মিয়ানমারের বিপক্ষে ভালো শুরুর আশা বাংলাদেশের
 
                 
নিউজ ডেস্ক
চীনের হাংজু এশিয়ান গেমনে অংশ নিতে গতকাল রাতে দেশ ছেড়েছে বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-২৩ ফুটবল দল। ২৩ সেপ্টেম্বর থেকে ১৯তম এই আসরের পর্দা ওঠার কথা থাকলেও ফুটবল ইভেন্ট শুরু হচ্ছে আগে থেকেই। মিয়ানমারের বিপক্ষে আগামী মঙ্গলবার ১৯ সেপ্টেম্বর মাঠে নামবে লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা। দেশ ছাড়ার আগে ২০১৮ সালের এশিয়াডের পারফরম্যান্সের কথা মাথায় রেখে ম্যাচ বাই ম্যাচ এগোতে চান বলে জানিয়েছেন কোচ হ্যাভিয়ের কাবরেরা। তবে গ্রুপে অপেক্ষাকৃত কম শক্তিশালী মিয়ানমারের বিপক্ষে ভালো করতে চান তিনি। গ্রুপে বাংলাদেশের অন্য দুই প্রতিপক্ষ চীন ও ভারত।
এশিয়াডে বাংলাদেশ পড়েছে শক্তিশালী গ্রুপে। এবারের আসরের আয়োজক চীন এশিয়ার অন্যতম শীর্ষ দল। এছাড়াও প্রতিবেশী দেশ ভারত আসছে সুনীল ছেত্রীর নেতৃত্বে শক্তিশালী দল নিয়ে। এশিয়ার বড় বড় শক্তির সঙ্গে ভারত টক্কর দিচ্ছে চোখে চোখ রেখে। সাফ ফুটবলের বর্তমান চ্যাম্পিয়নও তারা। বাংলাদেশের প্রথম প্রতিপক্ষ মিয়ানমারও র্যাঙ্কিংয়ে বাংলাদেশের চেয়ে এগিয়ে। তবে বাংলাদেশও সাম্প্রতিক সময়ে ভালো ফুটবল উপহার দিচ্ছে। কিছুদিন আগেই আফগানিস্তানের সঙ্গে দুটি প্রীতি ম্যাচ খেলে দুটিতেই প্রতিপক্ষকে রুখে দেয় মোরসালিনরা। তবে সেখানে জাতীয় দল খেললেও এশিয়াডে অংশ নিচ্ছে অনূর্ধ্ব-২৩ দল। জাতীয় দলের স্প্যানিশ হেড কোচ কাবরেরা গতকাল কিংস অ্যারিনায় এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, ‘এশিয়াডে অংশ নিতে পেরে খেলোয়াড়েরা রোমাঞ্চিত। এটা এশিয়ার বড় একটা প্রতিযোগিতা। আমাদের দলের জন্য টুর্নামেন্টটি চ্যালেঞ্জিং হবে।’ কঠিন গ্রুপে পড়ায় ম্যাচ বাই ম্যাচ ধরে এগোতে চান কাবরেরা। তিনি জানান, ‘আমরা প্রতিটি ম্যাচ নিয়ে আলাদা করে ভাবছি। ম্যাচ ধরে ধরে এগিয়ে যেতে চাই। আলাদা লক্ষ্য যদি বলেন, সেটি অবশ্যই ভালো খেলা। লড়াই করা।’ তবে গ্রুপের তিনটি দলের মধ্যে মিয়ানমার ম্যাচ নিয়েই আপাতত ভাবছেন কাবরেরা, ‘তিনটি দলই শক্তিশালী। তবে আমরা প্রথম ম্যাচটি নিয়ে ভাবছি। সেটি মিয়ানমারের বিপক্ষে। চীন আর ভারতের তুলনায় মিয়ানমার কিছুটা পিছিয়ে আছে। আমরা তাই প্রথম ম্যাচে মিয়ানমারের বিপক্ষে পয়েন্ট পেতে চাই। জিততে পারলে খুবই ভালো হয়, সেটি তুলনামূলক শক্তিধর চীন আর ভারতের সঙ্গে আমাদের প্রেরণা দেবে।’
