সেনা অভিযানে নিহত তিন সন্ত্রাসীকে নিয়ে কেএনএফের অপপ্রচার!

সেনা অভিযানে নিহত তিন সন্ত্রাসীকে নিয়ে কেএনএফের অপপ্রচার!

সেনা অভিযানে নিহত তিন সন্ত্রাসীকে নিয়ে কেএনএফের অপপ্রচার!
“এখান থেকে শেয়ার করতে পারেন”

Loading

মোঃ সাইফুল ইসলাম

বান্দরবান পার্বত্য জেলার রুমায় দীর্ঘদিন ধরে চাঁদাবাজি, হয়রানি, অপহরণসহ সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালিয়ে আসছে নাথান বমের নেতৃত্বাধীন সশস্ত্র সন্ত্রাসী দল কেএনএফ। গত ৫ আগষ্ট রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর নতুন করে পাহাড় উত্তপ্ত করতে নানা পরিকল্পনা করছে সংগঠনটি। পার্বত্য চুক্তির বর্ষপূর্তিকে সামনে রেখে পাহাড়ে জেএসএস এর মতো চাঁদাবাজিতে নতুন মাত্রা যোগ করেছে সশস্ত্র এ দলটি।

সাধারণ পাহাড়িদের নিরাপত্তা নিশ্চিত ও অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারের লক্ষে নিরাপত্তাবাহিনীও পাহাড়ে অভিযান পরিচালনা করছে। এরই ধারাবাহিকতায় গত ২৪ নভেম্বর রবিবার রুমা উপজেলার পাইন্দু ইউনিয়নে কুইত্যা ঝিরি এলাকায় গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান চালায় নিরাপত্তাবাহিনী। আগে থেকেই অভিযানের খবর জানতে পেরে পাহাড়ের বিভিন্ন স্থানে ওৎ পেতে থাকে সশস্ত্র কেএনএফ সন্ত্রাসীরা। অভিযানকালে সেনাবাহিনীর আভিযানিক দলকে দেখে দুর থেকেই তাদের লক্ষ্য করে গুলি করে কেএনএফ সন্ত্রাসীরা। এসময় পাল্টা গুলি করে সেনাবাহিনীও। অনেকক্ষন ধরে গোলাগুলির এক পর্যায়ে কেএনএফ সন্ত্রাসীরা সেখান থেকে গহীন জঙ্গলের দিকে পালিয়ে যায়।

গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে বলা হয়, সন্ত্রাসীরা পালিয়ে গেলে ওই এলাকা ঘিরে ফেলে সেনাবাহিনী। বেশ কয়েক ঘন্টা যাবৎ সেখানে তল্লাশী অভিযান পরিচালনা করা হয়। এসময় পাহাড়ের ঢালে তৈরী বেশকয়েকটি মাচাং ঘর (যেগুলো কেএনএফ সন্ত্রাসীরা তাদের আস্তানা হিসেবে ব্যবহার করছিলো) তল্লাশী করে অস্ত্র, বিপুল পরিমান গোলা-বারুদসহ নানা সামরিক সরঞ্জাম উদ্ধার করে সেনাবাহিনী। এছাড়া গোলাগুলিতে নিহত তিন কেএনএফ সন্ত্রাসীর মরদেহ শনাক্ত করা হয়। এসময় তারা সামরিক পোষাক পরিহিত ছিলো।

আইএসপিআর এক বিবৃতিতে জানায়, উদ্ধারকৃত অস্ত্র, গুলি ও সরঞ্জামাদির মধ্যে ছিলো, ১ টি চাইনিজ রাইফেল, ২টি একনলা বন্দুক, বিপুল পরিমাণ গোলাবারুদ, ইউনিফর্ম, বেতারযন্ত্র, ল্যাপটপ, মোবাইল ফোন ও ঔষধসহ বেশ কিছু সরঞ্জামাদি।

এ ঘটনায় বান্দরবানের রুমা ও আশেপাশের এলাকায় বসবারত স্থানীয় বম সম্প্রদায়ের জনগন সেনাবাহিনীকে সাধুবাদ জানালেও কেএনএফ কিন্তু তাদের চিরাচরিত রুপ দেখাতে ভুলে নি। পুরনো চরিত্র উন্মোচিত করে সেনাবাহিনীকে জড়িয় মিথ্যাচার করছে কেএনএফ সন্ত্রাসীরা। একাধিক ফেসবুক পেজ ও আইডি থেকে নিহতদের নিরীহ গ্রামবাসী দাবি করে সেনাবাহিনী জড়িয়ে অপপ্রচার করা হচ্ছে অব্যাহত ভাবে।

