চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে পিসিপির উদ্যোগে নবীন বরন ও বিদায় সংবর্ধনা অনুষ্ঠিত
![]()
নিউজ ডেস্কঃ
“জুম পাহাড় ডাকছে তোমায় করোনা হেলা, হে নবীন এসেছে ক্ষণ ভাসাও মুক্তির ভেলা” এই স্লোগানকে সামনে রেখে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখা কর্তৃক ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী শিক্ষার্থীদের নবীন বরন ও ২০১৪-১৫ ব্যাচের শিক্ষার্থীদের বিদায় সংবর্ধনার অনুষ্ঠান চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত হয়েছে।
উক্ত অনুষ্ঠানে পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক কৃতি চাকমার সঞ্চালনায় ও সভাপতি মিন্টু চাকমার সভাপতিত্বে উদ্বোধক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সহ সভাপতি ও ২৯৯ নং রাঙামাটি আসনের সাবেক সাংসদ ঊষাতন তালুকদার।
বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণ রসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম, প্রাণ রসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. কাঞ্চন চাকমা, ইতিহাস বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. আনন্দ বিকাশ চাকমা এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক শ্রী রামভাই পাংখোয়া।
নবীন বরন ও বিদায় সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সংগ্রামী সদস্য রবিধন চাকমা।
নবীনদের পক্ষ থেকে বক্তব্য রাখেন সমাজতত্ত্ব বিভাগের ছাত্র রবি বিকাশ চাকমা এবং বিদায়ীদের পক্ষে বক্তব্য রাখেন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ছাত্রী এ্যাঞ্জেলা থিগিধি।

উদ্বোধক’র বক্তব্যে শ্রী ঊষাতন তালুকদার বলেন, জীবন মানে সংগ্রাম। আমাদের প্রতিনিয়ত সংগ্রামের মধ্য দিয়ে বেঁচে থাকতে হয়। সেইজন্য আজকের তরুণ সমাজ, তথা নবীন সমাজকে তাদের সংগ্রামের মধ্য দিয়ে অধিকার আদায়ের পথ বেছে নিতে হবে।
তিনি বলেন, পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ প্রতি বছর যে এই ধরনের অনুষ্ঠানের আয়োজন করে থাকে সেটির উদ্দেশ্য হলো নবীন সমাজকে তার দায়িত্ব কর্তব্য, শেকড় সম্পর্কে অবগত করা। তিনি নবীনদের উদ্দেশ্যে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় হলো জ্ঞানের সমুদ্র। এই জ্ঞানের সমুদ্রের নিজেকে বিলাসিতায় গাঁ না ভাসিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামের চেতনাবোধে উজ্জীবিত হওয়ার তাগিদ দেন।
তিনি বলেন, চেতনার কোনো মৃত্যু নেই। আজকে যারা মনে করছেন জনসংহতি সমিতির আন্দোলন থেমে গেছে তাদেরকে বিভ্রান্ত না হওয়ার জন্য অনুরোধ করেন।
তিনি আরও বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে এখন অস্থিতিশীলতা বিরাজ করছে। যারা জাতিকে বিভক্তি করছে, যারা দালালিপনা করে নিজের অস্তিত্ব বিক্রি করে দিচ্ছে তাদেরকে চরম মূল্য দিতে হবে বলে তিনি হুশিয়ারি দেন। তিনি সকলকে ব্যক্তিগত স্বার্থের উর্ধে কাজ করে পার্বত্য চট্টগ্রামের অধিকার আদায়ের সংগ্রামে সামিল হওয়ার আহ্বান জানান।