সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে সংঘবদ্ধভাবে অপপ্রচার ও ষড়যন্ত্র করার অভিযোগ

সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে সংঘবদ্ধভাবে অপপ্রচার ও ষড়যন্ত্র করার অভিযোগ

সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে সংঘবদ্ধভাবে অপপ্রচার ও ষড়যন্ত্র করার অভিযোগ
“এখান থেকে শেয়ার করতে পারেন”

Loading

নিউজ ডেস্ক

সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে সংঘবদ্ধভাবে অপপ্রচার ও অপবাদ রটিয়ে দেশের গণতান্ত্রিক সন্ধিক্ষণকে অস্থিতিশীল করার ষড়যন্ত্র হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যে ১৫ দিন ধরে কর্মসূচি চালিয়ে আসা গণঅবস্থানকারীরা।

তাদের আশঙ্কা জুলাই বিপ্লবের জনআকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নের আগেই সেনাবাহিনী ও জনগণের মধ্যে দূরত্ব তৈরি করে ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসন ও ভারতীয় আগ্রাসন ঘটানো হতে পারে।

গত ১৩ ফেব্রুয়ারি থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগ ও তাদের দোসর দলগুলো নিষিদ্ধ করার দাবিতে গণঅবস্থান করে আসছে একাংশের শিক্ষার্থীরা।

শুক্রবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) গণঅবস্থানকারীদের পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলন ডাকা হয়। সেখানে সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে সংঘবদ্ধ ষড়যন্ত্রের অভিযোগ আনা হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন বিপ্লবী ছাত্র পরিষদের আহ্বায়ক ও গণঅবস্থানের সংগঠক আবদুল ওয়াহেদ, জাতীয় বিপ্লবী পরিষদের রাজনৈতিক প্রধান আনিছুর রহমান ও সদস্য সচিব হাসান মোহাম্মদ আরিফ।

লিখিত বক্তব্যে আব্দুল ওয়াহেদ বলেন, দেশবাসী, অন্তর্বর্তী সরকার ও সেনাবাহিনীকে স্পষ্ট বার্তা দিতে চাই। সময় মতো সবাই সচেতন না হলে দেশ প্রতিবিপ্লবের চোরাবালিতে আটকা পড়বে এবং জনগণ ফের গণহত্যা ও গোলামির শিকার হবে।

সেনাবাহিনীর অবদান সম্পর্কে তিনি বলেন, জুলাই আন্দোলনের সময় গণহত্যা চালিয়ে ছাত্র-জনতাকে স্তব্ধ করে দিতে চেয়েছিল ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকার। তবে সেনা সদস্যরা ছাত্র-জনতাকে হত্যা করতে অস্বীকৃতি জানালে ৪৯ বছরের মাথায় দেশে ফের সিপাহী-জনতার বিপ্লবের জন্ম হয়।

জুলাই অভ্যুত্থানে সেনাবাহিনীর ভূমিকা বর্ণনা করে ওয়াহেদ বলেন, সেনাবাহিনী ফ্যাসিস্ট হাসিনার কথামতো বন্দুক চালাতে অস্বীকার করে, বহু জায়গায় আওয়ামী সন্ত্রাসীদের লক্ষ্য করে গুলি করে এবং আন্দোলনরত জনগণকে সহায়তা করে বলেই গণহত্যাকারী শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যান। বাংলাদেশ নতুন স্বাধীনতা লাভ করে।

“জুলাই গণহত্যা ও তার আগে ১৬ বছর সরাসরি জনগণকে হত্যা-নির্যাতনে সেনাবাহিনীসহ যেকোনো বাহিনীর সদস্যদের বিচার করার বিষয়ে জনগণের মধ্যে কোনো দ্বিধা-সংকোচ নেই, যদি-কিন্তু নেই। তবে কোনো সদস্যের ভূমিকার কারণে জুলাই বিপ্লবে ছাত্র-জনতার পাশাপাশি সেনাবাহিনীর অবদানকে অস্বীকার, অবহেলা ও উপেক্ষা করার সুযোগ নাই।”

