পাহাড়ে দুমুখো বর্ণচোরাদের নগ্ন সন্ত্রাসবাদ: নিরাপত্তার প্রশ্নে সেনা ক্যাম্পের অপরিহার্যতা

পাহাড়ে দুমুখো বর্ণচোরাদের নগ্ন সন্ত্রাসবাদ: নিরাপত্তার প্রশ্নে সেনা ক্যাম্পের অপরিহার্যতা

পাহাড়ে দুমুখো বর্ণচোরাদের নগ্ন সন্ত্রাসবাদ: নিরাপত্তার প্রশ্নে সেনা ক্যাম্পের অপরিহার্যতা
“এখান থেকে শেয়ার করতে পারেন”

Loading

মোঃ সাইফুল ইসলাম

১৬ এপ্রিল ২০২৫, সকাল ৬টা ৩০ মিনিট। খাগড়াছড়ি সদর উপজেলার গিরিফুল এলাকায় পার্বত্য চুক্তিবিরোধী সশস্ত্র সংগঠন ইউপিডিএফ-প্রসীত গ্রুপ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচজন পাহাড়ি শিক্ষার্থীকে অস্ত্রের মুখে অপহরণ করে। সংবাদ মাধ্যমের সূত্র মতে, ভোরের আলো ফোটার আগেই, দেশের স্বনামধন্য একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা—যারা বিঝু উৎসব শেষে বাড়ি থেকে ক্যাম্পাসে ফিরছিলেন—তাদের তুলে নেওয়া হয় চরম দুঃসাহসিক কায়দায়। শুধু তাই নয়, অপহরণকারীরা টমটম চালককেও ছাড়েনি।

এই ঘটনায় কেবল আতঙ্ক নয়, বরং আবারো সামনে উঠে এসেছে একটি পুরনো বাস্তবতা—পার্বত্য চট্টগ্রামে ইউপিডিএফ ও জেএসএস নামধারী দুটি সশস্ত্র গোষ্ঠীর বেপরোয়া সন্ত্রাসবাদ, এবং সেখানে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় সেনাবাহিনীর উপস্থিতির অপরিহার্যতা।

শান্তির মুখোশের আড়ালে সন্ত্রাসের রূপ

ইউপিডিএফ ও জেএসএস—দু’টি সংগঠনই নিজেদের “জনগণের প্রতিনিধি” বললেও বাস্তবে তারা উভয়েই পাহাড়ে আধিপত্য, চাঁদাবাজি, খুন ও অপহরণের রাজনীতি চালিয়ে যাচ্ছে। শান্তিচুক্তির একপক্ষ হয়েও জেএসএস আজ সশস্ত্র অবস্থানে প্রতিপক্ষকে নির্মূলের পথ বেছে নিয়েছে। অন্যদিকে ইউপিডিএফ, চুক্তির বিরোধিতা করে তথাকথিত ‘স্বায়ত্তশাসন’-এর দাবিতে দশকের পর দশক ধরে নিরীহ জনগণকে জিম্মি করে রেখেছে।

প্রসঙ্গত, অপহৃত ছাত্রদের মধ্যে রিশন চাকমা নামক একজন সন্তু লারমার নেতৃত্বাধীন জেএসএস-এর ছাত্র সংগঠন পিসিপি’র (পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ) সক্রিয় সদস্য। ইউপিডিএফপন্থী সোর্স থেকে দাবি করা হচ্ছে, কিছুদিন আগে ইউপিডিএফের নেতা মিল্টন চাকমার হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে এই ছাত্রদের যোগসাজশ রয়েছে। যদি এটি সত্যও হয়, তবে প্রশ্ন আসে—অপরাধের বিচার কি আইন প্রয়োগকারী সংস্থা করবে, না কি সশস্ত্র গোষ্ঠীর হাতে তুলে দেওয়া হবে বিচারের ভার?

সোজা ভাষায় বলা যায়—দুইপক্ষই আজ পাহাড়কে অস্ত্রের রণক্ষেত্রে পরিণত করেছে। আজ তারা পরস্পরকে অপহরণ করছে, কাল সাধারণ মানুষ বা পর্যটক এর শিকার হলে দায় নেবে কে?

কোথায় সেই তথাকথিত ‘মানবাধিকারের’ কণ্ঠস্বর?

