ক্যাম্পে-ক্যাম্পে গণহত্যা দিবস পালন, স্বদেশে ফেরার আকুতি রোহিঙ্গাদের
নিউজ ডেস্ক
মিয়ানমারের রাখাইনে রোহিঙ্গাদের দমন-পীড়নের ৭ বছর আজ। এ দিনটিকে কালো দিবস আখ্যা দিয়ে গণহত্যা দিবস হিসেবে ৭ বছর ধরে পালন করে আসছেন রোহিঙ্গারা।
এ উপলক্ষে আজ রবিবার (২৫ আগস্ট) সকাল ১০টার দিকে বৃষ্টি উপেক্ষা করে টেকনাফের মোচনী নয়া পাড়া ২৬/২৭ রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ‘হোপ ইজ হোম’ ক্যাম্পেইন পালন করেছেন রোহিঙ্গারা।
সরেজমিনে টেকনাফের নয়া পাড়া শাল বাগান রোহিঙ্গা ক্যাম্পে গিয়ে দেখা যায়, ‘হোপ ইজ হোম’ ক্যাম্পেইন উপলক্ষে আশপাশের ক্যাম্প থেকে সকাল থেকে লোকজন শাল বাগান অ্যাকশন এইড সামনে জড়ো হতে শুরু করেন। ক্যাম্পেইন সমাবেশে পুরুষদের পাশাপাশি রোহিঙ্গা নারী, শিশুরাও যোগ দেন। পোস্টার, প্ল্যাকার্ডে রোহিঙ্গারা মিয়ানমারে ফিরে যাওয়ার দাবি তুলে ধরেন।
মিয়ানমারের রাখাইনে রোহিঙ্গা দমন-পীড়নের ৭ বছর পূর্তির দিনটিকে রোহিঙ্গা গণহত্যা দিবস হিসেবে পালন করা হয়েছে।
রোহিঙ্গা ঢলের ৭ বছরপূর্তি ও রোহিঙ্গা গণহত্যা দিবসের সমাবেশে বক্তব্য দেন ২৬ নং রোহিঙ্গা ক্যাম্পের মাঝি রোহিঙ্গা নেতা বজলুল ইসলাম, মো. নুর, মাস্টার রফিক, মাস্টার ফাইসেল ও মো. আয়াছ মাঝি প্রমূখ।
সমাবেশে রোহিঙ্গা নেতা বজলুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা আমাদের দেশে ফিরে যেতে চাই। আমরা এই গণহত্যা দিবসটি পালন করছি, কারণ এই দিনে মিয়ানমার জান্তা সরকার আমাদের ওপর গণহত্যা চালিয়েছে। এই দেশে আর কত বছর থাকবো? আর থাকতে চাই না। আমরা আমাদের স্বদেশে ফিরতে চাই।
সাধারণ রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ব্যানারে অনুষ্ঠিত এই সমাবেশে রোহিঙ্গা নেতা মো. নুর বলেন, ‘মিয়ানমার আমাদের দেশ। অনতিবিলম্বে আমাদের নিজ দেশে ফেরত নিতে হবে। বাংলাদেশের প্রতি আমরা কৃতজ্ঞতা জানাই, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে প্রত্যাবাসন সফল করতে দেশটির কাজ করছে।
২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট মিয়ানমারের সেনাবাহিনী রাখাইন অঞ্চলের মংডু, বুচিথং ও রাসেথং জেলার রোহিঙ্গাদের ওপর নির্বিচারে হত্যা ও নির্যাতন শুরু করে। সে সময় বাংলাদেশে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের ঢল নামে। তখন সীমান্ত অতিক্রম করে প্রায় ৭ লাখ রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশের কক্সবাজারে উখিয়া ও টেকনাফে এসে আশ্রয় নেয়। ওই দিনটিকে স্মরণে বিভিন্ন ক্যাম্পে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গারা ‘রোহিঙ্গা জেনোসাইড রিমেম্বার ডে’ পালন করে আসছে। সমাবেশ থেকে মিয়ানমারে গণহত্যার বিচার, দ্রুত প্রত্যাবাসনসহ কয়েকটি দাবি তুলে ধরেন রোহিঙ্গা প্রতিনিধিরা।
