নাথান বম কি সেনাবাহিনীর সৃষ্টি ? - Southeast Asia Journal

নাথান বম কি সেনাবাহিনীর সৃষ্টি ?

নাথান বম কি সেনাবাহিনীর সৃষ্টি ?
“এখান থেকে শেয়ার করতে পারেন”

Loading

মেজর নাসিম (অবঃ)

সোশাল মিডিয়ায় সন্তুপন্থী পাহাড়িরা নাথান বমের সাথে সেনা কর্মকর্তাদের একটি ছবি দিয়ে বোঝাতে চান কেএনএফ আসলে সেনাবাহিনীর সৃষ্টি। সেনাবাহিনী প্রশিক্ষন দিয়ে অস্ত্র দিয়ে নাথান বম কে শান্তি চুক্তির পক্ষের শক্তি জেএসএস ‘র বিরুদ্ধে দাঁড় করিয়েছে। অনেক সবজান্তা সাংবাদিকদের কেউ কেউ ইনিয়ে বিনিয়ে ঐ ছবিটার দিকে ইংগিত করেন। তারা এসব করার সময় আরেকটি সত্য লুকিয়ে যান।

এটা এখন সবাই জানে নাথান বম এক সময় চারু কলার ছাত্র ছিলেন। তিনি ভাস্কর্য বিষয়ে স্নাতক করে ছিলেন, তিনি খাগড়াছড়ি জিরো পয়েন্টে জেএসএস নেতা মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা’র মূর্তির কারিগর।

নাথান বম তখন সন্তু লারমার খুব স্নেহভাজন ছিলেন। নাথান বম জেএসএস’র ছাএ সংগঠন পিসিপি’র নেতা ছিলেন। নাথান বম এক সময় সন্তু লারমার প্রভাব বলয়ের বাইরে তার বম সম্প্রদায়ের জন্য কিছু কল্যাণমূলক কাজ করার জন্য গঠন করেন কুকি ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন বা কেএনডো (KNDO)।

সন্তু লারমা বিষয়টি ভালোভাবে নেননি। প্রাথমিক ভাবে কেএনডো’র ঘোষিত লক্ষ্য ছিলো বান্দরবানের বম-পাংখোয়া-লুসাই- খিয়াং- ম্রো -খুমি সম্প্রদায়ের মধ্যে কিছু সামাজিক উন্নয়নের কাজ করা। তিনি একাজের জন্য আঞ্চলিক পরিষদ, জেলা পরিষদের দ্বারে দ্বারে ঘুরেছেন। বিফল মনোরথ হয়ে তিনি তখনকার বান্দরবান ব্রিগেড হেডকোয়ার্টারে যোগাযোগ করেন। ব্রিগেড কমান্ডারগন সামাজিক অংশীদারিত্বের অংশ হিসাবে তাদের আমন্ত্রণে কেএনডোর নানান অনুষ্ঠানে যোগ দেন প্রধান অতিথি হিসাবে। এখন সামাজিক মাধ্যমে যে ছবি আমাদের দেখানো হয় সেসব সেই কারনে তোলা নির্দোষ ছবি। আর এসব প্রকাশ্য দিবালোকের কোন গোপন কার্যক্রমের নয়।

নাথান বম কি সেনাবাহিনীর সৃষ্টি ?

পার্বত্য চট্টগ্রামে কাজ করেছেন এমন সকল সরকারি কর্মকর্তারাই বিভিন্ন সময়ে এরকম নানান সামাজিক কর্মসূচিতে অতিথি হিসাবে উপস্থিত থেকেছেন। ভবিষ্যতেও থাকবেন। এইতো বৈসাবী বা বিজু’তে দেখবেন জেলা প্রসাশক, পুলিশের উর্ধতন কর্মকর্তারা নানান অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকছেন।

যাইহোক, যখন নাথান বম মিজোরাম কেন্দ্রীক জোরাম ফাউন্ডেশনের কর্মকাণ্ডে জড়িত হন তখন জেএসএস ‘র নেতৃত্ব শংকিত হয়ে পড়েন। কারন এই জোরাম ফাউন্ডেশন কুকি-লুসাই- চিন জনজাতির মধ্যে এক নব জাগরন বা রেনেসাঁ র জন্য কাজ করছিলো।

