হাতকড়া পরা প্রথম জুলাই বিপ্লবীর নাম সাকিব

হাতকড়া পরা প্রথম জুলাই বিপ্লবীর নাম সাকিব

হাতকড়া পশাহাদাত ফরাজি সাকিবঃ এক দেশপ্রেমিকের বন্দিত্ব ও আমাদের নির্বিকারতারা প্রথম জুলাই বিপ্লবীর নাম সাকিব
“এখান থেকে শেয়ার করতে পারেন”

Loading

সৈয়দ ইবনে রহমত

হাতকড়া পরা যে ছেলেটিকে দেখতে পাচ্ছেন, তার নাম শাহাদাৎ ফরাজী সাকিব। জুলাই বিপ্লবের পুরোটা সময় যে রাজপথে থেকেছে। বুক চিতিয়ে মোকাবিলা করেছে ফ্যাসিবাদ।
আন্দোলনের পুরোটা সময় সে ছিল ঢাকা ইউনিভার্সিটি, নীলক্ষেত, সাইন্সল্যাব এলাকার মতো বিপ্লবের কেন্দ্রবিন্দুতে। এমনকি মধ্য জুলাইয়ের পর যখন ঢাকা ভার্সিটির হলগুলো খালি করে ছাত্রদের বের করে দেওয়া হলো, তারপর থেকে যারা ঢাবি ক্যাম্পাসের নিকটবর্তী নীলক্ষেত, নিউমার্কেট, সাইন্সল্যাব এলাকা উত্তাল করে রেখেছিল তাদের মধ্যে সাকিবও ছিল অন্যতম।
যে সাকিবদের তেজোদীপ্ত সাহসী পদচারণায় বিতাড়িত হয়েছে ফ্যাসিস্ট এবং যাদের রক্ত-ঘামে ভিজে ঘটিত হয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার, সেই সরকারই আজ সাকিবের হাতে হাতকড়া পরিয়েছে!
May be an image of 1 person, temple and monument
সাকিবের হাতে হাতকড়া কেন পরানো হয়েছে? ১৫ জানুয়ারি এনসিটিবি ভবনের সামনে ঘটে যাওয়ার জন্য তাকে দায়ী করে কারাবন্দি করা হয়েছে। সহজভাবে দেখলে মনে হবে, ব্যাপারটা বোধহয় ঠিকই আছে। কিন্তু আসলে কি তাই?
না, ব্যাপারটা ঠিক না। কারণ, ১৫ জানুয়ারি সাকিবসহ ৬ জন ছাত্র নেতা কর্মকর্তাদের সাথে মিটিং করার জন্য ভবনের ভেতরে গিয়েছিল। তাদের সাথে থাকা মিছিলের বাকীরা ছিল ভবনের সামনের রাস্তায়। এর মধ্যেই অলীক মৃ’র নেতৃত্বে রাষ্ট্রের সংহতি ও অখণ্ডতার জন্য সরাসরি হুমকি ‘আদিবাসী’ শব্দকে পাঠ্যবইয়ে পুনর্বহালের দাবিতে মিছিল নিয়ে আসে আরেকটি দল।
সাকিবরা যখন কর্মকর্তাদের সাথে মিটিং করছে তখনই অলীক মৃ’র নেতৃত্বে আসা উগ্রপন্থীরা পুলিশের একাধিক ব্যারিকেড ভেঙে সাকিবদের মিছিলের রেখে যাওয়া অংশের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। শুধু তাই না, তারা ঝাঁপিয়ে পড়ার আগে সাথে নিয়ে আসার রং হাতে-মুখে মাখার ফুটেজও সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে আছে।
ওরা যখন সাকিবদের রেখে যাওয়া মিছিলের উপর ঝাঁপিয়ে পড়েছে, তখন পাল্টা অ্যাকশনের মুখে পড়েছে। এটা সত্য যে পাল্টা অ্যাকশনটা মাত্রা ছাড়িয়ে যায়। দেশের যে পরিস্থিতি, তার মধ্যে একটা মিছিলের উপর আপনি আরেকটা মিছিল নিয়ে গিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়বেন আর তারা আপনাদের পিঠে হাত বুলিয়ে আদর-আপ্যায়ন করবে, তা তো হতে পারে না।
ঘটনা ঘটে যাওয়ার পর সাকিবরা মিটিং থেকে বের হয়ে আসে, তারপর তাদের মিছিলকে ঘটনাস্থল থেকে ফিরিয়ে নিয়ে যায়। বিকেলে টিএসসিতে সংবাদ সম্মেলনে অংশ নিয়ে ঘটনার বিস্তারিত গণমাধ্যমের মাধ্যমে দেশবাসীকে অবহিত করে।
May be an image of 1 person
এই অপরাধেই জাতীয় নাগরিক কমিটি থেকে সাকিবকে বহিষ্কার করা হলো। তাদের বিরুদ্ধে মামলা দেওয়া হলো। তারপর প্রশাসনকে চাপ দিয়ে অ্যারেস্ট করানো হলো। এখন তাকে হাতকড়া পরিয়ে কারাগার-আদালতে আনা-নেয়া করা হচ্ছে! কিন্তু এখানে সাকিবের অপরাধ কোথায়?
সাকিব একজন জুলাইবিপ্লবী, ‘আদিবাসী’ ইস্যুতে তার অবস্থান রাষ্ট্রের স্বাধীনতা, অখণ্ডতা ও সার্বভৌমত্বের পক্ষে। অন্যদিকে যাদের চক্রান্তে তাকে আজ হাতকড়া পরানো হয়েছে তারা মোটাদাগে ছিল জুলাইবিপ্লব বিরোধী, আন্দোলনের সময় তারা ছাত্র-জনতার পক্ষে না থেকে বরং নিজেদের ৫% কোটার দাবিতে মিছিল-মিটিং করেছে। ‘আদিবাসী’ ইস্যুতে তাদের অবস্থান রাষ্ট্রের অখণ্ডতা ও সার্বভৌমত্ব বিরোধী বিচ্ছিন্নতাবাদীদের পক্ষে।
সেদিন যদি একই স্থানে পরস্পর বিরোধী দুটি ব্যানার নিয়ে দুটি পক্ষকে কর্মসূচি বাস্তবায়ন করতে দেয়া না হতো, তাহলে এনসিটিবি ভবনের সামনের অনাকাঙ্ক্ষিত ওই ঘটনাটি ঘটতো না। তাছাড়া দুটি পক্ষকে কর্মসূচি পালন করতে দিয়েও যদি তাদের মাঝে পর্যাপ্ত দূরত্ব ও শক্তিশালী প্রতিরোধ ব্যবস্থা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নেয়া হতো, তাহলেও অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এড়ানো যেত। কিন্তু প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনোটিই করা হয়নি। এখন এর দায় শুধু সাকিবদেরই কেন বহন করতে হবে?
  • অন্যান্য খবর জানতেএখানেক্লিক করুন।
  • ফেসবুকে আমাদের ফলো দিয়ে সর্বশেষ সংবাদের সাথে থাকুন।
  • ইউটিউবেও আছি আমরা।সাবস্ক্রাইবকরে ঘুরে আসুন ডিজিটাল  কন্টেন্টের দুনিয়ায়।
আরো একটি আক্ষেপের কথা বলি, জুলাইবিপ্লবের কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল পার্বত্য বাঙালি সন্তানরা। কায়েম, ফরহাদ, সাকিব, মিনহাজ এমন আরো অনেক নাম নেয়া যাবে। যাদের সাহসীকতা ও ত্যাগের ফসল হিসেবে এদেশে এসেছে ৩৬ জুলাই, পালিয়েছে ফ্যাসিস্ট, মুক্তি পেয়েছে দেশ। সেই মুক্তদেশে নিজে কোনো অপরাধ না করে এবং দেশের সার্বভৌমত্বের পক্ষে লড়াই করতে গিয়ে প্রথম জুলাইবিপ্লবী হিসেবে হাতকড়া পরেছে পার্বত্য বাঙালি সাকিব।
আর এটা সম্ভব হয়েছে পার্বত্য বাঙালিদের প্রতি আমাদের রাষ্ট্রী সামগ্রিক দৃষ্টিভঙ্গির প্রতিফল হিসেবে। পাহাড়ের বাঙালিরা আসলে এই রাষ্ট্রের কাছে গিনিপিগ ছাড়া আর কিছু না। তাই, তাদের আত্মত্যাগের মূল্যায়ন দূরের কথা, দেশের নাগরিক হিসেবে মর্যাদাও এই রাষ্ট্রে নেই।
পার্বত্য বাঙালিদের এই দেশে নাগরিক মর্যাদা কেন এবং কীভাবে নেই, সেটা নিয়ে কথা হবে অন্যদিন। আজ শুধু সাকিবদের হাতে হাতকড়া পরিয়ে এই রাষ্ট্রের পৌরুষ্য দেখানোর দৌড়টা দেখার অপেক্ষাতেই শেষ করছি।
লেখক: পার্বত্য বিষয়ক লেখক।