লক্ষ্মীছড়ির দূর্গমতায় আশার আলো সেনা জোন
![]()
ফিচার ডেস্কঃ
পার্বত্য চট্টগ্রামের শান্তিচুক্তি পূর্বকালীন সময়ের ইনসার্জেন্সি পরিস্থিতি মোকাবেলা এবং পরবর্তী শান্তিচুক্তি বাস্তবায়নের জন্য বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তা করার জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত নিরাপত্তাবাহিনীর সাথে সাধারণ জনগনের পারষ্পরিক সম্পর্ক ও বোঝাপড়া দীর্ঘদিনের। শান্তিচুক্তি স্বাক্ষরের পূর্বকালীন ও পরবর্তীকালীন উভয় সময়েই সাধারণ জনগনের যেকোন প্রয়োজনে সব সময় পাশে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর নেতৃত্বাধীন নিরাপত্তাবাহিনী। পার্বত্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকায় নিয়োজিত সেনা জোন সমূহের সহযোগীতামূলক কর্মকান্ডের ব্যপ্তি বহুমুখী। যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন, বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে সাধারণ দরিদ্র জনগনকে সাবলম্বী তরে তোলার প্রচেষ্টা, বিভিন্ন স্তরের শিক্ষা ব্যবস্থার প্রসার, সার্বক্ষনিক সাধারণ চিকিৎসা ব্যবস্থা ও মাঝে মাঝে বিশেষ চিকিৎসা ব্যবস্থার আয়োজন, বিভিন্ন প্রাকৃতিক দূর্যোগে সাধারণ জনগনের পাশে দাঁড়ানো। এ সব কিছুই বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর বিভিন্ন জোন সমূহের মাধ্যমে দীর্ঘদিন ধরে পরিচালত হয়ে আসছে। এসকল সেনা জোন সমূহের মধ্যে অন্যতম লক্ষ্মীছড়ি জোন। যে কেউ লক্ষ্মীছড়ি জোনের দায়িত্বপূর্ন এলাকায় প্রবেশ করে সাধারণ পাহাড়ী কিংবা বাঙ্গালী যাদের সাথেই কথা বলুক না কেন তাদের কাছে জোন সম্পর্কে উচ্ছসিত প্রশংসামূলক বক্তব্য পাওয়া যাবেই। এমনই একজনের নাম মোঃ কলিম উদ্দিন। তিনি জানান, লক্ষ্মীছড়ি জোন তাদের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের জন্য অনেক কাজ করে থাকে। নিরাপত্তাবাহিনীকে তারা সন্ত্রাস প্রতিরোধ, শিক্ষা খাতে উন্নয়ন, চিকিৎসা খাতে ও বিভিন্ন আর্থিক সহায়তার ক্ষেত্রে পাশে পান। বিশেষ করে পাহাড়ী-বাঙ্গালী যেকোন সমস্যায় নিরাপত্তাবাহিনীকে তারা সর্বদা পাশে পান। তার মতে, পাহাড়ে সেনাবাহিনী না থাকলে সন্ত্রাসীরা অবাধে তাদের চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালনা করবে, পাহাড়ে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও বিভিন্ন আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ঘটবে না। সেনাবাহিনী পাহাড়ে সন্ত্রাসী কর্মকান্ড, খুন ও চাঁদাবাজি বন্ধে আরো বেশী করে ভূমিকা রাখতে পারে এবং এ অঞ্চলে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষা করে সকল সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পাহাড়ে আরো বেশী করে সেনা ক্যাম্প বাড়ানো যেতে পারে বলেও দাবি কলিমের।
এই প্রতিবেদকের সাথে কথা হলো আরো একজন ব্যক্তির, যার নাম মোঃ আনোয়ারুল্লাহ, তিনিও লক্ষ্মীছড়ি এলাকার বাসিন্দা। কলিম উদ্দিনের সাথে সহমত পোষন করে তিনি বলেন, সেনাবাহিনী এক কথায় তাদের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে ব্যাপক ভূমিকা রাখছে। বিশেষ করে সেনাবাহিনীর শিক্ষা, চিকিৎসা ও প্রাকৃতিক দূর্যোগে গ্রহন করা পদক্ষেপ খুবই প্রশংসনীয়। তিনি বলেন, পাহাড়ে সেনাবাহিনী না থাকলে সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজি, ডাকাতি বেড়ে যাবে। সেনাবাহিনী