সন্তু লারমার এই উদ্বেগের কারন পুরনো স্মৃতি: তার সহকর্মী যোদ্ধা চবাই মগ আত্মসমর্পণ পরবর্তী সময়ে মারমাদের উন্নয়নে গঠন করেছিলেন ‘মারমা উন্নয়ন সংসদ’। তখন সন্তু লারমা তার এই উত্থানে শংকিত হয়ে পড়েন। তিনি চবাই মগের নেতৃত্ব কে তার জন্য উদ্বেগ জনক এবং মারমা উন্নয়ন সংঘ ভবিষ্যতে পাহাড়ি জাতিকে বিভক্ত করে ফেলবে এই আশংকা করেন। ফলাফল ১৯৮৭ সালের ৩ জানুয়ারি খাগড়াছড়ি -পানছড়ি সড়ক সংলগ্ন ৪নং রাবার বাগান থেকে শান্তি বাহিনী কর্তৃক অপহৃত ও গুম হোন।

  • অন্যান্য খবর জানতে এখানে ক্লিক করুন।
  • ফেসবুকে আমাদের ফলো দিয়ে সর্বশেষ সংবাদের সাথে থাকুন।

এই মারমা উন্নয়ন সংসদের নানান কার্যক্রমে তখন যুক্ত ছিলেন ২০৩ ব্রিগেডের তৎকালীন কমান্ডার কর্নেল দানিয়েল ইসলাম।

পার্বত্য চট্টগ্রামে ত্রিপুরা কল্যান সংসদ, ম্রো কমপ্লেক্স, বম সোশাল কাউন্সিল সহ নানাবিধ সংগঠনের সাথে সেনাবাহিনীর কর্মকর্তারা জড়িত ছিলেন এখনো হয়তোবা আছেন।

নাথান বম পরবর্তী সময়ে তার রূপ পরিবর্তন করেন এবং সশস্ত্র সংগঠন কেএনএফ গঠন করেন। নাথানের রূপ বদলের পিছনে সেনাবাহিনীর মদদের কথা প্রচার করে জেএসএস র মিডিয়া উইং পূর্ববর্তী সময়ে সন্তুলারমা র সাথে নাথামের সম্পৃক্ততা কে আড়াল করতে চান।

নাথান বম কি সেনাবাহিনীর সৃষ্টি ?

অর্থাৎ নাথান বম যত দিন সন্তু লারমার আনুগত্য করেছেন তিনি ভালো ছিলেন। নাথান যখন তার প্রাক্তন বস কে পরিহার করে নেতা হতে চাইলেন তখনই বিপওি। সন্তু পন্থীরা আরো বলে বেড়ান নাথানকে অস্ত্র ও প্রশিক্ষন দিয়েছে সেনাবাহিনী। আচ্ছা সেনাবাহিনীর কাছে অস্ত্র তো আর বেসিক ব্যাংকের টাকা নয় যে কেউ চাইলেই পেয়ে গেল! আর কমান্ডারও কেউ বাচ্চুর মত গান্ডু নয়-“যা নিয়ে যা” বলে দিয়ে দিলেন। এখন প্রশ্ন হলো যদি তখন নাথানের সামাজিক কার্যক্রমে সহযোগিতা করা দোষ হয় তবে চারুকলার যে শিক্ষক তাকে পড়িয়েছেন তিনিও নাথানের জঙ্গি হওয়ার দায়ে দোষী।

নাথান দীর্ঘ দিন তার সম্প্রদায়ের জন্য পাহাড়ি নেতৃবৃন্দের কাছ থেকে কোন সহযোগিতা পাননি। নিয়মতান্ত্রিক রাজনীতি করতে যেয়ে নির্বাচনে সুবিধা করতে পারেননি। এরকম দুঃসময়ে “ও পাড়ের ডাক যদি আসে” শুনে তিনি মিজোরামে চলে গেছেন। যেমনটি তিনি ও তার অগ্রজ এমএন লারমা ১৯৭৫ সালে ইন্দিরা গান্ধীর ডাকে সাড়া দিয়েছেন। সন্তু লারমা পল্টি খেলে কোন দোষ নয়, যখন নাথান বম পল্টি খায় তখনই সে ব্যাড বয়!!

লেখক: পার্বত্য চট্টগ্রাম ও নিরাপত্তা বিশ্লেষক।