জুলাই অভ্যুত্থানের অর্জনে সেনাবাহিনীর প্রাতিষ্ঠানিক ভূমিকাকে স্বীকৃতি দেওয়ার আহ্বান রেখে ওয়াহেদ বলেন, “ফ্যাসিবাদ পতনের জন্য সেনাবাহিনীকে শোকরিয়া জানান। বিশেষ করে সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানসহ বিপ্লবের পক্ষের গোটা সেনা নেতৃত্বের প্রতি জাতির কৃতজ্ঞতা প্রকাশে কোনো সংকোচ থাকা উচিত নয়।”

“শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদ টিকিয়ে রাখতে সামাজিক মাধ্যমে ভূমিকা রাখা কিছু লোক, বিতর্কিত দালাল বুদ্ধিজীবী ও সেক্যুলার-বামপন্থি অ্যাক্টিভিস্টরা জুলাই বিপ্লবে সেনাবাহিনীর মহান ভূমিকাকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে অপপ্রচার চালাচ্ছেন। তারা সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানকে টার্গেট করে মিথ্যাচার চালাচ্ছেন। এর মধ্য দিয়ে মূলত সেনাবাহিনীকে দুর্বল ও জনগণের প্রতিপক্ষ করার চেষ্টা চলছে,“ অভিযোগ করেন ওয়াহেদ।

তিনি বলেন, “আমাদের সুস্পষ্ট কথা হলো, জুলাই বিপ্লব-উত্তর উন্নত শক্তিশালী বাংলাদেশ গড়তে হলে সেনাবাহিনীকে শক্তিশালী করতে হবে। জুলাই বিপ্লবে সেনাবাহিনীর যে বিশাল অবদান রয়েছে, তাকে স্বীকৃতি দিয়ে বিপ্লবী ছাত্রজনতার সংকল্প অনুযায়ী ‘ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার বিলোপ এবং নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত’ বাস্তবায়নেও সেনাবাহিনীকে সম্পৃক্ত করতে হবে। বিশেষ করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের অঙ্গীকার অনুযায়ী দেশের ‘সবকিছু নতুন করে গড়ে তুলতে’ সেনাবাহিনীর সর্বাত্মক অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে।”

এ দাবির যৌক্তিকতা তুলে ধরে তিনি বলেন, বিপ্লবের পর দেশ গড়ার দায়িত্ব ছাত্র-জনতা-সেনাবাহিনীসহ দেশের সর্বস্তরের জনগণের।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, “বিদেশি অপশক্তি ও তাদের দেশীয় তাবেদাররা ফ্যাসিবাদকে স্বাভাবিকীকরণ করতে চায়। এর মাধ্যমে তারা বাংলাদেশকে আধিপত্যবাদ-সম্প্রসারণবাদের হস্তক্ষেপের ঝুঁকিতে রাখতে, পুরোনো অনৈক্য ও হিংসা নবায়নের সুযোগ রেখে অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা দুর্বল করতে চায়। সর্বোপরি তাদের খায়েশ হলো বিপুল অর্থনৈতিক উন্নতি করার পরে যেন বাংলাদেশ পরনির্ভরশীল ও নতজানু হয়ে থাকে।”

“মূলত তাদের ইন্ধনেই প্রধান প্রধান রাজনৈতিক পক্ষগুলো পরিবর্তন প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ না করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে নির্বাচন দিয়ে বিদায় নিতে বলছে এবং নির্বাচিত হয়ে সরকার গঠনের পর সংস্কার করার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে।”

কিন্তু তারা যেভাবে নিয়মিত ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার ও নতুন সংবিধান প্রণয়নের বিরোধিতা করছে তাতে তাদের প্রতিশ্রুতি নিয়ে সন্দেহ তৈরি হয় বলে মন্তব্য করেন ওয়াহেদ।

