অপহরণ আর প্রতিবাদের মাঝখানে পাহাড়ে চলা দ্বিমুখী রাজনীতি

মোঃ সাইফুল ইসলাম
খাগড়াছড়ির গিরিফুল এলাকা থেকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫ জন উপজাতি শিক্ষার্থী অপহরণের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ ও ক্ষোভ প্রকাশ করছি। আমরা চাই, তারা যেন দ্রুত, নিরাপদ এবং নিঃশর্তভাবে মুক্তি পায়। একইসাথে চাই, দোষীদের শনাক্ত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা হোক।
কিন্তু এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে উপজাতি শিক্ষার্থীদের হঠাৎ উত্তাল প্রতিবাদ এবং আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দেখে একটি পুরনো প্রশ্ন নতুন করে জাগে—এই প্রতিবাদের নৈতিক ভিত্তি কি সবসময় সমানভাবে বজায় থাকে? যখন চুক্তি-বিরোধী ইউপিডিএফ চুক্তিপন্থী জেএসএসপন্থী শিক্ষার্থীদের অপহরণ করে, তখন আমরা দেখছি সরব প্রতিক্রিয়া। কিন্তু পাহাড়ে যখন জেএসএস-এর সশস্ত্র শাখা অন্য মতাদর্শের লোকজনকে অপহরণ বা হত্যা করে, তখন কোথায় থাকে এই প্রতিবাদ?
আজ যারা সেনা অভিযান দাবি করছেন, তারাই কি অন্য সময় ‘পাহাড় থেকে সেনা হটাও’ স্লোগানে আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন না? তাহলে প্রশ্ন আসে—সেনাবাহিনী কি শুধুই তখন দরকার যখন নিজেদের লোক বিপদে পড়ে? আর শান্তির সময় রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা কাঠামোকে ‘দমননীতি’ বলে অভিযুক্ত করা হয় কেন?
পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির ২৭ বছর পরও সেখানকার পরিস্থিতি যেন বন্দুকের জোরে চলে। চুক্তি বাস্তবায়নের দাবিদার জেএসএস কিংবা চুক্তিবিরোধী ইউপিডিএফ—দুই পক্ষই এখনো পাহাড়ে অস্ত্র হাতে রাজনীতি করছে। তাদের কারণে পুরো এলাকা জিম্মি হয়ে পড়েছে। চাঁদাবাজি, অপহরণ, হত্যা যেন নিত্যদিনের ঘটনা।
আসলে পাহাড়ে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে সোচ্চার না হয়ে কেবল যখন নিজের দলভুক্ত কেউ ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তখন আওয়াজ তোলা একটি আত্মঘাতী দ্বিচারিতা। এটা শান্তিচুক্তির চেতনাকে যেমন খাটো করে, তেমনি পাহাড়ে স্থায়ী শান্তির পথকেও রুদ্ধ করে।
মানবাধিকার, প্রতিবাদ কিংবা আন্দোলন—এসব যদি সবার জন্য সমান না হয়, তবে তা কেবল একটি সুবিধাবাদী রাজনীতির অংশ হয়ে দাঁড়ায়। পাহাড়ে শান্তি আনতে হলে, সবার আগে এই অস্ত্রের রাজনীতি বন্ধ করতে হবে। তা সে যেই দলেরই হোক। আর যারা অস্ত্র নামাবে না, তাদের প্রতি রাষ্ট্রেরও আর কোনো নমনীয়তা দেখানোর সুযোগ নেই।
এই বাস্তবতা বুঝেই পাহাড় নিয়ে নীতি ঠিক করতে হবে। একপেশে ন্যারেটিভ নয়, প্রয়োজন সত্য ও সাহসের সমন্বয়।
- অন্যান্য খবর জানতে এখানে ক্লিক করুন।
- ফেসবুকে আমাদের ফলো দিয়ে সর্বশেষ সংবাদের সাথে থাকুন।
- ইউটিউবেও আছি আমরা। সাবস্ক্রাইব করে ঘুরে আসুন ডিজিটাল কন্টেন্টের দুনিয়ায়।