সমাবেশ থেকে মিয়ানমারে গণহত্যার বিচার, দ্রুত প্রত্যাবাসনসহ কয়েকটি দাবি তুলে ধরেন রোহিঙ্গা প্রতিনিধিরা।
দাবিগুলো হলো- মিয়ানমারে পার্লামেন্টে রোহিঙ্গা হিসেবে স্বীকৃতি, সীমিত সময় রাখা যাবে মিয়ানমার ট্রানজিট ক্যাম্পে, সকল রোহিঙ্গাকে প্রত্যাবাসন করতে হবে, সেফজোন, নিজস্ব সহায়-সম্বল ফেরত, প্রত্যাবাসনের সময় বেঁধে দেওয়া, রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন, এক বারে গ্রামের সব মানুষকে প্রত্যাবাসন করা, রোহিঙ্গাদের সন্ত্রাসী হিসেবে উত্থাপন না করা। এছাড়া প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ায় যুক্তরাষ্ট্র, জাতিসংঘ, ওআইসি, যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয়ান ইউনিয়ন, বাংলাদেশসহ দাতা সংস্থাকে অন্তর্ভুক্ত করা।
এদিকে কুতুপালং আশ্রিত শীর্ষ রোহিঙ্গা নেতা মোহাম্মদ জোবায়ের বলেন, ‘মিয়ানমার সরকার ও আরকান আর্মি তাদের চলমান যুদ্ধে রোহিঙ্গাদের মানব ঢাল হিসেবে ব্যবহার করছে। যার ফলে প্রতিদিন সে দেশে রোহিঙ্গাদের মৃত্যু খবর পাচ্ছি আমরা। আবার অনেকে প্রাণে বাচঁতে ক্যাম্পেও আশ্রয় নিচ্ছে। এতে ক্যাম্পে চাপ এবং অস্থিরতা বাড়ছে।
তিনি আরও বলেন, ‘ইতোমধ্যে রাখাইনের অনেক রোহিঙ্গা গ্রাম খালি হয়ে গেছে। অন্তত নতুন করে ৮ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের খবর আমরা পেয়েছি। যাদের মধ্যে অনেকে ক্যাম্পে আগে থেকে থাকা স্বজনদের কাছে আশ্রয় নিয়েছে। আবার অনেকে গ্রামের মধ্যে থাকছে। তবে দুঃখজনক ঘটনা হচ্ছে প্রাণে বাঁচতে পালাতে গিয়ে অনেকে নাফ নদে ও সাগরে ডুবে মারা যাচ্ছে। এরপর আমরা বাংলাদেশে আর বোঝা হয়ে থাকতে চাই না।
অপরদিকে-সীমান্তে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঠেকাতে নাফ নদীতে টহল বৃদ্ধি করা হয়েছে এবং নতুন করে আমরা আর কোন রোহিঙ্গা ঢুকতে দিচ্ছি না। ইতোমধ্যে আমরা বহু অনুপ্রবেশকারীকে প্রতিহত করেছি। এবং সে দেশে ফেরত পাঠিয়ে হয়েছে বলে জানিয়েছেন টেকনাফ (২ বিজিবি) ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেঃ কর্নেল মো. মহিউদ্দিন আহমেদ।
- অন্যান্য খবর জানতে এখানে ক্লিক করুন।
- ফেসবুকে আমাদের ফলো দিয়ে সর্বশেষ সংবাদের সাথে থাকুন।
- ইউটিউবেও আছি আমরা। সাবস্ক্রাইব করে ঘুরে আসুন ডিজিটাল কন্টেন্টের দুনিয়ায়।