২০১৮ সালে জাকার্তা এশিয়াডের শক্তিশালী কাতারকে হারানোর পর থাইল্যান্ডের সঙ্গে ড্র করে নকআউটপর্বে জায়গা করে নিয়েছিল বাংলাদেশ। সেবার জাকার্তায় বাংলাদেশ দলে ছিলেন রহমত মিয়া। এবার তিনি দলকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। তিনি বলেন, ‘গত এশিয়ান গেমসে বাংলাদেশ দলটা বলতে গেলে জাতীয় দলই ছিল। এবার খেলোয়াড়েরা তুলনামূলক নতুন। গতবার আমরা দ্বিতীয় রাউন্ডে খেলেছি। এবার লক্ষ্য থাকবে ভালো করার।’ জাতীয় দলের অনেক ফুটবলার না থাকলেও যারা রয়েছেন তাদের নিয়ে আশাবাদী অধিনায়ক, ‘২২ জনের মধ্যে ১৫ জনের জাতীয় দলে ক্যাম্প করার অভিজ্ঞতা রয়েছে। তারা নিজেদের সেরাটা দেয়ার জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করবে জাতীয় দলে নিজের জায়গা করতে।’
জাতীয় দলের হেড কোচ হ্যাভিয়ের কাবরেরা অলিম্পিক দলেরও দায়িত্বে আছেন। এশিয়ান গেমসে বাংলাদেশ পুরুষ ফুটবল দলের পূর্ণাঙ্গ স্কোয়াড ও অনুশীলন হয়েছে গতকাল। কাবরেরা গত সপ্তাহে ১৫ জন নিয়ে অনুশীলন শুরু করেন। থাইল্যান্ডের এএফসি অনূর্ধ্ব-২৩ চ্যাম্পিয়নশিপ থেকে ফিরে দলের বাকি সাত সদস্য গত বুধবার দলে যোগ দিয়েছেন। এশিয়ান গেমসে পুরুষ ফুটবল দল অনূর্ধ্ব-২৩ বয়সভিত্তিক। তবে তিনজন সিনিয়র খেলোয়াড় যোগ করার সুযোগ থাকলেও বাংলাদেশ দলের কোচ অবশ্য দুজনই দলে নিয়েছেন। বাংলাদেশ জাতীয় দলের অধিনায়ক জামাল ভূঁইয়ার টুর্নামেন্টটিতে নেতৃত্ব দেয়ার কথা থাকলেও আর্জেন্টিনার তৃতীয় স্তরের ক্লাব সোল দ্য মায়োতে যোগ দেয়ায় এশিয়াডে খেলছেন না তিনি। গত এশিয়াডে কাতারের বিপক্ষে জয়সূচক গোলটি আসে জামালের পা থেকেই। মিয়ানমারের বিপক্ষে ম্যাচের পর আগামী ২১ সেপ্টেম্বর ভারতের বিপক্ষে মাঠে নামবে বাংলাদেশ। স্বাগতিক চীনের বিপক্ষে গ্রুপপর্বের শেষ ম্যাচে লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা মাঠে নামবে ২৪ তারিখ।
এশিয়ান গেমসে ১৯৭৮ সালে প্রথম খেলেছিল বাংলাদেশ। ১৯৮২ সালে দিল্লি এশিয়াডে মালয়েশিয়ার বিপক্ষে পায় নিজেদের প্রথম জয়। এরপর সিউলে ১৯৮৬ সালে হারায় নেপালকে। এরপর প্রায় ২৮ বছর পর ২০১৪ সালে আফগানিস্তানের বিপক্ষে ইনচ্যান এশিয়াডে জয় পায় তারা। এখন পর্যন্ত মাত্র চারটি জয় পাওয়া বাংলাদেশের সর্বোচ্চ অর্জন জাকার্তায় দ্বিতীয় রাউন্ডে পৌঁছানোই। তবে সেখানে শক্তিশালী কোরিয়ার সঙ্গে লড়াই করে শেষ পর্যন্ত ৩-১ গোলে পরাজিত হয় বাংলাদেশ। এশিয়ান গেমসের পরই বাংলাদেশের সামনে রয়েছে আরো একটি ইভেন্ট। ২০২৬ বিশ্বকাপের বাছাইয়ের প্রথম ধাপে মালদ্বীপের মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ। আগামী ১২ অক্টোবর মালদ্বীপে হবে প্রথম লেগের ম্যাচ, ফিরতি লেগে নিজেদের মাঠে ম্যাচটি হবে ১৭ অক্টোবর। তাই বাছাইপর্ব শুরুর আগে তরুণদের পরখ করে নেয়ার মোক্ষম সুযোগটি কাজে লাগাতে চান হ্যাভিয়ের কাবরেরা।
