পার্বত্যাঞ্চলে বৈষম্যের শিকার ১১ ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী, সবকিছুর নিয়ন্ত্রণ এক সম্প্রদায়ের হাতে
![](https://southeast-asiajournal.com/wp-content/uploads/2023/12/WhatsApp-Image-2023-12-05-at-6.39.19-PM.jpeg)
আবুল খায়ের, পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে ফিরে
পার্বত্য চট্টগ্রামে চরম বৈষম্যের শিকার ১১ ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী। অর্থনৈতিক, সামাজিক, চাকরি, শিক্ষায় পাঁচ ভাগ কোটা থেকে তারা দীর্ঘদিন বঞ্চিত। সবকিছুর নিয়ন্ত্রণ এক সম্প্রদায়ের হাতে। পার্বত্যাঞ্চলে বাঙালিসহ ১৩টি সম্প্রদায় রয়েছে। এর মধ্যে শান্তি ও সম্প্রীতির বার্তা নিয়ে বসবাস করছে ১২টি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী। এরা হলো—ত্রিপুরা, চাকমা, লুসাই, মারমা, পাংখোয়া, তঞ্চঙ্গা, মুরং, খুমি, খিয়াং, কুকি, হাজং ও বম।
এর মধ্যে পার্বত্য শান্তিচুক্তি অনুযায়ী শিক্ষা ও চাকরিসহ সব ক্ষেত্রে চাকমা কোটা পূরণ হয়ে গেছে। কিন্তু বাকি ১১টি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী চাকরি, শিক্ষা কোটাসহ সবকিছুতে বঞ্চিত থাকায় তাদের মধ্যে চরম ক্ষোভ ও হতাশা দেখা দিয়েছে। তারা সবাইকে সমান সুযোগ দেওয়ার দাবি জানিয়ে বলেছেন, আমরা শান্তিচুক্তির সুফল পাচ্ছি। স্মার্ট বাংলাদেশের পথে এগিয়ে যাচ্ছি। তবে কোটার ক্ষেত্রে বঞ্চিত রয়েছি। আমরা ন্যায়বিচার চাই। কোটার ক্ষেত্রে সবার সমান সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে। শুধু একটি সম্প্রদায় কেন পাবে? সত্যিকারের শান্তিচুক্তি হলো সবার জন্য সমান অধিকার।’ ইত্তেফাকের এই প্রতিনিধি পার্বত্যাঞ্চলে সরেজমিন গিয়ে ১২ ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী ও বাঙালি সম্প্রদায়ের সঙ্গে কথা বলেছেন।
তিন পার্বত্য জেলায় প্রাইমারি স্কুল থেকে শুরু হয় বৈষম্য। স্কুলগুলোতে ১০ জন শিক্ষক থাকলে, প্রধান শিক্ষকসহ ৯ জন শিক্ষকই চাকমা সম্প্রদায়ের। অন্য সম্প্রদায় বঞ্চিত। উচ্চশিক্ষা ও চাকরিতেও সব কোটা শেষ হয়েছে চাকমা সম্প্রদায়ের। কৃষিতেও তাদের একক আধিপত্য। কে কোন জমি চাষাবাদ করবে, সেটাও চাকমা সম্প্রদায় ঠিক করে দেয়। এগুলো সম্ভব হয়েছে জেএসএসের বদৌলতে। পাহাড়ে যত সন্ত্রাসী, হত্যা, খুন, ধর্ষণ, চাঁদাবাজি ও অপহরণের ঘটনা ঘটে সবকিছুর মূলে রয়েছে জেএসএস। আর যারা শান্তিচুক্তির পর আত্মসমর্পণ না করে একটি গ্রুপ ইউপিডিএফ সংগঠন করেছিল তারাও সন্ত্রাসী, হত্যা, খুন, ধর্ষণ, চাঁদাবাজি ও অপহরণের ঘটনা ঘটিয়ে আসছে। আবার জেএসএস সংস্কার, ইউপিডিএফ সংস্কারও পরবর্তী সময়ে হয়েছে। মোট চারটি সংগঠনই সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজি, খুনসহ সব অপরাধ কর্মকাণ্ড ঘটিয়ে আসছে। ১১ ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী ও বাঙালি শুধু সেনাবাহিনীসহ অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সার্বিক সহযোগিতা পেয়ে তারা নিরাপদে বসবাস করে আসছে। এ কারণে তারা পাহাড়ে টিকে আছে। তবে জেএসএসকে চাঁদাও দিতে হয় ঠিকমতো। নির্ধারিত থাকে চাঁদার রেটও। এলাকায় এলাকায় পাড়া-মহল্লায় চলে চাঁদা আদায়। পাড়ায় পাড়ায় আছে হেডম্যান ও কারবারি। তারাই জেএসএসের চাঁদা তোলে। এই হেডম্যান ও কারবারিরা হলেন চাকমা সম্প্রদায়ের মানুষ। এক জনের জমি আরেক জনের দিয়ে দেওয়ার কাজটিও করছে চাকমারা। হেডম্যান ও কারবারিরা জেএসএসের প্রধান সন্তু লারমা কর্তৃক নিয়োজিত। ঠাণ্ডা মাথায় নির্যাতন করে আসছে তারা। পাহাড়ে একটা সম্প্রদায় থাকবে—এমন ষড়যন্ত্র নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে চাকমা সম্প্রদায়।
বাঙালি ও ১১ ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর মানুষরা বলেন, সেনাবাহিনীর ২৪ পদাতিক ডিভিশন ও চট্টগ্রাম এরিয়া কমান্ডের সার্বিক তত্ত্বাবধানে তিনটি পার্বত্য জেলায় ১১ ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী ও বাঙালিরা নিরাপদে বসবাস করে আসছে। প্রশাসন ন্যায়বিচার নিশ্চিত করেছে। যোগাযোগব্যবস্থার ব্যাপক উন্নতি হয়েছে। ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পাচ্ছে। কিন্তু একটি সম্প্রদায় আমাদের পিছিয়ে রাখতে চাঁদাবাজি, নারী নির্যাতনসহ নানাভাবে মানসিক নির্যাতন করে আসছে। তাদের কোটা ফিলআপ হয়ে গেছে।
স্থানীয়রা জানান, জেএসএস প্রধান ছাড়া বিতর্কিত পরিবারের একাধিক উচ্চশিক্ষিত ব্যক্তি একতরফাভাবে একটি সম্প্রদায়ের স্বার্থ সংরক্ষণে সর্বদা সচেষ্ট। বিদেশেও শান্তিচুক্তি সম্পর্কে মিথ্যা তথ্য দিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে অপপ্রচারও করে আসছে। বিদেশে তার বাড়ি-গাড়িসহ বিশাল সম্পদ রয়েছে। শান্তিচুক্তির পর গড়ে ওঠা সংস্থাসমূহ যেমন আঞ্চলিক পরিষদ, জেলা পরিষদ ইত্যাদিতে একটি সম্প্রদায়ের ব্যক্তিরা অধিকাংশ সুযোগ-সুবিধা ভোগ করছেন। বাংলাদেশ সরকার পাঁচ ভাগ উপজাতি কোটা বরাদ্দ করলেও এর প্রায় পুরোটাই একটি সম্প্রদায় ভোগ করছে। একই সঙ্গে বিদেশি সংস্থাসমূহের শীর্ষস্থানীয় পদগুলোতেও ঐ সম্প্রদায়ের ব্যক্তিরা দায়িত্বপ্রাপ্ত রয়েছেন। বঞ্চিত সম্প্রদায়ের মধ্যে এক সময় পুঞ্জীভূত ক্ষোভ-হতাশার কারণে জেএসএসের বিরুদ্ধে যে কোনো সময় তারা রুখে দাঁড়াবে বলে আশঙ্কা করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।