জনমনে আস্থা ফেরাতে এবার জেলা পরিষদে নির্বাচন চান পরিষদ চেয়ারম্যানরা! - Southeast Asia Journal

জনমনে আস্থা ফেরাতে এবার জেলা পরিষদে নির্বাচন চান পরিষদ চেয়ারম্যানরা!

“এখান থেকে শেয়ার করতে পারেন”

Loading

নিউজ ডেস্ক

তিন পার্বত্য জেলা পরিষদের (খাগড়াছড়ি, রাঙ্গামাটি ও বান্দরবান) নির্বাচন থমকে আছে প্রায় ত্রিশ বছর ধরে। সব সরকারের আমলেই দলীয় সরকারের মনোনীত চেয়ারম্যান ও সদস্যদের দিয়ে চলছে তিন পার্বত্য জেলার জেলা পরিষদের উন্নয়ন কর্মকান্ড। এসব উন্নয়ন কর্মকান্ডের মান ও বাৎসরিক বরাদ্ধে ব্যাপক অনিয়ম-দুর্নীতি নিয়ে জনমনে ক্ষোভ থাকলেও, দায়বদ্ধতা কিংবা জবাবদিহিতা নেই পরিষদের চেয়ারম্যান ও সদস্যদের। এমন কি জেলা পরিষদের বার্ষিক অডিট প্রক্রিয়ায়ও এসব অনিয়ম দূর্নীতি ধরা পড়ছে না। ফলে পার্বত্যাঞ্চলের জেলা পরিষদগুলোতে হরিলুটের প্রতিযোগীতা চলছে বছরের পর বছর জুড়ে। যার কারণে পার্বত্যাঞ্চলের উন্নয়ন ও অগ্রতির জন্য সরকারের ব্যাপক অর্থ বরাদ্ধ আসলেও দূর্নীতি ও অনিয়মের কারনে উন্নয়ন ও অগ্রতি দৃশ্যমান হচ্ছে না।

১৯৮৯ সালে প্রথমবারের মতো তিন পার্বত্য জেলায় জনগণের অংশ গ্রহনে সরাসরি ভোটে নির্বাচনের মাধ্যমে পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান’সহ সদস্যরা নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে আজ পর্যন্ত কোন সরকারই পার্বত্য জেলা পরিষদের নির্বাচনের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে পারেনি। তবে এ নির্বাচনের মেয়াদ ছিলো পাচ বছর। বছরের পর বছর নির্বাচন না হওয়ার পেছনে প্রধান কারন হিসেবে বিশ্লেষকরা বলছেন, পার্বত্য শান্তিচুক্তি পুরোপুরি বাস্তবায়ন না হওয়াতে জেলা পরিষদের নির্বাচনে বাঁধা দিচ্ছেন পার্বত্যাঞ্চলের আঞ্চলিক রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দরা।

এবার খোদ পরিষদ চেয়ারম্যানরাই দাবি করেছেন জেলা পরিষদ নির্বাচনের। রাঙামাটি জেলার বিশেষ আইন শৃঙ্খলা সভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে তিন পার্বত্য জেলা পরিষদের নির্বাচন দাবি করেছেন খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কংজরী চৌধুরী ও রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বৃষ কেতু চাকমা। খাগড়াছড়ি জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান চেয়ারম্যান কংজরী চৌধুরী তার জন্য নির্ধারিত বক্তব্যের এক পর্যায়ে বলেন, ১৯৮৯ সালো তিন পার্বত্য জেলা পরিষদের নির্বাচন হলেও পার্বত্য শান্তি চুক্তির পর চুক্তি অনুযায়ী আলাদা ভোটার তালিকা তৈরি না হওয়ায় জেলা পরিষদগুলোর নির্বাচন হচ্ছে না, কিন্তু সরকার থেকে নির্বাচনের উদ্যেগও নেয়া হয়নি।

দুই জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অভিযোগের সূরে বলেন, ভোটার তালিকা নিয়ে আপত্তি রয়েছে অনেকের, যদি ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা পরিষদ এমনকি সংসদ নির্বাচনে জাতীয় ভোটার তালিকা অনুযায়ী আপত্তি থাবা ব্যক্তিরা অংশ গ্রহন করতে পারেন এবং তাদের প্রতিনিধি নির্বাচিত হতে পারে তাহলে তারা জেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবে না কেন? এসময় তারা বলেন, জেলা পরিষদগুলোর নির্বাচন হলে আঞ্চলিক পরিষদের নির্বাচন হবে, কারন জেলা পরিষদের নির্বাচিত সদস্যরা আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান ও সদস্য নির্বাচিত করবেন। দুই জেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের দাবি, পাহাড়ে সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজি এসবের পেছনে আর্ন্তজাতিক ষড়যন্ত্র থাকতে পারে। সভায় তারা দ্রুত সময়ের মধ্যে জেলা পরিষদের নির্বাচন দাবি করেন।

“সন্তু লারমা’র কারনেই আটকে আছে এ নির্বাচন,” এমনটি অভিযোগ করে সম্প্রতি খাগড়াছড়ি জেলা আওয়ামীলীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি ও মুক্তিযোদ্ধা রণ বিক্রম ত্রিপুরা বলেছেন, যখনই আওয়ামীলীগ পার্বত্য জেলা পরিষদের নির্বাচন করতে চায় তখই সন্তুু লারমা বাধ সাধেন যে, পার্বত্যাঞ্চলের নতুন ভোটার তালিকার মাধ্যমেই তিন পার্বত্য জেলা পরিষদের নির্বাচন হতে হবে।

পার্বত্য জেলার সুশীল সমাজের দাবি হচ্ছে, পার্বত্য জেলার আঞ্চলিক রাজনৈতিক দলগুলো যদি বর্তমান ভোটার তালিকায় ও জাতীয় পরিচয়পত্রের মাধ্যমে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে সংসদ নির্বাচন করতে পারে, তাহলে একই ভাবে পার্বত্য জেলা পরিষদের নির্বাচন করতে বাঁধা কোথায়। সাধারণ মানুষ বলছেন, জেলা পরিষদের নির্বাচন না হওয়াতে এ পরিষদের চেয়ারম্যানসহ সদস্যরা জনগণের কাছে সরকারি বাজেটের খরচ’সহ প্রত্যেকটি জন উন্নয়নমূলক কাজের জবাবদিহিতা করতে বাধ্য নয়। শুধু তাই নয়, এ পরিষদের অধীনে ন্যস্ত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের জনবল নিয়োগেও ঘুষ বাণিজ্য হচ্ছে সর্বত্র।

পার্বত্য জেলা পরিষদ আইনে স্পষ্ট ভাবে উল্লেখ করা হয়েছে যে, একজন চেয়ারম্যান, একুশ জন উপজাতীয় সদস্য ও নয় জন অ-উপজাতীয় সদস্য পার্বত্যাঞ্চলের জনগণের সরাসরি ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত হতে হবে। কিন্তু নির্বাচন না হবার কারনে তিন পার্বত্য জেলার জনগণ ভোটাধিকার’সহ তাদের ন্যায্য অধিকার ও সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন অনায়াসেই। এতে করে পাহাড় সমান দূর্নীতি’সহ হরিলুটের আখাড়ায় পরিণত হয়েছে পার্বত্য জেলা পরিষদগুলো। যার কোনও জবাবদিহিতা আজ পর্যন্ত পাওয়া যায়নি।

সম্প্রতি খাগড়াছড়ি জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও স্থানীয় সংসদ সদস্য কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা বলেন, পার্বত্যাঞ্চলে জেলা পরিষদের নির্বাচন হোক এটা বর্তমানে সকল ধর্ম ও বর্ণের মানুষের প্রাণের দাবি।

প্রসঙ্গত, ১৯৮৯ সালে পার্বত্য জেলাসমূহের বিভিন্ন অনগ্রসর সংখ্যালঘু গোষ্ঠি অধ্যুষিত রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান পার্বত্য জেলার সর্বাঙ্গীণ উন্নয়নকল্পে তিন পার্বত্য জেলা স্থানীয় সরকার পরিষদ ১৯৮৯ (১৯৮৯ সনের ১৯নং) অনুযায়ী তিন পার্বত্য জেলা স্থানীয় সরকার পরিষদ স্থাপিত হয়। এ উদ্দেশ্যে রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান স্থানীয় সরকার পরিষদ বিল, ১৯৮৯ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি, ১৯৮৯ খ্রিঃ তারিখে মহামান্য রাষ্ট্রপতির সম্মতি লাভ করে। বিলটি ৬ মার্চ ১৯৮৯ খ্রিঃ তারিখে বাংলাদেশ গেজেটের অতিরিত সংখ্যায় প্রকাশিত হয়। সে বছর ২৫ জুন অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচনের মাধ্যমে চেয়ারম্যানসহ ৩১ সদস্য বিশিষ্ট পরিষদ গঠিত হয়। এরপর ১৯৯৭ সালের ২রা ডিসেম্বর পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক জাতীয় কমিটি এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির মধ্যে সম্পাদিত পার্বত্য শান্তিচুক্তির আলোকে ঐতিহাসিক পার্বত্য শান্তি চুক্তির বাস্তবায়ন ও এ জেলার সংখ্যালঘু অধিবাসীগণসহ সকল নাগরিকের রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, শিক্ষা ও অর্থনৈতিক অধিকার সমুন্নত রাখা এবং সামাজিক উন্নয়ন প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করার প্রয়োজনে ১৯৮৯ খ্রিঃ ৯নং আইনের দ্বারা অনুযায়ী ‘‘ পার্বত্য জেলা স্থানীয় সরকার পরিষদ’’গুলোকে স্ব স্ব নামে ‘‘ পার্বত্য জেলা পরিষদ’’ নামে রুপান্তরিত হয়েছে। ৩৩ জন সদস্য এবং ১জন চেয়ারম্যান নিয়ে সেসময় পার্বত্য জেলা পরিষদ গঠিত হয়েছে। প্রত্যেক পরিষদে ২জন উপজাতীয় এবং ১জন অ-উপজাতীয়সহ মোট ৩ জন মহিলা সদস্যের পদ সংরক্ষিত রাখা হয়েছে।