অনুপ্রবেশের শঙ্কা শরণার্থী কমিশনের, শূন্যরেখায় মানুষের ভিড়
 
                 
নিউজ ডেস্ক
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সেনাবাহিনী ও বিদ্রোহী গোষ্ঠীর মধ্যে সংঘাতে সেখানে যে ‘মানবিক বিপর্যয়কর পরিস্থিতি’ তৈরি হয়েছে তাতে আটকেপড়া বাসিন্দাদের বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের চেষ্টা চালানোর আশঙ্কা দেখছে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার কার্যালয়।
এদিকে যুদ্ধ পরিস্থিতির মধ্যে রাখাইনের বেশ কিছু চাকমা ও তঞ্চঙ্গ্যা সম্প্রদায়ের মানুষের মিয়ানমার- বাংলাদেশ সীমান্তের শূন্যরেখায় জড়ো হওয়ার তথ্য দিয়েছেন এপারে থাকা তাদের স্বজনরা। শূন্যরেখায় মানুষের জড়ো হওয়ার কিছু ভিডিও চিত্র সেখান থেকে তাদের কাছে পাঠানো হয়েছে বলেও তারা দাবি করেছেন।
আগের দিনের মতো সোমবারও যুদ্ধ ক্ষেত্র ছেড়ে আসা মিয়ানমার সীমান্ত রক্ষা বাহিনী বিজিপির আরও অনেক সদস্যের অনুপ্রবেশের তথ্য জানিয়েছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। এ পর্যন্ত ১০৬ জন বিজিপি অনুপ্রবেশের পর অস্ত্রসহ আত্মসমর্পণ করেছে, যারা এখন তাদের হেফাজতে রয়েছে।
পাশাপাশি বাংলাদেশের সীমান্ত রক্ষা বাহিনী জানিয়েছে, সীমান্ত দিয়ে অনুপ্রবেশ রোধে তাদের কঠোর নজরদারি রয়েছে।
রাখাইনে সেনা ও বিদ্রোহীদের মধ্যে লড়াইয়ের প্রভাব পড়ছে সীমান্তের এপারের জনগোষ্ঠীর মধ্যেও। সোমবার দুপুরে মিয়ানমার থেকে আসা গোলার আঘাতে ঘুমধুম ইউনিয়নের জলপাইতলী এলাকায় নারীসহ দুজন নিহতের পর তুমব্রু সীমান্তের বাসিন্দাদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
রাতে সীমান্তের পরিস্থিতি ও অনুপ্রবেশের বিষয়ে জানতে চাইলে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, “বিগত কয়েকদিন ধরেই সীমানার ওপারে রাখাইন রাজ্যে যুদ্ধ পরিস্থিতি বিরাজ করছে। এতে করে আমরা বিভিন্ন সূত্র থেকে শুনতে পারছি যে, সেখানে একটি মানবিক বিপর্যয়কর পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। এই অবস্থায় আমরা বিভিন্ন পয়েন্টে অনুপ্রবেশের আশঙ্কা করছি।
“কিন্তু সমস্যা হচ্ছে এসব অনুপ্রবেশ যদি ঘটে, আমরা এমনিতেই ১২ লাখের মত রোহিঙ্গা নিয়ে গত ছয়-সাত বছর ধরে হিমশিম খাচ্ছি। এখন রাখাইন থেকে যদি আরও অনুপ্রবেশ করে তাহলে সেটি আমাদের জন্য ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি তৈরি করবে।”
কমিশনার বলেন, “সে কারণে আমাদের জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থার প্রতি অনুরোধ থাকবে, সেখানে আটকে পড়া মানুষের প্রতি তারা যেন সহায়তার হাত বাড়ায়; যাতে তাদের সীমান্ত অতিক্রম করতে না হয়। আর আমাদের ওপর যেন আরও বোঝার চাপ না পড়ে।”
