খাদ্য সংকটে বান্দরবানের থানচির দুর্গম কয়েকটি পাড়ায় বেহাল দশা

খাদ্য সংকটে বান্দরবানের থানচির দুর্গম কয়েকটি পাড়ায় বেহাল দশা

খাদ্য সংকটে বান্দরবানের থানচির দুর্গম কয়েকটি পাড়ায় বেহাল দশা
“এখান থেকে শেয়ার করতে পারেন”

Loading

নিউজ ডেস্ক

বান্দরবানে থানচির দুর্গম ও মিয়ানমার সীমান্তবর্তী কয়েকটি পাড়ার বাসিন্দারা তীব্র খাদ্যসংকটে আছে। বাঁশ কোড়ল খেয়ে কোনোমতে বেঁচে আছে তারা। আসন্ন জুমের ধান কাটা পর্যন্ত টিকে থাকার জন্য বিত্তবানদের সাহায্য চেয়েছে এই পরিবারগুলো। থানচি উপজেলার রেমাক্রি ইউনিয়নের ৬ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডের দুর্গম পাহাড়ে ম্রো ও ত্রিপুরাদের এই পাড়াগুলোর অবস্থান।

মেনহাত ম্রোপাড়ায় ২০ পরিবার, বুলু ম্রোপাড়ায় ১৪টি পরিবার, টাংখোয়ায় ম্রোপাড়া ১৬ পরিবার, ম্রক্ষ্যং ঝিরিপাড়ার ৫ পরিবার, কংকং ত্রিপুরাপাড়ার ৮টি পরিবারসহ আরও কয়েকটি পাড়ার মিলিয়ে প্রায় ১০০ পরিবারের আনুমানিক ৪০০ সদস্যের সিদ্ধ বাঁশ কোড়ল এখন একমাত্র ভরসা।

বুলু ম্রো কারবারি (৬২) ও মেনহাত ম্রো কারবারি (৫৬) বলেন, ‘গত বছর জুমে ধান ভালো পাইনি। বৈরী আবহাওয়ার কারণে এক বছর চলার মতো ফসল ঘরে তুলতে পারিনি। তাই বাড়িতে খাবার নেই।’

সরেজমিন এ গ্রামগুলোতে গিয়ে শিশুদের ক্ষুধার জ্বালায় কাঁদতে দেখা যায়। পাশে বসা মায়ের মলিন চেহারার দিকে তাকানো যাচ্ছিল না। ঘরের কর্তাদের বিভিন্ন গ্রামে ঘুরে ঘুরে চাল ধার আনতে দেখা যায়। উদ্দেশ্য, ঘরে ফিরে যেন সন্তানদের মুখে একমুঠো ভাত তুলে দিতে পারেন। আবার কেউ কেউ জুমের ধান পরিপক্ব হতে না হতেই নিয়ে আসছে বাড়িতে। কাঁচা ধান চুলায় সেদ্ধ দিয়ে তারপরে শুকানো হয়। পরে আবার চালের জন্য মাড়াই করতে হয় ঢেঁকিতে।

এদিকে এখানকার শিশুরা নানা ধরনের রোগে আক্রান্ত হয়ে স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে আছে। শিশুদের প্রাথমিক চিকিৎসাসেবা দিতে থানচি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে ওষুধসহ একজন নার্স পাঠিয়েছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মো. ওয়াহিদুজ্জামান মুরাদ। তিনি ওষুধ ও চিকিৎসা বিষয়ে পরামর্শ দিয়ে ফিরে আসেন।

উল্লেখ্য, সাঙ্গু নদীর উজানে অবস্থিত বাংলাদেশ-মিয়ানমার ঘেঁষা সীমান্তবর্তীতে এই পাড়াগুলোতে যেতে থানচি সদর থেকে ইঞ্জিনচালিত বোটে দুই দিন সময় লাগে। সেখানে যাতায়াতে ইঞ্জিনচালিত বোটে আসা-যাওয়ায় ৬০ লিটার অকটেন লাগে এবং বোট রিজার্ভ করলে ২০ হাজার টাকা খরচ হয়। সরকারিভাবে জুমের ধান কাটা পর্যন্ত সহযোগিতা পেলে ওই সব পরিবারের খাদ্য ঘাটতি দূর হতো বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।

রেমাক্রি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মুইশৈথুই মারমা রনি বলেন, ‘আমাদের ইউনিয়নের ওয়ার্ড মেম্বার মাংচন ম্রোর মাধ্যমে খাদ্য ঘাটতির কথা জানান পর আমি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা স্যারকে অবহিত করলে তিনি তাৎক্ষণিকভাবে এক টন চাল বরাদ্দ দিয়েছে। ওই চাল আজ সোমবার থানচি খাদ্য গুদাম থেকে উত্তোলন করে কাল মঙ্গলবার মধ্যে পৌঁছানোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ মামুন বলেন, সীমান্তের গ্রামগুলো মোবাইল নেটওয়ার্ক নেই। যোগাযোগও এক প্রকার বিচ্ছিন্ন। স্থানীয় সাংবাদিকদের মাধ্যমে খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এক টন চাল বরাদ্দ দিয়ে চারটি ইঞ্জিন বোটের মাধ্যমে রেমাক্রি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানকে পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে আসন্ন জুমের পাকা ধান না কাটার পর্যন্ত ত্রাণের চাল পাঠানো ব্যবস্থা গ্রহণের চেষ্টা করব।

  • অন্যান্য খবর জানতে এখানে ক্লিক করুন।
  • ফেসবুকে আমাদের ফলো দিয়ে সর্বশেষ সংবাদের সাথে থাকুন।
  • ইউটিউবেও আছি আমরা। সাবস্ক্রাইব করে ঘুরে আসুন ডিজিটাল কন্টেন্টের দুনিয়ায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *