অর্ধেক টাকা ব্যয়ে বন্যার্তদের ঘর নির্মান সেনাবাহিনীর প্রশংসা করলেন প্রধান উপদেষ্টা

অর্ধেক টাকা ব্যয়ে বন্যার্তদের ঘর নির্মান, সেনাবাহিনীর প্রশংসা করলেন প্রধান উপদেষ্টা

অর্ধেক টাকা ব্যয়ে বন্যার্তদের ঘর নির্মান সেনাবাহিনীর প্রশংসা করলেন প্রধান উপদেষ্টা
“এখান থেকে শেয়ার করতে পারেন”

Loading

নিউজ ডেস্ক

বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য বিশেষ আবাসন প্রকল্পে বরাদ্দকৃত অর্থের অর্ধেকেরও কম খরচে ঘর নির্মাণ করে অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। এজন্য সেনাবাহিনীর ভূয়সী প্রশংসা করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।

প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশনায় গত বছর বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ৩০০টি পরিবারের জন্য বিশেষ আবাসন প্রকল্পের মাধ্যমে ঘর নির্মাণের ৫০কোটি টাকা বরাদ্দ প্রদান করা হয়।

৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ পেলেও সেনাবাহিনীর ২৪ ও ৩৩ ডিভিশনের কর্মকর্তারা মাত্র ২৪ কোটি ৯৮ লাখ ৯৫ হাজার টাকা ব্যয়ে ৩০০টি ঘরের নির্মাণ কাজ শেষ করেন।

বুধবার (৩০ এপ্রিল) সকাল সাড়ে ১০টায় তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে ঘরের চাবি বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ভার্চুয়ালি যুক্ত হন। এই অনুষ্ঠানে এসব তথ্য জানানো হয়।

অনুষ্ঠানে স্থানীয় প্রশাসনের মাধ্যমে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ৩০০টি পরিবারের সদস্যদের হাতে ঘরের চাবি তুলে দেওয়া হয়। অনুষ্ঠানে সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানসহ সরকারের শীর্ষ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস সেনাবাহিনীর ভূঁয়সী প্রশংসা করেন ও জাতীয় যে কোনো দুর্যোগে সেনাবাহিনীকে পাশে পাবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

এ সময় ড. ইউনূস বলেছেন, ২০২৪ সালে আমরা যখন সরকারের দায়িত্ব গ্রহণ করি সঙ্গে সঙ্গে বন্যা শুরু হয়। ঠিক বুঝতে পারছিলাম না এ জায়গায় কি বন্যা হবে। অন্যান্য বছর যে বন্যা হয়, এটা সম্পূর্ণ ভিন্ন জায়গার বন্যা। এটা কত গভীরভাবে মানুষকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে, এটার কোনো ধারণা ছিল না। অথবা আন্দাজ করা হয়েছিল যে তাড়াতাড়ি চলে যাবে। তবে দিন যত যাচ্ছিল এটা কঠিন হয়ে যাচ্ছিল।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, বন্যা বেড়ে যাচ্ছিল। সবাই ত্রাণ নিয়ে দৌড়াদৌড়ি, সাহায্যের জন্য সারাদেশ ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। এটা যে কত বড় বন্যা ছিল তা বুঝতে পেরেছি বন্যা চলে যাওয়ার অনেক পরে। বন্যায় যারা বাড়িঘর হারিয়েছিল, তাদের কোথাও যাওয়ার কোনো জায়গা ছিল না। নানাভাবে প্রস্তাব আসছিল, বাড়ির জন্য টাকা দিতে হবে। টাকা দেওয়ার ব্যাপারে আমি একটু শক্ত অবস্থান নিয়েছিলাম। টাকা দিতে গেলে এই টাকার ভাগ-বাটোয়ারা অনেক রকম হয়ে যাবে। যারা প্রাপ্য তাদের হাতে পৌঁছাবে না। তখন প্রস্তাব এসেছিল যে আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে করার, সেই প্রকল্পের বিষয়ে জানা ছিল না, তবে নামটা জানা ছিল। তখন ভাবলাম যে এটা কী করা যায়, পরে জানলাম এটা সেনাবাহিনী করবে। তখন স্বস্তি পেলাম, আসলে টাকাটা সঠিকভাবে ব্যবহার হবে।