গতকাল গোলাগুলির ঘটনার পর অতিদুর্গমতার কারনে প্রায় ২৪ ঘন্টা পর আজ পুলিশ লাশ উদ্ধার করতে সক্ষম হলেও ঘটনার পরপরই ফেসবুকে নিহত সন্ত্রাসীদের ছবি পোষ্ট করে কেএনএফের অপপ্রচার নতুন করে বিতর্ক সৃষ্টি করেছে।

সেনা অভিযানে নিহত তিন সন্ত্রাসীকে নিয়ে কেএনএফের অপপ্রচার!
প্রতিটি অভিযানের পর এভাবেই ফেসবুকে সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে মিথ্যাচার করে কেএনএফ।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটু খোঁজাখুঁজি করে একটি ছবি পেলাম, যেখানে গতকাল নিহত পেনখুপ বমকে কেএনএফ এর প্রধান নাথান বমের সাথে একই ছবিতে দেখা যাচ্ছে। অথচ কেএনএফ গতকাল থেকে ফেসবুকে অপপ্রচার করছে নিহত পেনখুপ বম স্থানীয় একটি গির্জা/চার্চের ধর্মীয় গুরু। এছাড়া বাকি যে দুজনকে নিরীহ গ্রামবাসী বলে কেএনএফ প্রচার করছে তারাও মিয়ানমারের চিন ও শান প্রদেশ থেকে সশস্ত্র প্রশিক্ষণ নেওয়া কেএনএফ যোদ্ধা বলে জানা যাচ্ছে।

অনুসন্ধান বলছে, বান্দরবানের রুমা ও রোয়াংছড়িতে সন্ত্রাস বিরোধী অভিযান শুরু হলে কেএনএফ সন্ত্রাসীরা নিজেদের প্রাণ বাঁচাতে ও আস্তানাগুলোর নিয়ন্ত্রন ধরে রাখতে রুমা উপজেলার মায়ানমার-ভারত সীমান্তবর্তী রেমাক্রী প্রাংসা ইউনয়নের থিংদলি, রোমানা পাড়া, চুংসং পাড়া, চাইক্ষিয়াং, থাইক্ষ্যাং পাড়াসেহ কেওক্রাডং ও তাজিংডং এবং পাইন্দু ইউনিয়নের মুয়ালপি পাড়াসহ এলাকাগুলোতে স্থানীয় বম, টংটঙ্গিয়া ও অন্যান্য ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর লোকজনকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে পাড়াগুলোর নিয়ন্ত্রন নিতে চেষ্টা করে। এসময় তারা স্থানীয় স্বজাতি জনগোষ্ঠীর লোকজনের উপর নির্যাতন চালাতেও কুন্ঠাবোধ করে নি।

এ সময়গুলোতে নিরীহ গ্রামবাসীরা প্রাণ বাঁচাতে গ্রাম ছেড়ে, নিজেদের বাড়ি-ঘর ছেড়ে অন্যত্র পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়। এর আগেও চলতি বছরের ২৮ জানুয়ারি ৪০ জনের একদল গ্রামবাসী রুমা উপজেলা সদরে এসে আশ্রয় নেয়। তাৎক্ষনিক উপজেলা প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিরা নিরাপত্তাবাহিনীর সহায়তায় তাদের মারমা ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশন কার্যালয়ে আশ্রয় দেয়ার পাশাপাশি প্রয়োজনীয় খাদ্য ও অন্যান্য সরঞ্জামের ব্যবস্থা করে। বর্তমানেরও কেএনএফ উক্ত পাড়াগুলোতে পুনরায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করার চেষ্টা করছে। এমন সন্ত্রাসী কর্মকান্ড প্রতিহত ও নিরীহ জনগনকে নিরাপত্তা দিতেই সেনাবাহিনী অভিযান পরিচালনা করছে।

জানা যাচ্ছে, চলমান অভিযানের কারণে কুকি চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) সদস্যরা ছত্রভঙ্গ হয়ে রুমা উপজেলার সীমান্তবর্তী  দুর্গম বিভিন্ন পাড়ায় অবস্থান করছে এবং পাড়াবাসীকে চাপের মুখে এলাকা ত্যাগ করতে বাধ্য করছে।

মুলত: পাহাড়ে সন্ত্রাস ও জঙ্গী বিরোধী যৌথবাহিনীর সাড়াঁশি অভিযানকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে ও অভিযান রুখে দেয়ার ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে কেএনএফ প্রতিনিয়ত সেনাবাহিনীকে জড়িয়ে ফেসবুকে অপপ্রচারে মেতেছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রতিনিয়ত বিভিন্ন আইডি ও পেজ খুলে সেখানে অব্যাহতভাবে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে নিয়ে চালানো হচ্ছে ঢালাও মিত্যাথার এখন কেএনএফের নিয়মিত কাজেরই অংশ।

প্রসঙ্গত, গতবছরের ১২ মার্চ রবিবার বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে জাতীয় শিশু দিবস-২০২৩ ও মহান স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় মা ও শিশুদের বিনামূল্যে স্বাস্থ্য সেবা প্রদানের উদ্দেশে গমনকৃত দলের নিরাপত্তায় নিয়োজিত সেনাসদস্যদের ওপর কেএনএফ সন্ত্রাসীদের গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটে। এতে ঘটনাস্থলেই নাজিম উদ্দিন নামের একজন সেনা কর্মকর্তা নিহত হন। নিহত নাজিম উদ্দিন সেনাবাহিনীর মাস্টার ওয়ারেন্ট অফিসার ছিলেন। রংপুর সদরের ঘাঘটপাড়া গ্রামের বাসিন্দা মৃত শমসের আলীর ছেলে নাজিম ৩০ বছর ধরে সেনাবাহিনীর বিভিন্ন পর্যায়ে দায়িত্ব পালন করেছেন বলেও জানা যায়। এ ঘটনায় আরো দুই সেনা সদস্য গুলিবিদ্ধ হয়েছেন।

একই বছরের ২২ মার্চ বুধবার বান্দরবানের রোয়াংছড়িতে কেএনএফ এর সন্ত্রাসী কার্যক্রমে সমর্থন ও তাদের সহায়তা না করায় নিজ গোত্রের এক বম পাড়া প্রধান (কারবারি) গুলি করে হত্যা করে কেএনএফ সন্ত্রাসীরা। নিহত থিয়ান চুয়াল বম (৭৪) উপজেলার সদর ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের রামথার পাড়ার কারবারি (পাড়া প্রধান) ছিলেন। ওইদিন বিকেলে রামথার পাড়ার জঙ্গল থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। একইসঙ্গে ঘটনাস্থল থেকে ৩টি দেশীয় বন্দুক উদ্ধার করা হয়।

এছাড়া, সেবছরই ১৫ মার্চ রুমা উপজেলার কেওক্রাডংস্থ নির্মাণাধীন বগালেক-কেওক্রাডং-ধুপপানিছড়া সড়কে ঠিকাদারি কাজ দেখাশোনা করতে গিয়েছিলেন মোঃ আনোয়ার হোসেন নামের সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত এক সার্জেন্ট। আনোয়ার সেনাবাহিনী থেকে বছরখানেক আগে অবসর নেওয়ার পর ঠিকাদারি কাজ করে আসছেন। এ সময় ট্রাকচালক মো. মামুন (২৯) ও শ্রমিক আব্দুর রহমানসহ (২৭) তাকে অপহরণ করে নিয়ে যায় কেএনএফের সদস্যরা। পরে দুজনকে ছেড়ে দেওয়া হলেও তাকে আটকে রাখা হয়। এরপর তাকে আটকে রেখে নিজেদের ফেসবুক পেজে বেশ কয়েকবার নিরাপত্তাবাহিনীর হাতে আটক কেএনএফ সন্ত্রাসীদের ছেড়ে দেয়ার জন্য প্রস্তাবও দেয় সংগঠনটি। দীর্ঘ ১৬ দিন আটকে রাখার পর গত ৩১ মার্চ শুক্রবার বিকেলে রুমার বগালেক এলাকায় সার্জেন্ট (অব.) আনোয়ারকে ছে‌ড়ে দেওয়া হয়। তবে তাঁর মুক্তির জন্য অপহরণকারীদের ছয় লাখ টাকা মুক্তিপণ দিতে হয়েছে বলে পরিবারের সদস্যরা দাবি করেছেন।

পরিশেষে কেএনএফকে বলতে চাই, সত্য-মিথ্যার জোড়াতালি দিয়ে নিজেদের দূর্বলতা ঢাকার চেষ্টা করা গেলেও সত্য আদতে ঢেকে রাখা যায় না। বরং আজ না হয় কাল, সত্য প্রকাশিত হবেই, নিজেদের কুৎসিৎ চেহারা জাতির সামনে উন্মোচিত হবেই। ঠিক যেমন তোমাদের চার্চের ধর্মীয় গুরু মুহূর্তেই হয়ে গেলো নাথান বমের অন্যতম সহযোগী।

  • অন্যান্য খবর জানতে এখানে ক্লিক করুন।
  • ফেসবুকে আমাদের ফলো দিয়ে সর্বশেষ সংবাদের সাথে থাকুন।
  • ইউটিউবেও আছি আমরা। সাবস্ক্রাইব করে ঘুরে আসুন ডিজিটাল কন্টেন্টের দুনিয়ায়।