সন্ত্রাসীদের আধিপত্যের চেষ্টা: ঝুঁকির মুখে সাজেকের পর্যটক ও স্থানীয়দের নিরাপত্তা
 
                 
নিউজ ডেস্ক
দেশের অন্যতম জনপ্রিয় পাহাড়ি পর্যটন কেন্দ্র সাজেক ভ্যালি আবারও সন্ত্রাসীদের আধিপত্য বিস্তারের হুমকিতে পড়েছে। সন্তু লারমার নেতৃত্বাধীন পাহাড়ের আঞ্চলিক সশস্ত্র সংগঠন জনসংহতি সমিতি (জেএসএস) ও প্রসীত বিকাশ খীসার নেতৃত্বাধীন ইউপিডিএফ -এর মধ্যকার দফায় দফায় সহিংসতা ও প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রাঙামাটি পার্বত্য জেলার বাঘাইছড়ি উপজেলার অন্যতম পর্যটন স্পট সাজেক অঞ্চলে নিরাপত্তা চরম হুমকির মুখে পড়েছে। প্রতিনিয়ত ঘটছে গাড়ি চালক নির্যাতন, গাড়ি আটকে দেওয়া, এমনকি গাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেওয়ার হুমকির মতো ভয়াবহ ঘটনা।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, এপ্রিলের শুরুতে সাজেকের উদয়পুর বাজারে জেএসএস সদস্যরা ইউপিডিএফ কর্মীকে মারধর ও প্রাণনাশের হুমকি দেয়। এর জের ধরে দুই সংগঠন একে অপরের সদস্যদের উপর বাজার এলাকায় নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। ইউপিডিএফ খাগড়াছড়ি থেকে সাজেক-উদয়পুরমুখী পণ্যবাহী যানবাহনের চলাচলেও বাধা দেয়। ফলে সাজেকে পণ্য সরবরাহ ও পর্যটকদের যাতায়াতে মারাত্মক বিঘ্ন সৃষ্টি হচ্ছে।
এরই মধ্যে গত পরশু (১ মে) আরও একটি ভয়াবহ ঘটনার জন্ম দেয় ইউপিডিএফ। সাজেক থেকে দীঘিনালাগামী একটি পর্যটকবাহী গাড়ি ৯ কিলো জুম্মআদম এলাকায় আটকায় ইউপিডিএফ সদস্যরা। গাড়ির চালককে নির্মমভাবে মারধর করা হয়, চাবি ছিনিয়ে নেওয়া হয় এবং গাড়ির চাকা পাংচার করে আগুন লাগানোর হুমকি দেওয়া হয়। পরে বাঘাইহাট জোনের সেনা সদস্যরা দ্রুত গিয়ে গাড়িটি উদ্ধার করেন।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, পর্যটক ও সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা নিয়ে এভাবে সন্ত্রাসী বাহিনী ছিনিমিনি খেললে দেশের পর্যটন শিল্প ভয়াবহ ক্ষতির মুখে পড়বে। ২০২৪ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর থেকে ৫ নভেম্বর পর্যন্ত সাজেকের পর্যটন কার্যক্রম একবার বন্ধ হয়েছিলো একই ধরনের সহিংসতার কারণে। আবারও সেই বিপদের ছায়া ঘনিয়ে আসছে।
সন্ত্রাসী গ্রুপগুলোর মধ্যে আধিপত্য বিস্তারের লড়াই পাহাড়ি অঞ্চলের স্থিতিশীলতা ও অর্থনীতিকে হুমকির মুখে ফেলেছে। সাজেক সড়কে বর্তমানে স্থাপিত নিরাপত্তা ক্যাম্পগুলো প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল বলে জানিয়েছেন পর্যবেক্ষকরা। ৬৩ কিলোমিটার দীর্ঘ এই পাহাড়ি সড়কে আরও নিরাপত্তা ক্যাম্প স্থাপন এবং নিয়মিত টহলের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় জনগণ ও পর্যটন সংশ্লিষ্টরা।
উল্লেখ্য, সন্ত্রাসী গ্রুপগুলোর সশস্ত্র দাপট ও সড়ক অবরোধের অপচেষ্টা রাষ্ট্রের আইনশৃঙ্খলা এবং সাধারণ নাগরিকের মৌলিক অধিকারের প্রতি চরম অবমাননা। এদের বিরুদ্ধে কঠোর অভিযান পরিচালনার মাধ্যমে সাজেক ভ্যালিকে নিরাপদ রাখা এবং সন্ত্রাসের ছোবল থেকে পর্যটনকে রক্ষা করাই এখন সময়ের দাবি।
প্রসঙ্গত, ২০১৯ সালের ১৮ মার্চ সন্ধ্যার দিকে নির্বাচনি দায়িত্ব পালন শেষে উপজেলা সদরে ফেরার পথে নয় কিলো নামক এলাকায় সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা গুলি চালালে নির্বাচনি কাজে জড়িত আটজন কর্মকতা নিহত হন। ঘটনাস্থলে চারজন এবং উপজেলা সদর হাসপাতালে আনার পথে আরও তিন নিহত হন। এ ঘটনায় গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হয় আরও পাঁচজন। আহতদের মধ্যে নির্বাচনি এক কর্মকর্তা ০৯ এপ্রিল ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। অর্থাৎ এ ঘটনায় সর্বমোট আটজন নিহত হয়েছিলেন। ঘটনার পর পরই ৪০-৫০ জনকে অজ্ঞাত আসামি দেখিয়ে হত্যা মামলা দায়ের করেছিলো পুলিশ। তবে এত বছর পার হলেও ঘটনার সাথে জড়িত কোন আসামিকে গ্রেফতার করা যায়নি।
ঘটনার অনুসন্ধানে জানা যায়, ২০১৯ সালের ১৮ মার্চ বাঘাইছড়ি উপজেলা পরিষদের অনুষ্ঠিত নির্বাচনে আঞ্চলিক সশস্ত্র সংগঠন প্রসীত গ্রুপের নেতৃত্বাধীন ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) ওই উপজেলায় কোন প্রার্থী না দিলেও সন্তু লারমার নেতৃত্বাধীন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (পিসিজেএসএস) তাদের চেয়ারম্যান প্রার্থী দিয়েছিলো। কৌশলগত কারণে নির্বাচনে জিততে সশস্ত্র সংগঠনটি ইউপিডিএফ’র সাথে একটি অলিখিত চুক্তি হয়েছিল। ঘটনাস্থলটি যেহেতু ইউপিডিএফ’র এলাকা সেহেতু এ হত্যাকাণ্ডের জন্য ইউপিডিএফকে দায়ী করা হয়েছিলো। মূলত পিসিজেএসএস’র চেয়ারম্যান প্রার্থী বড় ঋষী চাকমাকে জেতাতে এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটনো হয়েছিলো। নির্বাচনে বড় ঋষী চাকমা হেরে যান এবং ঘটনার পর পরই পালিয়ে যান।
- অন্যান্য খবর জানতে এখানে ক্লিক করুন।
- ফেসবুকে আমাদের ফলো দিয়ে সর্বশেষ সংবাদের সাথে থাকুন।
- ইউটিউবেও আছি আমরা। সাবস্ক্রাইব করে ঘুরে আসুন ডিজিটাল কন্টেন্টের দুনিয়ায়।