তিনি বলেন, “বিশেষ করে এই আশঙ্কা তৈরি হচ্ছে যে, দেশ কি আবারো ভুল পথে যাচ্ছে? যে ভুল ১৯৭৫ সালের সাতই নভেম্বরের সিপাহী-জনতার বিপ্লবের পরেও হয়েছিল। তখন শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান নতুন গণতান্ত্রিক সংবিধান প্রণয়ন না করে কিছু পরিমার্জন করে মুজিব প্রণীত সংবিধানই বহাল রাখেন। তিনি বহুদলীয় গণতন্ত্রের স্বার্থে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগকে পুনরুজ্জীবিত করেন। কিন্তু আওয়ামী লীগ রাজনীতিতে ফেরার পর স্বয়ং শহীদ জিয়া নিহত হন। এই দল জুডিশিয়াল কিলিংয়ের মাধ্যমে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বিরোধীদলীয় নেতাকে হত্যা করেছে। সর্বশেষ শহীদ জিয়ার স্ত্রী ও তিনবারের প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে আমৃত্যু বন্দি অবস্থায় কাটানোর বন্দোবস্ত করেছিল।”

লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, “নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত গড়ে তুলতে হবে। এক্ষেত্রে ফ্যাসিবাদী শাসন ব্যবস্থা ও কাঠামোকেও সমূলে বিলুপ্ত করতে হবে। একে সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা, নির্বাচিত সরকারের প্রয়োজনীয়তা বা অন্য কোনো অজুহাতে পুনর্বহাল বা নবায়ন করা যাবে না। বরং রাষ্ট্র পুনর্গঠনের প্রশ্নকে একমাত্র প্রাধান্য দিয়ে সবার আগে জাতীয় নিরাপত্তা প্রশ্নে অস্পষ্টতা, দ্বিধা-সংকোচ ও কালক্ষেপণকে বাদ দিয়ে সর্বস্তরের নাগরিকের ঐক্য ও সংহতি গড়ে তুলতে হবে।”

এই ঐক্য ও সংহতির রূপরেখা কেমন হবে তা বিগত সাত মাসে দৃশ্যমান হয়েছে বলে তুলে ধরে ওয়াহেদ বলেন, “আমরা দেখেছি ফ্যাসিবাদের দোসর হিসেবে পুলিশ বাহিনী জনগণের প্রতিশোধের ভয়ে রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব ফেলে আত্মগোপন করেছিল। তখন ছাত্র ও তরুণ সমাজ স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণসহ জননিরাপত্তা নিশ্চিত করেছিল। এর ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সদস্যরা সারা দেশে জননিরাপত্তা রক্ষা ও ফ্যাসিবাদীদের নানা উপাদান দিয়ে সৃষ্ট প্রতিবিপ্লবী আন্দোলন, বিশৃঙ্খলা ও ষড়যন্ত্র মোকাবিলায় কাজ করেছে। এক পর্যায়ে পুলিশ বাহিনীও কাজে ফিরেছে।”

সার্বিক অবস্থা বিবেচনায় পাঁচ বছর মেয়াদি জাতীয় সন্ধিক্ষণ ঘোষণা করেন গণঅবস্থানকারীরা। এটি অর্জন করতে ছয়টি বিষয় বাস্তবায়ন করা অপরিহার্য মনে করছেন তারা।

১। পুরোনো সংবিধান বাতিল করে ড. ইউনুসের নেতৃত্বে রাষ্ট্রপতি শাসিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনে সর্বাত্মক সহায়তা ও নিরাপত্তা প্রদান করা।

২। একটি শক্তিশালী জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদ গঠন করা, যার চেয়ারম্যান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের রাষ্ট্রপতি ও ভাইস চেয়ারম্যান সেনাপ্রধান হবেন। এই পরিষদে প্রধান বিচারপতি, মন্ত্রী পরিষদ সচিব, নৌ ও বিমান বাহিনী প্রধান, পুলিশ প্রধান, গুরুত্বপূর্ণ রাজনীতিক ও নাগরিকরাও অন্তর্ভুক্ত হবেন। জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের সিদ্ধান্তের আলোকে পুরোনো সংবিধান বাতিল এবং ফ্যাসিবাদী দল ও সংগঠনকে নিষিদ্ধ করতে হবে।

