৩ মে সংঘর্ষ প্রথম শুরু হয়েছিল। মেইতেইদের ‘তফসিলি সম্প্রদায়’ হিসেবে স্বীকৃতির বিরোধিতা করে কুকিসহ অন্যান্য জাতিগোষ্ঠী। কয়েকটি জাতিসত্তা মানুষদের সংহতি সমাবেশের পরে দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে চলমান সংঘর্ষ শুরু হয়।

চার মাসের বেশি সময় ধরে ‘তফসিলি সম্প্রদায়’ এবং তফসিলি সম্প্রদায় নয়—এমন গোষ্ঠীদের মধ্যে চলা সংঘর্ষে মণিপুরে এখনো পর্যন্ত ১৮০ জনের বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। বাস্তুচ্যুত হয়েছেন ৬০ হাজারেরও বেশি মানুষ। কিন্তু সংঘর্ষ থামেনি, প্রতি সপ্তাহেই গড়ে পাঁচজন বা এর বেশি মণিপুরি মুখোমুখি সংঘর্ষ, গোপন স্থান থেকে চালানো অতর্কিত হামলা বা বন্দুকযুদ্ধে প্রাণ হারাচ্ছেন।

গত মঙ্গলবারই মধ্য মণিপুরের কাংপোকপি জেলায় কুকি-জোমি সম্প্রদায়ের তিনজনকে কাছ থেকে গুলি করে হত্যা করা হয়। বুধবার মণিপুর পুলিশের সাব ইন্সপেক্টরের মৃত্যুর ঘটনা ধরলে, গত আড়াই সপ্তাহে অন্তত ১৫ জন মণিপুরে সংঘর্ষ বা অতর্কিত হামলায় নিহত হয়েছেন। গত ১৩৩ দিনে মারা গেছেন অন্তত ১৮০ জন, অর্থাৎ গড়ে প্রতিদিন একজনের বেশি। ৮ সেপ্টেম্বর টেংনুপাল জেলার পাল্লেল এলাকায় ৬ ব্যক্তি নিহত এবং বেশ কয়েকজন আহত হন। গত ২৯ ও ৩১ আগস্টের মধ্যে কুকি এবং প্রভাবশালী মেইতেইদের মধ্যে সংঘর্ষে কমপক্ষে আটজন নিহত এবং ইন্ডিয়া রিজার্ভ ব্যাটালিয়ন কর্মীসহ ২০ জনের বেশি আহত হন।

বিজেপি শাসিত মণিপুর রাজ্য এবং কেন্দ্রের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় মণিপুরে এই সংঘাত থামাতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে। ভারতের এবং আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো মোটামুটি সর্বসম্মতভাবে এ কথা গত কয়েক মাসে জানিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও এই সংঘাতের পূর্ণাঙ্গ বিবরণ, কারণ এবং সম্ভাব্য সমাধান নিয়ে এখনো পর্যন্ত মুখ খোলেননি।

You may have missed