বস্তুত, যখন কোনো বাঙালি সেনা সদস্যের উপস্থিতি নিয়ে সামান্য কিছু হয়, তখন কিছু তথাকথিত ‘সুশীল’, ‘উন্নয়নকামী’ উপজাতি মুখপাত্র সোশ্যাল মিডিয়া ও আন্তর্জাতিক মহলে সরব হয়ে ওঠেন। কিন্তু আজ, নিজেদের গোষ্ঠীর পাঁচজন শিক্ষার্থী অপহৃত হওয়ার পর তাদের মুখে কোনো প্রতিবাদ নেই! কারণ অপহরণকারীর পরিচয় ‘নিজ পক্ষের’। এ যেন পাহাড়ি রাজনীতির লজ্জাজনক দ্বিচারিতা।

চাকমা সার্কেল চীফের কথিত স্ত্রী ইয়েন ইয়েন—যিনি আগেও সাম্প্রদায়িক উত্তেজনায় উসকানিমূলক ভূমিকা রেখেছেন—তিনিও আজ নিরব। মানবাধিকার যেন শুধু কিছু নির্দিষ্ট পরিস্থিতিতেই প্রযোজ্য।

সেনাবাহিনীর গুরুত্ব এবং ক্যাম্প পুনঃস্থাপনের দাবি

পার্বত্য চট্টগ্রামে বিগত দুই দশকে বহু সেনা ক্যাম্প আন্তর্জাতিক চাপ এবং কিছু এনজিওপন্থী মহলের দাবিতে প্রত্যাহার করা হয়েছে। অথচ বাস্তবতা হলো, প্রত্যাহারকৃত প্রতিটি ক্যাম্পের স্থলে আজ অবৈধ অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীদের অবাধ বিচরণ। তারা সেই জায়গাগুলোকে নিরাপদ ঘাঁটিতে পরিণত করেছে।

এই অবস্থায় প্রশ্ন উঠে—এই পাহাড় কার হাতে যাবে? রাষ্ট্রের, না সন্ত্রাসীদের?

চলমান অব্যবস্থার প্রেক্ষাপটে আমাদের দাবি পরিষ্কার:

  1. পার্বত্য চট্টগ্রামে সেনা ক্যাম্প পুনঃস্থাপন করতে হবে, পরিত্যক্ত ক্যাম্পগুলো অবিলম্বে সচল করতে হবে।

  2. সকল অবৈধ অস্ত্রধারী সংগঠনের বিরুদ্ধে অব্যাহত যৌথবাহিনী অভিযান চালাতে হবে।

  3. পাহাড়ে বসবাসরত সব জনগণের—হোক সে বাঙালি বা পাহাড়ি—নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সেনাবাহিনীকে পূর্ণ স্বাধীনতা দিতে হবে।

  4. চুক্তি বাস্তবায়নের নামে যারা সন্ত্রাসকে রাজনৈতিক ছাতার নিচে আশ্রয় দেয়, তাদের মুখোশ খুলে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে।

পার্বত্য চট্টগ্রামে আজ যদি সেনাবাহিনী না থাকে, তবে খুব দ্রুতই সেই অঞ্চল বাংলাদেশের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে—এটা কোনো অনুমান নয়, বরং বহুবারের প্রমাণিত বাস্তবতা। যারা সেনাবাহিনী প্রত্যাহারের দাবি তুলছেন, তারা হয় অজ্ঞ, নয় ষড়যন্ত্রকারী।

আজ যারা অপহরণের শিকার হয়েছেন, তারা হয়তো কাল নিজেই অপহরণকারী হয়ে ফিরবেন—এমন এক দুষ্টচক্র চলছে পাহাড়ে। এই দুষ্টচক্র ভাঙতে হলে রাষ্ট্রকে কঠোর হতে হবে। অস্ত্রের জবাব আইন দিয়ে দিতে হবে। আর পাহাড়ে সেনা ক্যাম্প বাড়াতে হবে—এই মুহূর্তে।

পার্বত্য চট্টগ্রাম বাংলাদেশের অঙ্গ। তাকে সন্ত্রাসীদের হাতে তুলে দেওয়ার আগে জেগে উঠতে হবে সমতলের মানুষদেরও। পাহাড়ে সেনাবাহিনী মানেই দমন নয়, বরং সংরক্ষণ—বাংলাদেশের ভূখণ্ড, জনগণ ও ভবিষ্যতের।

  • অন্যান্য খবর জানতে এখানে ক্লিক করুন।
  • ফেসবুকে আমাদের ফলো দিয়ে সর্বশেষ সংবাদের সাথে থাকুন।
  • ইউটিউবেও আছি আমরা। সাবস্ক্রাইব করে ঘুরে আসুন ডিজিটাল  কন্টেন্টের দুনিয়ায়।