৩। নতুন সংবিধান প্রণয়নে জুনে গণপরিষদ গঠন ও নির্বাচন পরিচালনা এবং পরবর্তীতে দ্রুত সংসদ নির্বাচনের পর নির্বাচিত সরকারের হাতে ক্ষমতা প্রদান তত্ববধান করা।

৪। দেশের আর্থিক খাতের নিরাপত্তা তথা ব্যাংক, স্টক এক্সচেঞ্জ, আমদানি-রপ্তানির লেনদেন সামরিক বাহিনীর মনিটরিং ও তত্ত্বাবধানে হওয়া।

৫। দেশের সকল উপজেলায় স্থায়ীভাবে সেনা মোতায়েন রাখা যেন সাম্প্রদায়িক ও জঙ্গি হামলাসহ জননিরাপত্তা-সংক্রান্ত ইস্যুতে তাৎক্ষণিক সাড়া দেওয়া যায়। এক্ষেত্রে পুলিশ, র‍্যাব ও বিজিবিরও সহায়তা নিতে হবে।

৬। সেনাবাহিনী, জনপ্রশাসনসহ রাষ্ট্রের সর্বত্র ফ্যাসিবাদের দোসর, দুর্নীতিবাজ ও দেশ বিরোধীদের চিহ্নিত করে তাদের শূন্যপদে সাবেক দেশপ্রেমিক সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তাদের নিয়োগ প্রদান করা।

সংবাদ সম্মেলন থেকে ছাত্র-জনতার অবস্থান কর্মসূচি নিয়ে বিপ্লবী ছাত্র পরিষদের নেতা বলেন, গত ১৩ ফেব্রুয়ারী থেকে রাজু ভাস্কর্যে আমরা যে লাগাতার গণঅবস্থান করছি, তা পবিত্র রমজান মাসেও অব্যাহত থাকবে। তবে গণঅবস্থানকারীদের সিয়াম সাধনা ও এবাদতের কথা বিবেচনা করে গণঅবস্থান সকাল ৯টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত চলবে। প্রতিদিনই আমরা গণইফতার আয়োজন করব, ইনশাআল্লাহ। ইফতারে আগ্রহীরা খাদ্যসামগ্রী উপহার দিতে পারবেন। সবাইকে ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগ ও দোসর দলগুলোকে নিষিদ্ধ করতে গণঅবস্থানে সংহতি জানানোর আহ্বান জানাচ্ছি।

সংবাদ সম্মেলনটি পরিচালনা করেন বিপ্লবী ছাত্র পরিষদের সদস্য সচিব ফজলুর রহমান। অন্যান্যের মধ্যে বিপ্লবী ছাত্র পরিষদের সিনিয়র সহকারী সদস্য সচিব ইসতিয়াক আহমেদ ইফাত, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহ্বায়ক সানোয়ারা খাতুন ও যুগ্ম আহ্বায়ক গোলাম নূর শাফায়েতুল্লাহ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখার যুগ্ম আহ্বায়ক সালমান ফার্সি, কেন্দ্রীয় সহকারী সদস্য সচিব আশরাফুল ইসলাম ও বাংলাদেশ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সদস্য সচিব ফরহাদ আহমদ আলী; জাতীয় বিপ্লবী পরিষদের যুগ্ম আহবায়ক সাইয়্যেদ কুতুব, সহকারী সদস্য সচিব আব্দুস সালাম, ডা. মাসুম বিল্লাহ ও গালীব ইহসান; কেন্দ্রীয় সদস্য তৌহিদ তপু,আহম্মেদ সুমন,তামিম আনোয়ার, ওয়াসিম আহমদ, মোহাম্মদ হিযবুল্লাহ, কায়েস আহম্মেদ, ওমর ফরুকসহ অনেকে উপস্থিত ছিলেন।

  • অন্যান্য খবর জানতে এখানে ক্লিক করুন।
  • ফেসবুকে আমাদের ফলো দিয়ে সর্বশেষ সংবাদের সাথে থাকুন।
  • ইউটিউবেও আছি আমরা। সাবস্ক্রাইব করে ঘুরে আসুন ডিজিটাল  কন্টেন্টের দুনিয়ায়।