শূন্যরেখায় রাখাইনের লোকজনের অবস্থান সম্পর্কে জানতে চাইলে মিজানুর রহমান বলেন, “আমরা শুনতে পারছিলাম বিভিন্ন জায়গায় সীমানার বিভিন্ন পয়েন্টে বিভিন্ন এলাকায় বিভিন্ন জাতি-গোষ্ঠীর লোকজন অনুপ্রবেশের চেষ্টা চালায়। বিজিবি সেখানে পাহারায় রয়েছে। তারা যে কোনো ধরনের অনুপ্রবেশ না ঘটে সেজন্য তারা সচেষ্ট রয়েছেন।”
এদিকে রাতে শূন্যরেখায় জড়ো হওয়া মানুষের তিনটি ভিডিও গণমাধ্যমের হাতে এসেছে। এই তিনটি ভিডিও কক্সবাজার শহরে বসবাসকারী নৃগোষ্ঠীর এক সদস্যের কাছে পাঠিয়েছেন রাখাইনের একজন স্বজন; যিনি তার পরিবার নিয়ে রাখাইন ছাড়ার উদ্যোগ নিয়েছিলেন।
নৃগোষ্ঠীর ওই সদস্য বলেন, শূন্যরেখায় জড়ো হওয়া ওই লোকজন মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের মংডু জেলার ঢেঁকিবুনিয়া ও তুমব্রু এলাকার বাসিন্দা। তারা সোমবার উখিয়া উপজেলার পালংখালী ও থাইংখালী এলাকার মাঝামাঝি ২৬ নম্বর সীমান্ত পিলার সংলগ্ন শূন্যরেখায় অনুপ্রবেশের চেষ্টায় অবস্থান নিয়েছিলেন।
তার ভাষ্য, ওই দলে দুই থেকে তিনশ নারী-পুরুষ ও শিশু রয়েছে। তারা চাকমা ও তঞ্চঙ্গ্যা সম্প্রদায়ের। সেখানে কাঁটা তারের পাশে অনেকক্ষণ অপেক্ষায় ছিলেন। তবে বিকালের পর থেকে সীমান্তে ব্যাপক গোলাগুলি শুরু হলে তারা আবারও মিয়ানমার অভ্যন্তরে চলে যান।
এসব ভিডিওর সত্যতা নিশ্চিত করা যায়নি। তবে সেখানে জড়ো হাওয়া মানুষের চেহারা ও পোশাক দেখে বোঝা যায়, তারা নৃগোষ্ঠীর সদস্য। রোহিঙ্গা নন।
একটি ভিডিও চিত্রে দেখা গেছে, অনেক মানুষ তাদের পরিবারের সদস্য ও মালামাল নিয়ে কাঁটা তারের পাশে অপেক্ষা করছেন। অনেকে ফাঁকা মাঠের মাঝে গাছের ছায়ায় বিশ্রাম নিচ্ছেন। সীমান্ত থেকে কিছু দূরে লোকালয়ের কাছে কিছু মানুষের আরেকটি জটলা দেখা গেছে।
আরেকটি ভিডিওতে আরও দেখা যায়, ফাঁকা মাঠের সরু আল ধরে কিছু মানুষ সামনে এগোচ্ছেন। তাদের সঙ্গে নারী ও শিশুরা রয়েছে। কারও কারও মাথায় মালামালের বোঝা রয়েছে। গ্রামের পাশ দিয়ে সারিবদ্ধভাবে মানুষ চলেছে।
তৃতীয় ভিডিওতে দেখা গেছে, জঙ্গলঘেরা একটি জায়গায় গাছের নিচে বসে মানুষ বিশ্রাম নিচ্ছেন। সেখানে মানুষের জটলার মধ্যে একটি কুকুরকে ঘুরতে দেখা যায়। সেখানে এসে আরও লোকজন মালামাল নিয়ে জড়ো হচ্ছেন। মানুষের কোলাহল দেখে মনে হচ্ছে, তারা সবাই বাড়ি ছেড়ে এসেছেন।
এদিকে সোমবার সীমান্ত এলাকা পরিদর্শন করেন বিজিবির কক্সবাজার রিজিয়ন কমান্ডার বিগ্রেডিয়ার জেনারেল মোর্শেদ আলম।
পরে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “আমাদের সীমান্ত সিল করা আছে। আমরা কোনোভাবেই রোহিঙ্গা বা অন্যদের এখানে অনুপ্রবেশ করতে দেব না। বিজিবি সেখানে কাজ করছে।”
দুপুরে সীমান্ত এলাকা পরিদর্শন করেন কক্সবাজার র্যাব-১৫ ব্যাটালিয়নের জ্যেষ্ঠ সহকারী পরিচালক ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবু ছালাম চৌধুরী।
অনুপ্রবেশ ঠেকাতে তারাও তৎপর থাকার তথ্য দিয়ে তিনি বলেন, “আমরা আমাদের দিক থেকে অত্যন্ত সবল আছি। তারা ইচ্ছে করলে এখানে চলে আসতে পারবে না। চলে এলেও আমরা যাতে ব্যবস্থা নিতে পারি সেভাবে সতর্ক আছি।”
