রাঙ্গামাটির ভোটের মাঠে বড় দুদলেরই মাথাব্যথা ‘জেএসএস’ - Southeast Asia Journal

রাঙ্গামাটির ভোটের মাঠে বড় দুদলেরই মাথাব্যথা ‘জেএসএস’

“এখান থেকে শেয়ার করতে পারেন”

Loading

নিউজ ডেস্ক

আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে রাঙ্গামাটিতে আওয়ামী লীগের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি নাকি জনসংহতি সমিতি (জেএসএস), তা এখনও বোঝা যাচ্ছে না। তবে এক নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে টেক্কা দেয়ায় এবং আরেক নির্বাচনে বিএনপিকে পিছনে ফেলে দ্বিতীয় স্থানে উঠে আসায় এ নির্বাচনে দুদলেরই মাথা ব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে আঞ্চলিক দলটি।

আয়তনের দিক থেকে দেশের সর্ববৃহৎ জেলা রাঙ্গামাটি। পার্বত্য এ জেলার আয়তন ছয় হাজার ১১৬.১৩ বর্গকিলোমিটার। ১৮৬০ সালে রাঙ্গামাটিকে জেলা ঘোষণা করা হয়। সবশেষ জনশুমারি অনুযায়ী, এ জেলার মোট জনসংখ্যা ছয় লাখ ৪৭ হাজার ২৫৩। জেলার উত্তরে ভারতের ত্রিপুরা ও মিজোরাম, দক্ষিণে বান্দরবান, পূর্বে মিজোরাম ও পশ্চিমে চট্টগ্রাম ও খাগড়াছড়ি জেলার অবস্থান। আয়তনের দিক থেকে দেশের সর্ববৃহৎ জেলা হলেও এখানে সংসদীয় আসন মাত্র একটি। এটি জাতীয় সংসদের ২৯৯তম আসন।

জেলা নির্বাচন অফিসের তথ্যমতে, এই আসনে মোট ভোটার চার লাখ ৭৯ হাজার ৩১৭ জন। এর মধ্যে পুরুষ দুই লাখ ৫০ হাজার ৯৪৪ ও নারী দুই লাখ ২৮ হাজার ৩৭৩ জন। মোট ভোট কেন্দ্রের সংখ্যা ২১৩টি, যার মধ্যে হেলিসটিং কেন্দ্র রয়েছে ১৮টি। সর্বাধিক হেলিসটিং কেন্দ্র রয়েছে জেলার জুরাছড়িতে। এ উপজেলায় আটটি, বাঘাইছড়িতে পাঁচটি, বিলাছড়িতে তিনটি, বরকলে দুটি হেলিসটিং কেন্দ্র রয়েছে। দুর্গমতার কারণে এ কেন্দ্রগুলোতে হেলিকপ্টারের মাধ্যমে নির্বাচনী সামগ্রী ও লোকবল পাঠাতে হয় বলে এগুলোকে হেলিসটিং কেন্দ্র বলা হয়।

আওয়ামী লীগের অবস্থান
রাঙ্গামাটি মূলত আওয়ামী লীগের দুর্গ হিসেবে পরিচিত। ১৯৯১ সাল থেকে এ পর্যন্ত হওয়া নির্বাচনে এ আসনে আওয়ামী লীগ জয়ী হয়েছে চার বার। বিগত ছটি সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ছিলেন দীপংকর তালুকদার। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে আগাম প্রচারণায় নেমেছে দলটি। গেল একমাস ধরে জেলার দশ উপজেলায় নিয়মিত কোনো না কোনো কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে। প্রতিটি কর্মসূচিতে অংশ নিচ্ছেন দীপংকর তালুকদার। তফসিল ঘোষণার আগেই মাঠ গুছিয়ে রাখছেন বর্ষীয়ান এ নেতা। দলে নেই কোনো কোন্দল। এক কথায় গোছানো আওয়ামী লীগ।

জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হাজি মুছা মাতবর এ বিষয়ে বলেন, ‘আমাদের দলে একটি জনপ্রিয় স্লোগান আছে, তা হলো- পাহাড়ি-বাঙালি এক ঘর, আমরা সবাই দীপংকর। এতেই প্রমাণিত হয় দলের ভেতরে কোনো বিভেদ নেই। আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করে যাচ্ছি। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে আমরাই জয়ী হবো। তবে পার্বত্য এলাকায় বিভিন্ন সন্ত্রাসী সংগঠন রয়েছে। নির্বাচন এলেই তারা মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। আমাদের নেতাকর্মীদের গুম, খুন, নির্যাতন ও ভয়ভীতি প্রদর্শন করে দমিয়ে রাখে। এসব অবৈধ অস্ত্রধারীদের কারণে আমাদের নেতাকর্মীরা নির্বাচনী মাঠে কাজ করতে পারেন না। তাই নির্বাচনের আগে এখানে এসব অবৈধ অস্ত্রধারীর বিরুদ্ধে অভিযান ও প্রশাসনকে সজাগ থাকার অনুরোধ জানাচ্ছি।’

বিএনপির অবস্থান
বিএনপি মাত্র একবার এ আসনে বিজয়ী হয়েছিল। ২০০১ সালের সেই নির্বাচন ছাড়া বাকি তিনটি সংসদ নির্বাচনে বিএনপির স্থান ছিল দ্বিতীয়। কিন্তু ২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোট যুদ্ধে দলটি তৃতীয় স্থানে চলে যায়। দলে রয়েছে একাধিক গ্রুপ।

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) সাংগঠনিক সম্পাদক মো. সাইফুল ইসলাম শাকিল দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রসঙ্গে বলেন, ‘আমরা এখন নির্বাচন নিয়ে ভাবছি না। আমাদের একটাই দাবি বর্তমান সরকারের পদত্যাগ ও আমাদের নেত্রীর উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশ নিয়ে যাওয়ার আন্দোলনকে বেগবান করা। রাজপথে আন্দোলন করে দাবি আদায় করাই আমাদের প্রধান লক্ষ্য। তারপরও যদি সবকিছু ঠিক হয়ে যায়, তখন ভোটের মাঠে নামব। আমাদের দল থেকে নির্বাচন করার মতো চার জন প্রার্থী রয়েছেন। তারা হলেন, মনিস্বপন দেওয়ান, মনীষ দেওয়ান, দীপেন দেওয়ান ও আমাদের বর্তমান সভাপতি দীপন তালুকদার দিপু। এদের মধ্যে দল যাকে মনোনয়ন দেবে আমরা সকলেই ঐক্যবদ্ধভাবে তার জন্য কাজ করব।’

দলে গ্রুপিং প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমাদের দলে কোনো গ্রুপিং নেই। তবে বড় দল হিসেবে কর্মীদের পছন্দের নেতা থাকতেই পারে, এটাকে গ্রুপিং বলা যায় না। আর এগুলো নির্বাচনে কোনো প্রভাব বিস্তার করবে না। আমরা ঐক্যবদ্ধ আছি, দলের জন্য একসঙ্গে কাজ করে যাব।

জেএসএস-এর অবস্থান
জনসংহতি সমিতির (জেএসএস) সহ-সভাপতি ঊষাতন তালুকদার ২০০৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন অংশ নেন। সেবার ৫১ হাজারের বেশি ভোট নিয়ে নিজেদের অবস্থান জানান দেয় এই আঞ্চলিক দলটি। যদিও সেই নির্বাচনে তাদের অবস্থান ছিল তৃতীয়। ২০১৪ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে টেক্কা দিয়ে ৯৬ হাজারের বেশি ভোট পেয়ে বিজয়ী হয় জেএসএস-এর সহ-সভাপতি ঊষাতন তালুকদার। ২০১৮ সালের নির্বাচনে এই প্রার্থীই আওয়ামী লীগের সঙ্গে চোখে চোখ রেখে ভোট যুদ্ধ চালিয়ে যান। যেখানে এক লাখ আট হাজারেরও বেশি ভোট পেয়ে পরাজিত হন ঊষাতন তালুকদার। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে জেএসএস-এর বেশ কয়েকজন নেতার সঙ্গে কথা বললেও নির্বাচন বিষয়ে কোনো কথা বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন তারা।

আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রাঙ্গামাটি আসনে সব থেকে বড় ফ্যাক্টর এ আঞ্চলিক দল- জেএসএস। নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধন না থাকায় দলের প্রার্থী দিতে হয় স্বতন্ত্র। এটা দেশের বড় দুই রাজনৈতিক দল তথা আওয়ামী লীগ ও বিএনপির চিন্তার প্রধান কারণ।

এছাড়া দেশের অন্যান্য রাজনৈতিক দলের মতো এখানে তেমন কোনো অবস্থান নেই বললেই চলে। বিগত নির্বাচনগুলোতে তাদের প্রাপ্ত ভোটের সংখ্যা পাঁচ হাজারের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল।