প্রথমবারের মতো রোহিঙ্গাদের স্ব-সম্মানে স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের পক্ষে সংখ্যাগরিষ্ঠ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়! - Southeast Asia Journal

প্রথমবারের মতো রোহিঙ্গাদের স্ব-সম্মানে স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের পক্ষে সংখ্যাগরিষ্ঠ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়!

“এখান থেকে শেয়ার করতে পারেন”

Loading

নিউজ ডেস্ক

২০১৭ সালে ও তার পূর্বে মায়ানমার সরকারের নির্যাতনে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাসহ মিয়ানমারে সংখ্যালঘুদের ওপর ভয়াবহ নির্যাতন-নিপীড়নের আন্তর্জাতিক তদন্ত ও বিচারের আহ্বান সংবলিত প্রস্তাবকে একপেশে বলে অভিহিত করে এ নিয়ে গত ২৬ সেপ্টেম্বর (বৃহস্পতিবার) চীনের আহবানে মানবাধিকার পরিষদে ভোটাভুটির পর বাংলাদেশের পক্ষেই অবস্থান সুস্পষ্ট করেছে সংখ্যাগরিষ্ঠ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়। চীন ও মিয়ানমার আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে প্রস্তাবের বিপক্ষে ভোট দিতে আহবান জানালেও ৪৭ সদস্যের মানবাধিকার পরিষদে গতকাল (২৬ সেপ্টেম্বর) মিয়ানমারের পক্ষে চীন ও ফিলিপাইন ছাড়া আর কেউই ছিলোনা, এছাড়া ভারত, জাপান, নেপাল, কঙ্গো, ক্যামেরুন, অ্যাঙ্গোলা ও ইউক্রেন ‘অ্যাবস্টেইন’ ভোট দিয়ে কারো পক্ষ নেয়নি। তবে সর্বশেষ প্রস্তাবটি গৃহীত হয়েছে ৩৭-২ ভোটে।

৪৭ সদস্যের মানবাধিকার পরিষদে সর্বদা সুনির্দিষ্ট কোনো দেশভিত্তিক প্রস্তাবের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়া কিউবার প্রতিনিধিরা ভোটের সময় অধিবেশন কক্ষে উপস্থিত না থাকলেও দৃশ্যত প্রস্তাবটির পক্ষে অবস্থান নিয়ে ভোট দেওয়া থেকেই বিরত থেকেছেন তারা। তাছাড়া রোহিঙ্গা ইস্যুতে চীনা নীতিতে চলা রাশিয়া বর্তমানে মানবাধিকার পরিষদের সদস্য না হওয়ায় এবং মানবাধিকার পরিষদে প্রস্তাবের বিরোধিতা করে বক্তব্য দিলেও সদস্য না হওয়ায় ভোট দিতে পারেনি খোদ মিয়ানমার।

‘মিয়ানমারে রোহিঙ্গা মুসলমান ও অন্য সংখ্যালঘুদের মানবাধিকার পরিস্থিতি’ বিষয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ও ইসলামী সহযোগিতা সংস্থা (ওআইসি) মূলত মানবাধিকার পরিষদে প্রস্তাবটি এনেছিলো। সর্বশেষ গৃহীত প্রস্তাবে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর যৌন অপরাধসহ সব ধরনের অপরাধের অভিযোগে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের মানবাধিকার লঙ্ঘনসংশ্লিষ্ট সব আন্তর্জাতিক বিধান ও আন্তর্জাতিক বিচারপ্রক্রিয়া তথা জাতীয়, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক ফৌজদারি বিচারব্যবস্থার আওতায় আনার জন্য তদন্তপ্রক্রিয়া জোরদার করার বিষয়ে গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। প্রস্তাবটিতে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে চলমান সব প্রচেষ্টাকে স্বাগত জানিয়ে এরূপ পরিস্থিতিতে করণীয় নির্ধারণে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের এখতিয়ারের কথা পুনর্ব্যক্ত করা হয়।

গৃহীত প্রস্তাবে বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পাদিত দ্বিপক্ষীয় চুক্তি অনুযায়ী উত্তর রাখাইন অঞ্চলে সহায়ক পরিবেশ সৃষ্টির মাধ্যমে বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে পূর্ণ নিরাপত্তা ও সম্মানের সঙ্গে নিজেদের আবাসস্থলে ফিরে যেতে উৎসাহিত করতে মিয়ানমারকে আহ্বান জানিয়েছে মানবাধিকার পরিষদ । এছাড়া মানবিক দিক বিবেচনায় রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়ার জন্য বাংলাদেশের প্রশংসা করে, প্রস্তাবে রোহিঙ্গারা ফিরে না যাওয়া পর্যন্ত তাদের দায়িত্বভার বহনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সঙ্গে অংশীদার হওয়ার জন্য আন্তর্জাতিক সমপ্রদায়কে আহ্বান জানানো হয়েছে।

এদিকে রোহিঙ্গা ইস্যুতে আন্তর্জাতিক বিশ্বে নিজেদের মধ্যস্থতাকারী হিসেবে দেখালেও কার্যত মানবাধিকার পরিষদে আনা প্রস্তাবের বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূত প্রস্তাবটি প্রত্যাখ্যান করে বলেন, মিয়ানমার তার অভ্যন্তরীণ বিচারব্যবস্থার মাধ্যমে অপরাধের জবাবদিহি নিশ্চিত করতে সক্ষম। প্রস্তাবে কেবল একটি সম্প্রদায়ের মনোভাব প্রতিফলিত হয়েছে বলে তিনি দাবি করেন। তিনি বলেন, গত সপ্তাহে নিউ ইয়র্কে বাংলাদেশ, মিয়ানমার ও চীনের মধ্যে মন্ত্রিপর্যায়ের বৈঠকসহ সাম্প্রতিক সময়ে যে ইতিবাচক অগ্রগতি হয়েছে সেগুলো তুলে ধরতে এই প্রস্তাব ব্যর্থ হয়েছে।

তবে জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি মো. শামীম আহসান ভোটের আগে মানবাধিকার পরিষদকে বলেন, মানবতার ডাকে সাড়া দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্মম নির্যাতনের শিকার রোহিঙ্গাদের জন্য সীমান্ত খুলে দিয়েছিলেন। তবে, দুই বছর পেরিয়ে গেলেও মিয়ানমার এখনো উত্তর রাখাইনে সহায়ক পরিবেশ তৈরি করতে ব্যর্থ হয়েছে। তিনি বলেন, অবর্ণনীয় নির্যাতনের শিকার রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর পক্ষে জবাবদিহি ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার পথে এই প্রস্তাব একটি মাইলফলক হিসেবে চিহ্নিত হবে।

প্রসঙ্গত, ২০১৭ সালের আগস্ট মাসে নতুন করে রোহিঙ্গা সংকট শুরু হওয়ার পর রোহিঙ্গা ইস্যুতে প্রস্তাব নিয়ে ভোটাভুটিতে মিয়ানমারের পক্ষে এবারই সবচেয়ে কম ভোট পড়েছে। তবে মিয়ানমারে আন্তর্জাতিক বিনিয়োগের মাধ্যমে উক্ত অঞ্চলে নিয়ন্ত্রন ও প্রভাব খাটানোর জন্য রাখাইনে কয়েকশ কোটি টাকার চলমান উন্নয়ন প্রকল্পে সফল মুনাফা ভোগের আশাই উক্ত প্রস্তাবে চীনের ভেটো দেওয়ার অন্যতম কারণ বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।