রোহিঙ্গাদের সহায়তায় দুই বছরে ৬৭ কোটি ডলারের সহায়তা যুক্তরাষ্ট্রের
 
                 
নিউজ ডেস্ক
২০১৭ সালের ২৫ আগষ্ট নিজ দেশের সেনাবাহিনীর হাতে ব্যাপক নির্যাতনের শিকার হয়ে সীমান্ত অতিক্রম করে বাংলাদেশের কক্সবাজারের টেকনাফ, উখিয়াসহ বিভিন্ন স্থানে আশ্রয়গ্রহন করে প্রায় সাড়ে সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা। রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর গত ২ বছরে বাংলাদেশে অবস্থানকালীন সময়ে তাদের ভরন-পোষনসহ নিত্য প্রয়োজনীয় সব আন্তর্জাতিক সহায়তার সবচেয়ে বেশী অর্থ এসেছে যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে। শুধুমাত্র ২০১৯ সালে রোহিঙ্গাদের মানবিক সহায়তার জন্য জাতিসংঘ কর্তৃক বিভিন্ন রাষ্ট্র ও দাতা সংস্থার কাছে ৯২ কোটি ডলার সহায়তা চাইলেও এখন পর্যন্ত চাহিদাতার প্রায় ৬০ শতাংশ তহবিল পাওয়া গেছে বলে জাতিসংঘের সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। এর মধ্যে ২০১৯ সালে অন্তত ২৭ কোটি ৪০ লাখ ডলার এককভাবে দিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। ২০১৭ সালে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের সময় থেকে অদ্যাবধি যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তার একক পরিমান দাড়িয়েছে প্রায় ৬৭ কোটি ডলারে। এ সহায়তা অন্য সব দেশের দেওয়া মোট সহায়তার প্রায় সমান।
২০১৭ সালে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশকারী সাড়ে সাত লাখ রোহিঙ্গাসহ এর আগে সেদেশের সেনাবাহিনীর নির্যাতনে বিভিন্ন সময়ে সাড়ে তিন লাখের মতো রোহিঙ্গা বিভিন্ন নির্যাতনের শিকার হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছিল। এর ফলে বাংলাদেশে অবস্থানকারী রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর সংখ্যা দাঁডায় প্রায় সাড়ে ১০ লাখ। টেকনাফ ও উখিয়ায় আশ্রয় শিবির স্থাপন করে এই সাড়ে ১০ লাখ রোহিঙ্গাকে মানবিক দৃষ্টিকোন থেকে সাময়িকভাবে বসবাসের সুযোগ দিয়ে তাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠাতে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কূটনৈতিক তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে সরকার। ২০১৭ সাল থেকেই তাৎক্ষণিক বিভিন্ন ব্যবস্থা গ্রহণের পাশাপাশি বছরজুড়ে রোহিঙ্গাদের সহায়তার জন্য যৌথ সহায়তা পরিকল্পনা (জয়েন্ট রেসপন্স প্ল্যান) গ্রহণ করা হয়।
তবে গত তিন বছরে রোহিঙ্গাদের জন্য জোগাড় করা মোট তহবিলের সিংহভাগের জোগান দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এর পরিমাণ ৬৭ কোটি ডলারের বেশি। এ বছর যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া সহায়তার পরিমাণ এখন পর্যন্ত ২৭৪ মিলিয়ন ডলার (২৭ কোটি ৪০ লাখ মার্কিন ডলার, টাকার অঙ্কে যার পরিমাণ ২ হাজার ২৭৪ কোটি ২০ লাখ টাকারও বেশি)।
যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের তথ্য মতে , ২০১৯ সালে যুক্তরাষ্ট্র ছাড়াও যুক্তরাজ্য দিয়েছে ১২০ মিলিয়ন ডলার, অস্ট্রেলিয়া দিয়েছে ৩৪ মিলিয়ন ডলার, ইউরোপীয় কমিশন থেকে এসেছে ৩১ মিলিয়ন ডলার, জাপানের কাছ থেকে এসেছে ৩১ মিলিয়ন ডলার, কানাডা পাঠিয়েছে ২৩ মিলিয়ন ডলার, কাতারের থানি ফাউন্ডেশনের সহায়তা এসেছে ২২ মিলিয়ন ডলার, জার্মানি পাঠিয়েছে ১৭ মিলিয়ন ডলার, সৌদি আরবের সহায়তা ১০ দশমিক ৬ মিলিয়ন ডলার, সংযুক্ত আরব আমিরাত দিয়েছে ১০ মিলিয়ন ডলার, নিউজিল্যান্ডের রোহিঙ্গা সহায়তা ৪.৫ মিলিয়ন ডলার, নরওয়ের সহায়তা ৪ দশমিক ৪ মিলিয়ন ডলার, তুরস্ক পাঠিয়েছে ৪ মিলিয়ন ডলার, সুইজারল্যান্ড দিয়েছে ৩ দশমিক ৬ মিলিয়ন ডলার, সুইডেনের সহায়তা ৩ দশমিক ২ মিলিয়ন ডলার, আশ্রয় দেওয়ার পাশাপাশি বাংলাদেশের সহায়তা ২ দশমিক ৫ মিলিয়ন ডলার, ফ্রান্সের সহায়তা এক দশমিক তিন মিলিয়ন ডলার, আয়ারল্যান্ডের সহায়তা এক দশমিক এক মিলিয়ন ডলার, ফিনল্যান্ডের সহায়তা এক মিলিয়ন ডলার এবং রাশিয়ার সহায়তা এক মিলিয়ন ডলার।
বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের মুখপাত্র জানান, শুধুমাত্র সবচেয়ে বেশি সহায়তা দেওয়াই নয় রোহিঙ্গাদের স্বদেশে নিরাপদ প্রত্যাবাসনেও বিশেষ ভূমিকা রাখবে যুক্তরাষ্ট্র। তিনি বলেন, রোহিঙ্গাদের নিরাপদ প্রত্যাবাসনের জন্য রাখাইনে সহায়ক পরিবেশ তৈরি করতে যুক্তরাষ্ট্র মিয়ানমারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছে।তিনি আরো বলেন, ২০২০ সালের জন্য যৌথ রেসপন্স পরিকল্পনা ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে সেটি পর্যালোচনা করে এবং আগামী অর্থবছরে রোহিঙ্গাদের জন্য তহবিল দেওয়ার সিদ্ধান্তও নিবে তারা।
এদিকে, রোহিঙ্গাদের মানবিক সহায়তায় মূখ্য ভূমিকা রাখায় যুক্তরাষ্ট্র সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বাংলাদেশের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্রের যৌথ পদক্ষেপে রোহিঙ্গাদের নিরাপদে নিজ দেশে ফেরত পাঠানো সম্ভব।