পাহাড়ে থাকার কারণে সন্ত্রাসী কর্মকান্ড কিছুটা কম হচ্ছে ও গোপনে হচ্ছে, কিন্তু সেনাবাহিনী না থাকলে পাহাড়ে প্রকাশ্যে সন্ত্রাসী কার্যক্রম চলবে, যার ফলে এ অঞ্চলে নিরীহ পাহাড়ী-বাঙ্গালীদের নিরাপদে বসবাস করা দুষ্কর হয়ে উঠবে। তার মতে, পার্বত্য এলাকায় সেনাবাহিনীর কাজের পরিধি আরো বাড়ানো উচিত, সেনা ক্যাম্প বৃদ্ধি করা উচিত। তাহলে প্রতিটি এলাকায় জনসাধারণ নিরাপদে চলাচল করতে পারবে, চাঁদাবাজি-সন্ত্রাস থাকবে না। যেসকল দূর্গম এলাকায় এখনো সেনাবাহিনী নাই সেসব এলাকায় প্রচুর পরিমানে চাঁদাবাজি হচ্ছে। সুতরাং পাহাড়ে শান্তি আনতে সেনাবাহিনীর বিকল্প নাই বলেও দাবি এই প্রবীন ভদ্রলোকের।

ঐ এলাকায় আরো অনেকের সাথে এই প্রতিবেদকের কথা হলো, সবার বক্তব্যের ধরণ প্রায় একই। তারপরেও স্থানীয় বিমল চাকমার বক্তব্যের কিছুটা অংশ আলোকপাত করা যাক। বিমল চাকমা পেশায় একজন ছাত্র। তিনি বলছিলেন কিভাবে সেনাবাহিনী তাদের পাশে থেকে তাদের জীবন মান উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছেন। তিনি বলেন, পাহাড়ে সেনাবাহিনী আছে বলেই এখনো দূর্গম পাহাড়ে বসবাসরত পাহাড়ীরা সুচিকিৎসা পাচ্ছে, পিছিয়ে পড়া জনপদের লোকজন হয়েও পাহাড়ীরা আজ শিক্ষা ক্ষেত্রে এগিয়ে যাচ্ছে। তিনি আরো বলেন, পাহাড়ে সেনাবাহিনী আছে বলেই চাঁদাবাজি, গুম, খুনের মতো ঘটনা কমে এসেছে, মানুষ নিরাপদে বসবাস করতে পারছে। তার মতে পাহাড় হতে সেনাবাহিনী সরিয়ে নিয়ে এ অঞ্চলে আবারো সন্ত্রাস-চাঁদাবাজ ও দুষ্টু চক্র মাথাচারা দিয়ে উঠবে, পাহাড়ে পাহাড়ী-বাঙ্গালী সম্প্রীতি নষ্ট হবে, অস্থিতিশীল হয়ে উঠবে পাহাড়। দূর্গম পাহাড়ে আনাছে-কানাছে বসবাস করা পাহাড়ীরা হয়ে উঠবে অসহায়। তাই পাহাড়ে পাহাড়ী-বাঙ্গালী মিলে মিশে সম্প্রীতি গড়ে তুলতে ও পাহাড়ে নিরাপত্তা সহ আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন গড়ে তুলতে পাহাড়ে সেনাবাহিনীর কাজের পরিধি আরো বাড়ানো উচিত বলেও মনে করেন এই উপজাতি ব্যক্তি।
পার্বত্য চট্টগ্রামের বর্তমান প্রেক্ষাপট অর্থাৎ শান্তিচুক্তির পরবর্তী এই সময়ে কোন প্রকার অস্ত্রের ঝনঝনানি হবার কথা না থাকলেও বিভিন্ন স্বার্থান্বেষী মহলের ইন্ধনে বর্তমানে পাহাড়ে ৪টি উপজাতি আঞ্চলিক দল রয়েছে এবং প্রত্যেক দলই নিজস্ব আর্মড গ্রুপ পরিচালনা করে। তারা আধুনিক সামরিক সরঞ্জামে সজ্জিত থেকে সাধারণ জনগনকে ভয়ভীতি প্রদর্শন করে চাঁদাবাজিতে লিপ্ত থাকে। শান্তি চুক্তি পূর্বকালীন সময়ে আঞ্চলিক উপজাতি দলের নেতৃবৃন্দের মধ্যে যে আদর্শগত বিষয় ছিলো বর্তমান প্রেক্ষাপটে সেই আদর্শের ছিটেফোটাও অবশিষ্ট নেই। প্রত্যেক উপজাতি আঞ্চলিক দলের নেতৃবৃন্দ ব্যক্তিগত স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য সাধারণ জনগনের উপর ক্রমাগত চাপ সৃষ্টি করে যাচ্ছে। সাধারণ উপজাতি ও বাঙ্গালীদের সাথে একান্ত কথা বলে কখনো মনে হয়নি যে, তারা আঞ্চলিক উপজাতি দলগুলোর সন্ত্রাসী কর্মকান্ড পছন্দ করছে। তবে সাধারণ জনগনের অসহায়ত্বের একটি পর্যায়ে তারা সেনা জোন সমূহকে সবসময় পাশে পাচ্ছে। লক্ষ্মীছড়ি জোন নিজ দায়িত্বপূর্ন এলাকায় সাধারণ জনগনের দুঃখ-দুর্দশা লাঘবে গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা রাখছে। সাধারণ মানুষের মধ্যে সেনাজোনের প্রতি মমত্ব ও ভালোবাসা তাদের কথার মাঝেই ফুটে উঠছে।
স্থানীয়দের সাথে কথোপকথনের ভিডিও: