কক্সবাজারে মুক্তি’র কার্যক্রম বন্ধ!
 
                 
নিউজ ডেস্ক
সম্প্রতি কক্সবাজারে শরণার্থী শিবিরে রোহিঙ্গাদের জন্য ‘ধারাল অস্ত্র’ তৈরির অভিযোগ ওঠায় মুক্তি কক্সবাজার নামে একটি এনজিওর ছয়টি প্রকল্প সাময়িকভাবে বন্ধ করে দিয়েছে এনজিও বিষয়ক ব্যুরো।
এনজিও ব্যুরোর এসাইনমেন্ট অফিসার সিরাজুল ইসলাম খান স্বাক্ষরিত এক পত্রে জানা গেছে ‘মুক্তি’র স্থগিত করে দেয়া প্রকল্পগুলো হলো, নন ফরমাল এডুকেশন প্রোগ্রাম ফর দ্য চিলড্রেন অব ফোর্সিবলি ডিসপ্লেসড মিয়ানমার ন্যাশনাল; স্ট্রেংদেনিং রেজিলেন্স অ্যান্ড ফুড সিকিউরিটি অব ফোর্সিবলি ডিসপ্লেসড মিয়ানমার ন্যাশনাল অ্যান্ড লস্ট কমিউনিটি ইন টেকনাফ; ইম্প্রুভ অব ওয়াটার, স্যানিটেশন, হাইজিন ফর দ্য ফোর্সিবলি ডিসপ্লেসড মিয়ানমার ন্যাশনাল অ্যান্ড লস্ট কমিউনিটি ইন কক্সবাজার; এনহেন্সিং লার্নিং আউটকামস ফর ফোর্সিবলি ডিসপ্লেসড মিয়ানমার ন্যাশনাল ইন উখিয়া; ইম্প্রুভ ডব্লিউএএসএইচ থ্রু ফেসাল স্লাজ ম্যানেজমেন্ট এ্যান্ড বাথিং কিউবিকল ফর দ্য ডিসপ্লেস পার্সনস ফ্রম মিয়ানমার ইন কক্সবাজার এবং প্রটেকশন ইনিশিয়েটিভ ফর দ্য আন একাম্প্যানিড অর অরফান চিলড্রেন ইন কক্সবাজার।
মুক্তি কক্সবাজার’র প্রধান নির্বাহী বিমল চন্দ্র দে সরকার তথ্যের সত্যতা স্বীকার করে বলেন, আমাদের চলমান একটি প্রকল্পের নিড়ানি তৈরি নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হয়েছে। না জেনে সংবাদকর্মীরা সেখানে ভুল তথ্য উপস্থাপন করেন। যেকোনো এনজিওর ভাল-মন্দ কর্মকান্ড নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ হলে তা তদন্ত করে দেখে এনজিও নিয়ন্ত্রণ সংস্থা এনজিও ব্যুরো। যেহেতু আমাদের প্রকল্প নিয়ে প্রতিবেদন হয়েছে, সেহেতু তা তদন্তের স্বার্থে প্রকল্পগুলো স্থগিত করা হয়েছে। তিনি আরো জানান, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে মুক্তি কক্সবাজার’র ৩০টি প্রকল্প চলমান রয়েছে। সেখান থেকে ৬টি প্রকল্প স্থগিত করা হয়েছে। আশা করছি এনজিও ব্যুরো তদন্তের মাধ্যমে প্রকল্পের কোন অনিয়ম পাবেন না।
সম্প্রতি উখিয়ার ভালুকিয়ায় এক কামারের দোকানে তৈরি নিড়ানি সদৃশ বিপুল পরিমাণ দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করে উখিয়া প্রশাসন। ‘মুক্তি কক্সবাজার’ এনজিও বিষয়ক ব্যুরোকে অবগত না করে গোপনে ওইসব অস্ত্র তৈরি করে তা রোহিঙ্গাদের মাঝে সরবরাহ করতে প্রস্তুতি নিচ্ছিল বলে অভিযোগ উঠে। এ নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হলে মুক্তি কক্সবাজার’র পক্ষ থেকে বলা হয় টেকনাফের হ্নীলার জাদিমুড়া এলাকায় চলামান হোস্ট কমিউনিটির চাষাবাদ সংক্রান্ত প্রশিক্ষণের পর তাদের সরবরাহ দিতেই এসব নিড়ানি টেন্ডারের মাধ্যমে তৈরি করা হচ্ছিল। তবে, ৬শ’ স্থানীয় সেখানে প্রশিক্ষণ নিলেও ২৬০০ নিড়ানি তৈরি নিয়ে নানা প্রশ্নের জন্মদেয়। এ বিষয়ে মুক্তি কক্সবাজারের দেয়া উত্তরও সন্তোষজনক ছিল না। এছাড়াও কৃষি বিভাগ বলছে, নিড়ানি সদৃশ যেসব বস্তু পাওয়া গেছে তা কৃষিকাজে ব্যবহার্য নিড়ানির সাইজের সাথে মিলে না। এসব নিড়ানি সাইজে হাতলসহ সর্বোচ্চ এক ফুট দৈর্ঘের হয়। কিন্তু উখিয়ায় উদ্ধার নিড়ানি সদৃশ বস্তুগুলোর দৈর্ঘ্য প্রায় দুই থেকে আড়াই ফুট।
স্থানীয়দের মতে, নিড়ানি সদৃশ এসব বস্তু ও এর পরিমাণ দেখে মনে হচ্ছে মুক্তি কক্সবাজার’র কোনো খারাপ উদ্দেশ্য ছিলো। এ নিয়ে সর্বস্তরে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে আরো অভিযোগ রয়েছে, ক্যাম্পে রোহিঙ্গাদের ঘিরে যে কয়েকটি এনজিও বাংলাদেশ বিরোধী ষড়যন্ত্রে লিপ্ত তার মধ্যে ‘মুক্তি কক্সবাজার’ অন্যতম। তারাই অংশ হিসেবে রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশের বিরুদ্ধে দাঁড় করাতেই গোপনে বিপুল দেশীয় অস্ত্র সররবাহ করছিল তারা। এ চালানটি ধরা পড়লেও আগে দা, কুড়াল ও হন্তিসহ আরো নানা ধরণের দেশিয় অস্ত্র রোহিঙ্গাদের সরবরাহ করেছে এনজিওটি। কিন্তু রোহিঙ্গাদের নিয়ে বাংলাদেশ বিরোধী ষড়যন্ত্র অস্বীকার করেছেন মুক্তি কক্সবাজার’র প্রধান নির্বাহী বিমল চন্দ্র দে সরকার।
কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন বলেন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এনজিও ব্যুরোর পাঠানো একটি পত্রের কপি পেয়েছি। এনজিও মুক্তি কক্সবাজারসহ অন্যান্য এনজিওগুলোর কার্যক্রম আরো গভীর ভাবে নজরে নিতে উখিয়া উপজেলা প্রশাসনকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