সেনাবাহিনীসহ সবার সহযোগিতায় ঘুরে দাঁড়িয়েছে বন্যা কবলিতরা উল্লেখ করে অন্তর্বর্তী সরকারপ্রধান, বেশি ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর জন্য গৃহনির্মাণ বরাদ্দ দেয়া অর্থের অর্ধেকে নির্মাণ কাজ শেষ করায় সেনাবাহিনীকে ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, ভালো লাগছে যে, টাকাটার সঠিক ব্যবহার হয়েছে। ঘরটাও সঠিকভাবে নির্মাণ হয়েছে। অনেক সময় টাকা ব্যবহার করা হলেও গুণগতমান ঠিক হয় না। আজকে গুণগতমানের ব্যাপারেও আশ্বস্ত হলাম। আমরা যে টাকা দিয়েছিলাম তার অর্ধেক টাকাতে কাজটা হয়েছে। উল্টো খবর। সাধারণত যে টাকা দেওয়া হয়, তার দ্বিগুণ চাওয়া হয়। এখানে যা দেওয়া আছে তার অর্ধেক ব্যবহার হয়েছে। একটা আনন্দের খবর।

২০২৪ সালের আগস্ট ও সেপ্টেম্বর মাসে দেশের দক্ষিণ-পূর্ব অঞ্চলের ফেনী, নোয়াখালী, কুমিল্লা ও চট্টগ্রাম জেলার ২২টি উপজেলার অসংখ্য ঘরবাড়ি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এসব এলাকার যেসব ঘরবাড়ি সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে অর্থাৎ বসবাসের মতো ঘর অবশিষ্ট নেই তাদের ঘর নির্মাণ করে দেওয়ার নির্দেশনা দেন প্রধান উপদেষ্টা।

সশস্ত্র বাহিনীর মাধ্যমে চারটি জেলায় ৩০০টি ঘর নির্মাণের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। ঘর নির্মাণের জন্য প্রধান উপদেষ্টার ত্রাণ তহবিল থেকে ৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ প্রদান করা হয়।

অনুমোদিত দুটি ডিজাইনের মাধ্যমে (প্রথমটি ৪৯২ বর্গফুট ও দ্বিতীয়টি ৫০০ বর্গফুট) ঘর নির্মাণ করা হয়। সেনাবাহিনীর ২৪ ও ৩৩ ডিভিশনের মাধ্যমে ২৫ কোটি টাকারও কম খরচে ৩০০টি ঘর নির্মাণ করা হয়।

অনুষ্ঠানে জানানো হয়, ফেনী জেলার ৬টি উপজেলায় ১১০টি, নোয়াখালী জেলার ৭টি উপজেলায় ৯০টি, কুমিল্লা জেলার ৬টি উপজেলায় ৭০টি এবং চট্টগ্রাম জেলার ৩টি উপজেলার ৩০টিসহ মোট ৩০০টি ঘর নির্মাণ করা হয়।

চাবি বিতরণ অনুষ্ঠানে বিভিন্ন জেলায় বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে যারা ঘরের চাবি বুঝে পেয়েছেন তারা অনুভূতি ব্যক্ত করার সময় প্রধান উপদেষ্টা ও সেনাবাহিনীকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান।

তারা বলেন, বন্যায় সবকিছু হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছিলাম। পরিবার-পরিজন নিয়ে মাথা গোঁজার ঠাঁই ছিল না। প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশনায় সেনাবাহিনীর সহায়তায় মাথা গোঁজার ঠাঁই পেলাম।

  • অন্যান্য খবর জানতে এখানে ক্লিক করুন।
  • ফেসবুকে আমাদের ফলো দিয়ে সর্বশেষ সংবাদের সাথে থাকুন।
  • ইউটিউবেও আছি আমরা। সাবস্ক্রাইব করে ঘুরে আসুন ডিজিটাল  কন্টেন্টের দুনিয়ায়।