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে প্রাণরসায়ন ও অনুপ্রেরণা বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম নবীনদের উদ্দেশ্যে বলেন, যারা আজকের নবীন স্কুল কলেজের গন্ডি পেরিয়ে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্পন করেছে তাদের প্রত্যেককেই নিজ নিজ স্বপ্নকে বাস্তবে রুপ দিতে হবে। দেশ ও সমাজ বিনির্মানে তাদেরকে উদ্যোগী হতে হবে। তাই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম থেকেই পড়ালেখা শুরু করতে হবে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে প্রাণ রসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. কাঞ্চন চাকমা বলেন, আজকে যারা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে জ্ঞানার্জন করে বিদায় নিচ্ছেন তাদেরকে সেই জ্ঞান দেশ ও সমাজ গঠনে বিনিয়োগ করতে হবে। তাদের সৃষ্টিশীলতা, মেধা দিয়ে সঠিক প্লাটফর্ম খুঁজে নেয়ার অনুরোধ জানান।অর্জিত জ্ঞান, মূল্যবোধকে সামনে রেখে তিনি এই আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ইতিহাস বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. আনন্দ বিকাশ চাকমা বলেন, আজকে যারা বিদায় নিচ্ছে তাদের পরস্পরের মধ্যে যোগাযোগ রাখার জন্য একটি প্লাটফর্ম গড়ে তোলার জন্য আহ্বান করেন। তিনি মনে মনে করেন এই প্লাটফর্মের মাধ্যমে সাবেক এবং বর্তমান চবি শিক্ষার্থীদের মধ্যে একটি মেলবন্ধন গঠনে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
তিনি বলেন,পিসিপির এই ধরনের অনুষ্ঠানে ছাত্র শিক্ষক মেলবন্ধনে সামিল হওয়াটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই পিসিপির অনুষ্ঠানে সকলকে অংশগ্রহন করতে অনুরোধ জানান। কেননা পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ,চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখা দীর্ঘ দিন যাবত এই ধরনের অনুষ্ঠান আয়োজন করে আসছে। তাছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি কার্যক্রম সহ পার্বত্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন অধিকার আদায়ের সাথে সরাসরি যুক্ত আছে।তাই তিনি শিক্ষকদের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকে পিসিপিকে সহযোগিতা করার অনুরোধ জানান।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক শ্রী রামভাই পাংখোয়া বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় হলো উচ্চশিক্ষার বৃহত্তর জায়গা। এখানে যারা অধ্যয়নের সুযোগ পেয়েছে তাদেরকে সেই সুযোগটা কাজে লাগানোর আহ্বান জানান।
শিক্ষার্থীদের তিনি বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের সংগ্রামের ইতিহাস, নিজ শেকড় সম্পর্কে অবগত থাকতে হবে।তাই সকলকে পিছুটান, নিজ শেকড়কে ভুলে না যাওয়ার অনুরোধ করেন। আমাদের শেকড় সম্পর্কে নিবীড়ভাবে অধ্যয়ন করা জরুরি। আমরা যদি পার্বত্য চট্টগ্রামের ইতিহাস সম্পর্কে না জানি তাহলে ভালো সিজিপিএ ও মূল্য হীন বলে তিনি মনে করেন।
তিনি বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের লক্ষ্য করলে দেখা যায় আজকে আমাদের নিজস্ব সংস্কৃতি সীমাবদ্ধ হয়ে গেছে।নতুনত্ব বলতে আমরা এখনও কিছুই সৃষ্টি করতে পারিনি। তাই আমাদেরকে করুণ অবস্থা থেকে উত্তরণে পার্বত্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন প্রান্তিক এলাকায় গিয়ে পাহাড়ের অবস্থা সম্পর্কে অধ্যয়ন ও সংগ্রামে সামিল হতে হবে। জাতির এই ক্রান্তিলগ্নে ছাত্রসমাজের অংশগ্রহণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে তিনি মনে করেন।
এরপর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আদিবাসী শিক্ষার্থীবৃন্দ ও রঁদেভূ শিল্পীগোষ্ঠী এবং প্লুং ব্যান্ড শিল্পীদের পরিবেশনায় এক মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে নবীন বরণ ও বিদায় সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়।