তপন-এল্টন-পলাশ চাকমা স্মরণে জাতীয় প্রেসক্লাবে স্মরণসভা
 
                 
নিউজ ডেস্ক
খাগড়াছড়ির স্বনির্ভর বাজারে ১৮ আগষ্ট নৃশংস হত্যাকাণ্ডের ১ বছর উপলক্ষে আজ শুক্রবার (৩০ আগস্ট) ঢাকায় জাতীয় প্রেসক্লাবে শহীদ তপন-এল্টন-পলাশসহ ৭ শহীদের স্মৃতির উদ্দেশ্যে স্মরণসভা করেছে বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ(পিসিপি), গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম, হিল উইমেন্স ফেডারেশন ও শ্রমজীবী ফ্রন্ট।
‘‘চিহ্নিত খুনী জেএসএস (লারমা)-এর পথভ্রষ্ট চক্র ও নব্য মুখোশ বাহিনীর দুর্বৃত্তদের সাজা দাও” এই দাবি সম্বলিত শ্লোগানে বিকাল ৩টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরি হলরুমে এই স্মরণসভা অনুষ্ঠিত হয়।
স্মরণসভার শুরুতে পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ি জাতিসত্তার ন্যায্য অধিকার আদায়ের সংগ্রামে যারা আত্মবলিদান দিয়েছেন তাদের উদ্দেশ্যে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়। এরপর শহীদ তপন-এল্টন-পলাশ চাকমা’র সংক্ষিপ্ত রাজনৈতিক জীবনী পাঠ করেন রুপসী চাকমা।
পিসিপি’র সভাপতি বিপুল চাকমার সভাপতিত্বে স্মরণ সভায় উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কাস পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, ইউনাইটেড কমিউনিষ্ট লীগের সম্পাদক মন্ডলীর সদস্য, মুক্তিযোদ্ধা ও অধ্যাপক আব্দুস সাত্তার, বাসদ (মাক্সবাদী) এর সদস্য জহিরুল ইসলাম ও জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের সম্পাদক ফয়জুল হাকিম, বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের সভাপতি এম এম পারভেজ লেলিন, বিপ্লবী ছাত্র যুব আন্দোলনের সভাপতি আতিফ অনিক, ছাত্র গণমঞ্চের সভাপতি সাঈদ বিলাস ও বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর সভাপতি ইকবাল কবির প্রমূখ। সভা পরিচালনা করেন হিল উইমেন্স ফেডারেশনের সভাপতি নিরুপা চাকমা।
বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হল বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে পাহাড়ি জনগণের আত্মনিয়ন্ত্রাধিকার আন্দোলনে যারা প্রতিনিধিত্ব করছেন শাসকগোষ্ঠী তাদের বেছে বেছে হত্যা করছে এবং এটা পরিকল্পনা করে করা হচ্ছে। যা সত্যি আশংকাজনক। তিনি আরও বলেন, ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছি। যে যুদ্ধে পাহাড়ি-বাঙালির রক্ত মিশে একাকার হয়ে আছে। আমরা কি এই রকম রাষ্ট্র চেয়েছিলাম? রাষ্ট্র হবে মানবিক রাষ্ট্র, রাষ্ট্র কেন দানবীয় হবে?
ইউনাইটেড কমিউনিষ্ট লীগের সম্পাদকমন্ডলীর সদস্য আব্দুস সাত্তার বলেন, মুক্তিযুদ্ধে পাহাড়িদের বীরত্বপূর্ণ অবদান ছিল। কিন্তু স্বাধীনতার পর পাহাড়িদের ন্যায্য আত্মনিয়ন্ত্রনাধিকার, ভূমির অধিকার, পরিচয়ের অধিকার এসব তো প্রথমে আওয়ামী সরকারই অস্বীকার করেছে। পাহাড়িদের বিচ্ছিন্নতাবাদী তকমা দিয়ে সেখানে বিপুল পরিমাণে সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। একটা স্বাধীন গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে একটা অংশে কেন সেনাবাহিনী থাকবে?
বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ মার্ক্সবাদী) এর সদস্য জহিরুল ইসলাম বলেন, পাহাড়ের মানুষ ভালো নেই, সমতলের সংখ্যাগুরু জাতিসত্তাও শান্তিতে নেই। রাষ্ট্র যাকে পছন্দ করছে না, তাকে মেরে ক্রসফায়ার, এনকাউন্টার, বন্দুকযুদ্ধের নামে চালিয়ে দিচ্ছে। এক কথায়, রাষ্ট্র এখন নিপীড়ন যন্ত্রে পরিণত হয়েছে।
সম্প্রতি গুম হওয়া ইউপিডিএফ নেতা মাইকেল চাকমাকে উল্লেখ করে জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের সম্পাদক ফয়জুল হাকিম বলেন, এটা খুবই দু:খ জনক যে আজ আমরা যাদের উদ্দেশ্যে স্মরণসভা করছি তাদের কারো বয়স ২৫, কারো বয়স ২৬ এবং কারো কারো বয়স ৩২ যারা তরুণ। তিনি বলেন, শাসক গোষ্ঠী চক্রান্ত করে এই যে হত্যাকাণ্ড চালাচ্ছে, এই নিপীড়ন নীতি বাহাত্তরের সংবিধানে ছিল। সেই সংবিধানে পাহাড় ও সমতলে ক্ষুদ্র জাতিসত্তাদের অস্বীকার করা হয়েছে। আওয়ামী সরকার পর পর ক্ষমতাসীন থাকা অবস্থাতেও তারা এখনো এসব জাতিসত্তাদের স্বীকৃতি দেয়নি। রাষ্ট্র যখন নিজ দেশের জনগণকে অস্বীকার করে, সেখানে সংখ্যালুঘুদের প্রতি রাষ্ট্রের আচরণ অনুমান করা যায়।
উল্লেখ্য, গত বছর ১৮ আগস্ট খাগড়াছড়ি জেলা সদরের স্বনির্ভর বাজার ও পেরাছড়া এলাকায় সন্ত্রাসীদের সশস্ত্র হামলায় পিসিপি নেতা তপন, এল্টন, যুব ফোরাম নেতা পলাশ চাকমা সহ ৭ জন নিহত হন।
