শরণার্থী বিষয়ক টাস্কফোর্স চেয়ারম্যান কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরার আয় বেড়েছে ১৩ গুণ

নিউজ ডেস্ক
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে খাগড়াছড়ি আসনে টানা তৃতীয় বারের মতো আওয়ামীলীগ সমর্থিত প্রার্থী হওয়ার সুযোগ পেয়েছেন ভারত প্রত্যাগত উপজাতীয় শরণার্থী প্রত্যাবাসন ও পুনর্বাসন এবং অভ্যন্তরীণ উদ্বাস্তু নির্দিষ্টকরণ ও পুনর্বাসন সম্পর্কিত টাস্কফোর্স চেয়ারম্যান ও বর্তমান সাংসদ কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা। ২০১৪ সালের দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন দিয়ে শুরু হয় তার সংসদ সদস্য হিসেবে পথচলা। ২০১৮ সালে দ্বিতীয় বারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। টানা দুই মেয়াদের এ সংসদ সদস্যের স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ অর্জনের রেকর্ড গড়েছেন। ১০ বছরে তার আয় বেড়েছে ১৩ গুণের বেশি।
প্রার্থী হিসেবে খাগড়াছড়ির রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয়ে গত ২৯ নভেম্বর জমা দেয়া হলফনামা ও বিগত দুই নির্বাচনের হলফনামা বিশ্লেষণ করে মিলেছে এমন তথ্য। দশ বছরে বাৎসরিক লাখ টাকার আয় ছাড়িয়েছে কোটি টাকা, কিনেছেন শত একর জমি, বেড়েছে ব্যবসা, এফডিআর, স্বর্ণালংকার, গাড়ি ও বাড়ির সংখ্যা। ২০১৪ ও ২০১৮ সালের হলফনামায় কেবল খাগড়াছড়ি সদর ও দীঘিনালায় সম্পত্তি থাকার কথা উল্লেখ থাকলেও ২০২৩ সালের হলফনামায় রাঙ্গামাটি ও ঢাকায় সম্পত্তি হিসাব দেখানো হয়েছে।
২০১৪ সালের দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরার হলফনামায় ইটভাটা, কৃষি খামার ও মৎস্য খামার, কাঠ ব্যবসাসহ মৌসুমি ব্যবসার খাত থেকে বাৎসরিক আয় ছিল ৩০ লাখ ৫৭ হাজার ৩৭৫ টাকা। ২০১৮ সালে যেটি দাড়াঁয় ৭৫ লাখ ১৪ হাজার টাকায়। ২০২৩ সালের হলফনামায় এ আয় হয়েছে ৪ কোটি ১৬ লাখ ৬৫ হাজার ৬৮০ টাকা। আয়ের সবচেয়ে বড় খাত রাঙ্গামাটির সাজেকে রিসোর্ট ব্যবসা থেকে ১ কোটি ৩৬ লাখ ৩১ হাজার ২৪৭ টাকা। দ্বিতীয় আয়ের খাত ইট, বালুসহ বিভিন্ন উপকরণ সরবরাহ ব্যবসায় ১ কোটি ৩১ লাখ ৭৬ হাজার ৫৫৪ টাকা। ইট ভাটা থেকে আয় ২৫ লাখ টাকা। এ ছাড়া বিভিন্ন এফডিআর, সঞ্চয়ী জামানত ও অংশীদারী বিনিয়োগ থেকে আয় দেখানো হয়েছে। নিজের পাশাপাশি আছে স্ত্রীর নামে কোটি টাকার সম্পদ। ২০১৮ সালে কৃষি, ব্যবসা, সংসদ সদস্য এবং টাস্কফোর্স চেয়ারম্যানের সম্মানী, খামার, গাড়ির ব্যবসা থেকে বার্ষিক আয় ছিল ৭৫ লাখ ১৪ হাজার টাকা। বিগত সময়ে ২০১৪ সালে যেটি ছিল ৩০ লাখ ৫৭ হাজার ৩৭৫ টাকা।
২০১৪ সালের হলফনামায় ব্যাংক কিংবা আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে কোন ঋণ নেয়ার তথ্য না থাকলেও ২০১৮ সালের হলফনামায় সিসি লোনের দায় দেখা হয়েছে। পূবালী ব্যাংক ও জনতা ব্যাংক থেকে ৫০ লাখ টাকা করে ১ কোটি টাকার সিসি লোন নেয়ার তথ্য দেখা যায় ২০১৮ এর হলফনামায়। ২০২৩ সালে এসে কমেছে দায়ের বোঝা। জনতা ব্যাংকের অনুকূলে ৫ লাখ ১১ হাজার ৮৫০ টাকার সিসি দেখানো হয়েছে।
পোষাক পরিচ্ছেদে সাদামাটা ব্যক্তিত্বের প্রতিচ্ছবি ফোটে উঠে সংসদ সদস্য প্রার্থী কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরার। বিলাসবহুল পণ্যের প্রতি আকর্ষণ নেই বললে চলে। তবে সংগ্রহে রেখেছেন অর্ধশত তোলা স্বর্ণালংকার। ২০২৩ সালের হলফনামায় প্রার্থীর নিজের নামে ৫০ তোলা স্বর্ণের হিসেব দেখিয়েছেন। স্ত্রী মল্লিকা ত্রিপুরা রয়েছে ৩০ তোলা স্বর্ণালংকার। ২০১৪ সালের হলফনামায় স্ত্রীর নামে ছিল ১২ ভরি স্বর্ণ ও নিজের নামে ২ টি আংটি এবং ১ টি চেইন। ২০১৮ সালের হলফনামায় একটি আংটি ও একটি চেইন এবং স্ত্রীর নামে ২০ ভরি স্বর্ণালংকার দেখিয়েছেন। ২০১৪ সালে প্রার্থী ও স্ত্রীর নামে স্বর্ণালংকারের মূল্য উল্লেখ করা হয়েছিল ৭ লাখ ২৫ হাজার টাকা। ২০১৮ সালে বেড়ে হয় ৯ লাখ ২০ হাজার টাকা। ২০২৩ সালের হলফনামায় স্বর্ণালংকারের বাজার মূল্য কম দেখা হয়েছে। প্রার্থী ও স্ত্রীর নামে ৮০ তোলা স্বর্ণালংকারের দাম উল্লেখ করা হয়েছে মাত্র ৬ লাখ ৫০ হাজার টাকা।
২০১৪ সালের দশম সংসদ নির্বাচন ও ২০১৮ সালের নির্বাচনে হলফনামায় সম্পদ, আয় ও আর্থিক বিবরণী একই রকম দেখা গেলেও ২০২৩ এ তা বেড়েছে। ২০২৩ এর হলফনামা বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২০১৮ সালের পর থেকে ২০২৩ পর্যন্ত পাঁচ বছরে আনুমানিক আট কোটি টাকার সমপরিমাণ মূল্যের সম্পত্তি বেড়েছে। যার মধ্যে রাঙামাটির সাজেক ভ্যালীর কংলাকে ৪.৮ একর ভূমির উপর খাস্রাং নামে রিসোর্টে বিনিয়োগ করেন ৪ কোটি ৪২ লাখ ১ হাজার টাকা। খাগড়াছড়ি সদরের আলুটিলায় খাস্রাং রেস্টুরেন্ট নামে আরেকটি প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ করেন ২ কোটি ২২ লাখ ৬৫ হাজার টাকা। ঢাকার পূর্বাচলে ভূমি ক্রয় বাবদ অগ্রীম বিনিয়োগ ৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা, ঢাকার উত্তরায় ১ হাজার ৭ শ ৮৩ বর্গফুটের ফ্ল্যাট ক্রয় ৪২ লাখ টাকায়। স্ত্রীর ফ্ল্যাটের জন্য অগ্রীম টাকা প্রদান দেখানো হয়েছে ৩০ লাখ টাকা।
খাগড়াছড়ি সদরের খাগড়াপুর, খবংপুড়িয়া ও দীঘিনালায় বাড়ি রয়েছে তিনটি। যার মূল্য দেখা হয়েছে ২০২৩ সালের হলফনামায় ৩ কোটি ১৭ লাখ ৭১ হাজার ৩৬৬ টাকা। শুল্কমুক্ত ল্যান্ডক্রুজার, জীপসহ আছে ২ কোটি ৩ লাখ টাকা মূল্যের কয়েকটি গাড়ি।
এছাড়া, অস্থাবর সম্পত্তির কলামে ১ কোটি ১৫ লাখ ৫ হাজার ১৫৬ টাকার এফডিআর, ১৪ লাখ ১৭ হাজার ৮৪১ টাকার ডিপিএস, সংসদ সদস্য ও টাস্কফোর্স চেয়ারম্যান থেকে বাৎসরিক আয় ২৪ লাখ ৮৭ হাজার টাকা উল্লেখ করেছেন। এ ছাড়া কৃষি খামারের জন্য ১০৭ একর জমি উল্লেখ করেছেন। ২০১৪ সালে যেটি ছিল ৭০ একর।