কথিত ধর্ষণের অভিযোগ: গুজব সৃষ্টি করে শিক্ষককে হত্যা করে ইউপিডিএফ
![]()
নিউজ ডেস্ক
খাগড়াছড়ি টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজের শিক্ষক সোহেল রানাকে কলেজ থেকে সরাতে দীর্ঘদিন থেকে পাহাড়ের আঞ্চলিক সশস্ত্র সন্ত্রাসী দল ইউপিডিএফ আন্দোলন করে আসছে। যার ফলে বিগত বছর ওই শিক্ষককে স্কুল থেকে বহিষ্কার করে। রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর শিক্ষকের বহিষ্কার আদেশ প্রত্যাহার করা হয় বলে জানা যায়। কিন্তু তাকে নিয়ে ইউপিডিএফ-পিসিপি’র ষড়যন্ত্র বন্ধ হয়নি।
ইউপিডিএফ ও পিসিপি আজ ১ অক্টোবর সকালে শিক্ষক সোহেল রানার বিরুদ্ধে কথিত ধর্ষণ অভিযোগ তুলে উক্ত শিক্ষককে কলেজ থেকে বহিষ্কার করতে নানা অপতৎপরতা শুরু করে এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ত্রিপুরা মেয়ে বাঙালি কর্তৃক ধর্ষিত হয়েছে বা ধর্ষণের চেষ্টা করেছে বলে গুজব ছড়িয়ে খাগড়াছড়ি সহিংসতা ছড়াতে চেষ্টা করে।
উদ্দেশ্য প্রণোদিত ধর্ষণ গুজব ছড়িয়ে পাহাড়িদের কলেজে আসতে বলে পাহাড়ি সংগঠন পিসিপি। এরপর উত্তেজিত পাহাড়ি সন্ত্রাসীরা কলেজে প্রবেশ করে শিক্ষক সোহেল রানাকে মিথ্যা বানোয়াট (কথিত ধর্ষণ) অভিযোগে পিটিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করে।

এরপর, পাহাড়িরা নতুন করে গুজব রটিয়ে খাগড়াছড়ি সদর এলাকায় বাঙালিদের উপর অতর্কিত হামলা চালিয়েছে। এতে অনেক বাঙালি আহত হয়েছেন। ফেসুবকে লাইভ ও পোষ্ট করে পাহাড়িদের ঘর থেকে লাঠিসোঁটা নিয়ে খাগড়াছড়ি কলেজ ও সদরে আসতে বলে পাহাড়ি সংগঠন পিসিপি। যার কারণে হত্যাকাণ্ডের ঘটনাসহ অনেক হামলার ঘটনা ঘটে। পুরো কলেজ ক্যাম্পাস ভাংচুর করে পাহাড়ি সন্ত্রাসীরা। এসময় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। মূলত ইউপিডিএফরের এসব কর্মকান্ডে পাহাড়ে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ছে।
জানা গেছে, কলেজের ইন্সট্রাক্টর (বিল্ডিং মেইনটেন্যান্স) ও বিভাগীয় প্রধান শিক্ষক আবুল হাসনাত মুহাম্মদ সোহেল রানাকে নিয়ে গভীর ষড়যন্ত্র করে সন্ত্রাসীরা। সোহেল রানার বিরুদ্ধে এক পাহাড়ি ছাত্রীকে যৌন হয়রানির অভিযোগে মামলা হয়েছিল ২০১৭ সালে। ওই মামলায় তিনি দীর্ঘদিন জেলও খেটেছেন। পরে ওই ছাত্রী আদালতে এসে সাক্ষ্য দেয়, তিনি কোন ধর্ষণের শিকার হননি। পাহাড়ি একটি সংগঠনের চাপে মামলা করেছে মর্মে সাক্ষ্য দিলে সোহেল রানা খালাস পান এবং চাকরিতে যোগদান করেন। সোহেল রানা চাকরিতে যোগদানের পর থেকে পাহাড়ি ছাত্ররা তার বিরুদ্ধে ছাত্রীদের যৌন হয়রানির নানা অভিযোগ এনে তাকে প্রত্যাহারের দাবি করে আসছিল। আজ ওই শিক্ষক বিদ্যালয় এলে ত্রিপুরা এক ছাত্রীকে আটকে রেখে ধর্ষণের অভিযোগ এনে ওই শিক্ষককে পিটিয়ে হত্যা করা হয়।
সূত্র বলছে, সন্ত্রাসীদের অব্যঅহত চাপ ও প্রতিবাদের মুখে ওই শিক্ষক আজ বিদ্যালয় রিলিজ অর্ডার নিতে এসেছিলেন। কিন্তু তাকে সেই সুযোগ দেয়া হয় নি। ২০২১ সাল থেকে শিক্ষক সোহেল রানাকে বাঙালি হওয়ার কারণে কলেজ থেকে বহিষ্কার করতে ধর্ষক তকমা দিয়ে হয়রানি করে আসছে ইউপিডিএফ ও তার সহযোগী অঙ্গসংগঠন পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ।
স্থানীয়রা বলছেন, খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটিতে গত ১৯ ও ২০ সেপ্টেম্বর সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সংঘটিত হয়। এর রেশ ধরে ইউপিডিএফ তিন পার্বত্য জেলায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ৩ দিন ক্লাস বর্জন ঘোষণা দিয়েছে, সংঘাত ও বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন নামে একটি ব্যানার থেকে। ইউপিডিএফের এই ক্লাস বর্জন অনেক শিক্ষার্থী সাড়া দেয়নি। দশম শ্রেণীতে পড়ুয়া এক ত্রিপুরা শিক্ষার্থী ইউপিডিএফের ক্লাস বর্জন অমান্য করে ক্লাসে যাওয়ার কারণে শিক্ষক সোহেল রানার সঙ্গে জড়িয়ে হীন উদ্দেশ্য এ পরিস্থিতি সৃষ্টি করে ইউপিডিএফ।
সাম্প্রতিক সময়ে খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটিতে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার ঘটনায় সরাসরি জড়িত ছিল আঞ্চলিক দল ইউপিডিএফ। তারা পার্বত্য পরিস্থিতি অশান্ত করে রাজনৈতিক হীন উদ্দেশ্য আদায়ে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সৃষ্টি করতে তৎপরতা চালাচ্ছে বলেও অভিযোগ রয়েছে।
এদিকে, খাগড়াছড়ি পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে জেলা প্রশাসন খাগড়াছড়িতে ১৪৪ ধারা জারি করে। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে।
- অন্যান্য খবর জানতে এখানে ক্লিক করুন।
- ফেসবুকে আমাদের ফলো দিয়ে সর্বশেষ সংবাদের সাথে থাকুন।
- ইউটিউবেও আছি আমরা। সাবস্ক্রাইব করে ঘুরে আসুন ডিজিটাল কন্টেন্টের দুনিয়ায়।